অনলাইন ক্লাস বা ক্লাউড মিটিংয়ের জন্য অন্যতম সেরা ৫ ফ্রি অ্যাপ!

98 views

আসসালামু আলাইকুম। সাম্প্রতিক সময়ে অনলাইন ভিডিও কনফারেন্সিং সফটওয়্যারগুলো বিশেষভাবে জনপ্রিয় হয়েছে। বিশেষ করে লকডাউনে অনেকের সর্বনাশ হলেও জুম আর গুগল মিটের যে পৌষ মাস চলেছে, তা বলাই বাহুল্য। ক্লাস কার্যক্রম, গ্রুপ স্টাডি, মিটিং, বিভিন্ন প্রোগ্রাম অনলাইনে করার চর্চাটা হয়ে গেছে ভালোভাবেই, যার প্রভাব সম্ভবত খুব দ্রুত ফুরিয়ে যাবে না।

আমাদের এই তালিকায় গুগল মিট ও জুম অন্তর্ভুক্ত আছে, এর সাথে আছে আরো তিনটি অ্যাপ, যে অ্যাপগুলো অন্তত ক্লাউড মিটিংয়ের জন্য এখনও তুলনামূলক কম জনপ্রিয়, তবে সামনে প্রথমোক্ত দুটোর আরো শক্ত প্রতিপক্ষ হয়ে ওঠার যথেষ্ট সম্ভাবনা আছে বলেই আমর মনে হয়েছে। বলে রাখি, এখানে আমরা ফ্রি ফিচারগুলো বিবেচনা করেছি, পেইড প্ল্যানগুলো নয়। এবং এই তালিকাটি আমার নিজের অভিজ্ঞতা থেকেই করা হয়েছে, কাজেই আমার কাছে যে ফিচারগুলো বেশি গুরুত্ব পেয়েছে, সবক্ষেত্রে তা প্রযোজ্য না হওয়াই স্বাভাবিক।

Zoom (জুম)

গ্রুপ স্টাডি ও এধরণের ডিসকাশনের ক্ষেত্রে জুম আমার কাছে অনেকটা অপ্রতিদ্বন্দ্বী মনে হয়েছে, এর ডকুমেন্ট শেয়ারিং ও স্ক্রিন অ্যানোটেশন ফিচারের জন্য। গ্রুপ স্টাডিতে এই ফিচার খুবই কাজে আসে। জুম ব্যবহার করা সহজ, পাশাপাশি এক্সট্রা ফিচার ও ফাংশনালিটিতে সমৃদ্ধ। মিটিং চলাকালীন ওয়ান-টু-ওয়ান অথবা সবার সাথে মেসেজিংয়ের অপশন আছে। ভার্চুয়াল ব্যাকগ্রাউন্ডসহ জুমে বেশকিছু এক্সট্রা ফিচার আছে, যা সবসময় দরকার না হলেও কিছুক্ষেত্রে বেশ ভালো কিংবা মজার।

অবশ্য জুমের ফ্রি প্ল্যানটিতে যথেষ্ট সীমাবদ্ধতাও রয়েছে। ৪০ মিনিটের নির্ধারিত সময়সীমা বিশেষ করে অধিক সদস্যের মিটিংগুলোতে বেশ সমস্যা বোধ হতে পারে। একটি Personal Meeting ID ব্যতীত একাধিক পুনঃব্যবহারযোগ্য লিঙ্ক তৈরি করা যায় না। একসাথে একাধিকজন স্ক্রিন শেয়ারের সুযোগ নেই। রেকর্ডিং ফিচার নেই। সর্বোচ্চ ১০০ জন একটি মিটিংয়ে অংশ নেয়া যায়, যেটি বেশ চমৎকার।

সাধারণত গ্রুপ স্টাডির ক্ষেত্রে জুম আমার ডিফল্ট চয়েস, আর হ্যা, আমাদের অনলাইন ক্লাসগুলোও জুম অ্যাপে হয়।

Discord (ডিসকর্ড)

একটা সময়ে গেমারদের মধ্যে জনপ্রিয় হলেও এখন বিভিন্ন কমিউনিটি, স্টাডি গ্রুপ প্রভৃতি গড়ে তোলার ক্ষেত্রে ডিসকর্ড একটি পরিচিত নাম। ডিসকর্ডের ভিডিও কল ফিচারটির ইন্টারফেস বেশ সুন্দর, জুমের মত এখানে সময়ের বাঁধা নেই, একসাথে একাধিকজন স্ক্রিন শেয়ার করতে পারে এবং একটি সার্ভারে একাধিক ভয়েস চ্যানেল, মেসেজিং চ্যানেল প্রভৃতি অন্তর্ভুক্ত করা যায়।

পিসির ক্ষেত্রে স্পেসিফিক উইন্ডো শেয়ার করার অপশন আছে, তবে জুমের মত ডকুমেন্ট শেয়ার বা অ্যানোটেশন ফিচার নেই। এখানে ২৫ জন সর্বোচ্চ একটি মিটিংয়ে অংশ নিতে পারে, যেটা অনেকক্ষেত্রে যথেষ্ট না-ও হতে পারে। এখানে মিটিং রেকর্ড করে রাখার অপশন নেই।

বন্ধুদের নিয়ে আড্ডা, বা কয়েকজন মিলে কোনকিছু স্ট্রিমিং দেখা এরকম ব্যাপারগুলোতে ডিসকর্ড একটি সুন্দর চয়েস মনে হয়েছে।

Jitsi Meet (জিটসি মিট)

এটা কিছুটা অপরিচিত একটা নাম এবং সত্যি বলতে আমিও এটা খুব একটা ব্যবহার করিনা, তবে এত অসাধারণ ফিচার থাকার পরও এর জনপ্রিয়তা কেন এতটা কম এটা একটু অবাক-ই করেছে। তবে প্লে স্টোরে এর অবশ্য বেশ কিছু নেগেটিভ রিভিউ চোখে পড়েছে, মাইক্রোফোন, নেটওয়ার্ক রিলেটেড ইস্যু প্রভৃতি নিয়ে, তবে আমার স্বল্প সময়ের অভিজ্ঞতায় তেমন কিছু অনুভব এখনও করিনি।

জিটসি মিট ফ্রি ও ওপেন সোর্স এবং এটা ওয়েব ব্রাউজার থেকে সরাসরি ব্যবহারযোগ্য পিসিতে এবং মোবাইলে, এছাড়া মোবাইলের জন্য অ্যাপও রয়েছে। এখানে একটা মিটিং শুরু করা বা জয়েন করা খুবই সহজ, https://meet.jit.si/meetigname এরকম লিঙ্কে গিয়ে একটি নাম দিয়ে সরাসরি মিটিং চালু করা যায় এবং প্রথমে লিঙ্কটিতে প্রবেশ করলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে মডারেটর হওয়া যায়, পরবর্তীতে একই লিঙ্কে অন্যরা জয়েন করতে পারে। meetingname এর জায়গায় পছন্দের নাম দিতে হবে, নামের বেলায় সিক্যুরিটির দিকটি খেয়ালে রাখা ভালো। এছাড়া কোন মিটিং URL বুক করেও রাখা যায়।

এটা আমার কিছুটা জুমের মত মনে হয়েছে, ভার্চুয়াল ব্যাকগ্রাউন্ড, রেইজ হ্যান্ড সহ কিছু কিছু ফিচারে জুমের সাথে মিল আছে। এখানে সরাসরি ইউটিউব ভিডিও শেয়ার করা যায়, ভিডিও রেকর্ড করে ড্রপবক্সে রাখা যায়, পোল ক্রিয়েট করা যায়, এমনকি ইউটিউবে সরাসরি স্ট্রিম করা যায় (ট্রাই করিনি), অন্য ওয়েবসাইটে মিটিং এম্বেড করা যায় প্রভৃতি বেশ চমৎকার কিছু ফিচার।

সব মিলিয়ে Jitsi Meet আমার মতে Worth giving a try!

Telegram (টেলিগ্রাম)

টেলিগ্রামের জনপ্রিয়তা যদিও ইন্সট্যান্ট মেসেজিং অ্যাপ হিসেবে, তবে এখানে কিন্তু বর্তমানে ভিডিও চ্যাট/লাইভ স্ট্রিম ফিচার যুক্ত হয়েছে। কোন একটি চ্যানেল থেকে লাইভ স্ট্রিম বা গ্রুপ থেকে ভিডিও চ্যাট শুরু করা যায়। ইন্টারফেস বেশ চমৎকার করেছে তারা, কিছু স্মুথ এনিমেশনসহ।

টেলিগ্রামের এই ফিচারটি কিছুটা নতুন এবং প্রতিটি আপডেটে আরো উন্নত হচ্ছে। বেস্ট ব্যাপার হলো এখানে পার্টিসিপেট সংখ্যা আনলিমিটেড, যদিও একসাথে সর্বোচ্চ ৩০ জন পর্যন্ত ভিডিও অন বা স্ক্রিন শেয়ার করতে পারে, আর এখানে টাইম লিমিটের বাঁধা নেই এবং ভিডিও কলগুলো রেকর্ড করে রাখা যায়।

তবে একটি বড় ধরণের সমস্যা আছে, তা হলো আমাদের পর্যবেক্ষণে স্ক্রিন শেয়ার চালু থাকলে অন্যদের কথাগুলোতে প্রচুর ইকো হয় এবং এই সমস্যাটি শুধু স্ক্রিন শেয়ারকারীর দিকেই হয়। সামনের আপডেটগুলোতে এটি দ্রুত ফিক্স করা প্রয়োজন।

তবে অনেকজনের সাথে কোনকিছু স্ট্রিমিংয়ের মাধ্যমে উপভোগ বা টেলিগ্রাম গ্রুপে যোগাযোগের জন্য টেলিগ্রামের ভিডিও চ্যাট বেশ চমৎকার। টেলিগ্রামের ভিডিও চ্যাট ফিচারটির পূর্ণ অভিজ্ঞতার জন্য লেটেস্ট ভার্সনে আপ টু ডেট থাকা প্রয়োজন, যেহেতু প্রতিটি আপডেটে এতে নতুন ফিচার যুক্ত হচ্ছে।

গুগল মিট (Google Meet)

এখানে যে পছন্দের ধারাবাহিকতা বা এরকম কোন ক্রমে অ্যাপগুলো সাজানো হয়েছে এমন নয়, তবে গুগল মিট তালিকার শেষে রাখার কারণ, আসলে শুরুতেই বলেছি, এই তালিকাটি আমার নিজের অভিজ্ঞতাভিত্তিক, এবং বিশেষ করে গুগল মিটের অ্যান্ড্রয়েড ভার্সনটি আমার কাছে কখনোই ততটা পছন্দ হয়নি, বেশ লিমিটেড একটা ফিল হয় ইন্টারফেস ও সীমিত সেটিংসের কারণে। এছাড়া অডিও-ভিডিও কোয়ালিটিতে অন্য অপশনগুলো আরো ভালো মনে হয়েছে।

গুগল মিটে সর্বোচ্চ ১০০ জন পর্যন্ত ১ ঘন্টার মিটিংয়ে অংশ নিতে পারে। ১ ঘন্টার সময়সীমা করোনার প্রাদুর্ভাবের সময়টাতে সাময়িক বাদ দেয়া হয়েছিলো, যেটা এখন আবার প্রযোজ্য হচ্ছে। আমি জানি অনেকেই বিভিন্ন কারণে জুমসহ অন্য অ্যাপগুলো থেকে মিট প্রিফার করেন, তবে আমার দিক থেকে সাধারণভাবে আমি অন্য বিকল্পগুলোই বেছে নিই।


ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের জন্য কোন অ্যাপগুলো সাধারণত আপনি ব্যবহার করে থাকেন? তালিকার বাইরে কোন অ্যাপ আপনার পছন্দতালিকায় আছে কি? আপনার মতামত ও অভিজ্ঞতা শেয়ার করুন কমেন্ট সেকশনে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *