আসসালামু আলাইকুম। সবাই ভালো ও সুস্থ আছেন আশা করছি। তেমন কিছু না, এই লেখাটা আসলে এজন্যই লেখা যে, লিখতে ইচ্ছে হলো।
এপর্যন্ত তিনবার নিয়নবাতির ইন্টারফেসে বড় ধরণের পরিবর্তন এসেছে, এছাড়া মাঝেমাঝে অল্প সময়ের জন্য কিছু এক্সপেরিমেন্ট করা হয়েছে। তবে সত্যি বলতে এতদিন পর্যন্ত নিয়নবাতির ইন্টারফেস যেরকম ছিলো, ওটা ‘মানে হ্যা ভালো, কিন্তু…’ এরকম একটা অবস্থা ছিলো, পুরোপুরি সন্তোষজনক পর্যায়ে আসতে পারেনি। তবে আলহামদুলিল্লাহ, এখন অবশেষে মনে হচ্ছে নিয়নবাতি একটা সুন্দর, কাঙ্ক্ষিত রূপে এসেছে, অন্তত নিজের চোখে। হ্যা, অবশ্যই শুধু নিজের কাছে ভালো লাগলেই হলো এমন না, তবে নিজেরই যদি ভালো না লাগে, অন্যদেরই বা কেন লাগবে বলুন?
Table of Contents
থিম
বর্তমানে থিম হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে ব্লকসি (Blocksy), যখন আমি কোন পরিবর্তনের কথা ভাবি, তখন খুব সহজেই আসলে ব্লকসি নামটা সবার আগে মাথায় আসে। ব্লকসির সাথে যখন প্রথম পরিচয় হয়, আমি খুবই অবাক হয়েছিলাম, একটা ফ্রি থিম হয়ে এটা যে পরিমাণ ফিচার, কাস্টমাইজেশন, ফাংশনালিটি আছে (আর একইসাথে এসইও ফ্রেন্ডলি, ফাস্ট লোডিং, রেসপোন্সিভ), তা ফ্রি থিম তো বাদ-ই থাক, পেইড থিমেও খুবই দুর্লভ। এবং সে প্রথম পরিচয় আসলে নিয়নবাতির যাত্রা শুরুর আগেই হয়েছিলো, সুলভ ভাইয়ের মাধ্যমে, এবং আমাদের আগের ব্লগ, হযবরল.বাংলাতেও ব্লকসি থিম ব্যবহার করা হত। (পরবর্তীতে .বাংলা ডোমেইনের সীমাবদ্ধতা ও অন্য কিছু দিক বিবেচনা করে বন্ধ করে দিয়ে নিয়নবাতি চালু করা হয়)।
তবে হযবরল-র ইন্টারফেস কিন্তু বর্তমান নিয়নবাতির মত মোটেও ছিলো না। ব্লকসি থিমের বড় সুবিধা এবং অসুবিধা দুটোই হলো এটা আপনাকে সর্বোচ্চ কাস্টমাইজেবিলিটি অফার করে। অর্থাৎ, ব্লকসি এতবেশি কাস্টমাইজেবল যে কাস্টমাইজ করতে গিয়ে আপনি দিশা হারিয়ে ফেলতে পারেন এবং যদি আমার মত ডিজাইন সেন্স হয়, সেক্ষেত্রে কাস্টমাইজ শেষে এরকম কিছুতে এসে পৌঁছাতে পারেন:
হযবরল-তে আমরা ব্লকসি থিমের সাথে ডার্ক কালার ব্যবহার করতাম, কিন্তু নিয়নবাতির জন্য হযবরল থেকে আরো সিম্পল, স্বচ্ছন্দ্যময় একটা ইন্টারফেস চাইছিলাম। ব্লকসি কিন্তু আমি নিয়নবাতিতে আগেও কয়েকবার ট্রাই করেছি, কিন্তু নিজের কাছেই মনে হচ্ছিলো বেশি ক্লাটার্ড বানিয়ে ফেলছি, মনমত লুকে আনতে পারছিলাম না। এজন্য, যদিও ব্লকসি আমার প্রিয় থিম আগেও ছিলো, তারপরও নিয়নবাতিতে প্রথমে GoodSite Pro ও পরবর্তীতে Vihan থিম ব্যবহার করি।
তবে এই দুটো থিম আমাকে মোটেও পুরোপুরি স্যাটিস্ফাই করতে পারেনি, ‘মানে হ্যা ভালো, কিন্তু…’ এরকম একটা অবস্থা বোধ করছিলাম। তাই আবারো যখন পরিবর্তন আনার কথা ভাবলাম, ব্লকসিকে-ই বেছে নিলাম। ফান ফ্যাক্ট, GoodSite Pro আর Vihan পেইড থিম ছিলো (যদি Vihan থিমফরেস্টে সীমিত সময়ের জন্য ফ্রি আইটেম হিসেবে পাওয়া), তবে ব্লকসি ফ্রি। এর একটি পেইড ভার্সন আছে বটে, তবে ফ্রি ভার্সনটি যথেষ্ট প্রিমিয়াম। এখানে প্রায় সবরকম কাস্টমাইজেশন আপনি সরাসরি ওয়ার্ডপ্রেস কাস্টমাইজারে লাইভ প্রিভিউসহ করতে পারেন। যদিও অল্প কয়েকটা ক্ষেত্রে (যেমন পোস্ট হোভার ইফেক্ট) সিএসএস প্রয়োজন হতে পারে।
বাই দা ওয়ে, ব্লকসি কিন্তু ফ্রি ভার্সনেও ফুটার ক্রেডিট (Powered by CreativeThemes) রিমুভ করা বা পরিবর্তনের সুযোগ দেয়, তবে ক্রেডিট দেয়াটা ভালো, নয় কি?
কালার
প্রথমদিকে আমরা #0088AA কালারকে প্রাথমিক কালার হিসেবে ব্যবহার করতাম, কেননা সত্যি বলতে নিয়নবাতি ব্লগের শততম পোস্ট (নিয়নবাতির আলো…) লেখার আগে আমার জানা ছিলো না নিয়নের প্রকৃত কালার ক্রিমসন। তাই এরপর আমরা ক্রিমসন (#DC431C) কালারকে প্রাথমিক হিসেবে নির্ধারণ করি। বর্তমানে এর সাথে সহায়ক কালার হিসেবে #f74d67 ব্যবহার হচ্ছে এবং তার সাথে সাদা ও কালোর মধ্যে কয়েকটি শেড।
মেইন ব্লগ এরিয়াতে লাইট কালার ব্যবহার হয়েছে, কেননা, এটার সাথে কমবেশি সবাই অভ্যস্থ। তবে একটু এক্সাইটমেন্ট আনার জন্য হেডার, ফুটার ও সাইডবার এরিয়াগুলোতে ডার্ক কালার দিলাম। আই হোপ, এই মিক্স-আপটা খারাপ দেখাচ্ছে না…
অবশ্য অনেকেই এখন ডার্ক মোড প্রিফার করেন, এখন পর্যন্ত নিয়নবাতিতে ডার্ক মোড ইমপ্লিমেন্ট করা হয়নি, তবে পরীক্ষামূলকভাবে কিছু কাস্টম সিএসএস চেষ্টা করে দেখেছিলাম, যেটা সিস্টেম কালার মোড অনুযায়ী ডার্ক মোডে সুইচ করবে, ওপরের ছবিতে দেখতে পাচ্ছেন। এখানে কাজ অবশ্য অসমাপ্ত।
ফন্ট
গুগল ফন্টের মধ্যে প্রথমে Mina ফন্টটি ব্যবহার করেছিলাম। তবে আল মাহমুদ ভাইয়ের পরামর্শে Hind Shiliguri-তে পরিবর্তন করি। আরো কিছু বাংলা ওয়েব ফন্ট ট্রাই করেছিলাম অবশ্য, এটাই বেটার লাগলো।
লোগো ও হেডার
আমার ডিজাইন সেন্স কেমন, তা নিয়ে আমার কিছু বলতে হবে না, ছবি কথা বলবে। নিয়নবাতির জন্য এই পর্যন্ত সহজেই শখানেকের বেশি লোগো ডিজাইন ট্রাই করেছি, যার মধ্যে অর্ধশত ছবিতে দেখে নিশ্চয়ই আমার অবস্থা অনুমান করতে পারছেন।
তবে নিয়নবাতির সর্বশেষ লোগোটি তৈরি করতে নতুনভাবে একবারই ট্রাই করা এনাফ ছিলো, সময় লেগেছে মিনিট চার হয়ত, জাস্ট GIMP-এ লেখার সাথে ড্রপ শ্যাডো দেয়া। আগের লোগোও একইভাবে করেছিলাম, পরিবর্তন বলতে শুধু ফন্ট (Li Sirajee Sheikh Unicode) আর শ্যাডোর সেটিংস। একচুয়ালি এটা বরাবরের মতই একটা র্যান্ডম ট্রাই ছিলো, কিন্তু শুরুতেই ফাইনাল রেজাল্ট পছন্দ হয়ে যাওয়াতে বেশি সময় লাগেনি। সবচেয়ে ভালো ব্যাপার হলো লাইট এবং ডার্ক উভয় ব্যাকগ্রাউন্ডে এটা মানানসই।
হেডারে প্রথমে লাইট কালারের ওপর লোগো দিয়ে দেখলাম ভালোই দেখায়, তবে ডার্ক ব্যাকগ্রাউন্ড সেট করে অনেকটা অবাক হয়েই দেখলাম সেই ঝাঁকানাকা একটা ভাব লাগে 😛 অবশ্য তিন সারির হেডার দেয়া নিয়ে একটু ডাউটে ছিলাম, যেহেতু আমার টার্গেট ছিলো ডিজাইনকে সিম্পল ও কমফোর্টেবল রাখা, কিন্তু মনে হলো, এভাবেই যথেষ্ট সুন্দর দেখাচ্ছে, আর লোগো, সোশ্যাল আইকন, দুটো মেনু এবং অবশ্যই বিজ্ঞাপন সবকিছুর জায়গা করে দিতে তিনটা সারি আসলেই প্রয়োজন। তবে ব্যাপারটাকে সিম্পলের মধ্যে রাখতে কোন সারি-ই স্টিকি করিনি (পরবর্তীতে ন্যাভিগেশনের সুবিধার কথা ভেবে একটি সারি স্টিকি করা হয়েছে)।
বিজ্ঞাপনের প্রসঙ্গ যেহেতু যেভাবেই হোক একটুখানি চলেই এসেছে, তাই একটুখানি বিজ্ঞাপন দিয়ে নিই যে, নিয়নবাতির কার্যক্রম অব্যহত রাখার জন্য বিজ্ঞাপনের প্রয়োজন সত্যি বলতে খুব বেশি অনুভব করি। তবে আমাদের ধর্ম ও সংস্কৃতির সাথে অসামঞ্জস্যপূর্ণ বিজ্ঞাপন থেকে মুক্ত থাকতে আমরা তৃতীয়পক্ষের কোন এড নেটওয়ার্ক ব্যবহার করি না। নিয়নবাতিতে বিজ্ঞাপন দেয়া নিয়ে আরো জানতে দেখুন: নিয়নবাতি বিজ্ঞাপন নীতিমালা
ব্লগ এরিয়া
এখনকার সময়ে গ্রিড স্টাইল-ই জনপ্রিয়, নিয়নবাতিতেও এতদিন তা-ই ব্যবহার হয়েছে। তবে অতীতের অভিজ্ঞতা থেকে মনে হয়েছে, লিস্ট স্টাইল বরং বেশি সুবিধাজনক, যেহেতু প্রতি সারিতে একটা-ই পোস্ট, স্ক্রল করার সময় এদিক-ওদিক তাকাতে হয় না। আর কালারের ব্যাপারে যেমনটা বলেছিলাম, ডার্ক মোড হয়ত অনেকের পছন্দ, তবে অনেকেই তাতে অনভ্যস্থ হতে পারেন। তাই ব্লগ এরিয়া-তে লাইট ব্যাকগ্রাউন্ড ব্যবহার-ই ভালো মনে করলাম।
সাইডবার
যেটা হয়, ব্লগের নতুন পোস্টগুলো সামনে থাকলেও একটু পুরনো পোস্টগুলো সময়ের সাথে হারিয়ে যায়। আর তাই সাইডবারে র্যান্ডম পোস্ট রেখেছি, প্রতিবার রিলোডে বিভিন্ন সময়ে প্রকাশিত পোস্টগুলো দেখাবে। এজন্য অবশ্যি একটা প্লাগইন ব্যবহার হয়েছে, “Advanced Random Posts Widget”।
সাইডবারে সচারচর যে উইজেটগুলো রাখা হয়ে থাকে, যেমন ক্যাটাগরী, আর্কাইভ, রিসেন্ট কমেন্ট প্রভৃতি, সেগুলো অবশ্য রাখা হয়নি, কারণ একটা প্রধান লক্ষ্য ছিলো সবকিছু সিম্পল রাখা। ক্যাটাগরীগুলো মেনুতেই আছে। যেহেতু এটা কোন নিউজপেপার না, আর্কাইভের প্রয়োজন ততটা আছে বলে মনে করিনি। তবে নিউজলেটার আর বিজ্ঞাপন অবশ্য রাখা হয়েছে, কোম্পানির প্রসার ও বিকাশের জন্য 👀।
সবশেষে
চেষ্টা করা হয়েছে নিয়নবাতির নতুন ইন্টারফেসকে আমাদের অডিয়েন্সের জন্য সহজ, স্বচ্ছন্দ্যময় ও এলিগেন্ট রাখতে। আপনাদের ফিডব্যাক আমাদের জন্য খুব বেশি গুরুত্বপূর্ণ। তাই নিয়নবাতির বর্তমান ইন্টারফেস আপনার কেমন মনে হয়েছে, আর এখানে কী কী পরিবর্তন আনলে তা আরো ভালো হতে পারে তা নিয়ে কমেন্ট বক্সে আপনার অভিমতের অপেক্ষায় রইলাম।