প্রায় ১২৩ বছর আগে ১৮৯৮ সালে দুজন ব্রিটিশ বিজ্ঞানী উইলিয়াম র্যামসে আর মরিস ট্রেভার্স নিয়ন আবিষ্কার করেন। নিয়ন একটি নিষ্ক্রিয় গ্যাস, যেটা বায়ুমন্ডলে খুব স্বল্প পরিমাণে পাওয়া যায়। বায়ুমন্ডল থেকে বিশুদ্ধ নিয়ন আলাদা করার পর বিজ্ঞানী দুজন একটি গেইস্লার টিউবে এর ধর্ম পরীক্ষা করছিলেন।
গেইস্লার টিউব ১৮৫৭ সালে আবিষ্কার করেন বিজ্ঞানী হেনরিখ গেইস্লার। এই টিউবে আংশিক চাপশূন্যতায় বিভিন্ন গ্যাসের মধ্যে বিদ্যুৎ প্রবাহ করলে আলোর উৎপত্তি ঘটে। নিয়ন গ্যাসের ক্ষেত্রে যে আলো সৃষ্টি হয়, বিজ্ঞানী ট্রেভার্সের ভাষায়, টিউব থেকে জ্বলজ্বলে ক্রিমসন আলো তার গল্প বলছিলো, আর এটা মনে গেঁথে যাওয়ার মত একটা দৃশ্য ছিলো, যা কখনোই ভোলার নয়।
এটা ছিলো নিয়নবাতির সূচনার গল্প। পর্যায় সারণির দশম মৌল নিয়ন নিষ্ক্রিয় গ্যাসগুলোর একটি। এর কক্ষপথগুলোতে ইলেকট্রন পূর্ণ থাকে, তাই সহজে অন্য পরমাণুর সাথে এটি বিক্রিয়া করে না, আর কোন ইলেকট্রন সরিয়ে নিতে দরকার হয় প্রচুর শক্তি।
নিয়নবাতি তৈরির জন্য নিম্নচাপে অল্প পরিমাণ নিয়নকে কাচের টিউবে নেয়া হয়, যার দুপ্রান্তে ইলেকট্রোড থাকে। এরপর এর প্রান্তে ১৫০০০ ভোল্টের আশেপাশে তড়িৎ বিভব প্রয়োগ করা হলে নিয়নের শেষ কক্ষপথের ইলেকট্রন মুক্ত হওয়ার জন্য পর্যাপ্ত শক্তি পায়।
এর ফলে নিয়ন ধনাত্মক চার্জপ্রাপ্ত ক্যাটায়নে পরিণত হয়, এখানে তারা পদার্থের চতুর্থ অবস্থা, অর্থাৎ প্লাজমারূপে থাকে। ক্যাটায়নগুলো ঋণাত্মক প্রান্তে আকর্ষণ লাভ করে এবং নিয়নবাতির তড়িৎ বর্তনী পূর্ণ করে।
নিয়ন পরমাণুগুলো টিউবে গতিশীল অবস্থায় একে অপরকে আঘাত করে পরস্পর শক্তির স্থানান্তর করে আর প্রচুর তাপও উৎপন্ন হয়। এতে কিছু পরমাণু তাদের ইলেকট্রন হারায়, আর বাকি ইলেকট্রনগুলো শক্তি লাভ করে উত্তেজিত অবস্থায় আসে।
উচ্চ শক্তিপ্রাপ্ত এই ইলেকট্রনগুলো পরবর্তী কোন কক্ষপথে যেতে পারে, তবে দুটো কক্ষপথের মাঝে অবস্থান করতে পারে না। পরে ইলেকট্রনগুলো তাদের প্রকৃত অবস্থানে ফিরে আসার জন্য শক্তি নির্গত করে, আর এই শক্তি ফোটন বা আলো হিসেবে নির্গত হয়।
এই আলোর বর্ণ নির্ভর করে কক্ষপথের দূরত্বের ওপর, অর্থাৎ, ইলেকট্রনগুলো যে তরঙ্গদৈর্ঘ্যের ফোটন নির্গত করে, তা তাদের বৈশিষ্ট্য প্রকাশ করে। প্রতিটি নিষ্ক্রিয় গ্যাসের বাতির নিজ নিজ বৈশিষ্ট্য প্রদর্শনকারী বর্ণ আছে, নিয়নবাতির ক্ষেত্রে তা ক্রিমসন বা লালচে-কমলা।
অবশ্য অন্য বর্ণেরও নিয়নবাতি হতে পারে। এক্ষেত্রে নিয়নের সাথে অন্য কোন গ্যাস অথবা ফসফোর বা কোন রাসায়নিক মিশ্রণ থাকতে পারে। নিয়ন ছাড়া মার্কারি বা আর্গন ও ফসফোর আবরণযুক্ত করেও ফ্লুরোসেন্ট বাতি তৈরি হয়।
তথ্যগুলো ThoughtCo. থেকে নেয়া। আলহামদুলিল্লাহ, এই লেখাটি নিয়নবাতির শততম পোস্ট। যারা আমাদের নিয়মিত বা অনিয়মিত পাঠক আছেন, সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা আমাদের যাত্রাপথে সাথে থাকার জন্য।
নিয়নবাতি নাম রাখার অবশ্য তেমন বিশেষ কোন কারণ নেই, আবার আছে। বেশ কিছুদিন নাম নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করে অনেকভাবে একটি সুন্দর নাম খোঁজার চেষ্টা করছিলাম। তবে একটি সুন্দর ও পছন্দসই নাম, বিশেষ করে .com ডোমেইনসহ পাওয়া আসলে বেশ কঠিন।
যখন কোন একটা বই পড়ছিলাম, বা কারো সাথে কথা বলছিলাম, বলা যায়, প্রতিটি শব্দ নিয়ে চিন্তা করছিলাম, এটা নাম হিসেবে কেমন মানায়। এভাবে কয়েকদিন সময় নিয়ে নিয়নবাতি নামটি মাথায় আসে, এবং আমাদের চিন্তায় থাকা অন্য নামগুলো থেকে এটি পছন্দনীয় মনে হয়।
নিয়নবাতিতে নিয়মিত আরো সুন্দর ও গুরুত্বপূর্ণ লেখা আমরা প্রকাশ করতে চাই। আপনাদের সমর্থন পেলে তা আমাদের জন্য সহায়ক হবে ইন শা আল্লাহ। আমাদের ফেসবুক পেজ, গ্রুপ ও টেলিগ্রাম চ্যানেলে যুক্ত না থাকলে যুক্ত হতে পারেন। নিয়নবাতির লেখাগুলো শেয়ার করতে পারেন পরিচিতদের সাথে।
আবারো সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা। আল্লাহ আপনাদের উত্তম প্রতিদান দিন।