নবম শ্রেণি – বিজ্ঞান – চিরায়ত পদার্থবিজ্ঞান ও আধুনিক পদার্থবিজ্ঞান

This entry is part 5 of 5 in the series নবম শ্রেণি - বিজ্ঞান

পদার্থবিজ্ঞানে আমরা আলোচনা করি পদার্থ ও শক্তি এবং এদের আন্তঃক্রিয়া নিয়ে। পৃথিবীর শুরু থেকে গাছ থেকে আপেল মাটিতে পড়ছে। কেন? আবার আপেলটা যদি মাটিতে পড়ে, দূরের ওই চাঁদ-তারাগুলো পড়ছে না কেন? প্রকৃতি রহস্যময়। চিন্তাশীল মনে চিন্তার খোরাক দেয় প্রকৃতির বিচিত্রতা। প্রকৃতির রহস্যকে উন্মোচন করার, প্রকৃতির নিয়মগুলো জানার আর সেই নিয়মকে কাজে লাগানোর বিজ্ঞানই হলো পদার্থবিজ্ঞান।

পদার্থবিজ্ঞানের ক্রমবিকাশ

সময়ের সাথে নিয়মতান্ত্রিকভাবে পদার্থবিজ্ঞান চর্চার ব্যাপারটা গড়ে উঠেছে। খ্রিস্টপূর্ব সময়ে গ্রিসে পদার্থবিজ্ঞান ও সামগ্রিকভাবে বিজ্ঞান চর্চার একটা ধারা দেখা যায়। এই সময়ে থেলিস, পীথাগোরাস, ডেমোক্রিটাস, আর্কিমিডিস, ইরাতোস্থিনিস প্রমুখের অবদান উল্লেখযোগ্য। ভারতবর্ষের আর্যভট্ট, বহ্মগুপ্ত ও ভাস্কর প্রমুখ গণিত ও জ্যোতির্বিজ্ঞানে অবদান রেখেছেন।

মোটামুটি অষ্টম থেকে চতুর্দশ শতকের দিকে বিজ্ঞান চর্চায় মুসলিম সভ্যতার গুরুত্বপূর্ণ অংশগ্রহণ দেখা যায়। উমাইয়্যা খেলাফতের সময়ে জ্ঞানচর্চার যে ভিত্তিপ্রস্থর স্থাপিত হয়েছিলো, আব্বাসী খেলাফতের সময়ে তা পূর্ণতা পায়, যে সময়কে বলা হয় ইসলামী স্বর্ণযুগ। আল খোয়ারিজমি, আল মাসুদী, ইবনে আল হাইয়াম, আল রাজী প্রমুখ জ্ঞান-বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন।

ইউরোপে বিজ্ঞানচর্চায় অগ্রসরতার শুরু হয় চতুর্দশ থেকে সপ্তদশ শতকের দিকে, কোপারনিকাস, গ্যালিলিও, জিওর্দানো ব্রুনো প্রমুখের অবদানের মধ্য দিয়ে যেই সময়টা ইউরোপীয় রেঁনেসা বা নবজাগরণের যুগ হিসেবে চিহ্নিত। এরপর সপ্তদশ শতকের দিকে র‍্যনে দেকার্ত, ফ্রান্সিস বেকন, আইজ্যাক নিউটনের অবদান ও চিন্তাধারার মধ্য দিয়ে বৈজ্ঞানিক বিপ্লবের মধ্য দিয়ে ইউরোপ নতুন যুগে প্রবেশ করে যা Age of Enlightenment বা আলোকিত যুগ হিসেবে চিহ্নিত।

পদার্থবিজ্ঞানের ইতিহাসের এই অত্যন্ত সংক্ষিপ্ত পাঠটুকু এজন্য যে ইতিহাস ছাড়া বর্তমানের অস্তিত্ব নেই। পদার্থবিজ্ঞানের বর্তমানকে বুঝতে এর অতীত থেকেই আসতে হবে আমাদের। এখানে আলোচনার বিষয়ের মধ্যে থাকার জন্য দীর্ঘায়ন পরিহার করেছি। আমি উৎসাহিত করবো ইসলামী স্বর্ণযুগ, ইউরোপীয় রেঁনেসা, এনলাইটেনমেন্টের মত ইতিহাসগুলো নিয়ে আরো জানতে। এটা শুধু বিজ্ঞানকে নয়, পৃথিবীকে একটা নতুন দৃষ্টিকোণ থেকে দেখার অবকাশ দিবে। তবে ইতিহাস নিয়ে পড়ার সময়ে সোর্সের বিষয়ে সতর্ক থাকা ও চোখ-কান খোলা রাখা খুবই প্রয়োজন।

চিরায়ত পদার্থবিজ্ঞান ও আধুনিক পদার্থবিজ্ঞান

পদার্থবিজ্ঞানের আলোচনাতে ফিরে আসি। উনিশ শতক পর্যন্ত পদার্থবিজ্ঞানের যে ধারা চর্চা হয়ে আসছিলো, তাকে চিরায়ত পদার্থবিজ্ঞান বা Classical Physics হিসেবে চিহ্নিত করা যেতে পারে। আমাদের দৈনন্দিন পর্যবেক্ষণগুলো সাধারণত চিরায়ত পদার্থবিজ্ঞান দিয়ে ব্যাখ্যা করা যায়। কিন্তু কিছু ঘটনা এমন দেখা গেলো, যা চিরায়ত পদার্থবিজ্ঞানে আমরা সবকিছুকে যেভাবে চিন্তা করতাম তার সাথে কোনভাবেই মেলানো যায় না।

চিরায়ত পদার্থবিজ্ঞানে পরমাণুর স্থিতিশীলতা ব্যাখ্যা করা সম্ভব না। কারণ বিদ্যুৎ চৌম্বকীয় সূত্র অনুসারে ইলেকট্রনের নিউক্লিয়াসকে কেন্দ্র করে ঘোরার সময় শক্তি বিকিরণ করার কথা, যার কারণে তা ক্রমাগত শক্তি হারিয়ে একসময় নিউক্লিয়াসে পতিত হবে। মাইকেলসন-মোরলি পরীক্ষা করে দেখলেন আলোর বেগ পৃথিবীর গতির কারণে প্রভাবিত হচ্ছে না, যেটা ক্লাসিকাল পদার্থবিজ্ঞানের নিয়মে কোনভাবেই হওয়ার কথা না। উত্তপ্ত বস্তুর বিকিরিত বিভিন্ন তরঙ্গদৈর্ঘ্যের আলো একই সূত্রের অধীনে আনা যাচ্ছে না। এরকম বিভিন্ন অসামঞ্জস্যতা পরিলক্ষিত হতে লাগলো।

কিছু একটা সমস্যা অবশ্যই হচ্ছে। বড় কিছু একটা মানুষ মিস করে যাচ্ছে। কী সেটা? এই ব্যাপারগুলো প্রকৃতির নিয়মকে নিয়ে সম্পূর্ণ নতুন আৢঙ্গিকে চিন্তা করার অবকাশ দিলো। এমন কি হতে পারে আমরা যেটা স্বাভাবিকভাবেই সত্য ধরে নিয়েছিলাম, প্রকৃতি আসলে সেভাবে চলে না? এখান থেকে ম্যাক্স প্লাঙ্ক উপস্থাপন করলেন কোয়ান্টাম তত্ত্ব, বিজ্ঞানী আইনস্টাইন উপস্থাপন করলেন আপেক্ষিকতার তত্ত্ব।

বিংশ শতকের শুরুতে কোয়ান্টাম মেকানিক্স ও আপেক্ষিকতা তত্ত্বগুলোর বিকাশের সাথে পদার্থবিজ্ঞানের নতুন একটা দিগন্ত উন্মোচন হয়। বস্তুকণার আচরণ, শক্তি, স্থান, সময় নিয়ে সম্পূর্ণ নতুনভাবে চিন্তার অবকাশ দেয়। এর আলোকে বিজ্ঞানের যে ধারা গড়ে উঠেছে, তা হলো আধুনিক পদার্থবিজ্ঞান।

যখন পরমাণুর চেয়েও ক্ষুদ্র কণার জগৎ নিয়ে আমরা কাজ করি, কিংবা এমন বস্তু নিয়ে যার গতি আলোর বেগের কাছাকাছি তখন চিরায়ত পদার্থবিজ্ঞান তার আচরণের যথাযথ ব্যাখ্যা দিতে ব্যার্থ হয় এবং আমাদের আধুনিক পদার্থবিজ্ঞানের দিকে যেতে হয়। তাই বলে চিরায়ত পদার্থবিজ্ঞান কিন্তু তার গুরুত্ব হারায়নি বা চিরায়ত পদার্থবিজ্ঞানের ধারা স্তিমিত হয়নি। যেহেতু সচারচর আমরা পরমাণু থেকে অনেক বৃহত্তর বস্তু এবং আলোর বেগ থেকে অনেক কম বেগের বস্তু নিয়েই কাজ করে থাকি, চিরায়ত পদার্থবিজ্ঞানের ধারণা ও সূত্রগুলো এখানে সম্পূর্ণভাবে কার্যকর।

সহায়তা

নবম শ্রেণি – বিজ্ঞান
নবম-দশম শ্রেণি – পদার্থবিজ্ঞান (পূর্বের বই)
উইকিপিডিয়া
Study Circus
LibreTexts Physics

Series Navigation<< নবম শ্রেণি – বিজ্ঞান – বিজ্ঞানের ধারণা ও শাখাবিন্যাসনবম শ্রেণি – বিজ্ঞান – রাশি, একক ও মাত্রার ধারণা >>

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *