স্মার্টফোন ডিসপ্লে সাইজ: যেখানে অনেকেই বিভ্রান্ত হয়!

বর্তমান সময়ে আমরা বাজারে বড় ডিসপ্লে-র ফোন অহরহ দেখি, একটু ছোট ডিসপ্লে-র ফোন-ই বরং দেখা পাওয়া মুশকিল। স্মার্টফোন নিয়ে লিখতে গেলে এখন প্রায় প্রতিটা লেখাতে ডিসপ্লে সাইজ নিয়ে কিছু বলার প্রয়োজন অনুভব করি। সব পোস্টে একই কথা লিখলে ব্যাপারটা ভালো দেখায় না, আর বিষদে ওভাবে লেখাও যায় না, তাই মনে হলো আলাদা একটা পোস্ট করাটা ভালো হবে। বলে রাখা ভালো, এখানে কিছু কথা আমার অভিজ্ঞতালদ্ধ অভিমত, এবং মার্কেটিংয়ের ব্যাপারে আমি খুব কম-ই বুঝি, তাই আমার মত সবার সাথে মিলবে বা আমার মত-ই সঠিক হবে, এমনটা আমি বলছি না।

আগেকার দিনে 6″ ডিসপ্লে হলে সেটা হতো ফ্যাবলেট, 7″ ডিসপ্লে হলে ট্যাবলেটের পর্যায়ে পড়ত। অথচ এখন 7″ ডিসপ্লে ডালভাত হয়ে গেছে সাধারণ স্মার্টফোন লাইনআপে। ঘটনা কী হলো, আগে যে সাইজ মানুষ ট্যাব হিসেবে ধরত, তা এখন স্মার্টফোনের মত পকেটে নিয়ে ঘুরে বেড়ায়, কেমন যেন বেশি বড় বলে ফিল-ও হয় না? আসলে এখানে ছোট্ট একটা ব্যাপার আছে, আগের 7″ আর এখনকার 7″ সমান নয়।

অদ্ভুত লাগছে? আরো অদ্ভুত কথা বলি তাহলে। আগেকার দিনের 6″ একটা ডিসপ্লে আসলে বর্তমান সময়ের 6.43″ ডিসপ্লে থেকে বড়। মজা নয়, আমি সত্যি বলছি। সিম্পল ব্যাপার আপনাকে বুঝতে হবে স্মার্টফোন ডিসপ্লে আয়তাকার হয়, আর এর মাপটা করা হয় কোণাকুণি। আয়তক্ষেত্রের কর্ণ সমান হলেও দৈর্ঘ্য-প্রস্থের অনুপাতের ওপর ক্ষেত্রফল নির্ভর করে। দৈর্ঘ্যের অনুপাতে প্রস্থ যত বেশি হবে, ক্ষেত্রফলও তত বেশি হবে। যদি দৈর্ঘ্য-প্রস্থ সমান হয়, অর্থাৎ বর্গাকার হয়, তখন ক্ষেত্রফল সবচেয়ে বেশি হবে।

আগেকার দিনে 16:9 রেশিওর ডিসপ্লে প্রচলিত ছিলো। পীথাগোরাসের সূত্র আর ঐকিক নিয়মের সূত্র দিয়ে বের করতে পারবেন 16:9 রেশিওর একটা 6″ ডিসপ্লের প্রস্থ 2.942″, দৈর্ঘ্য 5.229″ এবং ক্ষেত্রফল 15.38 sq inch। অন্যদিকে এখনকার 20:9 রেশিওর 6.43″ ডিসপ্লের প্রস্থ 2.639″, দৈর্ঘ্য 5.837″ এৰং ক্ষেত্রফল 15.4 sq inch। মানে কিনা কোম্পানিগুলো আপনাকে বড় ডিসপ্লে দিচ্ছে, আপনিও খুশিমনে কিনছেন, কিন্তু দিনশেষে আপনি পাচ্ছেন একটা লম্বা ডিসপ্লে, যেখানে প্রস্থ পূর্বের দিনের আরো ছোট ডিসপ্লে থেকেও অনেক কম!

আমি জানি, অনেকেই বড় ডিসপ্লে চান, বড় ডিসপ্লে পছন্দ করেন। আমিও ইবুক পড়া কিংবা লেখালেখির ক্ষেত্রে একটা বড় ডিসপ্লে কমফোর্টেবল মনে করি। কিন্তু শুধু একটা লম্বা ডিসপ্লে কিন্তু খুব বেশিজন চান বলে আমার মনে হয় না। এতে যতটা না সুবিধা, তার চেয়ে অসুবিধাই আমি বেশি দেখি। আরো সুবিধা থাকতে পারে, প্রাক্টিকালি আমি একটা দিক-ই ভালো পাই, তা হলো স্প্লিট স্ক্রিন মাল্টিটাস্কিং, মানে একসাথে দুটো অ্যাপ উপর-নিচ রেখে চালানোর ক্ষেত্রে এডভান্টেজ দেয়। আর অসুবিধার কথা বললে ল্যান্ডস্কেপ মোডের অ্যাপগুলোর জন্য প্রস্থ কম হয়ে যায়, ফুলস্ক্রিনে ভিডিও দেখলে দুপাশে ব্ল্যাঙ্ক এরিয়া থাকে, পকেটে নিয়ে ঘুরতেও অসুবিধা, ফোনের ওপরের দিকটা ব্যবহার করা, যেমন নোটিফিকেশন বার আনতে গেলে হাত পৌছানো একটু কঠিন প্রভৃতি।

মেইনস্ট্রিমে স্মার্টফোনের শুরুতে আমরা 3.5″, 4″ বা 5″ পর্যন্ত ডিসপ্লে দেখতাম। পরবর্তীতে, যখন ন্যারো বেজেল ধারণাটা জনপ্রিয় হয়, তখন একইসাথে 18:9 অ্যাসপেক্ট রেশিও জনপ্রিয় হতে থাকে। এতে ডিসপ্লে আরো বড়, যেমন 5.45″ বা 5.7″ সহজেই আগের তুলনায় অল্প এরিয়াতে দেয়া সম্ভব হয়। এরপর 19:9, 19.5:9, তারপর বর্তমানে বেশি চলছে 20:9 কিংবা 20.5:9 এমনকি 21:9 পর্যন্ত।

এখনকার সময়ের আপনি যদি একটা 6″, 6.2″, একটা 6.5″, একটা 6.8″ আর একটা 7″ ডিসপ্লের স্মার্টফোন চিন্তা করেন, এবং এদের অ্যাসপেক্ট রেশিও হয় যথাক্রমে 18:9 19:9, 20:9, 20.5:9 ও 21:9, তাহলে এদের প্রস্থ হবে যথাক্রমে 2.68″, 2.654″, 2.66″, 2.73″ ও 2.75″। মানে শুনতে পার্থক্যটা যত বড় লাগছে, হাতে নিয়ে আসলে আপনি ফিল করবেন পার্থক্যটা তত বেশি না। আর যেহেতু এরা বড় মূলত শুধু দৈর্ঘ্যে, তার মানে হলো বড় ডিসপ্লের জন্য আপনি খুব বেশি বাড়তি সুবিধাও পাচ্ছেন না।

সর্বোচ্চ ক্ষেত্রফল হওয়াটাই কিন্তু মূল কথা না, একটা ফোনের ডিসপ্লে যদি বর্গাকার হয়, তাহলে ব্যাপারটা মোটেও ভালো দেখাবে না। তবে 20:9 বা 20.5:9 রেশিও যে বর্তমানে প্রচলিত হয়ে উঠেছে, এটা মোটেও কোন আদর্শ রেশিও না আমার মতে। আগেকার ফোনগুলোতে 16:9 ব্যবহার করা হত, এখন যেহেতু চিন ও বেজেল সীমিত থাকে, নচ বা পাঞ্চহোল ব্যবহার হয়, সেক্ষেত্রে এটা এখন খুব ভালো দেখাবে না। তাই 18:9 কিংবা 19:9 রেশিও আমার মতে উপযুক্ত, প্রাক্টিকালি চিন্তা করলে।

আমি যদি বলি, 19:9 রেশিওর 6.2″ একটা ডিসপ্লে বেশিরভাগ ইউজারের জন্য পারফেক্ট হতে পারে, বা অন্তত 6.5″ 20:9 ডিসপ্লে থেকে এটা প্রাক্টিকালি বেটার। অবশ্য এটা আমার মত, জানি না সঠিক কিনা। তবে মানুষের চাওয়ার ভিন্নতা আছে, কেউ আরো কমপ্যাক্ট স্মার্টফোন পছন্দ করতেই পারেন। এজন্য সব স্মার্টফোন ডিসপ্লে একই সাইজের হতে হবে এমন কোন কথা নেই। কিছু ডিসপ্লের রেশিও 20:9 বা 21:9 হলেও ক্ষতি দেখি না, যদি তা কিছু মানুষ আগ্রহ করে কেনে। এখনো কিন্তু 16:9 অ্যাসপেক্ট রেশিওর iPhone SE কারো কাছে সমালোচিত হলেও কেউ কেউ কিন্তু এর ডিসপ্লে পছন্দ-ই করেছেন। ট্যাবগুলোতে বেশি জায়গা দিতে 14.4:9 বা এরকম রেশিও মানানসই। কাজেই বৈচিত্র আমার সমস্যা নয়।

সমস্যাটা হলো কোম্পানিগুলো কেমন যেন একঘেয়েভাবে 6.5″, 6.8″ ডিসপ্লে-ই দিয়ে যাচ্ছে, বিশেষ করে এন্ট্রি বাজেটের কথা বললে। আপনি এর থেকে ছোট ডিসপ্লে সহজে খুঁজে পাবেন না, আবার 16:9 বা 14.4:9 রেশিওর ফ্যাব বা ট্যাব পাওয়াও দুষ্কর। এই ব্যাপারটাতে পরিবর্তন আমার মনে হয় খুব দরকার। কিছু মিনিমাল ছোটখাট ডিসপ্লের ফোন, কিছু এন্ট্রি লেভেল ফ্যাব ও ট্যাবের জন্য বাজারে একটা শূন্যতা বোধ করি। যদি এন্ট্রি লেভেলে বাজারে থাকতো, তাহলে হয়ত আমি নিজের জন্য 8″ একটা ট্যাব কিনতে পছন্দ করতাম, কিন্তু বাজারে এই জায়গাটায় শূন্যতা খুব বেশি।

আমার একটা বিশ্বাস, এখনকার সময়ে যে কোম্পানি মার্কেট এনালাইসিস করে সঠিকভাবে এই বৈচিত্রগুলো আনতে পারবে, তা তাদের জন্য মার্কেটে ভালো অবস্থানে আসার পথ সুগম করবে।

3 Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *