৩ বছর ১০ মাসের মধ্যে নামের শুরুতে “ইঞ্জিনিয়ার” শব্দ যুক্ত করতে পারার ব্যাপারটা আকর্ষণীয় শোনায়, তবে এর প্রক্রিয়াটা মোটেও তেমনটি নয়। জীবনকে যতরকমে দুর্বিসহ করে তোলা দরকার হয়, তা করেই আসলে IUT এই সময়ের মধ্যে তাদের BSc Engineering কোর্স সমাপ্ত করে থাকে। যদি বড় ভাইদের কথায় কারো এই বিশ্বাস জন্মে থাকে, ভার্সিটিতে উঠলে কোন প্যারা নেই, চিল, তাহলে অন্তত ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার শখ থাকলে ওসব কথা ভুলে যাওয়াই ভালো।
IUT-তে আমাদের ক্লাস শুরু হয়েছিলো ৭ জুন এবং নিয়নবাতিতে আমি সর্বশেষ পোস্ট করেছিলাম ৮ জুন। বলছি না এই ১ মাস ১৫ দিন পোস্ট না করার একমাত্র কারণ IUT, তবে অবশ্যই সবচেয়ে বড় কারণ ওটাই। অ্যাসাইনমেন্ট করেই কূল পাইনে, আর ব্লগ 😅 এই লেখা শুরু করেছিলাম ৯ জুন এবং পাবলিশ করছি আজ, ২৩ জুলাই ২০২১, যখন ঈদের ছুটি চলছে।
তবে সত্যি কথা বলি, ভার্সিটি জীবনের শুরুর সময়গুলো আমার কাছে চমৎকার লাগছে আলহামদুলিল্লাহ। গতিময় জীবনে এক আশ্চর্য ছন্দপতনে সবকিছু যেন বদলে গেছে, অনেকের জন্যই সময়টা চলছে এক অদ্ভুত অনিশ্চয়তার মাঝে। কাঙ্ক্ষিত ছুটিগুলো খুব বেশি অনাকাঙ্ক্ষিত হয়ে গেছে এতদিনে। আমার সাথে এডমিশন পরীক্ষার্থী অনেকেরই কাঙ্ক্ষিত ভার্সিটিগুলোতে এখনও এক্সামের কোন ঠিকঠিকানা নেই। এসবের মাঝেও একটা পছন্দনীয় জায়গায় ভর্তি হয়ে ভার্সিটি অধ্যায়ের শুরু করতে পারার জন্য আমার রবের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে শেষ করা যাবে না। আলহামদুলিল্লাহ।
IUT বা Islamic University of Technology বাংলাদেশে অবস্থিত একমাত্র আন্তর্জাতিক ইউনিভার্সিটি, যেটা OIC পরিচালনা করে। স্থাপত্যের নান্দনিকতা ও ক্যাম্পাসের সৌন্দর্য্যের জন্য “লাল স্বর্গ” পরিচিতি পাওয়া IUT-র ক্যাম্পাস স্বচক্ষে দেখতে পারিনি এখনও, শিক্ষক-সহপাঠীদের সাথে যোগাযোগগুলোও শুধু ভার্চুয়াল জগতে। অফলাইন ক্লাস শুরু করতে না পাওয়ার অপ্রাপ্তিবোধ নিশ্চয় আছে, তবু প্রাপ্তি তার চেয়ে অনেক বেশি, কারণ ভর্তি পরীক্ষা দেয়ার আগে কিংবা পরে IUT নিয়ে চিন্তা করার সুযোগটুকু আসলে সামান্যই ছিলো। আবারও আলহামদুলিল্লাহ।
পড়াশোনা নিয়ে আসলে কখনোই আমি সিরিয়াস ছিলাম না, অন্যদের যেমন একটা এম্বিশন থাকে, ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার হতেই হবে, আমার ওরকমটা ঠিক কখনোই ছিলো না। এমনকি IUT-র সাথে আমার প্রথম পরিচয় হয়েছিলো তখন, যখন আব্বাজান এখানে এডমিশনের জন্য অ্যাপ্লাই করতে বললো। তবে সত্যি বলতে এটা অল্প সময়ের পরিচয়ে ভালো লেগে যাওয়ার মতই কিছু।
ভর্তি পরীক্ষা অবশ্য সরাসরিই হয়েছিলো। অন্যবছর শুধু IUT ক্যাম্পাসে এডমিশন টেস্ট হলেও এবারের পরিস্থিতির কারণে ৫টি সেন্টারে তারা এডমিশন টেস্ট নেয়, আমি পরীক্ষা দিয়েছিলাম RUET সেন্টারে। পরীক্ষা দিয়ে অবশ্য বোঝা হয়ে গেসিলো IUT আসমানে উড়ে উড়ে বহুদূরে ফুরুৎ হয়ে গেছে, ওসব দিবাস্বপ্ন না দেখাই ভালো। প্রশ্ন পাওয়ার পর সহজ ভাষায় কান দিয়ে ধোঁয়া বের হচ্ছিলো (মাগো মা, এসব কী!)…
পরীক্ষা ১৯ মার্চ, রেজাল্ট দেয়ার কথা ২৩ মার্চ। কিন্তু পরদিন ২০ মার্চ রাতেই বন্ধু কামরুজ্জামান নূরের মেসেজ! আলহামদুলিল্লাহ, এটা সত্যি অসাধারণ একটা অনুভূতি ছিলো আর সত্যি বলতে ৫৯১ পজিশন যেমনই মনে হোক না কেন, আমি এরকম কিছুর এক্সপেক্টেশনও করতে পারছিলাম না। IUT-তে ভর্তি হওয়ার ব্যাপারে আমার শিক্ষকগণসহ যাদের সাথে পরামর্শ করা হয়েছে, সবাই খুব পজিটিভ ছিলেন, সব মিলিয়ে ভর্তি হয়ে গেলাম, আর কোন এডমিশন টেস্ট দেয়ার আর চিন্তা নেই।
এখন অবধি এডমিশন, রেজিস্ট্রেশন, অরিয়েন্টেশন, ক্লাস সবই অনলাইনে হচ্ছে। তবে অনলাইন বলে কোন ছাড় নেই, ক্লাস তো চলছেই, সাথে ল্যাব ক্লাস, অ্যাসাইনমেন্ট, হোমওয়ার্ক, কুইজ সবকিছুই। অনলাইনের ক্ষেত্রে কিছু লিমিটেশন অনলাইনে অবশ্যই আছে, বিশেষ করে ল্যাব ক্লাসের এক্সপেরিমেন্টগুলো ততটা হাতে-কলমে হয় না, বা সবকিছু এখানে সম্ভবও না, সেগুলো অফলাইন শুরু হলে হওয়ার কথা ইন শা আল্লাহ, সেদিন কবে আসে কে জানে!
আমি আছি বৈবৈপ্র বিভাগে। বৈবৈপ্র মানে বৈদ্যুতিক ও বৈদ্যুতিন প্রকৌশল, EEE, মানে ইলেকট্রিকাল এন্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং, অবশ্য বাংলায় একে তড়িৎ প্রকৌশল বলে, বৈবৈপ্র নামটা কাইন্ড অফ আমার দেয়া (শাব্দিক অনুবাদ), হাহা! সাবজেক্টগুলো নিয়েও তেমন পূর্বধারণা ছিলো না, চয়েস দেয়ার সময় গবেষণা করে বেশ কিছু সাবজেক্ট রিভিউ দেখে, পরামর্শ করে এটাই পছন্দ হলো বেশি।
বৈবৈপ্র আইইউটির সবচেয়ে বড় বিভাগ। একমাত্র এখানেই তিনটি সেকশন আছে, আমি সি সেকশনে, একরকম স্পেশাল, যেহেতু আইইউটির একমাত্র সি শাখা এটা। অন্য বিষয়গুলোতে দুটির বেশি শাখা নেই। অফলাইনে বগুড়া থেকে আসা দুজন বাদে কারো সাথে সাক্ষাৎ না হলেও খুব দ্রুতই অবশ্য ক্লাসমেটদের সাথে ভার্চুয়াল পরিচয় ভালোভাবেই হয়েছে, আর সবমিলিয়ে অনলাইন বলে যে কারো সাথে ইন্টারএকশন নেই, এটা ততবেশি বোধ হয় না, অন্তত উদ্ভাসের মত তো নয়ই!
এবার পড়াশোনার কথায় আসি। আমাদের ক্লাস শুরু হয়েছে ৭ জুন, আর একদম শুরু থেকেই ক্লাস চলছে রেগুলার রুটিন ধরে। সকাল ৮টা থেকে ৫টা পর্যন্ত সময়কালের মধ্যে ৫ ঘন্টার মত ক্লাস থাকে দিনে, যেটা প্রতিদিন এক নয়, কোন কোন দিন হয়ত দুটো ক্লাস থাকে, কোনদিন ছয়টা। সাধারণ ক্লাসগুলো সোয়া এক ঘন্টা, ল্যাব ক্লাসগুলো আড়াই ঘন্টা। সপ্তাহে দুদিন ছুটি, সেটা শনি আর রবি, শুক্রবার ক্লাস থাকে।
সকাল ৮টা একটু যন্ত্রণাদায়ক বোধ হলেও ইন্টারন্যাশনাল শিক্ষার্থী যারা আছে আমাদের সাথে তাদের অবস্থা বেশিই করুণ। আইইউটিতে অন্যান্য ওআইসি সদস্য দেশগুলোর জন্য বরাদ্দ ৮০টি স্কলারশিপের ৪০টিই বৈবৈপ্র বিভাগে, আমাদের সাথে উগান্ডা, ক্যামেরুন, সোমালিয়া, ইয়েমেন, সৌদি আরব প্রভৃতি দেশ থেকে ক্লাসমেটরা আছে এবং সেখানে ভোর ৫টা এমনকি ক্যামেরুনে রাত ৩টায় ক্লাস শুরু করতে হয়! (ফিলিং মটিভেটেড?)
দীর্ঘ সময়ের ক্লাস অবশ্য খুব বেশি যন্ত্রণাদায়ক বোধ হয় না, কেননা অফলাইন ক্লাসে ঘুমানোর দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা আছে, আর এ তো অনলাইন, হাহা! ঘাপলা হইলো অ্যাসাইনমেন্টের ওপর অ্যাসাইনমেন্ট, কুইজের ওপর কুইজ দিয়ে শান্তিতে রাতের ঘুমটুকু ঘুমানোর সুযোগ আইইউটি কম-ই দেয়। সময় এখানে চলে না, দৌঁড়ায়। এই গত মাসেই শুরু করলাম, আর আগামী মাসের ১৬ তারিখেই মিড টার্ম শুরু হচ্ছে, এটা কোন কথা?
যাইহোক, লেখা আর দীর্ঘায়িত করছি না, সারসংক্ষেপ হলো জীবনে এখন প্রচুর প্যারা, তবে এত প্যারার মাঝেও একটা আনন্দ আছে আলহামদুলিল্লাহ, সব মিলিয়ে ভালোই চলছে দিনকাল। নিয়নবাতি ব্লগে আবারও নিয়মিত হওয়ার চেষ্টা করছি ইন শা আল্লাহ। আর অপেক্ষায় আছি অফলাইন কার্যক্রম শুরু হওয়ার, আল্লাহ আমাদের জন্য পরিস্থিতি অনুকূল করে দিন, আমিন। সবাই সবার জন্য দুয়া করবেন এবং আমাকেও আপনাদের দুয়ায় স্মরণে রাখবেন।
আসসালামুয়ালাইকুম বন্ধু। আমিতো শুনছিলাম কসাই এখন শুনি বৈবৈপ্র। যাক আলহামদুলিল্লাহ, শিশির আশরাফ আর লুৎফর মেডিকেলে আর তুই বন্ধু আইউটিতে। মনটা খুশিতে ভইরা গেছে যখন শুনছি। ভালো কথা, আমার কথা মনে আছে? আর বৈবৈপ্র 😂
ওয়া আলাইকুমুস সালাম। শুকরিয়া বন্ধু। হ্যা, অবশ্যই মনে আছে। ❤️