নবম-দশম শ্রেণি – পদার্থবিজ্ঞান – চতুর্থ অধ্যায়: কাজ, ক্ষমতা ও শক্তি

This entry is part 5 of 7 in the series এসএসসি পদার্থবিজ্ঞান

কাজ-এর সংজ্ঞা অনেক সময় এভাবে দেয়া হয়- বল প্রয়োগে বস্তুতে সরণ ঘটলে বল ও বলের ক্রিয়াকালে বলের দিকে বস্তুর সরণের গুণফলকে কাজ বলে। এটা আমার খুব অপছন্দের একটা সংজ্ঞা। এটা শুধু কাজের গাণিতিক সমীকরণকে বিবৃত করে, কিন্তু এর তাৎপর্য এই সংজ্ঞাতে কোনভাবেই আসে না।

বল, কাজ ও শক্তির সম্পর্ক

বল, কাজ, শক্তি ও ক্ষমতা পরস্পর গভীরভাবে অন্তঃসম্পর্কিত। বল, কাজ ও শক্তির সম্পর্কটা চাক্রিক ধরণের, এই ছোট্ট আলোচনাটুকু খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং এই অংশটুকুতে তোমাকে সর্বোচ্চ মনোযোগ দিতে হবে, এই বিষয়ের কনসেপ্ট ক্লিয়ার করার জন্য।

আগের অধ্যায়ে আমরা দেখেছি বল কোন বস্তুতে ত্বরণ সৃষ্টি করতে পারে। ত্বরণ সৃষ্টি হওয়া মানে আসলে গতিশক্তির পরিবর্তন হওয়া। এই অধ্যায়ের জন্য এটা তোমাকে অন্তরে গেঁথে নিতে হবে যে- বল প্রয়োগের ফলে শক্তির স্থানান্তর ঘটে। অর্থাৎ, একটি বস্তু যখন অন্য বস্তুতে বল প্রয়োগ করে, তখন প্রথম বস্তু থেকে দ্বিতীয় বস্তুতে শক্তি স্থানান্তর হয়। আর শক্তি স্থানান্তরের এই প্রক্রিয়াটাই হলো কাজ।

কাজের একটা সুন্দর সংজ্ঞা হিসেবে আমরা বলতে পারি, বল প্রয়োগের মাধ্যমে বস্তুতে শক্তির স্থানান্তর ঘটানোই কাজ। এখন প্রশ্ন হলো শক্তি কী? শক্তি হলো কাজ করার সমার্থ্য

আমরা আগের অধ্যায়ের আলোচনায় শক্তির নিত্যতা সূত্রের কথা এসেছিলো, মনে আছে? এখানে বলা হয়েছে: শক্তির সৃষ্টি বা বিনাশ নেই, শক্তি কেবল একরূপ থেকে অপর এক বা একাধিক রূপে পরিবর্তিত হতে পারে। ধরা যাক A বস্তু B বস্তুর ওপর বল প্রয়োগ করলো। এতে A বস্তুর x পরিমাণ শক্তি ব্যয় হলো। শক্তির যেহেতু বিনাশ নেই, এই x পরিমাণ শক্তি এখন B বস্তুতে জমা হবে। এই যে শক্তি স্থানান্তরের ঘটনা ঘটলো, এটাই কাজ।

তাহলে-
১. কোন বস্তু অন্য বস্তুর ওপর বল প্রয়োগ করলে প্রথম বস্তু থেকে দ্বিতীয় বস্তুতে শক্তি স্থানান্তর হয়।
২. শক্তির স্থানান্তরের এই ঘটনা-ই কাজ।
৩. কাজ করার জন্য কাজ করার সামর্থ্য প্রয়োজন, এই কাজ করার সামর্থ্য-ই শক্তি।

এ পর্যন্ত বুঝলে এখান থেকে আমরা কাজ আর শক্তির সম্পর্ক নিয়ে আসতে পারি-
কোন বস্তু কতৃক কৃত কাজ = সে বস্তু কতৃক ব্যয়িত শক্তি
কোন বস্তুর ওপর কৃত কাজ = সে বস্তুতে সঞ্চিত শক্তি

কথাটা অন্তরের অন্তঃস্থলে গেঁথে নেও।

কাজ (Work)

গাণিতিকভাবে কাজের পরিমাণ হলো প্রযুক্ত বল ও বলের ক্রিয়াকালে বলের দিকে বস্তুর সরণের গুণফল। খেয়াল কর, সরণের মান নিতে হবে বল যতক্ষণ কাজ করেছে ততক্ষণে বলের দিকে কতটা সরণ হয়েছে। এই অধ্যায়ের আলোচনায় যখন আমরা সরণ বলবো, অন্য কিছু উল্লেখ না থাকলে সাধারণভাবে ধরে নিবে বলের ক্রিয়াকালে বলের দিকে সরণের কথা-ই বলা হচ্ছে।

কাজকে W প্রতীক দ্বারা প্রকাশ করা হয়। কোন বস্তুতে F বল প্রয়োগে এ সময়কালে বলের দিকে s সরণ ঘটলে কৃত কাজ, W = F × s বা, W = Fs

কাজের একক = বলের একক × সরণের একক = N m = kg m2 s-2 । এটাকে J (জুল) দ্বারা প্রকাশ করা হয়। অর্থাৎ, 1 J = 1 N m = 1 kg m2 s-2। কাজের মাত্রা = ML2T-2

[সিলেবাসে নেই, তবে জেনে রাখতে দোষ নেই- আগের পর্বে উপাংশ নিয়ে একটুখানি আলোচনা করা হয়েছিলো। যদি বল প্রয়োগের দিক ও সরণের দিক ভিন্ন হয়, তাহলে বলের দিকে সরণের উপাংশ নিতে হয়। যদি বল ও সরণের মধ্যবর্তী কোণ θ হয়, তাহলে W = Fs cosθ]

শক্তি (Energy)

শক্তি হলো কাজ করার সামর্থ্য। তো কোন বস্তু যতটা কাজ করবে, সে আসলে ততটা শক্তি খরচ করে, যা যে বস্তুর ওপর কাজ করা হয়, সে বস্তুতে জমা হয়। শক্তিকে E দ্বারা প্রকাশ করা হয় এবং এর একক ও মাত্রা কাজের একক ও মাত্রার অনুরূপ।

ধনাত্মক কাজ ও ঋণাত্মক কাজ

কোন বস্তুতে শক্তি প্রদান করা হলে তাকে ধনাত্মক কাজ বলে। অন্যদিকে, কোন বস্তু থেকে শক্তি সরিয়ে নেয়া হলে তাকে ঋণাত্মক কাজ বলে। যখন বলের প্রয়োগের দিকে সরণ ঘটে, তখন কাজ ধনাত্মক হয়, যখন বলের প্রয়োগের বিপরীত দিকে সরণ ঘটে তখন কাজ ঋণাত্মক হয়। এজন্য ধনাত্মক কাজকে বলের দ্বারা কাজ এবং ঋণাত্মক কাজকে বলের বিরুদ্ধে কাজ বলা হয়।

উত্তর:
আমার দ্বারা কৃত কাজ, W = Fs = 100 N x 10 m = 1000 J
ঘর্ষণ বল দ্বারা কৃত কাজ, W’ = Fs = 10 N x (-10 m) = -100 J
(অন্যভাবে বললে ঘর্ষণ বলের বিরুদ্ধে কাজ 100 J)

ক্ষমতা (Power)

একক সময়ে কাজ করার সামর্থ্যকে ক্ষমতা বলে। অন্যভাবে বললে ক্ষমতা হলো শক্তির স্থানান্তরের হার। গাণিতিকভাবে,

ক্ষমতার একক = কাজের একক / সময়ের একক = J / s = kg m2 s-1 । এটাকে W (ওয়াট) দ্বারা প্রকাশ করা হয়। ক্ষমতার মাত্রা ML2T-3

কর্মদক্ষতা (Efficiency)

যন্ত্র থেকে প্রাপ্ত মোট কার্যকর শক্তি ও যন্ত্রে প্রদত্ত মোট শক্তির অনুপাতকে কর্মদক্ষতা বলে। একে η (ইটা) প্রতীক দ্বারা প্রকাশ করা হয়। কার্যকর শক্তি বলতে যে শক্তিটুকু কাঙ্ক্ষিত কাজে ব্যবহার হয়। যেমন, পানি তোলার জন্য একটি মটর যে পরিমাণ শক্তি পানি তুলতে ব্যয় করবে তা এর থেকে লদ্ধ কার্যকর শক্তি।

বাস্তবে প্রদত্ত শক্তির পুরো শক্তি কখনোই কার্যকর হিসেবে পাওয়া যায় না। অর্থাৎ, কর্মদক্ষতা কখনোই ১০০% হওয়া সম্ভব না। কেননা যন্ত্র পরিচালনা করতে বা ঘর্ষণ বলের বাধা অতিক্রম করতে অবশ্যই কিছু শক্তি অপচয় হয়। অপচয় বলতে অবশ্যই এর বিনাশ বোঝানো হচ্ছে না, বরং এটা তাপশক্তি, আলোকশক্তি, শব্দশক্তি প্রভৃতিতে রূপান্তর হয়।

কর্মদক্ষতা সমজাতীয় রাশির অনুপাত, অর্থাৎ কর্মদক্ষতার একক = শক্তির একক / শক্তির একক। তাই সাধারণভাবে এর কোন একক নেই। মাত্রার সংজ্ঞায় আমরা যেমনটা বলেছিলাম একটি রাশিতে বিভিন্ন মৌলিক রাশি যে ঘাতে আছে সেটিই তার মাত্রা। এখানে সব মৌলিক রাশির ঘাত 0, তাই মাত্রা এভাবে দেখানো যায়: M0L0T0

[তবে শর্তসাপেক্ষে কর্মদক্ষতার একক কিন্তু থাকতে পারে। শক্তির SI একক হলো জুল, কিন্তু অন্যান্য পদ্ধতিতে এর আরো একক আছে, যেমন- ক্যালরি, আর্গ, পাউন্ডাল-ফুট। যদি কার্যকর শক্তি আর প্রদত্ত শক্তি ভিন্ন এককে নেয়া হয়, সেক্ষেত্রে কর্মদক্ষতার একক থাকবে। যেমন কার্যকর শক্তি ক্যালরি (cal) আর প্রদত্ত শক্তি J এককে নিলে কর্মদক্ষতার একক হবে cal/J। তবে মাত্রা কখনোই পরিবর্তন ঘটবে না।]

উত্তর:
প্রতিটি ধাপে কর্মদক্ষতা = 100% – 10% = 90%
এক ধাপে কর্মদক্ষতা, η1 = 90%
দুই ধাপে কর্মদক্ষতা, η2 = 90% × 90%
তিন ধাপে কর্মদক্ষতা, η3 = 90% × 90% × 90%
চার ধাপে কর্মদক্ষতা, η4 = 90% × 90% × 90% × 90% = 0.6561 = 65.61%

প্রশ্ন: পাঁচ ধাপ শেষে যন্ত্রে প্রারম্ভিকভাবে প্রদত্ত শক্তির অপচয় ঘটলো 40%। প্রতি ধাপে কর্মদক্ষতা সমান হলে প্রতি ধাপের কর্মদক্ষতা কত?

উত্তর:
ধরা যাক প্রারম্ভিক শক্তি ছিলো E এবং প্রতি ধাপে কর্মদক্ষতা η
তাহলে প্রথম ধাপ শেষে অবশিষ্ট শক্তি = E × η
দ্বিতীয় ধাপ শেষে অবশিষ্ট শক্তি = E × η × η = E × η2
এভাবে পাওয়া যাবে, পঞ্চম ধাপ শেষে অবশিষ্ট শক্তি = E × η5

পাঁচ ধাপ শেষে অপচয় = E × 40%
সুতরাং অবশিষ্ট শক্তি = E × 60%

শর্ত অনুযায়ী,
E × η5 = E × 60%
বা, η5 = 60%
বা, η = 5√(60%) = 0.90288 = 90.288%

শক্তির বিভিন্ন রূপ ও রূপান্তর

শক্তির বিভিন্ন রূপের মধ্যে রয়েছে- যান্ত্রিক শক্তি, তাপ শক্তি, আলোক শক্তি, চৌম্বক শক্তি, বিদ্যুৎ শক্তি, রাসায়নিক শক্তি, নিউক্লিয় শক্তি এবং সৌর শক্তি। এর মধ্যে যান্ত্রিক শক্তি নিয়ে আমরা বিশেষভাবে পড়ব।

নবম-দশম শ্রেণির পদার্থবিজ্ঞান বইয়ে ১১৪ থেকে ১১৭ পৃষ্ঠা পর্যন্ত বিভিন্ন ধরণের শক্তির রূপান্তর আলোচনা করা হয়েছে, যা এই কনসেপ্ট বোঝার জন্য ও অনুধাবনমূলক প্রশ্নের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। এখানে আমি রূপান্তরগুলো আলাদাভাবে আলোচনা করছি না, বই থেকে অবশ্যই দেখে নিও।

যান্ত্রিক শক্তি (Mechanical Energy)

বস্তু তার অবস্থা, অবস্থান বা গতির জন্য যে শক্তি (কাজ করার সামর্থ্য) অর্জন করে তাকে যান্ত্রিক শক্তি বলে

যান্ত্রিক শক্তি দুই প্রকার:
গতিশক্তি: বস্তুর গতির জন্য অর্জিত শক্তি
স্থিতিশক্তি বা বিভবশক্তি: বস্তুর অবস্থা বা অবস্থানের জন্য অর্জিত শক্তি

গতিশক্তি (Kinetic Energy)

বস্তু তার গতির জন্য যে শক্তি অর্জন করে তাকে গতিশক্তি বলে। একে Ek দ্বারা প্রকাশ করা হয়।

ধরা যাক m ভরের একটি বস্তু স্থির (u = 0) আছে এবং এতে F বল প্রয়োগ করা হলো, বলের প্রয়োগকালে এটি s দূরত্ব অতিক্রম করলো এবং শেষ বেগ হলো v।

এজন্য কৃত কাজ, W = Fs

যেখানে,
F = ma
s = ½ at2 এবং v = at [যেহেতু, u = 0]

এখন W = Fs-এ F ও s এর মান বসিয়ে,
W = (ma) (½ at2) = ½ m(a2t2) = ½ mv2

অর্থাৎ, স্থির কোন বস্তুকে v বেগে উপনীত করতে কৃত কাজ W = ½ mv2
এই কাজ বস্তুতে গতিশক্তিরূপে জমা হয়, অর্থাৎ, গতিশক্তি Ek = ½ mv2

দ্বিতীয় অধ্যায়ে আমরা একটি সূত্র দেখেছিলাম, v2 = u2 + 2as। গতির এই সূত্রটি আসলে গতিশক্তির সূত্রের একটি বিশেষ রূপ। তোমাদের বইয়ে ১০৩ পৃষ্ঠায় এই সূত্র থেকে গতিশক্তির সূত্র নিয়ে আসা দেখানো হয়েছে, তবে এখানে আমরা বিপরীত দিক থেকে দেখবো, অর্থাৎ, গতিশক্তির সূত্র থেকে গতির সূত্রটি কীভাবে আসে।

ধরা যাক কোন বস্তুর আদিবেগ, u হলে আদি গতিশক্তি = ½ mu2
এর ওপর W কাজ করা হলে এর বেগ হলো v। অর্থাৎ, নতুন গতিশক্তি = ½ mv2
আমরা বলতে পারি ½ mu2 সাথে আর W পরিমাণ শক্তি সঞ্চিত হয়ে বস্তুটি ½ mv2 গতিশক্তি লাভ করেছে।
তাহলে, ½ mv2 = ½ mu2 + W
এখন, W = Fs = mas = ½m(2as)
তাহলে লেখা যায়, ½ mv2 = ½ mu2 + ½ m(2as)
সবশেষে ½m দ্বারা উভয়পক্ষকে ভাগ করে পাওয়া যাবে,
v2 = u2 + 2as

প্রশ্ন: একটি বস্তুর ওপর নির্দিষ্ট পরিমাণ কাজ করলে তা যে বেগ লাভ করে, অন্য একটি বস্তুর ওপর তার অর্ধেক পরিমাণ কাজ করলে তার দ্বিগুণ বেগ লাভ করে। বস্তুদ্বয়ের ভরের অনুপাত কত?

উত্তর:
ধরা যাক, বস্তুদুটোর ভর যথাক্রমে m1 ও m2 এবং
2W কাজ করলে প্রথম বস্তু v বেগ লাভ করে।
শর্ত অনুযায়ী, W কাজ করলে দ্বিতীয় বস্তু 2v বেগ লাভ করবে।
তাহলে,
2W = ½ m1 v2
এবং W = ½ m2 (2v)2 = 2 m2 v2

সমীকরণদ্বয় থেকে,
½ m1 v2 = 2 m2 v2
বা, m1 / m2 = 4
বা, m1 : m2 = 4 : 1

উত্তর:

(a)
F = ma
বা, a = F/m = 10 / 10 = 1 ms-2

v = u + at = 0 + 1 x 10 = 10 ms-1
অতএব, Ek = ½ mv2 = ½ x 10 x 102 = 500 J

(b)
10 s এর পর আর কোন বল প্রয়োগ হয়নি, কাজেই বেগের পরিবর্তন হবে না, অর্থাৎ গতিশক্তিরও পরিবর্তন হবে না। তাহলে 20 s পরেও গতিশক্তি, Ek = 500 J

(c)
‘a’ এর অনুরূপভাবে করতে হবে, শুধু t = 20 s নিতে হবে।

স্থিতিশক্তি বা বিভব শক্তি (Potential Energy)

বস্তু তার অবস্থা বা অবস্থানের জন্য যে শক্তি অর্জন করে তাকে স্থিতিশক্তি বা বিভব শক্তি বলে। একে EP দ্বারা প্রকাশ করা হয়।

বস্তুকে উচ্চতায় ওঠাতে কৃত কাজ ও সঞ্চিত বিভব শক্তি

একটি বস্তুকে F বল প্রয়োগে s দূরত্বে সরালে কৃতকাজ, W = Fs
যদি F বল প্রয়োগে h উচ্চতায় ওঠানো হয়, সেক্ষেত্রে, F = mg এবং s = h। তাহলে, বস্তুকে h উচ্চতায় ওঠালে সঞ্চিত বিভব শক্তি Ep = mgh
এখানে মনে রাখতে হবে, উচ্চতায় অবস্থানের জন্য বিভব শক্তির বেলায় সবসময় ভূমি থেকে উচ্চতা বিবেচনা করতে হবে। এটা শুধু উচ্চতার ওপর নির্ভরশীল, কোন পথে বা কীভাবে সে উচ্চতায় পৌঁছেছে, তার ওপর নয়।

স্প্রিং সংকোচন বা প্রসারণে কৃত কাজ ও সঞ্চিত বিভব শক্তি

ওপরের ছবিকে একটা স্প্রিংয়ের একপ্রান্ত আটকানো, অন্য প্রান্ত মুক্ত। একে মুক্ত প্রান্ত বরাবর x দৈর্ঘ্য পরিমাণ সংকোচন করা হয়েছে। এখানে সবুজ চিহ্নিত স্প্রিংয়ের প্রান্তভাগের সরণ হয়েছে x। হলুদ চিহ্নিত অগ্রভাগের কোন সরণ হয়নি, অর্থাৎ সরণ 0। লাল চিহ্নিত স্প্রিংয়ের মধ্যভাগের সরণ হয়েছে x/2। তাহলে সংকচনের ঘটালে স্প্রিংয়ের সব অংশের সরণ সমান না। তাহলে স্প্রিংয়ের মুক্ত প্রান্তে x পরিমাণ সরণ ঘটালে পুরো স্প্রিংয়ের গড় সরণ, s = x/2।

একটা স্প্রিংকে সংকোচন বা প্রসারণ করতে চাইলে এটা একটা বাঁধাদানকারী বল প্রয়োগ করে। একক দৈর্ঘ্য সংকোচন বা প্রসারণ ঘটানোতে স্প্রিং যে বাঁধাদানকারী বল প্রয়োগ করে তাকে স্প্রিং ধ্রুবক বলা হয়, একে k দ্বারা প্রকাশ করা হয়। তাহলে x দৈর্ঘ্য সংকোচন বা প্রসারণ ঘটালে স্প্রিং কতৃক প্রযুক্ত বল F’ = -kx (বাঁধাদানকারী বল হওয়াতে বল ও সরণ বিপরীতমুখী)।

x পরিমাণ সংকুচিত করতে F’ = -kx পরিমাণ বল স্প্রিং প্রয়োগ করছে। তাহলে সংকোচনের জন্য এই বলটাকে অতিক্রম করতে হবে, তথা সমপরিমাণ বিপরীতমুখী বল প্রয়োগ করতে হবে। অর্থাৎ, স্প্রিংকে সংকোচন করতে প্রয়োজনীয় বল, F = kx

তাহলে স্প্রিং সংকোচনে কৃত কাজ, W = Fs = (kx)(x/2) = ½ kx2
যা বিভব শক্তি হিসেবে সঞ্চিত হবে। অর্থাৎ স্প্রিং সংকোচনে সঞ্চিত বিভব শক্তি, Ep = ½ kx2

[অবশ্যই একটা স্প্রিংকে ইচ্ছামত পরিমাণ সংকোচন বা প্রসারণ করা যায় না। ওপরের সম্পর্কগুলো স্থিতিস্থাপক সীমার মধ্যে প্রযোজ্য, স্থিতিস্থাপকতার আলোচনা পরের অধ্যায়ে রয়েছে।]

প্রশ্ন: SI পদ্ধতিতে স্প্রিং ধ্রুবকের একক কী হবে?

উত্তর:
F = kx
বা, k = F/x
বা, স্প্রিং ধ্রুবকের একক = বলের একক / সরণের একক = Nm-1

প্রশ্ন: একটি স্প্রিংকে 10 m সংকোচন করলে স্প্রিং ধ্রুবক 100 Nm-1, স্প্রিংটি 12 m প্রসারণ করলে স্প্রিং ধ্রুবক কত?

উত্তর:
স্প্রিং ধ্রুবক 100 Nm-1-ই থাকবে। কেননা কত সংকোচন বা প্রসারণ করা হয়েছে, তার সাথে স্প্রিং ধ্রুবক তথা একক সংকোচন বা প্রসারণে বাঁধাদানকারী বলের সম্পর্ক নেই।

প্রশ্ন: একটি স্প্রিংকে 10 m সংকোচন করতে 120 N বল প্রয়োজন। 12 m প্রসারণ করতে প্রয়োজনীয় বল কত?

উত্তর:
F1 = kx1
বা, 120 = k × 10
বা, k = 12 Nm-1

F2 = kx2 = 12 × 12 = 144 N

প্রশ্ন: 30 মিটার গভীরতা থেকে পানি তুলে 1 মিটার ব্যাসার্ধ ও 3 মিটার উচ্চতার তিনটি পানির ট্যাঙ্ক পূর্ণ করতে একটি মটর 10 মিনিট সময় নেয়। মটরটির ক্ষমতা কত?

উত্তর:
ঘনত্ব ও এসংক্রান্ত বিস্তারিত আলোচনা পরের অধ্যায়ে রয়েছে। এই অঙ্কের জন্য এটুকু জানতে হবে বিশুদ্ধ পানির ঘনত্ব 1000 kgm-3, অর্থাৎ, প্রতি m3 আয়তনে 1000 kg পানি ধরে।

মটরটি 30 মিটার গভীরতা থেকে পানি তুলছে, এবং পানির ট্যাঙ্কের উচ্চতা 3 মিটার। অর্থাৎ, গড়ে মটরটিকে 31.5 মিটার উচ্চতায় পানি তুলতে হচ্ছে। তাহলে h = 31.5 m

প্রতিটি পানির ট্যাঙ্কের আয়তন = πr2l = π × 12 × 2 = 6.282 m3
সুতরাং, তিনটি পানির ট্যাঙ্কের আয়তন = 3 × 6.282 = 18.846 m3
সুতরাং, পানির ভর, m = 1000 × 18.846 = 18846 kg

কৃত কাজ, W = mgh = 18846 × 9.8 × 31.5 = 5817760.2 J

মটরের ক্ষমতা, P = W/t = 5817760.2 / (10 × 60) = 9696.267 W

প্রশ্ন: একটি বলকে 100 m উঁচু দালানের ছাদ থেকে 10 ms-1 বেগে ওপরের দিকে ছুঁড়ে দেয়া হলো। কত উচ্চতায় গতিশক্তি বিভবশক্তির দুই-তৃতীয়াংশ হবে?

উত্তর:
এখানে একটা বিষয় গুরুত্বপূর্ণ, স্থিতিশক্তি ভূমি থেকে উচ্চতার ওপর নির্ভরশীল, কিন্তু বেগ নির্ণয়ের সময় অতিক্রান্ত দূরত্ব বিবেচনা করতে হবে।

ধরা যাক ভূমি থেকে h উচ্চতায় গতিশক্তি বিভবশক্তির দুই-তৃতীয়াংশ হবে। তাহলে h উচ্চতায়,
EK = ⅔ EP
বা, ½ mv2 = ⅔ mgh
বা, v2 = ⁴⁄₃ gh
বা, u2 + 2g (100-h) = ⁴⁄₃ gh
বা, – 102 + 2 × 9.8 × (100-h) = ⁴⁄₃ × 9.8 × h
বা, h = 56.938 m

এখানে সূত্র ব্যবহার হয়েছে। যেহেতু u ওপরের দিকে, আর g নিচের দিকে- তাই g-কে ধনাত্মক ধরায় আর u-এর মানকে ঋণাত্মক বিবেচনা করা হয়েছে। ভূমি থেকে h উচ্চতা হলেও বল যেহেতু 100 – h দূরত্ব পাড়ি দিয়েছে, তাই স্থিতিশক্তির ক্ষেত্রে h এবং বেগ বের করার ক্ষেত্রে 100 – h নেয়া হয়েছে। ক্যালকুলেটরের সাহায্য সমীকরণ সমাধানের নিয়ম দেখো এখানে। দেখতেই পাচ্ছ উত্তরে m-এর কোন প্রভাব নেই। অর্থাৎ যেকোন ভরযুক্ত বস্তুর জন্য এই সমস্যার সমাধান এক-ই হবে।

শক্তির নিত্যতা

শক্তির নিত্যতা সূত্র: শক্তির সৃষ্টি বা বিনাশ নেই, শক্তি কেবল একরূপ থেকে অপর এক বা একাধিক রূপে পরিবর্তিত হতে পারে

ভূমিতে থাকা একটি ইটকে যখন কোন মানুষ বা যন্ত্র ওপরে তোলে, তখন তাকে কিছু কাজ তথা শক্তি ব্যয় করতে হয়। এই শক্তি ইটে বিভবশক্তি হিসেবে জমা হয়। এরপর যখন তা ছেড়ে দেয়া হয়, এর গতি ক্রমাগত বাড়তে থাকে, তথা বিভবশক্তি গতিশক্তিতে রূপ নেয়। মাটি স্পর্শের মুহুর্তে পুরো স্থিতিশক্তি গতিশক্তিতে রূপান্তর হয়ে যায়। তবে (পারিপার্শ্বিকের কোন কিছুর সাথে শক্তি বিনিময় না ঘটলে) পুরো যাত্রাপথে গতিশক্তি ও বিভবশক্তির সমষ্টি, তথা মোট যান্ত্রিক শক্তি একই থাকবে। যখন ইটটি মাটিতে পড়ে, তখন এই যান্ত্রিক শক্তি থেকে তাপশক্তি, শব্দশক্তি প্রভৃতি উৎপন্ন হয়, বা পারিপার্শ্বিকের অন্য কিছুতে যান্ত্রিক শক্তি হিসেবে স্থানান্তর হয়।

ওপরের ছবিতে একটি সরল দোলক বা পেন্ডুলামের দোলন দেখানো হয়েছে। একটা সুতোয় ছোট পাথর বা এরকম কিছু বেঁধে নিয়ে এটা তৈরি করা যায়। এখানে আমরা ধরে নিচ্ছি বাতাসের বাঁধা বা পারিপার্শ্বিক আর কোন কিছু কাজ করছে না, শুধু মাধ্যাকর্ষণ বলের প্রভাব রয়েছে। ছবিতে T গতিশক্তি ও V স্থিতিশক্তি নির্দেশক।
একটি পেন্ডুলামকে কিছুদূর টেনে ধরে রাখলে, তখন অবস্থান পরিবর্তন করায় এতে কিছু স্থিতিশক্তি সঞ্চিত হয়। এসময় বেগ শূন্য, তাই গতিশক্তিও শূন্য (a ছবি)। এরপর পেন্ডুলামটা ছেড়ে দিলে এটা চলতে শুরু করে, তথা স্থিতিশক্তি গতিশক্তিতে রূপ নিতে থাকে। c ছবির অবস্থান, যেটাকে সাম্যাবস্থা বলা হয়, এখানে এসে সম্পূর্ণ যান্ত্রিক শক্তি গতিশক্তিরূপে থাকে, স্থিতিশক্তি হয় শূন্য।
এরপর এর বেগ কমতে থাকে, অর্থাৎ গতিশক্তি স্থিতিশক্তিতে রূপান্তর হতে থাকে। এভাবে e ছবির অবস্থানে পৌঁছে বেগ কমতে কমতে e ছবির অবস্থানে এসে তা শূন্য হয়। শূন্য বলতে এখানে এসে পেন্ডুলাম দোলনের দিক পরিবর্তন করে, ঠিক দিক পরিবর্তনের মুহুর্তটার জন্য এর বেগ শূন্য।
অর্থাৎ e বিন্দুতে আবারো স্থিতিশক্তি সর্বোচ্চ, গতিশক্তি শূন্য।
এভাবে পেন্ডুলামের দোলনের বিভিন্ন অংশে স্থিতিশক্তি ও গতিশক্তির রূপান্তর ঘটে। কিন্তু এদের সমষ্টি, তথা যান্ত্রিক শক্তি সবসময় একই থাকে। কোন বাঁধাদানকারী বল না থাকলে একটি আদর্শ পেন্ডুলাম চিরকাল এভাবে দুলতে থাকতো, কিন্তু বাস্তবে বাতাসের বাঁধা ও অন্যান্য বলের প্রভাবে দোলনের বিস্তার ক্রমাগত কমতে থাকে এবং একসময় থেমে যায়।

শক্তির বিভিন্ন উৎস

শক্তির উৎসগুলোকে প্রধানত দুই ভাগে ভাগ করা হয়। নবায়নযোগ্য শক্তি ও অনবায়নযোগ্য শক্তি।
নবায়নযোগ্য শক্তি: যে শক্তির উৎসগুলো নিঃশেষ হওয়ার আশঙ্কা নেই, অর্থাৎ, যে শক্তির নবায়ন করা যায়, তাকে নবায়নযোগ্য শক্তি বলে।
অনবায়নযোগ্য শক্তি: যে শক্তির মজুদ সীমিত, তাই ব্যবহারের সাথে সাথে কমতে থাকে তাকে অনবায়নযোগ্য শক্তি বলে।

তেল, গ্যাস, কয়লা প্রাকৃতিকভাবে তৈরি হয় যদিও, তবে তা লক্ষ-কোটি বছরের দীর্ঘকালীন পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে। কাজেই এর মজুদ ফুরিয়ে গেলে তা সহসা ফিরে পাওয়া যাবে না। নিউক্লিয়ার শক্তি উৎপাদন করতে ইউরেনিয়াম প্রয়োজন। পৃথিবীতে ইউরেনিয়ামের পরিমাণ অফুরন্ত নয়। কাজেই এই শক্তিগুলোকে অনবায়নযোগ্য শক্তির মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

বায়োমাস হলো যে জৈব পদার্থকে শক্তিতে রূপান্তর করা যায়। যেমন লাকড়ি বা খড়কুটো এর অন্তর্ভুক্ত। লাকড়ি বা খড়কুটো জ্বালালে তা শেষ হয়ে যায় সত্য, তবে পৃথিবীতে প্রতিনিয়ত নতুন গাছপালা জন্মাচ্ছে, নতুন বায়োমাস তৈরি হচ্ছে- তাই এর উৎস আসলে অফুরন্ত। জিওথার্মাল এনার্জি হলো ভূতাপীয় শক্তি, যা পৃথিবীর অভ্যন্তরে সঞ্চিত তাপশক্তিকে নির্দেশ করে।

বইয়ের ১০৯ থেকে ১১২ পৃষ্ঠায় এই শক্তিগুলো নিয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনা রয়েছে, অবশ্যই তা পড়ে নিও।

ভর-শক্তি সমতা

আইনস্টাইনের আপেক্ষিক তত্ত্ব থেকে উদ্ভূত একটি ধারণা হলো ভর-শক্তি সমতা (mass–energy equivalence), যা নির্দেশ করে ভর আর শক্তি পরস্পর সমতূল্য অর্থাৎ ভর ও শক্তির রূপান্তর সম্ভব। তাই ভরকেও এক ধরণের শক্তি হিসেবে চিন্তা করা যায়।

ভর ও শক্তির সম্পর্ক দেখানো হয়েছে আইনস্টাইনের বিখ্যাত সূত্রে, E = mc2। এখানে E হলো শক্তি, m হলো বস্তুর স্থির ভর এবং c হলো আলোর বেগ। আলোর বেগ, c = 3 × 108 ms-1, অর্থাৎ, সামান্য ভরকে শক্তিতে রূপান্তর করলে একটা হিউজ শক্তি পাওয়া সম্ভব।

[শুধু ভর না বলে স্থির ভর বলার কারণ হলো আপেক্ষিক তত্ত্বে ভরের আপেক্ষিকতার ধারণা রয়েছে। পর্যবেক্ষকের সাথে বস্তুর আপেক্ষিক গতি থাকলে তার পর্যবেক্ষণে বস্তুটির ভর অধিক পাওয়া যায়।]

পদার্থবিজ্ঞানের অপপ্রয়োগ কতটা ধ্বংসশীল হতে পারে, ভর-শক্তি সমতার ধারণা তার জ্বলজ্যান্ত প্রমাণ। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে ফেলা লিটল বয় ও ফ্যাটম্যান নিউক্লিয়ার বোমাগুলোর ধ্বংসলীলার পেছনে ছিলো ভর থেকে শক্তির রূপান্তর।

নিউক্লিয়ার বিদ্যুৎকেন্দ্রে শক্তি উৎপাদন

যে বিক্রিয়ায় কোন মৌলের নিউক্লিয়াসে পরিবর্তন ঘটে, তাকে নিউক্লিয়ার বিক্রিয়া বলে। যে নিউক্লিয়ার বিক্রিয়াতে বৃহত্তর নিউক্লিয়াস ভেঙে ক্ষুদ্রতর নিউক্লিয়াস গঠন করে তাকে নিউক্লিয়ার ফিশন (fission) বিক্রিয়া বলে। অপর দিকে, যে নিউক্লিয়ার বিক্রিয়াতে ক্ষুদ্রতর নিউক্লিয়াস জোড়া লেগে বৃহত্তর নিউক্লিয়াস গঠন করে, তাকে নিউক্লিয়ার ফিউশন (fusion) বিক্রিয়া বলে।

পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে নিউক্লিয়ার ফিশন বিক্রিয়ার মাধ্যমে শক্তি উৎপাদন করা হয়। জ্বালানি হিসেবে ইউরেনিয়াম এখানে বহুল ব্যবহৃত।

স্বল্পগতিসম্পন্ন নিউট্রন দ্বারা ইউরেনিয়াম (235U)-কে আঘাত করলে তা থেকে খুবই অস্থিতিশীল 236U তৈরি হয়, যা সাথে সাথে ভেঙে গিয়ে স্থিতিশীল বেরিয়াম (141Ba), ক্রিপ্টন (92Kr) ও তিনটি নিউট্রন উৎপন্ন করে, সাথে নির্গত হয় প্রচুর শক্তি। উৎপন্ন নিউট্রনগুলো পুনরায় পুনরায় ইউরেনিয়ামের সাথে এই বিক্রিয়ার পুনরাবৃত্তি ঘটাতে পারে, তাই ইউরেনিয়ামের সরবারহ থাকলে একবার শুরু হওয়ার পর বিক্রিয়াটি বারবার ঘটতে থাকে। এভাবে কোন উৎপাদের কারণে বিক্রিয়ার পুনরাবৃত্তি ঘটতে থাকার ঘটনাকে বলে চেইন রিয়েকশন।

প্রশ্ন হলো এই শক্তি কীভাবে আসছে? ইউরেনিয়ামের নিউক্লিয়াসের বন্ধনশক্তি অনেক উচ্চ হয়, বেরিয়াম বা ক্রিপ্টনের বন্ধনশক্তি তত উচ্চ নয়। এই বন্ধনশক্তির পার্থক্যের কারণে বিক্রিয়ার বামদিকের ইউরেনিয়াম ও একটি নিউট্রনের ভরের সমষ্টি বিক্রিয়ার ডানদিকের বেরিয়াম, ক্রিপ্টন ও তিনটি নিউট্রনের ভরের সমষ্টি থেকে বেশি হয়। এই অতিরিক্ত ভর শক্তিতে রূপান্তর ঘটে, যা মূলত তাপশক্তি।

বিদ্যুৎ শক্তি পাওয়ার জন্য উৎপন্ন তাপশক্তি ব্যবহার করে পানিকে বাষ্পীভূত করা হয়, এবং এই বাষ্প দ্বারা টারবাইন ঘুরিয়ে জেনারেটরের মাধ্যমে বিদ্যুৎ শক্তি উৎপন্ন করা হয়।

নিউক্লিয়ার বিক্রিয়া সমাপ্ত করতে রি-অ্যাক্টর বা বিক্রিয়াস্থলে বিদ্যমান নিউট্রনগুলো সরিয়ে নেয়া প্রয়োজন। নিউক্লিয়ার রি-অ্যাক্টরে এজন্য কন্ট্রোল রড নামে বিশেষ ধরণের রড ব্যবহার হয়।

নিউক্লিয়ার বিদ্যুৎকেন্দ্রে যদিও প্রচুর বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব, এখানে অনেক ধরণের সতর্কতা ও সচেতনতার জায়গা রয়েছে। শক্তির উৎস হিসেবে ইউরেনিয়াম একটি অনবায়নযোগ্য এবং পৃথিবীতে এর সরবারহ সীমিত। নিউক্লিয়ার বিদ্যুৎকেন্দ্রে উৎপন্ন বর্জ্যগুলো প্রচন্ডরকম তেজষ্ক্রিয়, তাই বর্জ্য নিষ্কাশনে অনেক ধরণের সাবধানতা প্রয়োজন।

সাধারণ প্রশ্ন

1. ঘর্ষণ বল সবসময় সরণের বিপরীত দিকে ক্রিয়া করে। তাই কৃত কাজ ঘর্ষণ বলের বিরুদ্ধে হয়। একারণে ঘর্ষণ বলের দ্বারা কৃত কাজ নেগেটিভ।
2. স্প্রিং কেটে ছোট করলে সমান বল প্রয়োগে এর মুক্ত প্রান্তের সরণ কম হবে (এভাবে চিন্তা করতে পারো, একটা ছোট দৈর্ঘ্যে স্প্রিং সংকোচন বা প্রসারণ করা থেকে একই ধরণের বেশি দৈর্ঘ্যের স্প্রিংকে সমান পরিমাণ সংকোচন বা প্রসারণ করা সহজ)। F = kx, বা, k = F/x। অর্থাৎ, সমান বল প্রয়োগে স্প্রিং ধ্রুবক ও মুক্ত প্রান্তের সরণের সম্পর্ক ব্যাস্তানুপাতিক। তাই সরণ কম হলে স্প্রিং ধ্রুবক বেশি হবে।
অর্থাৎ, স্প্রিংকে কেটে দু’টুকরো করলে স্প্রিং ধ্রুবক k বাড়বে। যদি টুকরো দুটো সমান হয়, তাহলে স্প্রিং ধ্রুবক দ্বিগুণ হবে। (আবার বিপরীতভাবে সমজাতীয় সমদৈর্ঘ্যের দুটো স্প্রিং জোড়া দিলে স্প্রিং ধ্রুবক অর্ধেক হবে।)
3. ক্ষমতা হলো একক সময়ে কাজ তথা শক্তি ব্যয় করার সামর্থ্য। শক্তি না থাকলে ক্ষমতার প্রশ্ন-ই আসে না। যেকোন কিছু সংঘঠিত হতেই শক্তি দরকার হয়। তবে এটা ঠিক যে ক্ষমতা না থাকলে শক্তি থেকে লাভবান হওয়া যায় না। তাই পৃথিবীকে সচল রাখতে শক্তি ও ক্ষমতা দুটোই প্রয়োজন।
4. আলোচিত হয়েছে।
5. EK = ½ mv2
বা, EK2 / EK1 = ½ mv22 / ½ mv12
বা, EK2 / EK1 = v22 / v12
বা, EK2 / EK1 = 1012 / 1002 = 1.0201 = 102.01%
বা, EK2 = 102.01% EK1
অর্থাৎ, গতিশক্তি বাড়বে, 2.01%
6. (ক) ব্যয়িত শক্তি = কৃত কাজ, W = Fs = 5 N × 5 cm = 5 N × 0.05 m = 0.25 J
(খ) ক্ষমতা, P = W/t = 0.25 J / 0.5 s = 0.5 W
7. প্রশ্নে অনেক কথা দিয়ে তোমার মস্তিষ্ককে বিক্ষিপ্ত করা হচ্ছে। কিন্তু অঙ্কে কোন কাহিনী নেই। রিজার্ভার সমুদ্র সমতল থেকে, h = 800 m ওপরে আছে এবং পানির ভর m = 2 × 108 kg। এরপর বিভব শক্তি, EP = mgh = 2 × 108 × 9.8 × 800 = 1.568 × 1013 J
8. (ক) ওজন, F = mg = 40 × 9.8 = 392 N
(খ) উচ্চতা, h = 20 × 20 cm = 20 × 0.2 m = 4 m
(গ) কাজ, W = Fh = 392 × 4 = 1568 J
(ঘ) ক্ষমতা, P = W/t = 1568/12 = 130.67 W
9. আলোচনা হয়েছে।

গাণিতিক প্রশ্ন

1. OA অংশে বেগ বৃদ্ধি পাচ্ছে, বেগের বৃদ্ধিও ধনাত্মক দিকে। বল প্রয়োগের ফলে যেহেতু বেগের বৃদ্ধি ঘটে, তাই বলা যায় বল ও বলের প্রয়োগকালে সরণ একই দিকে হয়েছে। তাই কাজ ধনাত্মক।
AB অংশে বেগের পরিবর্তন নেই, মানে কোন বল প্রযুক্ত হচ্ছে না। অর্থাৎ কাজ শূন্য।
BC অংশে বেগ ধনাত্মক দিকে, কিন্তু তা হ্রাস পাচ্ছে, তথা বেগের বৃদ্ধি ঋণাত্মক দিকে। অর্থাৎ কাজ ঋণাত্মক।
CD অংশে অনেকে ভুল করতে পারো। এখানে বেগ ঋনাত্মক দিকে, বেগের বৃদ্ধি-ও ঋণাত্মক দিকে। দুটো ঋণাত্মক ঠিক আছে, কিন্তু বল ও বলের প্রয়োগকালে সরণ একই দিকে হচ্ছে। তাই কাজ এখানে ধনাত্মক।

2. Do it yourself

3. EK = ½ mv2
বা, 500 = ½ × 5 × v2
বা, v = √200 = 14.14 ms-1

v = u + at
বা, 14.14 = a × 10
বা, a = 1.414 ms-2

F = ma = 5 × 1.414 = 7.07 N

4. প্রতিটি বস্তুর ওপর এর নিজের ওজন কাজ করছে নিচের দিকে এবং সুতোর টানের কারণে অন্য বস্তুর ওজন কাজ করছে ওপরের দিকে।

5 kg ভরের বস্তুর ওপর প্রযুক্ত লদ্ধি বল, F1 = 10 × 9.8 – 5 × 9.8 = 49 N (ওপরের দিকে)
5 kg ভরের বস্তুর ত্বরণ, a = F/m = 49/5 = 9.8 ms-2 (ওপরের দিকে)
1 m সরণের পর বেগ, v1 = √(u2 + 2ah) = √(2 × 9.8 × 1) = 4.43 ms-1 (ওপরের দিকে)

10 kg ভরের বস্তুর ওপর প্রযুক্ত লদ্ধি বল, F2 = 10 × 9.8 – 5 × 9.8 = 49 N (নিচের দিকে)
10 kg ভরের বস্তুর ত্বরণ, a = F/m = 49/10 = 4.9 ms-2 (নিচের দিকে)
1 m সরণের পর বেগ, v2 = √(u2 + 2ah) = √(2 × 4.9 × 1) = 3.13 ms-1 (নিচের দিকে)

5. ধরা যাক ভূমি থেকে h উচ্চতায় গতিশক্তি বিভবশক্তির দ্বিগুণ হবে।
তাহলে h উচ্চতায়,
EK = 2 EP
বা, ½ mv2 = 2 mgh
বা, v2 = 4 gh
বা, u2 + 2g (100-h) = 4 gh
বা, 2 × 9.8 × (100-h) = 4 × 9.8 × h
বা, h = 33.33 m

বহুনির্বাচনী প্রশ্ন

1. (ক), 2. (ঘ), 3. (ক), 4. (খ), 5. (ক), 6. (খ)

4 নং প্রশ্নে, সর্বোচ্চ বেগ, v = 10 ms-1, সর্বোচ্চ গতিশক্তি, Ek = ½ mv2 = 50000 J = 5.0 × 104
শক্তির রূপান্তরের কারণে 5 এর ‘খ’ ও ‘গ’ যদিও সঠিক, তবে সরাসরি শক্তির সংরক্ষণশীলতা নীতি থেকে ততা পাওয়া যায় না।

সৃজনশীল প্রশ্ন

1. (খ) 50 J কাজ হলো কোন বস্তুর ওপর যে পরিমাণ কাজ করলে তাতে 50 J শক্তি সঞ্চিত হয়। কোন বস্তুর ওপর 1 N বল প্রয়োগে বলের প্রয়োগকালে বলের দিকে 50 m সরণ হলে কৃত কাজ 50 J। একইভাবে কোন বস্তুর ওপর 50 N বল প্রয়োগে বলের প্রয়োগকালে বলের দিকে 1 m সরণ হলে কৃত কাজ 50 J।

1. (গ) যুবকদের গতিশক্তি? প্রশ্নে একজন বালক, একজন যুবক ছিলো। যাইহোক, উভয়ের গতিশক্তি বের করতে EK = ½ mv2 সূত্র ব্যবহার করতে হবে, বেগকে m/s এককে রূপান্তর করে নিতে হবে।

1. (ঘ) ছাদের উচ্চতা এখানে দেয়া না থাকলেও বেগ দেয়া থাকায় যুবক ক্ষমতা বের করা যাবে।
P = W/t বা, P = mgh/t, বা P = mgv ব্যবহার করে উভয়ের ক্ষমতা নির্ণয় করে দেখাতে হবে দুটি সমান না।
বেগ দেয়া না থাকলে আলাদাভাবে ক্ষমতার মান বের করা যেত না। তবে একই সময়ে একই উচ্চতায় যাওয়ার উল্লেখ আছে যেহেতু, তাই P1 / P2 = m1 / m2 থেকে ক্ষমতার অনুপাত সহজেই বের করা যেত।

2. (ক) শক্তির প্রধান উৎস হলো তেল, গ্যাস ও কয়লা।
[প্রশ্নটা সম্ভবত আরেকটু ক্লিয়ার হতে পারতো। পৃথিবীতে প্রায় সব শক্তি সূর্য থেকে আসে, এটা ঠিক আছে, তবে অধ্যায়ের কনটেক্সট থেকে বোঝা যায় প্রশ্নের উদ্দেশ্য হলো প্রধানতমভাবে মানুষ যে উৎস থেকে শক্তি উৎপাদন করে। তাই তেল, গ্যাস ও কয়লা অধিকতর উপযুক্ত উত্তর। প্রসঙ্গত, খনিজ তেল, প্রাকৃতিক গ্যাস বা কয়লাতে যে শক্তি সঞ্চিত আছে, তা মূলত সূর্য থেকেই এসেছে।]

2. (খ) i. উভয়ের একক J ও মাত্রা ML2T-2 এবং ii. কোন বস্তু কতৃক কৃত কাজ ও তার ব্যয়িত শক্তি সমান হয়।

(গ) ও (ঘ) একদমই সহজ দুটো অঙ্ক। করতে কোন সমস্যা হবে না আশা করি।

আরো প্রশ্ন

১. 40 kg ভরের রনি স্থির অবস্থান থেকে 0.4 ms-2 সুষম ত্বরণে স্কুলের উদ্দেশ্যে রওনা হয়ে 70 s এ স্কুলে পৌঁছায়। রনির বড় ভাই জনির ভর 50 kg এবং তাদের বাড়ির ছাদের উচ্চতা 20 m।
(ক) কর্মদক্ষতা কাকে বলে?
(খ) একই উচ্চতার ছাদ থেকে ফেলে দেওয়া একই ভরের ১টি খোলা কাগজের তুলনায় ১টি মোচড়ানো কাগজ ভূমিতে আগে পৌছায় কেন?
(গ) রনির যাত্রাস্থান থেকে স্কুলের দূরত্ব নির্ণয় কর।
(ঘ) রনির কৃতকাজের সমান পরিমাণ কাজ করে জনি 10 kg ভরের বস্তু নিয়ে ছাদে পৌছাতে পারবে কিনা? মতামত দাও।

১. (খ) বাতাসের বাঁধা কম কার্যকর হওয়ায় মোচড়ানো কাগজ আগে ভূমিতে পৌঁছায়।
একই উচ্চতা থেকে একই আদিবেগে ফেলে দেয়া মুক্তভাবে পড়ন্ত বস্তু একই সময়ে ভূমিতে পৌঁছানোর কথা। কিন্তু বাস্তবে পড়ন্ত বস্তুগুলো মুক্তভাবে পড়তে পারে না, যেহেতু এদের ওপর বাতাসের বাঁধা ক্রিয়া করে। খোলা কাগজের ক্ষেত্রফল বেশি হওয়ায় এর ওপর অধিক পরিমাণ বাতাসের বাঁধা কার্যকর হয়, মোচড়ানো কাগজে বাতাসের বাঁধা তুলনামূলক কম কাজ করে। তাই মোচড়ানো কাগজ আগে ভূমিতে পৌঁছায়।

১. (গ)
আমরা জানি,
s = ut + ½ at2
বা, s = 0 + ½ x 0.4 x 702
বা, s = 980 m

১. (ঘ)
বস্তুসহ জনির ভর,
m2 = 50+10 = 60 kg

রনির কৃত কাজ,
W1 = Fs
বা, W1 = m1as
বা, W1 = 40 x 0.4 x 980
= 15680 J

জনির কৃত কাজ,
W2 = m2gh
বা, W2 = 60 x 9.8 x 20
= 11760 J
W2 < W1
অর্থাৎ, জনিকে রনির কৃতকাজ অপেক্ষা কম কাজ করতে হবে।

২. (ক) গতিশক্তি কাকে বলে?
(খ) ধনুকের রশি টেনে তীর ছাড়ার সময় কিভাবে শক্তির রূপান্তর ঘটে ব্যাখ্যা দাও।
(গ) বস্তুটি কত বেগে ভূমিতে আঘাত করবে? নির্ণয় কর।
(গ’) কত উচ্চতায় বস্তুটির বিভবশক্তি গতিশক্তির দ্বিগুণ হবে?
(ঘ) B বিন্দু থেকে বস্তুটিকে মুক্তভাবে ছেড়ে দিলে বস্তুটি শক্তির
সংরক্ষণশীলতার নীতি মেনে চলে-গাণিতিকতাবে বিশ্লেষণ কর।

২. (খ) ধনুকের রশি টেনে তীর ছাড়ার সময় বিভবশক্তি গতিশক্তিতে রূপান্তর হয়।
ধনুকের রশি টানলে এতে বিভবশক্তি সঞ্চিত হয়। এরপর তীর ছাড়ার সময় এই বিভবশক্তি দ্বারা কাজ সংঘঠিত হয়, এবং তা তীরে গতিশক্তিরূপে সঞ্চারিত হয়। ফলে তীরটি উচ্চগতিতে ছুটে যায়।

Series Navigation<< নবম-দশম শ্রেণি – পদার্থবিজ্ঞান – তৃতীয় অধ্যায়: বলনবম-দশম শ্রেণি – পদার্থবিজ্ঞান – পঞ্চম অধ্যায়: পদার্থের অবস্থা ও চাপ >>

2 Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *