System76-এর কনফিগারেবল “লঞ্চ কীবোর্ড”: ২৮৫ ডলারের কীবোর্ডটি অনেকটা অভিনব!…

আগের কীবোর্ডের বেশ কয়েকটা কী কাজ করা বন্ধ করে দেয়ার পর আমি লজিটেকের একটা কীবোর্ড কিনি, দাম মনে হয় ৫০০ টাকা ছিলো। ওটা কথা না, System76 নতুন মেকানিকাল কীবোর্ড নিয়ে এসেছে, লঞ্চ কীবোর্ড। আর ওপেন সোর্স, পূর্ণ কনফিগারেবল এই কীবোর্ডের দাম শুরু মাত্র ২৮৫ ডলার থেকে, ১ বছরের ওয়ারেন্টিসহ। অবশ্য আপনি ৩ বছরের ওয়ারেন্টি পেতে চাইলে এর সাথে আরো ৩৫ ডলার যুক্ত হবে। তবে ভালো কথা হলো আমার এটা কেনার কোন পরিকল্পনা নেই, তাই দামের ব্যাপারটা আমরা পাশে সরিয়ে রাখতে পারি।

হতে পারে আপনি ইতোপূর্বে System76-এর নাম শুনেছেন, কেননা তাদের ডেভেলোপকৃত উবুন্টুভিত্তিক অপারেটিং সিস্টেম, Pop!_OS অল্প সময়ে বেশ ভালো জনপ্রিয়তা অর্জনে সক্ষম হয়েছে। এই System76 কিন্তু মূলত একটা হার্ডওয়্যার কোম্পানি, যারা ইতোপূর্বে বিভিন্ন মডেলের ল্যাপটপ, ডেস্কটপ, মিনি কম্পিউটার ও সার্ভার বাজারে এনেছে এবং এখন তাদের সর্বশেষ একটি সংযোজন হলো মেকানিকাল কীবোর্ড, ‘Launch’। আসলে এটা সপ্তাহ দুয়েক আগেই এসেছে, লেখাটাও আগেই শুরু করা, বরাবরের মতই আমার আলসেমিতে প্রকাশে দেরি হয়ে গেলো।

আপনি যদি পপ ওএস ব্যবহার করে থাকেন, তাহলে আপনি জানবেন যে অন্য অপারেটিং সিস্টেমগুলো থেকে যে দিকটি পপ ওএসের বিশেষত্ব, তা হলো এর কীবোর্ডসেন্ট্রিক ইন্টারফেস। অর্থাৎ, আপনি চাইলে সাধারণভাবে মাউসের সাহায্যে কাজগুলো করতে পারবেন, কিন্তু একইসাথে অ্যাপ ওপেন, ক্লোজ, রিসাইজ, টাইলিং, মুভ, ওয়ার্কস্পেস সুইচসহ ওএসের প্রায় যাবতীয় কাজ পপ শেলের সাহায্যে কীবোর্ডে করা যায়। মানে কিনা তারা চমৎকার কীবোর্ডসেন্ট্রিক ইন্টারফেস ব্যবহারের সুযোগ দেয়।

আরো কমদামে আরো ইন্টেরেস্টিং কীবোর্ড দেখতে চান? দেখুন: ছয় হাজার টাকায় কীবোর্ডের ছদ্মবেশে এটি একটি কম্পিউটার!…

কাজেই এই কোম্পানি যখন নতুন কীবোর্ড নিয়ে আসে, তখন সেটা ইন্টারেস্টিং কিছু হওয়াটা আশা করা-ই যায় এবং লঞ্চ কীবোর্ড তেমন কিছুই। তেমন কিছু বলতে আমরা সাধারণত যেরকম কীবোর্ডগুলো দেখে থাকি, কিংবা দামী গেমিং বা প্রফেশনাল কীবোর্ডগুলো যেরকম হয়ে থাকে, তার থেকে এটা অনেকটা আলাদা।


প্রথম দেখাতে সাধারণ কীবোর্ডগুলো থেকে বেশকিছু তফাৎ চোখে পড়ে। শুরুতেই একটু অদ্ভুত লাগতে পারে, কিছু ল্যাপটপ কীবোর্ডের মত এখানে আলাদা নাম্বারপ্যাড নেই। এরপর এখানে স্পেসবার ভাগ করা রয়েছে। তাছাড়া দেখা যাচ্ছে ফাংশন কী থাকছে দুটি এবং উইন্ডোজ কী নেই, তার পরিবর্তে আছে সুপার কী। কয়েকটা পোর্টস থাকছে এখানে, যা কীবোর্ডে স্বাভাবিকভাবে থাকার কথা নয়। এর বাইরেও অনেক ব্যাপার এই কীবোর্ডে আছে, যা আপনাকে কিনতে না হলেও জানতে আগ্রহী করতে পারে।

System76 তাদের ওএস বা তাদের কীবোর্ডকে সেভাবে তৈরির চেষ্টা করেছে যেন মাউসের দরকার কম হয়। তবে অবশ্যই বিভিন্ন সময়ে আমাদের মাউস আবশ্যিকভাবে দরকার হয়। মাউস যেন হাতে নাগালে থাকে, সেটা নিশ্চিত করতে এখানে নাম্বারপ্যাড দেয়া হয়নি, এধরণের নাম্বারপ্যাডহীন লেআউটকে tenkeyless (TKL) layout বলা হয়। এর অবশ্য তারা আরেকটি সমাধান দিয়েছে, আলাদা লেয়ার ব্যবহার, যে কথায় পরে আসছি।

তারপর স্পেসবারের কথা যদি বলি, আপনি ভালোভাবে খেয়াল করলে দেখবেন, এখানে কী-গুলো সবগুলো কী তিনটি সাইজে সীমাবদ্ধ। এটার কারণ হলো আপনি যাতে পছন্দমত কী-গুলো রিপ্লেস করে নিতে পারেন। তাদের গবেষণায় ইউজাররা সাধারণত স্পেসবার ব্যবহারে বাম অথবা ডান বৃদ্ধাঙ্গুলীর যেকোন একটি প্রয়োগ করে, দুটো-ই নয়। আমার ক্ষেত্রে, টাইপিংয়ের সময় যদিও বাম বৃদ্ধাঙ্গুলিই ব্যবহার করি, অন্য কিছু ক্ষেত্রে ডান-ও ব্যবহার হয়, যেমন যখন Super+Space দিয়ে কীবোর্ড লেআউট পরিবর্তন করি বা ডান হাত অ্যারো কী-তে থাকে। যাইহোক, যদি আপনার মনে হয় যে এত বড় স্পেসবার আপনার প্রয়োজন নেই, আপনি তখন একটি রিপ্লেস করে প্রয়োজনমত শিফট, ব্যাকস্পেস বা ফাংশন কী বা অন্য কিছু সেট করে দিতে পারেন।

দ্বিতীয় লেয়ার

একাধিক ফাংশন কী থাকার একটি ব্যবহারিক প্রয়োজন হলো মাল্টিপল লেয়ার পদ্ধতি। ইনিশিয়ালি এখানে দুটো লেয়ার সেটআপ করা আছে, দ্বিতীয় লেয়ারটি ফাংশন কী ব্যবহার করে একসেস করতে পারবেন। কিন্তু আপনার যদি প্রয়োজন হয়, আপনি আরো দুটি লেয়ার কনফিগার করে নিতে পারেন, যেমন হয়ত একটি লেয়ারে আপনি নাম্বারপ্যাডের মত সেটআপ করে নিতে পারেন।

আর হ্যা, আপনি এখানে কিন্তু কী-গুলো পছন্দমত রি-ম্যাপ করে নিতে পারেন। QWERTY-র পরিবর্তে অন্য কোন লেআউট ব্যবহার করলে সেভাবে সাজিয়ে নিতে পারবেন। আপনার ম্যাপিং সরাসরি কীবোর্ডে সংরক্ষিত হবে। অর্থাৎ, এক পিসি থেকে অন্য পিসিতে কানেক্ট করলেও ম্যাপিং ঠিক থাকবে।

এবার পোর্টসগুলোর কথা বলি। এটা কোন ওয়ারলেস কীবোর্ড না, আপনাকে তারসহ ব্যবহার করতে হবে এবং তারটি ডিটাচেবল, খুলে রাখা যায়। কিন্তু তারের জন্য দরকার একটি পোর্ট, ৫টি কেন? কেননা এটা একই সাথে একটি উচ্চগতিসম্পন্ন ইউএসবি হাব হিসেবে ব্যবহারযোগ্য, অর্থাৎ, এই কীবোর্ডের সাহায্যে কম্পিউটারে আরো ইউএসবি ডিভাইস কানেক্ট করতে পারছেন।

আর সুপার কী, লিনাক্স ইউজাররা ভালোভাবেই জানেন এটা কেন, আসলে লিনাক্সে সচারচর উইন্ডোজ কী-কে সুপার কী বলা হয়। পপ ওএস একটি লিনাক্স ডিস্ট্রো, System76-এর হার্ডওয়্যারগুলোও মূলত ওপেন সোর্স ও লিনাক্সসেন্ট্রিক। কাজেই এখানে এটা সুপার কী হিসেবে রয়েছে। ভালো কথা, লঞ্চ কীবোর্ড-ও কিন্তু শতভাগ ওপেন সোর্স। এর চ্যাসিস, পিসিবি, ফার্মওয়্যার সবকিছুর সোর্সকোড, ড্রইং, ক্যাড গিটহাবে আছে।

এর আরেকটি বিশেষত্ব হলো কাস্টমাইজেবিলিটি। আপনি এখানে অনেক কিছুই কাস্টমাইজ করতে পারবেন। কীবোর্ড রিম্যাপিংয়ের কথা তো আগেই বলেছি। কীবোর্ডেও আপনি একটি কী রিপ্লেস করে অন্য কী বসাতে পারবেন, কিছু কী অন্য কালারেরও ব্যবহার করতে পারবেন। আপনার কাজের ধরণ বুঝে Jades অথবা Royals সুইচের মধ্যে একটি আপনি বেছে নিতে পারেন কেনার সময়, Jades একটি এডিক্টিভ ক্লিক সাউন্ড দেয়, যেখানে Royals কিছুটা নিঃশব্দ, যা বেশি অডিও বা ভিডিও কনফারেন্সে থাকলে উপযুক্ত।

আরো কিছু ব্যাপার আছে এই কীবোর্ডের, কিন্তু আমি আর লিখছি না, আরো জানার জন্য দেখতে পারেন OMG! Ubuntu!-এর ব্লগ পোস্ট এবং লঞ্চ কীবোর্ডের অফিসিয়াল পেজ। ২৮৫ ডলার একটা কীবোর্ডের জন্য কতটা যৌক্তিক তা নিয়ে কিছু আমার দিক থেকে না বলা-ই ভালো। এটা নিশ্চিত, এটা আমার বা আমার মত যারা আছে তাদের জন্য তৈরি হয়নি। তবে তারপরও এর পেছনে যে রিসার্চ আছে এবং সাধারণ একটি কীবোর্ড থেকে এর যে অভিনবত্ব আছে, এটা আগ্রহজনক ছিলো আমার কাছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *