জরিন ওএস ১৬ এর প্রথম অনুভূতি (বিটা ভার্সন)

অনেক দীর্ঘ একটা সময় হয়ে গেলো, সম্ভবত প্রায় ৮ মাস, পিসিতে নতুন কোন অপারেটিং সিস্টেম ইন্সটল করা হয় না। আমার স্বাভাবিক স্বভাবের সাথে ব্যাপারটা যায় না। কেননা এমন দিনও আমার জীবনে কম নয়, যখন একদিনে দুতিনটা ওএস ইন্সটল করেছি। কিন্তু এখন অনেকটা স্ট্যাবল হয়ে এসেছি। পিসিতে আসলে উবুন্টু, পপ ওএস আর ডিপিন ইন্সটল করা ছিলো এই সময়টাতে, যার মধ্যে মূলত ব্যবহার করতাম ডিপিন। এখন জরিন ওএস সহ মোট ৪টি ওএস ইন্সটল আছে পিসিতে।

জরিন ওএস ১৬ কিন্তু এখনো ফাইনাল রিলিজ হয়নি, মানে বিটা স্টেজে আছে। আর অবশ্যই আমি যেটা চালাচ্ছি, সেটা হলো কোর এডিশন, যেটা ফ্রি। জরিন ওএসের কিন্তু একটি পেইড আল্টিমেট এডিশনও আছে, এতে কিছু এক্সট্রা অ্যাপস ও ফিচার থাকে, তবে বিটা ভার্সন হিসেবে শুধু কোর এডিশনটিই এভেইলেবল, আর আমার পকেটে ডলারও নেই।

যতটুকু ব্যবহার করেছি, জরিন ওএস ১৫ থেকে অনেক নতুনত্ব এবং ইমপ্রুভমেন্ট অবশ্যই এতে আছে। তবে এর আগে জরিন ওএস ১২ থেকে ১৫-তে (১৩, ১৪ নাম্বার স্কিপ করা হয়েছে) যতটা ব্যাপক পরিবর্তন এসেছিলো, এবার ঠিক ততটা না। তবে যে পরিবর্তনগুলো এসেছে, তা জরিন ওএস ১৬-কে আরো আকর্ষণীয় করে তুলেছে এটা ঠিক।

প্রথম লুক

ইন্সটলের পর প্রথমবার জরিন ওএস বুট আপ করে আমার প্রথম কাজ ছিলো একটা স্ক্রিনশট নেয়া, এবং তা দেখতে পাচ্ছেন স্ক্রিনশটে। তবে একটা মজার ব্যাপার হলো আপনি যদি দিনের বেলা ইন্সটল করেন, তখন কিন্তু ডিফল্ট ওয়ালপেপারটিও দিনের বেলার থাকবে, কেননা এটা সময়ের সাথে পরিবর্তন হয়।

যদিওবা এখানে ওয়ালপেপার ছাড়া পার্থক্য করার তেমন কিছু নেই আগের ভার্সনের সাথে, তবে কিছু তফাৎ চোখে পড়ে যখন কোন অ্যাপ কিংবা জরিন মেনুতে যাওয়া হয়। মেনু এবার কিছুটা বর্গাকার ধরণের করা হয়েছে, যেটা সত্যি বলতে দেখতে সুন্দর লাগেনি। তবে ভালো লেগেছে নতুন ডিফল্ট থিম। আসলে এখানে একটু গ্র্যাডিয়েন্ট ধরণের ছোঁয়া দেয়া হয়েছে, যেটা আগের ভার্সনে ছিলো না।

বাই দা ওয়ে, জরিন ওএস ১৫-এর প্রথম লুক এরকম ছিলো:

অ্যাপিয়ারেন্স

জরিন ওএসের অন্যতম বিশেষত্ব হলো জরিন অ্যাপিয়ারেন্স, যা জরিন ওএসের ডেস্কটপকে অন্য গ্নোম ডেস্কটপগুলো থেকে আলাদা করে। খুব সহজেই এখান থেকে লুক এন্ড ফিল কাস্টমাইজ করে নেয়া যায়। এখানে চারটি ডেস্কটপ লেআউট আছে, অবশ্য আল্টিমেট এডিশনে আরো বাড়তি কয়েকটি থাকে।

এর আগের এডিশনে আমি একটা ব্যাপার মিস করতাম, কোর ভার্সনে মডার্ন উইন্ডোজ, ক্লাসিক উইন্ডোজ আর টাচ লেআউট থাকলেও গ্নোমের ডিফল্ট লেআউট ছিলো না। এবার সেটি যুক্ত হয়েছে, যেটা আমার বেশ ভালো লাগলো। আগে যে টাচ লেআউট ছিলো, তাতেও পরিবর্তন এসেছে। অ্যাপিয়ারেন্স অ্যাপেও কিছু নতুনত্ব এসেছে, যেমন আগে ট্যাবগুলো হরাইজন্টালি ছিলো, এবার ভার্টিকাল। আর এখন কিন্তু টাস্কবার বা প্যানেলকে অনেক বেশি কাস্টমাইজ করা যায় এখান থেকে।

আগের মতই ডার্ক ও লাইট মোড সুইচ করার অপশন থাকছে। পরিবর্তনের সুযোগ থাকছে একসেন্ট কালার, আর জরিন ওএস এবার একটা সুন্দর গ্র্যাডিয়েন্ট ধরণের করেছে কালারগুলোতে, যেটা আমার কাছে অনেক ভালো লেগেছে, ছোট্ট এই পরিবর্তনটুকু পুরো অপারেটিং সিস্টেমকে একটা রিফ্রেশড লুক দিয়েছে। ডার্ক মোডের ক্ষেত্রে অবশ্য গ্র্যাডিয়েন্টের ছোঁয়া পাচ্ছি না, তবে মনে রাখতে হবে এটা বিটা ভার্সন, আমার ধারণা ফাইনাল রিলিজে তারা এটা যুক্ত করবে।

তবে জরিন ওএস ১৬-র বেস্ট ফিচার কোনটি জানেন? তাদের ভাষায় বললে, “Undoubtedly the most groundbreaking and revolutionary feature we’ve ever included, Jelly Mode will fundamentally change how you use your computer forever 😁.” আর আমিও মেনে নিচ্ছি, জেলি মোড ব্যাপারটা এনে জরিন ওএস চখাম একটা কাজ করেছে।

ও, আচ্ছা, এটা কী জিনিস জানতে আগ্রহী? যারা অনেককাল আগে কম্পিজ ব্যবহার করেছেন, তারা নিশ্চয়ই কিছুটা নস্টালজিক ফিল করবেন, কেননা এটা অ্যাপগুলোতে উবল আর স্কুইজ এনিমেশন যুক্ত করবে। মাথার একটু ওপর দিয়ে গেলো? ভিডিওতে দেখে নিন!

কেডিই বা মাতে ডিইতে এটা এখনও ব্যবহার করা গেলেও গ্নোম ডেস্কটপের সাথে প্রি-ইন্সটল্ড দেখে খুব চমৎকার বোধ করছি।

সফটওয়্যার

জরিন ওএসের আইএসও সাইজ ২.৫ জিবি, যেটা কিন্তু খুব বেশি নয়। এখানে সাধারণভাবে গ্নোম ডেস্কটপে যে অ্যাপ বা ইউটিলিটিসগুলো সচারচর ডিফল্ট পাওয়া যায়, তা থাকছে। জরিন ওএসের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়ার জন্য Tour অ্যাপ যুক্ত হয়েছে। আরো যুক্ত হয়েছে সম্পূর্ণ নতুন একটি সাউন্ড রেকর্ডার অ্যাপ।

রয়েছে Braseo (Disk Burner), LibreOffice, GIMP, Maps সহ বেশকিছু দরকারী অ্যাপস। Quadrapassel (টেট্রিস), Sudoku, Solitaire এরকম টাইমপাস গেমগুলো আছে। আরেকটা অ্যাপ প্রিইন্সটল্ড দেখে ভালো লাগলো, Pitivi, যেটা একটা ওপেন সোর্স ভিডিও এডিটর। সেই সাথে, যেটা মেনশন না করলেই না, জরিন কানেক্ট, যদিও এটা নতুন কিছু না, তবে স্মার্টফোনের যুগে স্মার্টফোনের সাথে পিসি কানেক্ট করার জন্য প্রিইন্সটল্ড অ্যাপ প্রশংসনীয়।

সবমিলিয়ে জরিন ওএস ১৬-র ডিফল্ট অ্যাপ কালেকশন আমার ভালো লেগেছে। আর এর সাথে অবশ্যই আরো অনেক অ্যাপ ডাউনলোড করতে পারছেন ‘সফটওয়্যার’ থেকে এবং ফ্ল্যাটপ্যাকও কিন্তু এখন আউট অফ দা বক্স সমর্থন আছে।

ওয়ালপেপার

নতুন কিছু ওয়ালপেপার যুক্ত থাকছে জরিন ওএস ১৬-তে। এর একটি সময়ের সাথে পরিবর্তনশীল, অর্থাৎ, দিন-রাতের বিভিন্ন সময়ে সে অনুযায়ী পরিবর্তন হয়।

পারফরমেন্স

৪ জিবি র‌্যাম ও কোর আই থি-৩২২০ প্রসেসর নিয়ে পারফর্মেন্স স্মূথ পেয়েছি। ডেভেলোপমেন্টের বেলায় পারফর্মেন্সে ইম্প্রুভমেন্টকে বিশেষ প্রায়োরিটি দেয়ার কথা তারা উল্লেখ করেছে, আর আমার মনে হয়েছে এটা বেশ ফিল করা যাচ্ছে। বিশেষ করে যদি অ্যাপ ওপেনিং টাইমের কথা বলি, এধরণের ফিল সোলাসে পেয়েছিলাম, খুব দ্রুত চালু হয়, আর এনিমেশনও মাখন, সব মিলিয়ে একটা অসাধারণ এক্সপেরিয়েন্স, যা অনেক ডিস্ট্রো থেকে বেটার ছিলো।

বাদবাকি

বাগের কথা বললে বলার মত কোন বাগ পাইনি। না বলার মত বাগের মধ্যে ফেভারিট অ্যাপ এড করলে ৭-৮ সেকেন্ড পরে এড হয় এই টাইপের। আমি জাস্ট আমার কিছু এক্সপেরিয়েন্স শেয়ার করেছি, আরো অনেক ইমপ্রুভমেন্ট ও নতুন ফিচার কিন্তু আছে, যার মধ্যে টাচপ্যাড জেসচার যুক্ত করার ব্যাপারটা খুব চমৎকার ল্যাপটপ ব্যবহারকারীদের জন্য। নতুন ফিচারগুলো দেখতে চাইলে তাদের ব্লগে ঢুঁ দিন

আর একটা কথা, নিয়নবাতির বিজ্ঞাপন নীতিমালা অনুযায়ী, বেশ কিছু কারণে আমরা গুগল এডসেন্স বা অন্য কোন তৃতীয় পক্ষের এড নেটওয়ার্ক ব্যবহার করি না। তবে নিয়নবাতির অগ্রযাত্রার জন্য আমাদের বিজ্ঞাপন প্রয়োজন। আরো জানতে দেখুন: নিয়নবাতি বিজ্ঞাপন নীতিমালা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *