নবম শ্রেণি – বিজ্ঞান – নতুন বই পর্যালোচনা

This entry is part 2 of 5 in the series নবম শ্রেণি - বিজ্ঞান

বইয়ের শুরুতে বলা হয়েছে পরীক্ষামূলক সংস্করণ। আমি কি একটা প্রশ্ন করতে পারি, যে বইগুলো দেশের সব শিক্ষার্থীর হাতে তুলে দেয়া হচ্ছে তা পরীক্ষামূলক সংস্করণ কীভাবে হতে পারে? শিক্ষার্থীদের ওপর এরকম পরীক্ষণ নতুন কিছু না, গত বেশ কিছু বছর ধরে চলছে। পরিবর্তন অনিবার্য সময়ের সাথে, কিন্তু বারংবার এরকম এক্সপেরিমেন্ট করাটা শিক্ষার্থীদের জন্য ভালো বিষয় না।

এবছর নতুন শিক্ষাক্রমে সবচেয়ে বড় পরিবর্তন যেটা বিজ্ঞান, ব্যবসায় শিক্ষা ও মানবিক বিভাগগুলো আলাদা না রেখে সমন্বিত করা হয়েছে। এই বিষয়টা ভালো হতে পারতো। কেননা আমি বিজ্ঞান বিভাগে পড়েছি, ব্যবসায় শিক্ষা আর মানবিক বিভাগে কী ধরণের পড়াশোনা আমার এখনো প্রায় কোন ধারণাই নেই। তো যদি নবম-দশম শ্রেণির সময়টা শিক্ষার্থীরা প্রতিটি বিভাগের বেসিক ধারণা পায়, তাহলে এটা উচ্চতর পড়াশোনার ক্ষেত্রে বিভাগ নির্ধারণে তাদের জন্য সহায়ক হতে পারতো।

কিন্তু দুঃখজনকভাবে, এমন কিছু হয়েছে বলে মনে হচ্ছে না। পূর্বে বিজ্ঞান বিভাগে যেধরণের পড়া ছিলো, তার বাইরে জীবন ও জীবিকা বইয়ের কিছু বিষয়ের বাইরে ব্যবসায় শিক্ষা ও মানবিকের তেমন কিছু অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে বলে মনে হচ্ছে না। অবশ্য দশম শ্রেণিতে এখন থেকে আলাদা বই হতে যাচ্ছে, তাই পরবর্তী বছর দশম শ্রেণির পাঠ্যক্রমে কোন বিষয়গুলো নিয়ে আসা হয়, এটা দেখার বিষয় হবে এখানে।

বিজ্ঞান বইয়ের ক্ষেত্রে, ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে অষ্টম শ্রেণির বিজ্ঞান বইয়ের ধারাবাহিকতা থাকছে নবম শ্রেণিতে। আগে নিম্ন মাধ্যমিক ও মাধ্যমিকের যে পার্থক্য ছিলো, নতুন শিক্ষাক্রমে সেটা মূলত থাকছে না। আলাদা পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন ও জীববিজ্ঞান বই থাকছে না। একটি অনুসন্ধান বই ও একটি অনুশীলন বই থাকছে। অনুসন্ধান বইটি মূলত তাত্ত্বিক ও গাণিতিক ধারণার জন্য এবং অনুশীলন বইটি সম্পর্কিত বিভিন্ন এক্টিভিটির জন্য। এই বইগুলো শুধু নবম শ্রেণির জন্য, দশম শ্রেণির জন্য বই আলাদা হবে।

অনুশীলন বইয়ের মূল আইডিয়াটা আমার কাছে ভালো লেগেছে। বাস্তব জগতের সাথে পড়াশোনাকে আরো সম্পৃক্ত করার চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু এজন্য যে ধরণের প্রশিক্ষিত ও আন্তরিক শিক্ষক এবং অবকাঠামো প্রয়োজন, তা সত্যি বলতে বাংলাদেশের খুব বেশি বিদ্যালয় দিতে পারবে- এটা ভাবা বাস্তবসম্মত হবে মনে করতে পারছি না।

এর আগে পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন ও জীববিজ্ঞান বইগুলো আগের ক্লাসগুলোর বিজ্ঞান বইয়ের সাথে ততটা সম্পর্কিত ছিলো না। এখন ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণিতে পাওয়া ধারণাগুলো দরকার হবে নবম শ্রেণিতে। যেমন রাশি, একক, বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধান প্রভৃতি বিষয়গুলোর ধারণা দেয়া হয়েছে ষষ্ঠ শ্রেণিতে। নবম শ্রেণিতে আলাদাভাবে এই ধারণাগুলো আসেনি। বিজ্ঞানের প্রথম অধ্যায় শুরু হয়েছে বল, চাপ ও শক্তি অধ্যায় দিয়ে। এই ধারণাগুলো বুঝতে গতির ধারণা অপরিহার্য, আবার শক্তি আর কাজ প্রায় অবিচ্ছেদ্য আলোচনা, যে বিষয়গুলো রয়েছে অষ্টম শ্রেণিতে। অর্থাৎ নতুন বইটি পূর্বের শ্রেণিগুলোর বইয়ের সাথে আন্তঃসম্পর্কিত।

আগের শ্রেণিগুলোতে যেমনই হোক, নবম শ্রেণি থেকে নতুন একটা শুরুর যে সুযোগ আগে ছিলো, এখন এই ব্যাপারটা ততটা থাকছে না। আগের ক্লাসগুলোতে পড়াশোনায় ঘাটতি থাকলে সেটার প্রভাব বেশি হবে নতুন শিক্ষাক্রমে। আরেকটা দিক হলো আবার নবম শ্রেণির একজনের কাছে একটা বিষয় যতটা ব্যাখ্যা করা যাবে, ষষ্ঠ শ্রেণির একজন ততটা নিতে সক্ষম হবে না। কাজেই ষষ্ঠ শ্রেণিতে দেয়া ধারণাগুলোতেও যথেষ্ট কমতি আছে, যে কমতি পরবর্তী শ্রেণিতে পূরণ হচ্ছে না।

এর প্রভাবে বেসিক কনসেপ্টে একটা ঘাটতি তৈরি হওয়ার একটা সম্ভাবনা দেখছি আমি। অন্যদিকে এর বিপরীতে অনেক উচ্চতর কিছু টপিক নিয়ে আসা হয়েছে। সবচেয়ে বড় উদাহরণ, আধুনিক পদার্থবিজ্ঞান অধ্যায়ে ডি-ব্রগলি তরঙ্গদৈর্ঘ্য, অনিশ্চয়তা নীতি, পার্টিকেল ফিজিক্স, টাইম ডায়ালেশন সবকিছু নিয়ে আসা হয়েছে। এই ব্যাপারগুলো ইন্টেরেস্টিং, তবে দৈনন্দিনের অবজার্ভেশনের সাথে মিলিয়ে হজম করা একটু কঠিন। আমার কাছে মনে হয়েছে সব বিভাগ সমন্বিত করার পর ভারসাম্য করাতে একটা অভাব থেকে গেছে।

আরেকটা কথা না বললেই না, তা হলো বিজ্ঞান পড়া আর রূপকথার গল্পের বই পড়া ঠিক একই ব্যাপার না। একইভাবে ষষ্ঠ শ্রেণি আর নবম শ্রেণির বইয়ের ভাষাও একইরকম হওয়াটা সঙ্গত না। বিশেষ করে প্রথম তিনটি অধ্যায়ে জেনে অবাক হবে, মজার ব্যাপার, হকচকিয়ে যেতে পারো এধরণের কথাগুলোর সাথে যে নাটকীয় উপস্থাপনা আনা হয়েছে এটা চোখে লাগার মত।

Series Navigation<< নবম শ্রেণি – বিজ্ঞান – পড়াশোনা নিয়ে কিছু খোলামেলা কথানবম শ্রেণি – বিজ্ঞান – বিজ্ঞানের ধারণা ও শাখাবিন্যাস >>

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *