রসায়ন

পানির ত্রৈধ বিন্দু: বরফ ও বাষ্প একই তাপমাত্রায় থাকে যেভাবে!

ত্রৈধ বিন্দুর ধারণাটা আমরা অনেকেই জানি। ত্রৈধ বিন্দুতে কোন পদার্থ একইসাথে বাষ্পীয়, তরল এবং কঠিন অবস্থায় বিরাজ করতে পারে। অর্থাৎ পানির ত্রৈধ বিন্দুতে একইসাথে তরল পানি, বরফ ও বাষ্প পাওয়া যাবে। বিষয়টা মজার, কারণ পানির স্ফুটনাঙ্ক, মানে কিনা যে তাপমাত্রায় পানি বাষ্পে পরিণত হয়, তার তাপমাত্রা হলো 100°C, অন্যদিকে হিমাঙ্ক তথা পানি জমে বরফ হওয়ার তাপমাত্রা হলো 0°C। তবে আরেকটু কথা আছে এখানে, তা হলো এই স্ফুটনাঙ্ক আর হিমাঙ্ক প্রমাণ চাপ, মানে ১ বায়ুমন্ডলীয় (1 atm) চাপ বা 101325 Pa (প্যাসকেল) চাপের জন্য হিসেব করা হয়। চাপ কম বা বেশি হওয়ার সাথে স্ফুটনাঙ্ক আর গলনাঙ্ক পরিবর্তন হয়ে থাকে। পানির কথাতে আসি, প্রমাণ চাপ থেকে চাপ যত কমতে থাকে পানির স্ফুটনাঙ্ক তার সাথে কমতে থাকে, অন্যদিকে হিমাঙ্ক বাড়তে থাকে। একটা চাপে এসে দেখা যায় স্ফুটনাঙ্ক আর হিমাঙ্কের তাপমাত্রা সমান হয়ে গেছে। চাপ বলতে পুরো সিস্টেমের মোট চাপ থেকে গুরুত্বপূর্ণ হলো পানির আংশিক বাষ্পচাপ, খুব সহজ ভাষায় বললে বদ্ধ পরিবেশে পানির বাষ্প…

আরো পড়ুনপানির ত্রৈধ বিন্দু: বরফ ও বাষ্প একই তাপমাত্রায় থাকে যেভাবে!

পদার্থবিজ্ঞান ও রসায়নের মৌলিক পার্থক্য

আসসালামু আলাইকুম। আমি যখন প্রথমদিকে, অর্থাৎ অষ্টম বা নবম শ্রেণিতে রসায়ন আর পদার্থবিজ্ঞানের ব্যাপারগুলোর সাথে প্রাথমিকভাবে পরিচিত হই, তখন আমার জন্য একটু কনফিউজিং ছিলো, এদের মধ্যে মৌলিক পার্থক্যটা আসলে কোথায়। আর আমার বিশ্বাস এটা আরো অনেকের বেলাতেই হয়েছে। এটা নিয়ে একটা সহজ ধারণা দেয়ার চেষ্টা করি। বিজ্ঞান হলো পর্যবেক্ষণ ও পরীক্ষণের ভিত্তিতে জ্ঞানার্জনের নিয়মতান্ত্রিক প্রক্রিয়া। জগতের বিস্তৃত বিষয়ের আলোচনাকে সুশৃঙ্খল ও বিষয়ভিত্তিক রাখার জন্য বিজ্ঞান বিভিন্ন শাখা এবং গবেষণার অগ্রগতির সাথে আরো উপশাখায় বিন্যস্ত হতে থাকে। তবে এই বিন্যাস দুটো শাখার মধ্যে সম্পূর্ণ সূক্ষ্মভাবে পৃথক করে দাগ কেটে দেয়, এমন না। একই বিষয় একাধিক শাখায় আলোচ্য হতে পারে, এবং শাখাগুলোর পরস্পর নির্ভরশীলতা রয়েছে। বিজ্ঞানকে আমরা প্রধানত তিনটি ভাগে ভাগ করি, যেমন প্রাকৃতিক বিজ্ঞান, সামাজিক বিজ্ঞান ও সাধারণ বিজ্ঞান। উইকিপিডিয়াতে এ নিয়ে আরো জানা যাবে। প্রাকৃতিক বিজ্ঞান কাজ করে প্রাকৃতিক বিভিন্ন ঘটনা নিয়ে। পদার্থবিজ্ঞান আর রসায়ন প্রাকৃতিক বিজ্ঞানের অন্তর্ভুক্ত এবং উভয়টি পদার্থ সংক্রান্ত আলোচনা করে। কিন্তু পদার্থের মধ্যেই বিষয়বস্তুতে ভিন্নতা আছে…

আরো পড়ুনপদার্থবিজ্ঞান ও রসায়নের মৌলিক পার্থক্য

রসায়নকে কেন ‘রসায়নবিজ্ঞান’ বলা হয় না?

পদার্থবিজ্ঞান বা জীববিজ্ঞানের সাথে ‘বিজ্ঞান’ শব্দটি যুক্ত করলেও রসায়নের বেলায় কিন্তু আমরা সচারচর তা করিনা। কেন করিনা, এটা কিন্তু একটু চিন্তা করলেই বোঝা যায়, আমিও কারণটা ভাবনায় পেয়েছিলাম, আমার ভাবনা ঠিক কিনা নিশ্চিত হওয়ার জন্য গুগল (না, ডাক বা পিপীলিকা করিনি) করলাম। প্রথমে যে রেজাল্টগুলো পেলাম, তাতে অন্য একজনের ‘ভাবনায় পাওয়া’ আনুমানিক উত্তর দেয়া হয়েছে, যেটা ঠিক যথার্থ মনে হলো না। যাইহোক, পঞ্চম রেজাল্টে পাওয়া উত্তরটা আমার ভাবনার সাথে মিলেছে। এখানে অবশ্যই অন্য কারো লেখা কপি করা হয়নি, শুধু কনফার্ম হওয়ার জন্য দেখছিলাম। এখন চলুন একটু চিন্তা করি, পদার্থবিজ্ঞান আর জীববিজ্ঞানের সাথে ‘বিজ্ঞান’ যোগ না করলে কোন ক্ষতি ছিলো কিনা। আলবৎ ছিলো, কারণ পদার্থের সংজ্ঞা আমরা বাচ্চাকালেই পড়েছি, যার আকার আছে, আয়তন আছে, বল প্রয়োগে বাঁধা দান করে তা-ই পদার্থ, মানুষজন যতই তাকে অপদার্থ বলুক না কেন। জীবের সংজ্ঞাও সহজে দিতে পারি, যার জীবন আছে, তা-ই জীব। তাহলে কমপ্লেক্স বা কম্পাউন্ডে যাওয়ার কোন দরকার নেই, সিম্পলি পদার্থ আর জীব বললে…

আরো পড়ুনরসায়নকে কেন ‘রসায়নবিজ্ঞান’ বলা হয় না?

নিয়নবাতির আলো…

প্রায় ১২৩ বছর আগে ১৮৯৮ সালে দুজন ব্রিটিশ বিজ্ঞানী উইলিয়াম র‌্যামসে আর মরিস ট্রেভার্স নিয়ন আবিষ্কার করেন। নিয়ন একটি নিষ্ক্রিয় গ্যাস, যেটা বায়ুমন্ডলে খুব স্বল্প পরিমাণে পাওয়া যায়। বায়ুমন্ডল থেকে বিশুদ্ধ নিয়ন আলাদা করার পর বিজ্ঞানী দুজন একটি গেইস্লার টিউবে এর ধর্ম পরীক্ষা করছিলেন। গেইস্লার টিউব ১৮৫৭ সালে আবিষ্কার করেন বিজ্ঞানী হেনরিখ গেইস্লার। এই টিউবে আংশিক চাপশূন্যতায় বিভিন্ন গ্যাসের মধ্যে বিদ্যুৎ প্রবাহ করলে আলোর উৎপত্তি ঘটে। নিয়ন গ্যাসের ক্ষেত্রে যে আলো সৃষ্টি হয়, বিজ্ঞানী ট্রেভার্সের ভাষায়, টিউব থেকে জ্বলজ্বলে ক্রিমসন আলো তার গল্প বলছিলো, আর এটা মনে গেঁথে যাওয়ার মত একটা দৃশ্য ছিলো, যা কখনোই ভোলার নয়। এটা ছিলো নিয়নবাতির সূচনার গল্প। পর্যায় সারণির দশম মৌল নিয়ন নিষ্ক্রিয় গ্যাসগুলোর একটি। এর কক্ষপথগুলোতে ইলেকট্রন পূর্ণ থাকে, তাই সহজে অন্য পরমাণুর সাথে এটি বিক্রিয়া করে না, আর কোন ইলেকট্রন সরিয়ে নিতে দরকার হয় প্রচুর শক্তি। নিয়নবাতি তৈরির জন্য নিম্নচাপে অল্প পরিমাণ নিয়নকে কাচের টিউবে নেয়া হয়, যার দুপ্রান্তে ইলেকট্রোড থাকে। এরপর এর…

আরো পড়ুননিয়নবাতির আলো…
নতুন মৌল পর্যায় সারণি

১১৯ তম মৌল কি সম্ভব? মৌলের শেষ কোথায়?

বিজ্ঞানী দিমিত্রি মেন্ডেলিফ যখন পারমাণবিক ভরের (বর্তমানে পারমাণবিক সংখ্যা) ভিত্তিতে তার পর্যায় সারণিটি তৈরি করেছিলেন, তখন সেখানে সবচেয়ে ভারি মৌলটি ছিলো ইউরেনিয়াম (₉₂U)। তবে তার পর্যায় সারণিতে মোট মৌল ছিলো ৬৩টি, কেননা, এর বেশি মৌলের আবিষ্কারের কথা তখনও জানা যায়নি। তবে তিনি এটা জানতেন যে পর্যায় সারণিতে এমন কিছু স্থান আছে, যেখানে নতুন মৌলের অস্তিত্ব সম্ভব, ফলে তার পর্যায় সারণিতে কিছু শূন্যস্থান ছিলো। পরবর্তীতে এই শূন্যস্থানগুলো পূরণ হয়েছে এবং ৯২ ছাড়িয়ে আরো ২৬টি নতুন মৌল আবিষ্কৃত হয়েছে। এমনই একটি শূন্যস্থান ছিলো ৪৩ তম মৌলের স্থানে। বর্তমানে এর নাম টেকনেশিয়াম (₄₃TC)। ১৯৩৭ সালে টেকনিশিয়াম নিশ্চিতভাবে আবিষ্কৃত হয় এবং পর্যায় সারণির একটি শূন্যস্থান পূরণ হয়। এটিই ছিলো প্রথম কৃত্রিম বা সিনথেটিক মৌল, যা মানুষ আবিষ্কার করে। বাস্তবে প্রকৃতিতে এর কোন স্থায়ী আইসোটোপ নেই। তবে আবিষ্কারের পরবর্তী সময়ে এর চিহ্ন প্রকৃতিতে পাওয়া গেছে। সাধারণভাবে প্রথম ৯২টি মৌলকে প্রাকৃতিক বিবেচনা করা হয়, যদিও তার মধ্যে কয়েকটির স্থায়ী আইসোটোপ নেই, কয়েকটি ইউরেনিয়াম ও থোরিয়ামের তেজষ্ক্রিয়…

আরো পড়ুন১১৯ তম মৌল কি সম্ভব? মৌলের শেষ কোথায়?