Itel Vision 2 বেশ কিছুদিন আগেই লঞ্চ হয়েছে, আমি কিছুটা অসুস্থ থাকায় নিয়নবাতিতে কিছুদিন তেমন একটিভ ছিলাম না, তাই Itel Vision 2 নিয়ে অনেকদিন পরেই লিখছি। এই স্মার্টফোনটির বিশেষত্ব হলো এখানে থাকছে পাঞ্চহোল ডিসপ্লে সবচেয়ে কমদামে, মাত্র ৯০০০ টাকার মধ্যে।
কিন্তু শুধু পাঞ্চহোলের জন্য এই ফোনটি কেনা কি উচিৎ হবে কিনা, বা এর অন্য ফিচারগুলো এই দামকে কতটা জাস্টিফাই করে তা নিয়ে আজ কথা বলতে চাই। যারা Itel Vision 2 কেনার চিন্তাভাবনা করছেন, বা ৯০০০ টাকার মধ্যে একটি স্মার্টফোন কিনতে চান, আমি আশা করছি তারা এই পোস্ট থেকে উপকৃত হবেন।
যেহেতু ফোনটি কয়েকদিন আগে এসেছে, আমি খুব ডিটেইল আলোচনায় যাবো না, এই ফোনটির ভালোমন্দ দিকগুলো সংক্ষেপে তুলে ধরার চেষ্টা করব। সত্যি বলতে আমার কাছে মনে হয়েছে পাঞ্চহোল দিতে গিয়ে কিছু জায়গায় তারা খুব বাজেভাবে কস্ট কাটিং করেছে, যা এই ফোনটি কেনার ক্ষেত্রে ডিলব্রেকার হতে পারে।
Itel Vision 1 বাংলাদেশের বাজারে একটি সাড়া জাগানো ডিভাইস ছিলো। এই ফোনটির উল্লেখযোগ্য দিক ছিলো খুব কম দামে নচ ডিসপ্লে দেয়া, দাম অনুযায়ী ভালো চিপসেট, র্যাম-রম, ব্যাটারী, আইফোনের মত ডিজাইন এবং আরো বেশ কিছু ব্যাপার। মাত্র ৭০০০ টাকায় এই স্মার্টফোনটি রিলিজ হয়েছিলো গত বছর।
অন্যদিকে Itel Vision 2 সবচেয়ে কম দামে পাঞ্চহোল ডিসপ্লে নিয়ে এসেছে, আকারেও বেশ বড় 6.6″। থাকছে বর্তমানের ট্রেন্ডিং ডিজাইন, সাথে আয়তাকার ক্যামেরা মডিউল, আর ক্যামেরাতেও ইমপ্রুভমেন্ট আছে। তবে বাকি দিকগুলোতে Itel Vision 1 থেকে এখানে উন্নতি নেই, যদিও দাম ২০০০ টাকা বেশি।
ডিজাইনের বেলায় যদি আমার কথা বলি, Deep Blue কালারটি বেশ ভালো লাগলেও Gradation Green কালারটি পছন্দ হয়নি, আর মনে হয়েছে, ক্যামেরা মডিউলটি আরেকটু সুন্দর হতে পারতো, বিশেষ করে তিনটি ক্যামেরার পর অযথা AI লিখে আরো লম্বা করার কোন দরকার ছিলো বলে মনে করিনা। যাইহোক, ডিজাইন অবশ্যই এই দামে সুন্দরের মধ্যে থাকবে এবং অধিকাংশেরই হয়ত পছন্দ হবে বলে মনে করছি।
এরপর সামনের দিকে অবশ্যই পাঞ্চহোল এর সবচেয়ে আকর্ষণীয় ফিচারগুলোর একটি, 6.6″ বড় ডিসপ্লেও এই দামে আকর্ষণীয় যারা বড় ডিসপ্লেতে কনটেন্ট উপভোগ করতে পছন্দ করেন তাদের জন্য। এটি অবশ্যই একটি HD+ ডিসপ্লে, যা নিয়ে কোন অভিযোগ নেই, কারণ দামটা তো দেখতে হবে।
ক্যামেরার দিকেও আমি একটু প্রশংসা করতে চাই, কেননা ক্যামেরাতে আইটেলকে বরাবরই পিছিয়ে থাকতে দেখেছি। এর আগে Vision1 Pro-তে তারা ত্রিপল ক্যামেরা দিয়েছিলো, যেখানে প্রাইমারী 8MP বাদে বাকিগুলো উল্লেখ পর্যন্ত করেনি কী কাজের জন্য… তো Vision 2-তে একটু উন্নতি থাকছে, একটি 13MP প্রাইমারী, 2MP ম্যাক্রো ও ডেপথ সেন্সর। সেলফি ক্যামেরা 8MP।
আমি জানি, ম্যাক্রো বা ডেপথ কোনটিই হয়ত বিশেষ কাজের না, তবে এর আগে তারা AI লেন্স নামের অদ্ভুত যে জিনিসটা দিত, তার থেকে তো ভালো! যাইহোক, দিনশেষে এগুলোর কাজ মূলত সংখ্যা বাড়ানোটাই। আর Vision 1 থেকে এটা অনেকটাই বেটার, সেখানে প্রাইমারী 8MP ও সেলফি 5MP ক্যামেরা ছিলো।
এখন যদি আমরা চিপসেট সেকশনে দেখি, Vision 1 এর মত এখানেও দেয়া হয়েছে Unisoc SC9863A। Vision 1 রিলিজের সময় ৭০০০ টাকায় এটা একটা দারুণ চিপসেট ছিলো, এমনকি তখন ৯০০০ টাকাতেও যথেষ্ট ভালো ছিলো, কিন্তু এই সময়ে এসে এই দামে Helio A25 বা এরকম কিছু দেয়া উচিৎ ছিলো বলে আমি মনে করি। কেননা, স্মার্টফোন মার্কেট কিন্তু খুব দ্রুত পরিবর্তনশীল, প্রায় এক বছরের ব্যবধানে অনেক কিছুই বদলেছে।
SC9863A-র সিপিইউ দাম হিসেবে বেশ পাওয়ারফুলের মধ্যেই রাখা যায়। এতে ৪টি 1.6GHz ও ৪টি 1.2GHz ক্লকস্পিডের ARM Cortex A55 কোর থাকছে, যেখানে এরকম লো বাজেটের বাকি চিপসেটগুলোতে A53 কোর থাকে। জিপিইউ IMG8322@550MHz-ও খারাপ না। তো পারফর্মেন্স আসলে এই চিপসেটের মূল সমস্যা নয়।
সমস্যা হলো এর ট্রানজিস্টরগুলো 28nm এর, যেখানে এই বাজেটে পাওয়া মিডিয়াটেক হেলিও সিরিজের চিপসেটগুলোতে 12nm ট্রানজিস্টর দেখা যায়। ট্রানজিস্টর সাইজ বেশি হলে ইফিশিয়েন্সি কমে যায়, চিপসেট অপারেট করতে বেশি পাওয়ার লাগে, ফলে ব্যাটারী তুলনামূলক দ্রুত খরচ হয় এবং কিছুটা হিট হয়ে থাকে।
এখানে যদিও 4000 mAh ব্যাটারী থাকছে, দেখা যাবে সমান ব্যাটারীর অন্য কিছু ফোন থেকে ব্যাকআপ কিছুটা কম পাচ্ছেন এবং বেশি ব্যবহার করলে হিটআপ হচ্ছে, তখন হয়ত পারফর্মেন্সেও একটা প্রভাব পড়বে। ৭-৮ হাজারের একটা ফোনে এরকমটা হলে আপনাকে আসলে মেনে নিতে হবে, কিন্তু ৯০০০ কিন্তু একদম কমও না।
এখন স্মার্টফোনগুলোতে বড় ব্যাটারী খুবই প্রচলিত হচ্ছে, 5000 এমনকি 6000 mAh ব্যাটারী ১০ হাজারের আশেপাশে আমরা দেখেছি। তো, 4000 mAh আমি খুব বড় ব্যাটারী বলব না, তবে এটা একটা স্ট্যান্ডার্ড সাইজ এবং এর ভালো দিক হলো ফোনটির থিকনেসও বেশ কম থাকছে, 8.3mm।
যাইহোক, এই ব্যাটারী নিয়ে একদিন হয়ত আপনার সহজেই পার হয়ে যাবে, তবে অন্য একটা বড় সমস্যা আছে। না, আমি ২ জিবি র্যামের কথা বলছি না, অবশ্যই সেটি একটি ডিলব্রেকার হতে পারে অনেকের জন্য, কেননা ২ জিবি র্যাম দিয়ে আপনি মাল্টিটাস্কিং মোটেও করতে পারবেন না, আর এই দামে ৩ জিবি অনেকেই দিচ্ছে, তবে আমার কাছে এর থেকে বড় ডাউনসাইড মনে হয়েছে এর চার্জিং স্পিড।
হ্যা, ঠিক শুনেছেন, কারণ এতে থাকছে 5W (5V 1A) চার্জার, যা দিয়ে ধরুন সাড়ে ৪ ঘন্টা লেগে যাবে একে পূর্ণ চার্জ করতে। যেখানে এ বাজেটে প্রায় সবাই অন্তত 10W চার্জিং সুবিধা দেয়, আর 10W কিন্তু এখন একদমই স্ট্যান্ডার্ড, এটাকে আর ফাস্ট চার্জিং ধরা হয় না, সেখানে 5W চার্জিং আসলে মেনে নেয়া যায় না, পাঞ্চহোল বা অন্য যত ফিচারই থাক না কেন।
আর এখানে কিন্তু অ্যান্ড্রয়েড ১০ গো এডিশন দেয়া হয়েছে, যেখানে ভিশন ১-এ অ্যান্ড্রয়েড ৯ রেগুলার এডিশন ছিলো। হয়ত অ্যান্ড্রয়েড ৯ থেকে অ্যান্ড্রয়েড ১০ কিছুটা ভারি বলে, বা যেকারণেই হোক, এর লো পাওয়ারফুল হার্ডওয়্যার অনুযায়ী এটা ঠিক আছে, কিন্তু এই দামে আরো বেটার হার্ডওয়্যারের কিছু ডিভাইস কিন্তু আছে, যেখানে রেগুলার অ্যান্ড্রয়েড ১০ থাকছে।
সব মিলিয়ে আমরা যদি দেখি, ফোনটি এই দামকে জাস্টিফাই করে কিনা। আমি বলব একরকম করে, কেননা পাঞ্চহোল ডিসপ্লে, সুন্দর ডিজাইন ও বিল্ড এসব দিতে গিয়ে প্রোডাকশন কস্ট তো কিছুটা বেড়েছেই। কিন্তু তাই বলে যদি পারফর্মেন্স, মেমোরি ইভেন চার্জিংয়ের মত জায়গাগুলোতে এরকম কম্প্রোমাইজ করা হয়, তাহলে ওভারঅল প্যাকেজটা আর ভালো কিছু থাকে না।
কাজেই ফোনটি কেনার ক্ষেত্রে পাঞ্চহোলের মধ্যে হারিয়ে না গিয়ে সবদিক বিবেচনায় রাখাটাই কাম্য। এর বিকল্প হিসেবে ৮৫০০ টাকায় Symphony Z28 দেখতে পারেন। এখানে আপনি পাঞ্চহোল না পেলেও ৩/৩২, Helio A25, 10W চার্জিং, আল্ট্রাওয়াইড ক্যামেরাসহ আরো দারুণ কিছু ফিচার কিন্তু ৫০০ টাকা কমেই পাচ্ছেন। এটা আমার কাছে একটা বেটার প্যাকেজ বলে মনে হয়েছে।
আর আমার মতে আইটেলের উচিৎ হবে আরো ব্যালেন্সড ডিভাইস নিয়ে কাজ করা, অর্থাৎ, একটি স্পেশাল ফিচার দিতে গিয়ে অন্য দিকগুলোতে যেন বড় কোন ঘাটতি না থেকে যায়। Vision 2-র কথাই ধরা যাক, যদি দাম ১০০০০ টাকা করে ৩/৬৪, Helio A25, 10W চার্জ সমর্থন দেয়া যেত, সেক্ষেত্রে পাঞ্চহোলের সাথে মিলে কিন্তু একটা চমৎকার ডিল হতে পারতো।
-,-