আসসালামু আলাইকুম। সিম্ফনি তাদের এটম সিরিজের দ্বিতীয় স্মার্টফোন Symphony ATOM II নিয়ে এসেছে। এর আগে এটম স্মার্টফোনটি “এটম বোমা” ক্যাপশনসহ অনলাইনে বেশ ভালো সাড়া ফেলেছিলো, সেই সাথে অফলাইন বাজারেও ভালো সেল হয়েছে বলে জেনেছি। একই বাজেট রেঞ্জের অন্য স্মার্টফোনগুলো থেকে এটম ছিলো কিছুটা ভিন্নধর্মী অ্যাপ্রোচ। এই দামের অন্য কিছু ফোনের মত Unisoc SC9863A না দিয়ে তারা ব্যবহার করেছিলো Helio A20। তবে বড় চমক ছিলো ক্যামেরাতে, কেননা রেয়ারে তারা দুটি বা তিনটি না দিয়ে একটিমাত্র খুব ভালো ক্যামেরা, সাথে গুগলের ক্যামেরা গো সফটওয়্যার ব্যবহার করে এটা দারুণ পারফর্মেন্স দেখিয়েছিলো।

সেদিকে ATOM II অনেকটা ট্রেডিশনাল একটি অ্যাপ্রোচ। এখানে তারা ডুয়াল ক্যামেরা ও SC9863A চিপসেটে ফিরে এসেছে। ডিসপ্লে সাইজও বড় হয়েছে। তাছাড়া ক্যামেরা সফটওয়্যারেও এবার গুগল ক্যামেরা গো দেখা যাচ্ছে না। আসলে এটা Symphony Z18-এর রিপ্লেসমেন্ট হিসেবে আনা হয়েছে, একই দাম, ৭,৭৯০ টাকায়। Z18 থেকে এখানে তফাৎ অল্প-ই, ব্যাটারী আর ক্যামেরাতে। ডিজাইনে ভিন্ন হলেও সান-ব্রাস্ট প্যাটার্নের ব্যাপারটা মিল আছে। সবমিলিয়ে সিম্ফনি এটম টু-কে আমার ঠিক সিম্ফনি এটমের সত্যিকারের সাক্সেসর মনে হয়নি।

দাম নিয়ে যদি বলি, তাহলে ক্যামেরা আর ব্যাটারীর পরিবর্তনের পর আমার এক্সপেক্টেশন ছিলো Z18 থেকে দাম একটু কম হবে। কিন্তু তা হয়নি। তারপরও এই দামে এটা খারাপ বলছি না, বিশেষ করে ব্যাটারী কম হওয়াতে এটা কিছুটা স্লিম রাখা সম্ভব হয়েছে, যা এর হ্যান্ডফিলকে আরো বেটার করে।

[দ্রষ্টব্য: এই লেখাটি সিম্ফনি এটম টু-এর দাম, স্পেক ও আমার অভিমত উপস্থাপন করে। তবে এটি কোন হ্যান্ডস-অন রিভিউ নয়। বাস্তব জীবনের অভিজ্ঞতা লেখার সাথে পুরোপুরি না-ও মিলতে পারে, যেহেতু স্পেকশীট কিছু কথা বললেও সব কথা বলে না।]

ডিজাইন এখানে বেশ আকর্ষণীয় করেছে। স্কয়ার ক্যামেরা মডিউলের ব্যাপারটা লো বাজেটে এখন অনেক জনপ্রিয়। খানিকটা আইফোন ইন্সপায়ার্ড এরকম ডিজাইন নিয়ে আইটেল ভিশন ওয়ান বেশ আলোচিত হয়েছিলো। বর্তমানে রিয়েলমির ১৪ হাজার টাকা পর্যন্ত বাজেটের সবগুলো স্মার্টফোনেই স্কয়ার ক্যামেরা মডিউল দেখা যাচ্ছে। শাওমি, ফাইভ স্টার, ইনফিনিক্স, ওয়ালটনকেও আমরা এই ডিজাইন দিতে দেখেছি এবং এখন সিম্ফনি এই তালিকায় যুক্ত হলো।

তো এই ক্যামেরা মডিউল, সান-ব্রাস্ট প্যাটার্ন আর ম্যাট ফিনিশ মিলে স্মার্টফোনটি দেখতে সুন্দর। চারটি কালার ভ্যারিয়েন্ট থাকছে- Jolly Blue, Midnight Blue, Mint Green, Pine Green। এর মধ্যে ছবিতে দ্বিতীয়টি, Midnight Blue কালার ঠিক আমার পছন্দের সাথে যায়নি। তবে বাকিগুলো বেশ, বিশেষ করে ছবিতে তৃতীয় কালারটি, যেটি সম্ভবত Mint Green, আমার বেশি ভালো লেগেছে।

মজার ব্যাপার হলো দৈর্ঘ্য-প্রস্থে এটা Z18-এর একদমই সমান, তবে থিকনেস কম, যেহেতু এখানে ব্যাটারী কম থাকছে। এর এক্সটেরিয়র ডাইমেনশন হলো 164.7 mm x 75.85 mm x 8.4 mm। ওজন 190g। বাইরে থেকে ভালো না লাগার একটা জায়গা হলো ATOM ও Z18-এর মত এখানেও স্পিকার গ্রিল রেয়ারে আছে।

ডিসপ্লেতে এখানে 6.52″ একটি HD+ প্যানেল থাকছে, 720*1600 রেজ্যুলেশনের। Z18-এর রিপ্লেসমেন্ট চিন্তা করলে 6.52″ স্বাভাবিক, তবে এটমের মত কিছুটা ছোট যেমন, 6″-6.3″ ডিসপ্লের জন্য বাজারে একটা চাহিদা আছে বলে বোধ করি। 6.5″ ডিসপ্লে বারবার দেখা নিয়ে আমি কিছুটা বোর ফিল করছি…

ক্যামেরা যেখানে ছিলো এটমের প্রধান আকর্ষণ, 13MP f/1.8 সনি সেন্সরের সাথে গুগলের সফটওয়্যার, সেখানে ক্যামেরার দিকটি অন্তত কাগজে-কলমে এটম টু-এর একটি ডিজেপয়েন্টিং পার্ট। এর মেইন ক্যামেরা 8MP-র একটি স্যামসাং সেন্সর, অ্যাপার্চার এখনো জানতে পারিনি। এবার একটি “সংখ্যাবর্ধক” দ্বিতীয় ক্যামেরাও উপস্থিত, 0.08MP-র, মেবি AI লেন্স। এটার ব্যাপারে শুধু বলব “কিছু জিনিস থাকার চেয়ে না থাকা ভালো”। তবে সেলফি ক্যামেরাতে মেগাপিক্সেলের হিসেবে ইম্প্রুভমেন্ট এসেছ, 8MP ক্যামেরা আছে এখানে।

অবশ্য শুনেছি ছবি এই ফোন ভালো-ই তোলে, আর ক্যামেরা স্পেক সব কথা বলে না। তবে পার্সোনালি, এখানে এটমের সম্মান এটম টু রাখতে পারবে কিনা, এটা নিয়ে আমার ডাউট আছে। যাইহোক, রিয়েল লাইফ এক্সপেরিয়েন্স-ই এখানে কথা বলবে।

চিপসেট সেকশনের পরিবর্তনটাও উল্লেখযোগ্য, কেননা এটমের Helio A20 ছিলো একটি কোয়াড কোর প্রসেসরযুক্ত চিপসেট, সেখান থেকে অক্টাকোর প্রসেসরের Unisoc SC9863A-তে আসা হয়েছে। কোয়াড কোর থেকে অক্টাকোরে আসাটা অনেকেই পছন্দ করবেন, তবে আমার কিছু বলার আছে।

Helio A20 আর SC9863A বলতে পারেন একই রেঞ্জের চিপসেট। তবে দুটোর মধ্যে তফাৎ আছে, SC9863A কিছুটা বেটার পারফর্মার। কিন্তু এটার ব্যাটারী কনজাম্পশন কিছুটা বেশি, কেননা এটা 28 nm। Helio A20 একটি পাওয়ার সেভিং চিপসেট সেদিক থেকে। Z18 ব্যবহারকারীদেরও কেউ কেউ বলেছেন যে 5000 mAh অনুযায়ী ব্যাটারী ব্যাকআপ তা

নিয়নবাতি ব্লগে বিজ্ঞাপন দিন, আরো জানুন: নিয়নবাতি বিজ্ঞাপন নীতিমালা

এই দামে SC9863A বা Helio A20 দুটোই গ্রহণযোগ্য। তবে ব্যাটারী যেহেতু এখানে Z18 থেকে একটু কম থাকছে, সাথে এটা এটম সিরিজ থেকে এসেছে, কাজেই A20 ধরে রাখাটাই আমার মতে বেটার ছিলো। যদি A22 কিংবা A25-এ আপগ্রেড করা হত, ব্যাপারটা আরো চমৎকার হত। র‌্যাম-রম আগের মতই ২ জিবি ও ৩২ জিবি থাকছে যথাক্রমে। দেয়া হয়েছে Android 10 গো এডিশন। এখনো 10 ব্যাকডেটেড হয়ে যায়নি, তবে 11-তে থাকলে ভালো হত।

যদি আপনি এক্সপেক্টেশন খুব উচ্চ না রাখেন, এন্ট্রি লেভেল ফোন হিসেবে পারফর্মেন্স সন্তোষজনক পেতে পারেন। এখানে অ্যান্ড্রয়েড গো এডিশন থাকায় ২ জিবি র‌্যাম হলেও বেটার এক্সপেরিয়েন্স দিতে সক্ষম। তবে একইসাথে, অ্যান্ড্রয়েড গো অ্যান্ড্রয়েডের লাইটওয়েট ভার্সন হিসেবে কিছু ফিচার মিস করতে পারেন, না থাকা ফিচারের মধ্যে “Display over other apps” ফিচারটি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এডভান্সড ইউজাররা এটা মাথায় রাখা ভালো।

ব্যাটারী হিসেবে 4000 mAh আমার কাছে যথেষ্ট মনে হয়। তবে চিপসেটের দিকটি বিবেচনায় রেখে, সম্ভবত অন্য কিছু 4000 mAh ব্যাটারী থেকে এটার ব্যাকআপ তুলনামূলক কম হবে। তারপরও এক চার্জে সারাদিন পার করতে কোন অসুবিধা হবে বলে মনে হয় না, বেশিও যেতে পারে। চার্জার কত ওয়াট জানতে পারিনি, যেকারণে চার্জিং টাইম নিয়ে কোন এস্টিমেশন দিতে পারছি না।

অন্য দিকগুলোর কথা বললে সেন্সরের মধ্যে বেসিকগুলো, অর্থাৎ, জি, লাইট ও প্রক্সিমিটি সেন্সর থাকছে। ফিঙ্গারপ্রিন্ট সেন্সর উপস্থিত। কম্পাস বা জাইরো নেই, যা এই দামে বেশি আশাও করা যায় না। 4G, OTG সুবিধা থাকছে। নোটিফিকেশন লাইট থাকছে না। গুগল অ্যাসিস্টেন্ট বাটন উপস্থিত।

সবশেষে, ATOM II-কে এটম সিরিজ থেকে আনাটা কনফিউজিং লেগেছে, কারণ দেখা যাচ্ছে এটা Z18-এর একটি রিফ্রেশড ভার্সন ধরণের। এর বাইরে ৭,৭৯০ টাকায় Symphony ATOM II আমার ভালো-ই মনে হয়েছে। অন্যভাবে বললে, একটা ইউজারবেসের জন্য এটা একটা ভালো ডিভাইস হতে পারে, তবে সেটা এটমের ইউজারবেস নয়।

আমি জানি না ATOM II রিলিজের পর ATOM-এর প্রোডাকশন বা মার্কেটে আসা অব্যহত থাকবে কিনা। আমার মতে থাকা উচিৎ। যারা বড় ডিসপ্লে, একটু বেটার পারফর্মেন্স এক্সপেক্ট করেন, তারা ATOM II পছন্দ করলেও কমপ্যাক্ট ডিসপ্লে, বেটার ব্যাটারী ব্যাকআপের জন্য ATOM কিন্তু অনেকের চয়েস হতে পারে। আর ক্যামেরাতে এটম টু কেমন করে এটিও দেখার বিষয়।

যাইহোক, সবশেষে একটা দুঃখের কথা শেয়ার করি। গত ৩৬ দিনে নিয়নবাতিতে এটাসহ ১৪টি পোস্ট প্রকাশিত হয়েছে এবং এসময়ে নতুন-পুরনো কোন পোস্টেই কোন নতুন কমেন্ট প্রকাশিত হয়নি। সত্যি বললে লেখার ক্ষেত্রে অডিয়েন্সের ফীডব্যাক খুব বড় অনুপ্রেরণা। তাই অনুরোধ থাকবে এই লেখাটি এবং Symphony ATOM II আপনার কাছে কেমন মনে হয়েছে এ ব্যাপারে কমেন্ট বক্সে সুচিন্তিত মতামত প্রকাশ করবেন।

লেখাটি পড়ার জন্য শুকরিয়া। আসসালামু আলাইকুম।

অফিসিয়াল ওয়েবপেজ

6 Comments

  1. সিম্ফনির উচিৎ মিডরেন্জের দিকে নজর দেয়া

    • সামনে সিম্ফনি নতুন একটি ফ্ল্যাগশিপ (মানে আগে যেমন Z সিরিজ ছিলো, ওরকম আরকি, Z যেহেতু ইতোমধ্যে i সিরিজের জায়গায় চলে এসেছে) সিরিজ আনতে পারে। এছাড়া মিডরেঞ্জে হেলিও ব্র্যান্ড ফিরে আসছে এটা কনফার্ম করা হয়েছে।

  2. সিম্ফনির প্রসেসরের দিকে ভালোভাবে নজর দেয়া উচিত। নয়ত বাজারে অন্যান্য কোম্পানীর কাছে হারিয়ে যাবে

    • যতটুকু জানতে পেরেছি, সামনে সিম্ফনি Z সিরিজ, নতুন একটি ফ্ল্যাগশিপ সিরিজ ও হেলিও ব্র্যান্ডের পক্ষ থেকে ভালো চিপসেটসহ সুন্দর কিছু ফোন আসতে পারে।

    • সিম্ফনির জন্য শুভ কামনা রইলো।ভালো থেকো দেশি ব্র্যান্ড❤️❤️❤️

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *