নবম-দশম শ্রেণি – পদার্থবিজ্ঞান – প্রথম অধ্যায়: ভৌত রাশি ও পরিমাপ

This entry is part 1 of 7 in the series এসএসসি পদার্থবিজ্ঞান

আসসালামু আলাইকুম। নবম-দশম শ্রেণির পদার্থবিজ্ঞান বইয়ে মোট ১৪টি অধ্যায় আছে। আর এই অধ্যায়গুলোর মধ্যে প্রথম অধ্যায়টি সবচেয়ে অবহেলিত অধ্যায়গুলোর একটি। এটা ঠিক যে, সরাসরি সৃজনশীল প্রশ্ন এখান থেকে খুব একটা আসে না, তবে আমার যেটা মনে হয় এই অধ্যায়টা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়, কেননা সবচেয়ে বেসিক আইডিয়াগুলো এখানে রয়েছে। যদি এখানে ঘাটতি থাকে, তাহলে পদার্থবিজ্ঞান পড়াটা কিন্তু পূর্ণতা পাবে না।

১ জানুয়ারী ২০২৫ থেকে যাত্রা শুরু করা পড়াশোনা সম্পর্কিত আমাদের নতুন প্লাটফর্ম: পরাবৃত্ত

বিজ্ঞান কী?

পদার্থবিজ্ঞানের আলোচনাতে আসার আগে আমাদের জানা দরকার বিজ্ঞান আসলে কী। বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান শব্দের অর্থ বিশেষ জ্ঞান। ইংরেজি Science শব্দটা এসেছে ল্যাটিন শব্দ Scientia থেকে, যার অর্থ জ্ঞান। তবে অবশ্যই সবরকম জ্ঞান বিজ্ঞানের অন্তর্ভুক্ত না। যেমন মালোশিয়ার মুদ্রা হলো রিংগিত, এটা একরকম জ্ঞান, তবে বিজ্ঞান কিন্তু নয়।

তাহলে বিজ্ঞান আমরা কাকে বলবো? সাধারণভাবে যদি সংজ্ঞা আকারে প্রকাশ করতে চাই, তাহলে বিজ্ঞান হলো নিয়মতান্ত্রিক গবেষণা ও পরীক্ষালদ্ধ ফলাফলের ভিত্তিতে অর্জিত জ্ঞান ও যৌক্তিক পূর্বাভাস। যৌক্তিক পূর্বাভাস বলতে এমন বিষয়গুলো, যা হয়ত এখনো সরাসরি প্রমাণিত হয়নি, তবে পর্যবেক্ষণ আর হিসেব নিকেশ করে বোঝা যাচ্ছে এমনটা হয় বা হবে। একটা উদাহরণ যদি দিই, তাহলে কিছুদিন বিজ্ঞানীরা আমরা ব্লাকহোলের বাস্তব ছবি তুলতে পেরেছেন, কিন্তু এর অস্তিত্বের প্রথম ধারণা কিন্তু বিজ্ঞানী আইনস্টাইনের আপেক্ষিকতা তত্ত্ব থেকেই পাওয়া গেছিলো।

পদার্থবিজ্ঞান, জীববিজ্ঞান ও রসায়ন

অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত আমাদের একটিমাত্র বিজ্ঞান বই ছিলো। নবম-দশম শ্রেণিতে প্রথম আমরা তিনটি বিজ্ঞান বই পেয়েছি। বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখা রয়েছে, যার মধ্যে প্রধান তিনটি ভাগ হলো প্রাকৃতিক বিজ্ঞান, সামাজিক বিজ্ঞান ও সাধারণ বিজ্ঞান। উইকিপিডিয়া থেকে এটা নিয়ে আরো জানতে পারো। পদার্থবিজ্ঞান, জীববিজ্ঞান ও রসায়ন তিনটিই প্রাকৃতিক বিজ্ঞানের অন্তর্ভুক্ত।

বিজ্ঞানের শাখাগুলো কিন্তু একটি অন্যটির সাথে বেশ ঘনিষ্ঠ সম্পর্কযুক্ত। জীববিজ্ঞান, পদার্থবিজ্ঞান আর রসায়নের মধ্যে তুমি অনেক জায়গায় সম্পর্ক পাবে। তবে জীববিজ্ঞানের সাথে পদার্থবিজ্ঞান বা রসায়নের পার্থক্য বেশ পরিষ্কারভাবেই বোঝা যায়, কেননা জীববিজ্ঞানে আলোচনাটা হয় জীবজগৎ নিয়ে, জীব ও জীবন নিয়ে আলোচনার বিজ্ঞানই জীববিজ্ঞান। কিন্তু রসায়ন আর পদার্থবিজ্ঞানের তফাৎটা আবার সে তুলনায় সূক্ষ্ম, কেননা দুটোতেই পদার্থ নিয়ে আলোচনা করা হয়, কিন্তু আলোচনার ক্ষেত্র ভিন্ন।

পদার্থবিজ্ঞানে পদার্থ ও শক্তি এবং এদের অন্তঃক্রিয়া নিয়ে আলোচনা করা হয়। পদার্থের বৈশিষ্ট্য (ভর, আয়তন, স্থিতিস্থাপকতা প্রভৃতি), গতি, বল, শক্তি এরকম ব্যাপারগুলো পদার্থবিজ্ঞানে গুরুত্ব পায়। অন্যদিকে রসায়নে পদার্থের রাসায়নিক ধর্ম (গলনাঙ্ক, স্ফূটনাঙ্ক, রাসায়নিক সক্রিয়তা প্রভৃতি), উপাদান, অভ্যন্তরীণ গঠন এবং খুবই গুরুত্বপূর্ণভাবে পারস্পরিক ক্রিয়া-বিক্রিয়া এরকম বিষয়গুলোর আলোচনা হয়ে থাকে।

এখানে একটা মজার বিষয় লক্ষ্য করলে দেখবে পদার্থবিজ্ঞান, জীববিজ্ঞান এগুলোর সাথে আমরা বিজ্ঞান শব্দটা যোগ করছি। কিন্তু রসায়নের সাথে করছি না। রসায়নবিজ্ঞান বললে ঠিক ভুল হয় না, তবে একটু বাহুল্যদোষ হয়ে যায়। কেন তুমি চিন্তা করে দেখতে পারো। তবে একটা ক্লু দিই, ইংরেজিতে Physics, Chemistry, Biology-র সাথে Science না যুক্ত করলেও অন্য কিছু শাখায় কিন্তু ঠিকই করা হয়। যেমন- Soil Science, Earth Science, Computer Science প্রভৃতি।

পদার্থবিজ্ঞান কেন পড়ব?

যদি তুমি শুধু পরীক্ষার খাতায় নাম্বার তোলার জন্য পদার্থবিজ্ঞান পড়, তাহলে তোমাকে দোষ দিচ্ছি না, কেননা যেহেতু তুমি বিজ্ঞান বিভাগে পড়ছো, তোমাকে তো পড়তেই হবে, তাই না? তবে তুমি যদি জানো পদার্থবিজ্ঞানের উদ্দেশ্য কী, পদার্থবিজ্ঞান আমাদের কীভাবে কাজে লাগে, কেন কিছু মানুষ পদার্থবিজ্ঞানের গবেষণায় তাদের জীবন উৎসর্গ করে, শুধু তখনই তোমার পদার্থবিজ্ঞান পড়ার আগ্রহ জন্মাবে, তুমি তোমার পড়ায় আনন্দ খুঁজে পাবে।

পদার্থবিজ্ঞানের উদ্দেশ্যকে মৌলিক তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়। মানুষ আসলে স্বভাবকৌতুহলী। কোন কিছু যখন তার কাছে রহস্যময় হয়ে ধরা দেয়, সে রহস্য সে উদঘাটন করতে চায়। তুমি হয়ত দেখেছো, মাথায় চিরনি বা কলম ঘষলে তা ছোট ছোট কাগজের টুকরোকে আকর্ষণ করে। প্রাচীন গ্রীসের মানুষও এমনিভাবে দেখেছিলো অ্যাম্বার নামের পদার্থকে পশম দিয়ে ঘষলে তা আকর্ষণক্ষমতা লাভ করে। প্রাচীন চীনের মানুষ অবাক হয়েছিলো লোড স্টোন নামের পাথরের এক টুকরোকে অন্য টুকরোকে আকর্ষণ করতে দেখে। গ্রীসের ঘটনার জন্য দায়ী ছিলো বৈদ্যুতিক বল, আর চীনের ঘটনার পেছনে ছিলো চৌম্বক বল। তবে বিজ্ঞানীরা কিন্তু আরো গবেষণা করেছেন পরে এ নিয়ে, আর আমরা জানতে পেরেছি এ দুটো বল একই বলের ভিন্ন দু্টি রূপ মাত্র, যে বলটিকে বলা হয় বিদ্যুৎ চৌম্বকীয় বল। এভাবে প্রকৃতির রহস্যগুলোর উম্মোচন পদার্থবিজ্ঞানের উদ্দেশ্যগুলোর একটি।

লোডস্টোন এক ধরণের পাথর, যার চৌম্বক ধর্ম

গাছ থেকে একটা আপেল সামনে পড়লে কেউ হয়ত ওটা খাওয়ার জন্য ব্যস্ত হবে, কিন্তু কিছু মানুষ চিন্তা করে, এমনকি কারো কাছে সে চিন্তা হাসির মনে হতে পারে, তবু সত্যিই তো, গাছের আপেলগুলো, আর সবকিছু কেন সবসময় নিচের দিকেই পড়ে এখানে কি চিন্তার কোন খোরাক নেই? আচ্ছা, আপেলটা তো গাছ থেকে নিচে পড়ছে ঠিকই, কিন্তু দূর বহুদূর আকাশের চাঁদটা কেনইবা পড়ছে না? কখনো অবাক হয়েছো এই কথা ভেবে? আল্লাহ তায়ালা বিশ্বজগতকে একটা নিয়মের অধীনে সৃষ্টি করেছেন, যে নিয়মগুলো সবকিছু মেনে চলছে। প্রকৃতির এই নিয়মগুলো মানুষ জানতে চায়, বুঝতে চায়। প্রকৃতির নিয়মগুলো জানা পদার্থবিজ্ঞানের আরেকটি উদ্দেশ্য। পদার্থবিজ্ঞান তো প্রকৃতিকে আরো গভীরভাবে অনুভবের-ই বিজ্ঞান।

কিন্তু শুধু জানলেই কি হবে? জানার তৃষ্ণা নাহয় নিবারণ হলো, কিন্তু আমাদের অর্জিত জ্ঞানকে যদি সঠিকভাবে কাজে লাগাতে না পারি, তাহলে কি জানাটা সার্থক হয়? প্রকৃতির নিয়মগুলো কাজে লাগিয়েই কিন্তু আধুনিক যুগের চমৎকার সব আবিষ্কারগুলো হয়েছে। চিন্তা কর তো, বিদ্যুৎ ছাড়া জীবনের কথা! বিদ্যুৎ নেই মানে ফ্যান-লাইট নেই, সুইচ অন করলেই মাটির নিচের পানি উঠে আসবে না, আর টিভি-ফ্রিজ-মোবাইল-কম্পিউটারের কথা নাহয় বাদ-ই দিলাম। প্রাকৃতিক নিয়মগুলো ব্যবহার করে প্রযুক্তির বিকাশও পদার্থবিজ্ঞানের উদ্দেশ্যের মধ্যে রয়েছে। তবে এই বিকাশ যদি ভুল মানুষের হাতে কিংবা ভুলভাবে হয়, তা কিন্তু হতে পারে ধ্বংসাত্মক, হিরোশিমা আর নাগাসাকির বিস্ফোরণ আজও আমাদের আতঙ্কিত করে বিজ্ঞানের অপপ্রয়োগের ভয়াবহয়তার দিকটিতে।

পদার্থবিজ্ঞানের পরিসর

মানুষের স্বভাব-বৈশিষ্ট্যের জন্যই পদার্থবিজ্ঞানের জন্মটা অনিবার্য আছে। ফরাসি দার্শনিক র‍্যনে দেকার্ত একটা চমৎকার কথা বলেছিলেন, “I think, therefore I am.” মানুষ ভাবে, মানুষ চিন্তা করে আর পদার্থবিজ্ঞানের জন্ম তো এখান থেকেই। তাইতো পদার্থবিজ্ঞান বিজ্ঞানের সবচেয়ে প্রাচীন আর সবচেয়ে মৌলিক শাখা। নতুন সমস্যার যেখানে শুরু হয়, পদার্থবিজ্ঞান সেখানে নতুন করে তার অস্তিত্বের জানান দেয়। এভাবে পদার্থবিজ্ঞান ছড়িয়ে আছে সর্বত্র। বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখার সাথে পদার্থবিজ্ঞানের সমন্বয়ে গড়ে উঠেছে নতুন নতুন শাখা।

পদার্থবিজ্ঞানের সুবিস্তৃত পরিসরের আলোচনার জন্য সাধারণত দুটি মৌলিক অংশে ভাগ করা হয়। চিরায়ত পদার্থবিজ্ঞান (ক্লাসিকাল ফিজিক্স) ও আধুনিক পদার্থবিজ্ঞান (মডার্ন ফিজিক্স)।

সাধারণত উনিশ শতক পর্যন্ত চর্চা হওয়া পদার্থবিজ্ঞানকে চিরায়ত পদার্থবিজ্ঞান বলা হয়। বিংশ শতকের শুরুতে আবিষ্কৃত হয় দুটি যুগান্তকারী তত্ত্বের, যা থেকে পদার্থবিজ্ঞানের নতুন দিগন্ত উম্মোচিত হয়, প্রকৃতিকে প্রথমবারের মত আমরা এমনভাবে উপলদ্ধি করতে পারি যা আগে কখনো সম্ভব হয়নি। কোয়ান্টাম বলবিজ্ঞান ও আপেক্ষিক তত্ত্বের ভিত্তিতে গড়ে ওঠা পদার্থবিজ্ঞানের এই নতুন অধ্যায়কে বলা হয় আধুনিক পদার্থবিজ্ঞান।

বলবিজ্ঞান, শব্দবিজ্ঞান, তাপ এবং তাপগতি বিজ্ঞান, বিদ্যুৎ ও চৌম্বক বিজ্ঞান আর আলোকবিজ্ঞান চিরায়ত পদার্থবিজ্ঞানের অন্তর্ভুক্ত। আণবিক ও পারমাণবিক পদার্থবিজ্ঞান, নিউক্লিয় পদার্থবিজ্ঞান, কঠিন অবস্থার পদার্থবিজ্ঞান (সলিড স্টেট ফিজিক্স) ও পার্টিকেল ফিজিক্স আছে আধুনিক পদার্থবিজ্ঞানের মধ্যে।

একই ঘটনা চিরায়ত পদার্থবিজ্ঞান ও আধুনিক পদার্থবিজ্ঞান প্রায়সই ভিন্নভাবে ব্যাখ্যা করে। যেমন চিরায়ত পদার্থবিজ্ঞানে মহাকর্ষ বল এক প্রকার বল হলেও আধুনিক পদার্থবিজ্ঞানে একে ভরের প্রভাবে স্পেস-টাইমে সৃষ্ট বক্রতা দ্বারা ব্যাখ্যা করা হয়। অবশ্য চিরায়ত পদার্থবিজ্ঞান কিন্তু তার গুরুত্ব হারায়নি! আধুনিক পদার্থবিজ্ঞানের ধারণাগুলো বেশ জটিল, যা আলোর বেগের কাছাকাছি গতি কিংবা পরমাণুর চেয়েও ক্ষুদ্র ভরের হিসেব-নিকেশে ব্যবহারের প্রয়োজন হয়। তবে আমাদের সাধারণ দৈনন্দিন হিসেবগুলো চিরায়ত পদার্থবিজ্ঞান দিয়েই বেশ চলে যায়। নবম-দশম শ্রেণিতে আমাদের পড়াশোনাগুলো মূলত চিরায়ত পদার্থবিজ্ঞানের আলোকেই।

পদার্থবিজ্ঞানের ক্রমবিকাশ

আজকের পৃথিবীতে পদার্থবিজ্ঞানের অবদান ঠিক কোথায় তা হয়ত ব্যাখ্যার প্রয়োজন নেই, কিন্তু প্রাচীনকাল থেকে কত মানুষের অবদান আর ত্যাগে তা এই পর্যায়ে এসেছে তা জানার প্রয়োজন নিশ্চয়ই আছে। এর সবগুলো তোমাকে মনে রাখতে হবে এমন না, তবে ধাপে ধাপে আজকের পর্যায় পর্যন্ত কীভাবে পদার্থবিজ্ঞান এলো তোমার তার কিছুটা ধারণা থাকা উচিৎ নিশ্চয়ই। এখানে শুধু অল্পকিছু সাল উল্লেখ করা হয়েছে, যা ঘটনাগুলো কোন সময়ের বোঝার জন্য, সালগুলো মুখস্থ করতে আমি একদমই বলবো না।

আদিপর্ব

পদার্থবিজ্ঞানের ক্রমবিকাশের ইতিহাস পর্যালোচনার জন্য কয়েকটি ভাগে বইয়ে আলোচনা করা হয়েছে। আদিপর্বে পদার্থবিজ্ঞানের চর্চার একটা ধারা দেখা যায় গ্রিক বিজ্ঞানীদের মধ্যে, যেখানে সবার আগে যে নামটি আসে, তা হলো থেলিস। গ্রিক বিজ্ঞানী থেলিস (624 BC – 586 BC) কার্যকারণ এবং যুক্তি ছাড়া ধর্ম, অতীন্দ্রিয় এবং পৌরাণিক কাহিনীভিত্তিক ব্যাখ্যা মানতে অস্বীকার করেন, যেটা বিজ্ঞানচর্চার একটা ধারার সূচনা বলা যায়। এখানে আরেকটি বিষয় চলে আসে, তা হলো ইসলাম ও বিজ্ঞানের বিষয়ে আমাদের মনোভাব কেমন হওয়া উচিৎ, এ প্রসঙ্গে এই লেখাটি দেখে নিতে পারো। থেলিস সূর্যগ্রহণের ভবিষ্যৎবাণী করেন। অর্থাৎ তিনি তখনো সূর্যগ্রহণ দেখেননি, কিন্তু হয়ত সূর্য আর চাঁদের ঘূর্ণন দেখে বুঝেছিলেন সূর্যগ্রহণ ঘটে বা ঘটবে। বিজ্ঞানের সংজ্ঞায় আমরা ভবিষ্যৎবাণী শব্দটা বলেছিলাম, এটা তার আরেকটা উদাহরণ। লোডস্টোনের চৌম্বক ধর্ম, যার কথা বলেছিলাম, তার সম্পর্কেও তিনি জানতেন।

পীথাগোরাসের উপপাদ্য তোমরা ক্লাস এইটে পড়েছো নিশ্চয়ই? জ্যামিতিতে তার অবদান সর্বজনবিদিত, এর সাথে কম্পমান তারের ওপরও তার মৌলিক কাজ ছিলো। ডেমোক্রিটাস সর্বপ্রথম পদার্থের অবিভাজ্য এককের ধারণা দেন, যাকে আমরা এখন বলি এটম বা পরমাণু। ডেমোক্রিটাসের মত পুরোপুরি না হলেও বাস্তবতার অনেকটা নিকটবর্তী ছিলো, তবে প্রায় ২ সহস্র বছর তার তত্ত্ব কিন্তু গৃহীত হয়নি, কেননা বিজ্ঞানী এরিস্টটলের মতবাদ- মাটি, পানি, বাতাস ও আগুন দিয়ে সবকিছু তৈরি এটাই তখন গ্রহণযোগ্য ছিলো।

আকাশের সূর্য আর চাঁদের গতিপথ দেখে মানুষ মনে করেছিলো বুঝি সবে পৃথিবীটার চারপাশে ঘুরে চলেছে প্রতিক্ষণে, অবিরত। কিন্তু আকাশের আর সব গ্রহ নক্ষত্রের গতিপথ কিছু ভাবুক মানুষকে ঠিকই ভাবিয়েছিলো। আরিস্তারকাস সর্বপ্রথম সৌরেকন্দ্রিক মডেলের ধারণা আনেন। তার অনুসারী সেলেউকাস সেটা যুক্তিতর্ক দিয়ে প্রমাণও করেছিলেন, যদিও তা কালের বিবর্তনে হারিয়ে গেছে। তবে তাদের মতবাদ কিন্তু গৃহীত হয়নি তখনো, সৌরকেন্দ্রিক মডেলের ধারণা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলো অনেক পরে, অনেক সংগ্রামের মধ্য দিয়ে।

আর্কিমিডিসের কথা আমরা কে না জানি, আর তার ইউরেকা বলে দৌঁড়ে যাওয়ার কথা-ই বা কার অজানা? তিনি প্লবতা বা তরল পদার্থের ঊর্ধমুখী বল আবিষ্কার করেন। সূর্য থেকে তাপ নির্গত হয়, আর তাপ এক প্রকার শক্তি। যথাযথভাবে যদি সূর্যরশ্মিকে কেন্দ্রীভূত করা যায়, তাহলে দূরের কিছুতে আগুন ধরানো সম্ভব। আর্কিমিডিস রাজ্যে আক্রমণকারী শত্রুপক্ষের যুদ্ধজাহাজকে গোলীয় আয়নায় সূর্যরশ্মি কেন্দ্রীভূত করে আগুন ধরিয়েছিলেন বলে জানা যায়, তবে এর সত্যতা নিশ্চিত নয়

ইরাতোস্থেনিস (276 BC) প্রথম পৃথিবীর ব্যাসার্ধ সঠিকভাবে পরিমাপ করেন। কীভাবে করেছিলেন তা শেষ অংশে থাকছে। গ্রিক সভ্যতায় খ্রিস্টপূর্ব সময়ের এই ঘটনাগুলোর পরে জ্ঞান-বিজ্ঞানের অগ্রযাত্রা কিছুটা স্তিমিত হয়ে আসে। এর কয়েকশো বছর পরে ভারতবর্ষে বিজ্ঞান চর্চার ধারা দেখা যায়। আর্যভট্ট, বহ্মগুপ্ত ও ভাস্কর অবদান রাখেন গণিত ও জ্যোতির্বিদ্যায়। গ্রিক সভ্যতায় কখনো সত্যিকার অর্থে শূন্যকে ব্যবহার করা হয়নি। এর সূচনা করেন আর্যভট্ট (476 AD)।

এরপর মুসলিম সভ্যতার অবদানের বিষয়টি সামনে আসে। উমাইয়্যা খেলাফতের সময়ে জ্ঞানচর্চার যে ভিত্তিপ্রস্থর স্থাপিত হয়েছিলো, আব্বাসী খেলাফতের সময়ে তা পূর্ণতা পায়, যে সময়কে বলা হয় ইসলামী স্বর্ণযুগ। আল খোয়ারিজমির (783 AD) লেখা বই আল জাবির থেকে অ্যালজেবরা (বীজগণিত) শব্দটি এসেছে। আল মাসুদী প্রকৃতির ইতিহাস নিয়ে ৩০ খন্ডের এনসাইক্লোপিডিয়া রচনা করেন। ইবনে আল হাইয়ামকে (965 AD) আলোকবিজ্ঞানের স্থপতি বিবেচনা করা হয়। ওমর খৈয়াম ছিলেন একাধারে কবি, গণিতবিদ, জ্যোতির্বিদ ও দার্শনিক।

চীনা গণিতবিদ ও বিজ্ঞানীদের অবদানও পদার্থবিজ্ঞানের অগ্রগতিতে গুরুত্বপূর্ণ। শেন কুয়ো (1031) এখানে একটি স্মরণীয় নাম। তিনি কম্পাস নিয়ে কাজ করেছেন এবং ভ্রমণের সময় কম্পাস ব্যবহার করে দিক নির্ণয়ের বিষয়টি উল্লেখ করেছিলেন।

উত্থানপর্ব

ষোড়শ এবং সপ্তদশ শতাব্দীতে ইউরোপে পদার্থবিজ্ঞানের বিস্ময়কর বিপ্লব শুরু হয়, যে সময়টা ইউরোপীয় রেঁনেসা বা নবজাগরণের যুগ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। ওই যে আরিস্তারকাস আর সেলেকাউসের কথা মনে আছে, আর কালের গর্ভে তাদের হারিয়ে যাওয়া সৌরকেন্দ্রিক তত্ত্বের কথা? কোপার্নিকাস ১৫৪৩ সালে নতুন করে সৌরকেন্দ্রিক মডেলের ব্যাখ্যা নিয়ে আসেন। অবশ্য খুব সহজে সে তত্ত্ব সবার সামনে আসতে পারেনি, গ্যালিলিও গ্যালিলি পরবর্তীতে তা সবার সামনে নিয়ে আসেন। গ্যালিলিও তার ছাত্রকে চিঠিতে একটা চমৎকার কথা বলেছিলেন,

“ঈশ্বর আমাদেরকে অনুভূতি, যুক্তি ও বুদ্ধি দিয়ে সৃষ্টি করেছেন, কিন্তু আমাদেরকে সেগুলোর ব্যবহার করতে নিষেধ করেছেন, আমি মনে করি না এমন কথা মানতে আমি বাধ্য।”

ইসলামে সৃষ্টি নিয়ে চিন্তাভাবনাকে উৎসাহিত করা হয়েছে। আল কুরআনে বলা হয়েছে,

যারা আল্লাহকে দন্ডায়মান, উপবিষ্ট এবং শায়িত অবস্থায় স্মরণ করে থাকে এবং আসমান ও যমীনের সৃষ্টির ব্যাপারে চিন্তা করে (ও বলে) : ‘হে আমাদের প্রতিপালক! তুমি এসব অনর্থক সৃষ্টি করনি, তোমার পবিত্রতা বর্ণনা করছি, সুতরাং আমাদেরকে অগ্নির শাস্তি হতে রক্ষা কর।

সূরা আল ইমরান – আয়াত ১৯১

যাইহোক, গ্যালিলিওর জীবনটা ছিলো চার্চের সাথে দ্বন্দ্বময়। শেষ জীবনটা তাকে গৃহবন্দী কাটাতে হয়েছে। গ্যালিলিও সূত্র প্রমাণ করার বৈজ্ঞানিক ধারার সূচনা করেন। তাকে অনেক সময়আধুনিক বিজ্ঞানের জনক মনে করা হয়ে থাকে।

আমাদের অতি পরিচিত স্যার আইজ্যাক নিউটন বলবিদ্যার তিনটি সূত্র ও মহাকর্ষ সূত্র আবিষ্কার করেন যা গতিবিদ্যার ভিত্তি গড়ে দেয়। ক্যালকুলাস আবিষ্কার নিয়ে আরেকজন বিজ্ঞানী লিবনিজের সাথে নিউটনের সংঘাত অবশ্য ভালোরকমেই হয়েছে, সে কাহিনীও চমকপ্রদ, পড়ে নিতে পারো

অষ্টাদশ শতাব্দীর আগে তাপকে এক প্রকার ভরহীন তরল মনে করা হত। কাউন্ট রামফোর্ড দেখান আসলে তাপ এক প্রকার শক্তি এবং যান্ত্রিক শক্তিকে তাপশক্তিতে রূপান্তর সম্ভব। লর্ড ক্যালভিন তাপগতিবিদ্যা বা থার্মোডায়ানামিক্সের গুরুত্বপূর্ণ দুটি সূত্র প্রদান করেছিলেন।

বিদ্যুৎ আর চুম্বক কিন্তু খুব ঘনিষ্ঠভাবে সম্পৃক্ত! বিদ্যুৎ আর চুম্বক নিয়ে ব্যাপক গবেষণা দেখা যায় এ সময়ে। কুলম্ব বৈদ্যুতিক চার্জের মধ্যবর্তী বলের সূত্র আবিষ্কার। ভোল্টা আবিষ্কার করেন বৈদ্যুতিক ব্যাটারী। অরস্টেড বিদ্যুৎ প্রবাহ থেকে চুম্বক তৈরি করে দেখান, যার বিপরীত কাজটা করেন ফ্যারাডে ও হেনরি। তারা চৌম্বক ক্ষেত্রের পরিবর্তন থেকে বিদ্যুৎ প্রবাহ তৈরির বিষয়টি তুলে ধরেন।

আলো বিজ্ঞানীদের কাছে বড় রহস্যময়। কখনো তার আচরণ কণার মত, কখনোবা তরঙ্গের মত। আলো যে কী, তা বিজ্ঞানীদের হয়রান করেছে বহুবার। নিউটন বলেছিলেন আলো এক ধরণের কণা, কিন্তু ইয়ং তার পরীক্ষায় আলোর তরঙ্গ ধর্মের প্রমাণ পেয়েছিলেন। অবশেষে ম্যাক্সওয়েল তার বিখ্যাত ম্যাক্সওয়েল সমীকরণে বিদ্যুৎ ও চৌম্বক ক্ষেত্রের অভিন্ন সূত্রে নিয়ে আসেন এবং এর সাথে দেখান আলো মূলত বিদ্যুৎ চৌম্বকীয় তরঙ্গ আর বিদ্যুৎ ও চৌম্বক আলাদা কিছু না, বরং একই শক্তির ভিন্নরূপ।

আধুনিক পদার্থবিজ্ঞানের সূচনা

এই সময়ে এসে মানুষ এমন কিছু সমস্যার মুখোমুখী হলো যার সমাধান চিরায়ত পদার্থবিজ্ঞানের কাছে ছিলো না। যেমন কৃষ্ণবস্তুর বিকিরণ, কিংবা নিউক্লিয়াসে পতিত না হয়ে ইলেকট্রনের ঘূর্ণন এরকম ব্যাপারগুলোর উত্তর চিরায়ত পদার্থবিজ্ঞান দিতে পারে না। তবে ওই যে বলে না, Modern problems require modern solution! বিংশ শতকের শুরুতে বিজ্ঞানী আইনস্টাইন উপস্থাপন করেন তার বিখ্যাত আপেক্ষিকতার তত্ত্ব এবং ম্যাক্স প্লাঙ্ক আবিষ্কার করেন কোয়ান্টাম তত্ত্ব।

ডেমোক্রিটাসের অনেক পরে ১৮০৩ সালে ডালটন আবারো পরমাণুর ধারণাকে তুলে ধরেন তার পারমাণবিক তত্ত্বে। অ্যারিস্টটলের তত্ত্ব থেকে যদিও এটা বাস্তবের অনেক নিকটবর্তী ছিলো তবে পরমাণু যে অবিভাজ্য নয় সেটা স্পষ্ট হয় পরবর্তী কিছু আবিষ্কারে। ১৮৯৭ সালে বিজ্ঞানী থমসন ঋণাত্মক চার্জ ইলেকট্রন আবিষ্কার করেন। পরবর্তীতে ১৯১১ সালে রাদারফোর্ড কেন্দ্রে ধনাত্মক চার্জ (নিউক্লিয়াস) আবিষ্কার করেন এবং ১৯৩২ সালে বিজ্ঞানী চ্যাডউইক নিউক্লিয়াসে ধনাত্মক চার্জের পাশাপাশি নিরপেক্ষ চার্জ তথা নিউট্রনের অস্তিত্ব খুঁজে পান। অর্থাৎ নিউক্লিয়াস সামগ্রিকভাবে ধনাত্মক, তবে এখানে ধনাত্মক চার্জ প্রোটনের সাথে নিরপেক্ষ চার্জ নিউট্রনও রয়েছে। পরবর্তী গবেষণায় আমরা আরো জেনেছি নিউট্রন ও প্রোটন কোয়ার্ক নামক মৌলিক কণা দ্বারা তৈরি। আবার ইলেকট্রন ও কোয়ার্ক স্ট্রিং দ্বারা তৈরি কিনা গবেষণাধীন। মানে পরমাণুর অবিভাজ্যতা যদিও এখনকার বিজ্ঞানে আর বাস্তবতা নয়, তবে বাস্তবের কাছাকাছি পৌঁছাতে পারমাণবিক তত্ত্বকে কৃতিত্ত্ব দিতেই হবে।

সে যাই হোক, সমস্যাটা ছিলো নিউক্লিয়াসের চার্জ ধনাত্মক, আর ইলেকট্রনের চার্জ ঋণাত্মক। নিউক্লিয়াসকে ঘিরে ঘুরন্ত ইলেকট্রনের মডেল কোনভাবেই চিরায়ত পদার্থবিজ্ঞান থেকে ব্যাখ্যা করা যায় না, কেননা বিদ্যুৎ চৌম্বকীয় সূত্র অনুযায়ী এসময়ে ইলেকট্রন শক্তি বিকিরণ করবে এবং এর ফলে একটা পর্যায়ে শক্তি হারিয়ে নিউক্লিয়াসে পতিত হবে। কিন্তু বাস্তবে তো এমন হয় না! ১৯০০ সালে ম্যাক্স প্লাঙ্কের আবিষ্কৃত কোয়ান্টাম তত্ত্ব এর সমাধান করে পরমাণুর স্থিতিশীলতা ব্যাখ্যা করে। বিকিরণ সংক্রান্ত কোয়ান্টাম সংখ্যায়ন তত্ত্বের গাণিতিক ব্যাখ্যা দেন প্রফেসর সত্যেন্দ্রনাথ বসু, যার নামে বোজন নামক মৌলিক কণার নামকরণ করা হয়েছে।

একটা তরঙ্গের সঞ্চালনের জন্য মাধ্যম প্রয়োজন। আলো যেহেতু বিদ্যুৎ চৌম্বকীয় তরঙ্গ, অনুমান করে নেয়া হয়েছিলো প্রকৃতিতে কোন একটা মাধ্যম আছে, যার মাধ্যমে আলো বিদ্যুৎ চৌম্বকীয় তরঙ্গ তথা চলাচল করে। কাল্পনিক এই মাধ্যমের নাম দেয়া হয়েছিলো ইথার। কিন্তু বিজ্ঞানী মাইকেলসন ও মোরলি অতিসূক্ষ্ম একটি পরীক্ষার মাধ্যমে ইথারের অস্তিত্ব আবিষ্কারের চেষ্টা করতে গিয়ে তার থেকে চমকপ্রদ একটি আবিষ্কার করে ফেলেন, তা হলো ইথার বলে আসলে কিছুই নেই, মানে কিনা আলো কোন মাধ্যম ছাড়াই চলে এবং একারণে আলোর বেগ স্থির বা গতিশীল সব পর্যবেক্ষকের জন্য ধ্রুব!

আধুনিক পদার্থবিজ্ঞানের কথাগুলো কখনো যেন অবিশ্বাস্য রূপকথার মত শোনায়। স্থির বা গতিশীল সব পর্যবেক্ষকের জন্য ধ্রুব কথাটার অর্থ হলো কেউ যদি আলোর উৎসের দিকে প্রচন্ডবেগে অগ্রসর, তাহলে তার কাছে আলোর যে বেগ অনুভব হবে, আলোর উৎসের বিপরীত দিকে প্রচন্ডবেগে চলা কারো জন্যও আলোর বেগ ঠিক সেরকমই অনুভব হবে। এই আপাত অবিশ্বাস্য ঘটনাকে ব্যাখ্যা করে আইনস্টাইনের আলোড়ন সৃষ্টিকারী থিওরি অফ রিলেটিভিটি বা আপেক্ষিকতা তত্ত্ব। এই তত্ত্ব থেকে আসে সর্বকালের সবচেয়ে চমকপ্রদ সূত্র: E=mc2, যা দেখায় ভরকে শক্তিতে রূপান্তর করা সম্ভব। অবশ্য এর ভয়াবহ রূপও আমরা দেখেছিলাম, পারমাণবিক বোমা তৈরির মূলে রয়েছে এর ব্যবহার।

ডিরাক কোয়ান্টাম তত্ত্বের সাথে আপেক্ষিকতা তত্ত্ব ব্যবহার করে প্রতিপদার্থের অস্তিত্ব ঘোষণা দেন, যা বছরখানেক পরে আবিষ্কার হয়। তার আগে উনিশ শতকের একদম শেষ দিকে রন্টজেন এক্স-রে আবিষ্কার করেন, বেকরেল পরমাণুর কেন্দ্র থেকে তেজষ্ক্রিয় দেখান। মেরি কুরি ও পিয়েরে কুরি তেজষ্ক্রিয় পলোনিয়াম ও রেডিয়াম আবিষ্কার করেন, যা থেকে দেখা যায় পরমাণু অবিনশ্বর নয়, বরং পরমাণু ভেঙে তেজষ্ক্রিয় বিকিরণ হতে পারে। অবশ্য তেজষ্ক্রিয়তা নিয়ে গবেষণার জন্য মূল্য দিতে হয়েছে তাদেরকে, তেজষ্ক্রিয়তার ভয়াবহতা তাদের মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিয়েছে, এমনকি আজও তাদের ব্যবহার্য জিনিসপত্র তেজষ্ক্রিয়তা মুক্ত নয়। মেরি কুরির ডায়েরি ছুঁয়ে দেখতে হলে এখনো জীবনের ঝুঁকি নেয়ার সম্মতিপত্রে সাক্ষর করতে হয়। রোর বাংলায় চমৎকার একটি আর্টিকেল আছে এ নিয়ে।

সাম্প্রতিক পদার্থবিজ্ঞান

ইলেকট্রনিক্স ও আধুনিক প্রযুক্তির অগ্রগতিতে শক্তিশালী এক্সেলেরেটরের ব্যবহার করে নতুন নতুন অনেক কণা তৈরি সম্ভব হয়েছে। অনেক রকমের এই কণাগুলোর গঠন অবশ্য Standard Model ব্যবহার করে কয়েকটি মৌলিক কণা ও তাদের প্রতিপদার্থ দ্বারাই সম্ভব হয়, তবে এই কণাগুলোর ভর এভাবে ব্যাখ্যা করা যায় না। তাই হিগজ বোজন নামে নতুন একটি কণার অস্তিত্ব ভবিষ্যতবাণী করা হয়, যা ২০১৩ সালে পরীক্ষাগারে শনাক্ত হয়। বোঝনাই? কোন ব্যাপার না, আমিও বুঝিনি, সবকিছু এখনই খুব গভীরভাবে জানতে বা বুঝতে হবে, এমন কিন্তু না!

১৯২৪ সালে বিজ্ঞানী হাবল বিশ্বব্রহ্মান্ডের প্রসারণ শনাক্ত করেন, অর্থাৎ তিনি দেখান গ্রহনক্ষত্রগুলো পরস্পর থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। পরবর্তী আরো গবেষণায় জানা গেছে প্রায় চৌদ্দ বিলিয়ন বছর আগে বিশ্বব্রক্ষ্মান্ডের সবকিছু এক বিন্দুতে ছিলো, যা বিগ ব্যাং নামক মহাবিস্ফোরণের পর থেকে ক্রমাগত প্রসারিত হচ্ছে। সাম্প্রতিক পদার্থবিজ্ঞানের মতে এই প্রসারণ সবসময়ই চলবে।

আসল কথা হলো আমরা কিছুই জানি না। আর আমরা যত বেশি জানবো, আমরা তত বেশি জানবো যে আমরা আসলে কতটা কম জানি। পদার্থবিজ্ঞানীরা দেখিয়েছেন দৃশ্যমান গ্রহ-নক্ষত্র গ্যালাক্সির ৪% ব্যাখ্যা করতে পারে, অবশিষ্ট অংশের ব্যাখ্যা পেতে ডার্ক ম্যাটার, ডার্ক এনার্জির কথা মেনে নিতে হয়।

বর্তমান সভ্যতার ভিত্তিমূল বলা হয় ইলেকট্রনিক্স। ইলেকট্রিকাল আর ইলেকট্রনিক্সের মধ্যে কিন্তু একটা পার্থক্য আছে, ইলেকট্রিকালে পরিবাহী নিয়ে আলোচনা করা হয় আর ইলেকট্রনিক্সে অর্ধপরিবাহী নিয়ে। অর্ধপরিবাহী কতটা বিদ্যুৎ পরিবহন করবে তা নিয়ন্ত্রণের সুযোগ রয়েছে, আর এই ব্যাপারটাকে ঠিকভাবে কাজে লাগিয়ে ম্যাজিকাল কিছু করা যায়। আজকের কম্পিউটার, স্মার্টফোনের মত ডিজিটাল ডিভাইসগুলো গড়ে উঠেছে অর্ধপরিবাহীর জাদুতে। এজন্য ইলেকট্রনিক্সকে বলা হয় আধুনিক সভ্যতার ভিত্তিমূল। আর অর্ধপরিবাহীর এই জাদুর শুরু হয়েছিলো সলিড স্টেট ফিজিক্সের গবেষণা থেকে।

জেনে রাখা ভালো

বিজ্ঞানের প্রাচীনতম শাখা: পদার্থবিজ্ঞান
বিজ্ঞানের সবচেয়ে মৌলিক শাখা: পদার্থবিজ্ঞান
বর্তমান সভ্যতার ভিত্তিমূল: ইলেকট্রনিক্স
Astronomy (জ্যোতির্বিজ্ঞান) ও পদার্থবিজ্ঞানের সমন্বয়ে: Astrophysics
জীববিজ্ঞান ও পদার্থবিজ্ঞানের সমন্বয়ে: Biophysics
রসায়ন ও পদার্থবিজ্ঞানের সমন্বয়ে: Chemical Physics
ভূ-তত্ত্বে ব্যবহারের জন্য: Geophysics
চিকিৎসাবিজ্ঞানে ব্যবহারের জন্য: Medical Physics

  • পরমাণুর বৈশিষ্ট্য
    • কেন্দ্রে নিউক্লিয়াস (ধনাত্মক চার্জ)
    • নিউক্লিয়াসকে কেন্দ্র করে ইলেকট্রন ঘূর্ণায়মান
    • নিউক্লিয়াস: নিউট্রন (চার্জ নিরপেক্ষ) + প্রোটন (ধনাত্মক চার্জ)
    • নিউট্রন ও প্রোটন কোয়ার্ক নামক মৌলিক কণা দ্বারা তৈরি
    • ইলেকট্রন ও কোয়ার্ক স্ট্রিং দ্বারা তৈরি কিনা গবেষণাধীন
    • মৌলিক কণা আবিষ্কার: ইট পড়ে নিচে
    • ইলেকট্রন: থমসন
    • প্রোটন: রাদারফোর্ড
    • নিউট্রন: চ্যাডউইক

ভৌত রাশি

ভৌত শব্দটা বোঝার চেষ্টা করা যাক প্রথমে। পদার্থবিজ্ঞান পড়াশোনার সময়ে আমরা পদার্থ নিয়ে আলোচনা করি, ভূত-প্রেতের কোন কারবার এখানে নেই এই ভৌত মানে হলো বস্তুজগৎ বা জড়জগৎসম্বন্ধীয়। কখনো কখনো ইংরেজিতে বোঝা বাংলা থেকে সহজ, ভৌত ইংরেজিতে হলো ফিজিক্যাল। মানে যা কিছুর ফিজিক্যাল এক্সিস্টেন্স আছে, তার সবই ভৌত জগতের অংশ।

এখন বলা যাক রাশি কী। ভৌত জগতে যা কিছু পরিমাপযোগ্য, তাকে রাশি বলে। রাশির অগণিত উদাহরণ দেয়া যায়, দৈর্ঘ্য, প্রস্থ, উচ্চতা, ক্ষেত্রফল, আয়তন, ওজন, তাপমাত্রা,, কাঠিন্য, অবস্থান, বেগ, উপাদান, স্থিতিস্থাপকতা, তাপ পরিবাহিতা, অপরিবাহিতা, ঘনত্ব, তাপ, চাপ, গলনাঙ্ক, স্ফূটনাঙ্ক,… এবং আরো অনেক! কিন্তু মজার একটা বিষয় হলো মাত্র ৭টি রাশি ব্যবহার করেই সব রাশি পাওয়া সম্ভব।

মৌলিক রাশি: যেসকল রাশি স্বাধীন বা নিরপেক্ষ অর্থাৎ, অন্য কোন রাশির ওপর নির্ভরশীল নয়, সেগুলো মৌলিক রাশি। মৌলিক রাশিগুলো হলো- দৈর্ঘ্য, ভর, সময়, বৈদ্যুতিক প্রবাহ, তাপমাত্রা, পদার্থের পরিমাণ, দীপন তীব্রতা।
লদ্ধ রাশি: মৌলিক রাশির ওপর নির্ভর করে যখন অন্য কোন রাশি প্রকাশ করা হয়, তাদেরকে লদ্ধ রাশি বলে। মৌলিক রাশি ছাড়া সব রাশিই লদ্ধ রাশি।

একক

রাশি পরিমাপ করতে অবশ্যই একক প্রয়োজন হয়। যেমন ধরা যাক তুমি যদি বলো আমার কাছে ৫ আপেল আছে, তাহলে এর কোন অর্থ হয় না, এতে বোঝা যায় না তোমার কাছে আসলে কতখানি আপেল আছে। কিন্তু তুমি যদি বলো আমার কাছে ৫ পাউন্ড আপেল আছে বা ৫ কেজি আপেল আছে তখন আর কোন দুর্বোধ্যতা থাকে না। এই পাউন্ড বা কেজি হলো একক।

তাহলে একক কী? একক হলো একটা আদর্শ মান, যার সাথে তুলনা করে আমরা পরিমাপ করতে পারি। মানে কিনা পাঁচ কেজি অর্থ হলো এক কেজি যতটা তার পাঁচ গুণ ভর। একইভাবে আমি ২ কিলোমিটার হেঁটেছি অর্থ হলো ১ কিলোমিটারের ২ গুণ বা ১ মিটারের ২০০০ গুণ হেঁটেছি।

মৌলিক রাশির একককে মৌলিক একক ও লদ্ধ রাশির একককে লদ্ধ একক বলে। একই রাশির বিভিন্নরকম এককে মাপা যেতে পারে। যেমন দৈর্ঘ্যকে মিটার, গজ, ফুট প্রভৃতি এককে আমরা মেপে থাকি, আবার দৈনন্দিন কাজে অনেক সময় হাত দিয়েই মেপে ফেলি, এখানে হাতও কিন্তু একরকম একক।

পৃথিবীটা বৈচিত্রময়, এই বৈচিত্র পৃথিবীকে সুন্দর করে। তবে নানারকম এককের ব্যবহার অনেকসময়ই সমস্যাপূর্ণ হতে পারে, এক অঞ্চলের ব্যবহৃত একক অন্য অঞ্চলে বোধগম্য না-ও হতে পারে। তাই প্রয়োজন হয় আদর্শ কিছু একক নির্দিষ্টকরণের। মৌলিক রাশিগুলোর আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত এককগুলোকে SI একক বলে। মৌলিক SI এককগুলোর ভিত্তিতে আরো লদ্ধ SI একক পাওয়া যায়।

SI একক

SI বলতে বোঝায় International System of Unit (এককের আন্তর্জাতিক পদ্ধতি)। এখন এটাকে SI কেন বলা হয়, মনে প্রশ্ন আসছে কি? আসলে ফরাসি ভাষায় Système International (d’Unités) থেকে SI এসেছে। মৌলিক রাশিগুলোর SI এককগুলো তোমাদের বই থেকে নেয়া নিচের ছকে উপস্থাপন করা হয়েছে:

সম্প্রতি বিজ্ঞানীরা সবগুলো SI একককে বিশ্বজনীন কোন ঘটনার আলোকে সংজ্ঞায় নিয়ে এসেছেন। যেমন ফ্রান্সে সংরক্ষিত প্লাটিনাম ইরিডিয়ামে তৈরি একটি সিলিন্ডারের ভরকে আদর্শ ১ কেজি ধরা হত। একটা আদর্শ মান হিসেবে এরকম কিছুকে ধরে নেয়াটা সমস্যাপূর্ণ, কেননা এটা সবখানে পাওয়া যাবে না, আবার সর্বোচ্চ সতর্কতায় রাখলেও সময়ের সাথে সিলিন্ডারটি ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারে। কিন্তু এখন কিলোগ্রামের সংজ্ঞা প্লাঙ্কের ধ্রুবকের মাধ্যমে দেয়া হয়। তবে সংজ্ঞা বদলালেও মান মূলত বদলানো হয়নি, অন্তত দৈনন্দিন ব্যবহারে নতুন সংজ্ঞাগুলো কোন পরিবর্তন সৃষ্টি করে না।

সেকেন্ড: সিজিয়াম-133 পরমাণু 9,192,631,770টি স্পন্দন সম্পন্ন করতে যে সময় নেয়, তাকে এক সেকেন্ড বলে।
মিটার: শূন্য মাধ্যমে আলো এক সেকেন্ডের 299,792,458 ভাগের এক ভাগ সময়ে যে দূরত্ব অতিক্রম করে তাকে এক মিটার বলে।
কিলোগ্রাম: প্লাঙ্কের ধ্রুবককে 6.62607015×10−34 m2 s-1 দ্বারা ভাগ দিলে যে মান পাওয়া যায়, সেটিই এক কিলোগ্রাম।
অ্যাম্পিয়ার: প্রতি সেকেন্ডে 1/1.602176634 x 10-19 সংখ্যক ইলেকট্রনের চার্জের সমপরিমাণ চার্জ প্রবাহিত হলে তাকে এক অ্যাম্পিয়ার বলে।
মোল: যে পরিমাণ বস্তুতে অ্যাভোগেড্রোর ধ্রুব 6.02214076 x 1023 সংখ্যক কণা থাকে সেটি হচ্ছে এক মোল।
কেলভিন: যে পরিমাণ তাপমাত্রার পরিবর্তনে তাপশক্তির 1.380649 x 10-23 J পরিবর্তন হয়, সেটি এক কেলভিন।
ক্যান্ডেলা: সেকেন্ডে 540 x 1012 বার কম্পনরকম আলোর উৎস থেকে যদি এক স্টেরেডিয়ান ঘনকোণে এক ওয়াটের 683 ভাগের একভাগ বিকিরণ তীব্রতা পৌঁছায় তাহলে সেই আলোর তীব্রতা এক ক্যান্ডেলা।
সংজ্ঞাগুলো মুখস্থ করতে কিন্তু আমি খুব বেশি উৎসাহিত করব না!

জেনে রাখতে পারো

নতুন সংজ্ঞাগুলোতে বেশ জটিল কিছু ধারণার ব্যবহার রয়েছে, যেকারণে সংজ্ঞাগুলো বোঝা তোমাদের জন্য কঠিন (এবং আমার জন্যও!)। এজন্য তোমাদের বইয়ে সংজ্ঞাগুলো বেশ সহজ করে দেয়া, আসল সংজ্ঞাগুলো কয়েকটি একটুখানি অন্যভাবে দেয়া হয়েছে। নতুন সংজ্ঞাগুলো এখানে দেখে নিতে পারো।

নতুন সংজ্ঞাগুলো এমনভাবে দেয়া হয়েছে যেন ৭টি ধ্রুব সংখ্যার সাংখ্যিক মান SI এককে সুনির্দিষ্ট হয়। যেমন কিলোগ্রামের সংজ্ঞা দেয়া হয়েছে প্লাঙ্কের ধ্রুবকের মাধ্যমে, যা h দিয়ে প্রকাশ করা হয়। প্লাঙ্কের ধ্রুবক বুঝতে হলে আধুনিক পদার্থবিজ্ঞান নিয়ে একটুখানি জানা থাকা লাগবে। এই ধ্রুবকটি তাড়িৎচৌম্বক বিকিরণে এক কোয়ান্টামের শক্তি ও বিকিরণের কম্পাঙ্কের অনুপাত প্রকাশ করে।

প্লাঙ্কের ধ্রুবকের মান J s বা kg m2 s-1 এককে এক্সাক্টলি 6.62607015×10−34 গ্রহণ করে কিলোগ্রামের সংজ্ঞা দেয়া হয়েছে [J বা জুল শক্তির একক, এটা kg m2 s−2 নির্দেশ করে]]। মানে m ও s এর নিজ নিজ সংজ্ঞা গ্রহণ করে প্লাঙ্কের ধ্রুবকের মান 6.62607015×10−34 kg m2 s-1 হতে kg-র পরিমাণ যতটা হওয়া লাগবে, kg ঠিক ততটাই। আগেও আমরা প্লাঙ্কের ধ্রুবকের মান জানতাম, তবে দশমিকের পর সব ঘর একদম কাটায় কাটায় জানতাম না (অধ্যায়ের পরবর্তী অংশে আপেক্ষিক ত্রুটির আলোচনাতে আরো ধারণা পাবে)। নতুন সংজ্ঞায় এখন এর মান একদম সুনির্দিষ্ট।

একইভাবে কেলভিনের সংজ্ঞা এমনভাবে দেয়া হয়েছে যেন বোল্টজম্যান ধ্রুবকের সাংখ্যিক মান 1.380649 x 10-23 J K-1 বা kg m2 s−2 K-1 হয়। আগের মতই kg, m আর s-এর জন্য নিজ নিজ সংজ্ঞা প্রযোজ্য হবে।

এককের অন্যান্য পদ্ধতি

আরো কিছু পদ্ধতি এককের জন্য প্রচলিত। যেমন-
MKS পদ্ধতি: দৈর্ঘ্যের একক মিটার (m), তাপমাত্রার একক কেলভিন (K), সময়ের একক সেকেন্ড (s)
CGS পদ্ধতি: দৈর্ঘ্যের একক সেন্টিমিটার (cm), ভরের একক গ্রাম (g), সময়ের একক সেকেন্ড (s)
FPS পদ্ধতি: দৈর্ঘ্যের একক ফুট (ft), ভরের একক পাউন্ড (lb), সময়ের একক সেকেন্ড (s)।

MKS পদ্ধতির সাথে SI পদ্ধতির কিন্তু একটু পার্থক্য আছে। MKS পদ্ধতিতে এই তিনটি একক আছে, অন্যদিকে SI পদ্ধতিতে মৌলিক ৭টি রাশিরই সুসংজ্ঞায়িত একক আছে। আরেকটা মজার জিনিস দেখো, পাউন্ডকে lb দ্বারা প্রকাশ করা হয়, এটা আসলে একটা রোমান একক থেকে এসেছিলো, যার নাম লিব্রা (libra), এজন্য এরকম।

উপসর্গ বা গুণিতক বা prefix

একটা টেবিলের দৈর্ঘ্য ১ মিটার, এটা বলতে, লিখতে বা বুঝতে কোন সমস্যা নেই। কিন্তু বগুড়া থেকে ঢাকার দূরত্ব বলার বেলায় ১ লক্ষ ৮৫ হাজার ৫০০ কিলোমিটার এভাবে বলাটা মোটেও প্রায়োগিক নয়, আমরা এভাবে বলি যে ১৮৫.৫ কিলোমিটার। আবার মানুষের চুলের ব্যাস ০.০০০০৭৫ মিটার বলার থেকে ৭৫ মাইক্রোমিটার বলাটা অনেক সুবিধাজনক।

এরকম প্রয়োজনে SI এককর সাথে বিভিন্ন গুণিতক ব্যবহার হয়। যেমন 1 কিলোমিটার মানে 1 x 103 m। আমার মতে নিচের চার্টটা তোমাদের মনে রাখা উচিৎ, বিভিন্ন সময়ে এককের সাথে উপসর্গগুলোর ব্যবহার তোমরা দেখবে। এখানে এটা খেয়াল রেখো কিলো পর্যন্ত সব উপসর্গ ছোট হাতের অক্ষরে এবং মেগা থেকে পরবর্তীগুলো বড় হাতের অক্ষরে লেখা হয়।

কম্পিউটার বা ডিজিটাল ডিভাইসের ক্ষেত্রে আমরা যখন কিলো, মেগা, গিগা বা টেরা ব্যবহার করি, তখন কিন্তু আমরা একটা থেকে অন্যটা 103 বা 1000 গুণ না নিয়ে 1024 গুণ নিই। এর কারণ হলো এই ডিভাইসগগুলো বাইনারি বা ২ ভিত্তিক পদ্ধতিতে কাজ করে, তাই ২ এর ঘাত এরকম সংখ্যার ব্যবহার এখানে উপযুক্ত। 210 বা 1024, 1000 এর বেশ কাছাকাছি বলে এর বখানে 1024 ব্যবহার হয়।

একক লেখার নিয়ম

৩ নং নিয়মটা খেয়াল কর। 5 m/s (মিটার পার সেকেন্ড) মানে প্রতি সেকেন্ডে 5 m। এটাকে 5 m s-1 এভাবেও লেখা যায়, অঙ্কে সাধারণত এভাবেই আমরা লিখি। ঋণাত্মক সূচককে ইনভার্স পড়া হয়। যেমন- এম এস ইনভার্স ওয়ান। ত্বরণের একক m s-2 বা m/s2, ত্বরণ আসলে প্রতি সেকেন্ডের বেগ, মানে 5 m s-1 s-1 বলা যায়, এজন্য এরকম। এটাকে মিটার পার সেকেন্ড স্কয়ার অথবা এম এস ইনভার্স টু এভাবে পড়তে পারো। কাজের একক kg m2 s-2 কে কেজি মিটার স্কয়ার পার সেকেন্ড স্কয়ার এভাবে পড়া যায়।

মাত্রা

আমি যদি তোমাকে প্রশ্ন করি ৫টি তরজুম আর ৬টি বাঙ্গি মিলে কয়টি কাঁঠাল হয়, তবে তুমি কি উত্তর দিতে পারবে? যদি না পারো, তাহলে জেনে রাখো 5 m আর 6 kg মিলে কত sec তাও তুমি বলতে পারবে না। কিন্তু প্রশ্নটা যদি হয় 5 J + 10 n m = কত kg m2 s-2 কিংবা 5 ft + 10 m + 51 cm = কত inch তাহলে উত্তর দেয়া কিন্তু খুবই সম্ভব। কেন জানতে চাও? তাহলে তোমাকে মাত্রা বুঝতে হবে।

একটি রাশিতে বিভিন্ন মৌলিক রাশি কোন সূচক বা পাওয়ার বা ঘাতে রয়েছে, তাকে মাত্রা বলে। মাত্রা প্রকাশে ব্যবহৃত প্রতীকগুলো হলো: ভর M, দৈর্ঘ্য L, সময় T, তাপমাত্রা (কেলভিন) K, পদার্থের পরিমাণ mol, বৈদ্যুতিক প্রবাহ A, দীপন তীব্রতা Cd। এর মধ্যে আপাতত প্রথম তিনটি জানা তোমার সবচেয়ে বেশি দরকার।
অনেক সময় তৃতীয় বন্ধনীতে মাত্রা নির্দেশ করা হয়। যেমন, [বেগ] = বেগের মাত্রা = LT-1

এখন মাত্রাটা একটু অনুভবের চেষ্টা করি। দৈর্ঘ্যের মাত্রা L, ক্ষেত্রফল দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ, মানে কিনা দুটো দৈর্ঘ্যের গুণফল, অর্থাৎ, ক্ষেত্রফলের মাত্রা L2। একইভাবে আয়তনের মাত্রা L3। বেগ হলো প্রতি সেকেন্ডে সংগঠিত সরণ, সরণ মূলত দৈর্ঘ্য। অর্থাৎ দৈর্ঘ্যকে সময় দ্বারা ভাগ করলে বেগ পাওয়া যায়। তাহলে বেগের মাত্রা LT-1

একক থাকতে মাত্রা কেন প্রয়োজন? কারণ মৌলিক রাশিগুলোর বিভিন্নরকম একক আছে, মাত্রা তেমনটি নয়। আবার বলের একক N (নিউটন) দেখে বোঝা যায় না এটা কোন কোন মৌলিক রাশি নিয়ে তৈরি হয়েছে, কিন্তু বলের মাত্রা MLT-1 থেকে বোঝা যায় এটা ভর ও দৈর্ঘ্যের গুণফলকে সময় দ্বারা ভাগ করে পাওয়া গেছে।

মনে রাখতে হবে শুধুমাত্র একই মাত্রা থাকলে যোগ-বিয়োগ করা যায় এবং যোগ-বিয়োগ অবশ্যই একই এককে এনে করতে হয়। আর গুণ ভাগের ক্ষেত্রে এককও গুণ বা ভাগ করতে হবে (যেমন 30 m / 6 s = 5 m/s)।

আগের কথায় ফিরে আসি এখন। 5 J + 10 N m = কত kg m2 s-2 বের করার ক্ষেত্রে এটা জানা দরকার যে J (জুল) একটা লদ্ধ একক, যেটাকে N m বা kg m2 s-2 এভাবেও প্রকাশ করা যায়, সবগুলো ভিন্নরূপে লেখা একই একক এবং এর মাত্রা ML2T-1। মানে 5 J আর 10 N m কে 5 kg m2 s-2 আর 10 kg m2 s-2-ও বলা যায়, অর্থাৎ উত্তর 15 kg m2 s-2

এরপরের সমস্যা, 5 ft + 10 m + 51 cm = কত inch এখানেও সবগুলোই দৈর্ঘ্যের একক বা মাত্রা L। কিন্তু এরা একই একক না, অর্থাৎ সরাসরি আমরা যোগ করতে পারবো না, যেহেতু উত্তর inch-তে চাওয়া হয়েছে তাহলে সবগুলো inch-এ কনভার্ট করে নিতে হবে। ঘটনাটা দাঁড়াবে 60 inch + 393.7 inch + 20.079 inch, অর্থাৎ উত্তর হলো 473.779 inch।

পরিমাপের যন্ত্রপাতি

স্কেল

স্কেল তোমরা নিশ্চয়ই চিনো? সাধারণত ছাত্ররা যে স্কেল ব্যবহার করে তা ফুট স্কেল, যেখানে ১২ ইঞ্চি পর্যন্ত দাগ কাটা থাকে (১২ ইঞ্চিতে ১ ফুট), পাশাপাশি ৩০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত সেন্টিমিটারেও দাগ কাটা থেকে। 100 cm বা 1 m লম্বা স্কেলকে মিটার স্কেল বলে। মিটার স্কেলে mm বা ১ মিটারের ১০০০ ভাগের ১ ভাগ পর্যন্ত মাপা যায়। যেমন: 0.364 m বা 36 cm 4 mm এখানে মাপা সম্ভব কিন্তু mm এর ভগ্নাংশ মাপা সম্ভব না।

ভার্নিয়ার ক্যালিপার্স বা স্লাইড ক্যালিপার্স

অনেক সময় আরো সূক্ষ্ম মাপ নেয়ার প্রয়োজন পড়তে পারে। এক্ষেত্রে একটা জনপ্রিয় ইন্সট্রুমেন্ট হলো ভার্নিয়ার ক্যালিপার্স বা স্লাইড ক্যালিপার্স। স্লাইড ক্যালিপার্স হলো মিটার স্কেল অপেক্ষা সূক্ষ্মতরভাবে মাপার যন্ত্র, যেখানে মিটার স্কেলের সাথে ভার্নিয়ার স্কেল ব্যবহার করা হয়। ভার্নিয়ার স্কেল মিটার স্কেল অপেক্ষা সূক্ষ্মতরভাবে মাপার জন্য সহায়ক একটি স্কেল, যা নড়াচড়া করানো যায়।

ভার্নিয়ার স্কেলে যদি ২০টি দাগ থাকে, তবে তা প্রধান স্কেলের ক্ষুদ্রতম ১৯ দাগের সমান হয়, যদি ১০টি দাগ থাকে, তাহলে ৯ দাগের সমান হয়। অর্থাৎ প্রধান স্কেলের দাগগুলো থেকে ভার্নিয়ার স্কেলের দাগগুলো খানিকটা ছোট হয়, যতটুকু ছোট হয় তাকে ভার্নিয়ার ধ্রুবক বলে। ধরা যাক, প্রধান স্কেলের ক্ষুদ্রতম ১ দাগ 1 mm নির্দেশ করে, তাহলে ভার্নিয়ার স্কেলের ভাগসংখ্যা ১০ হলে ভার্নিয়ার স্কেলের ১০ দাগ প্রধান স্কেলের ৯ দাগ বা 9 mm এর সমান, অর্থাৎ ঐকিক নিয়ম অনুযায়ী প্রতিটি দাগ 0.9 mm। তাহলে প্রতিটি দাগ প্রধান স্কেলের ক্ষুদ্রতম দাগের থেকে 0.1 mm ছোট। একটু চিন্তা করলে এখান থেকে বুঝতে পারবে, মূল স্কেলের ক্ষুদ্রতম প্রতি ভাগের দৈর্ঘ্যকে ভার্নিয়ার স্কেলের ভাগসংখ্যা দ্বারা ভাগ করে ভার্নিয়ার ধ্রুবক পাওয়া যায়, ভার্নিয়ার ধ্রুবক বা ভার্নিয়ার কন্সটেন্ট VC দ্বারা প্রকাশ করা হয়।

নাইন-টেনের কনসেপ্টগুলো ক্লিয়ার থাকা খুব গুরুত্বপূর্ণ এটা আমি সবসময়ই বলি। একটা ঘটনা শেয়ার করি, কিছুদিন আগে আমরা ভার্সিটির ফিজিক্স প্রাক্টিকাল ল্যাব টাস্কের অংশ হিসেবে একটা লেন্সের মাপ নিচ্ছিলাম স্লাইড ক্যালিপার্স দিয়ে। ওখানে ভার্নিয়ার স্কেলে দাগ কাটা ছিলো ২০টি, কিন্তু নাম্বারিং করা ছিলো ১ ঘর পরপর নিয়ে ১০ পর্যন্ত। যেকারণে প্রথম দুটি মাপ আমরা ভুল নিই, তৃতীয় মাপ নিতে গিয়ে বিষয়টি লক্ষ্য করি, এবং এরপর সংশোধন করি। তো বাস্তব ক্ষেত্রে সবসময় কিন্তু সূত্র জানাই যথেষ্ট হয় না, সূত্রটা বোঝাও দরকার হয় ঠিকঠাক প্রয়োগের জন্য।

ভার্নিয়ার স্কেলের ছবিতে নিচে দুটো চোয়াল দেখতো পাচ্ছ, যে বস্তুটা মাপা হবে, তা তার মধ্যে রেখে যথাযথভাবে চোয়ালগুলো যেন দু’পাশ স্পর্শ করে এমনভাবে সেট করে নিতে হয়। এরপর ভার্নিয়ার স্কেলের ০ দাগ প্রধান স্কেলের যে দাগ অতিক্রম করে, তাকে প্রধান স্কেল পাঠ বলা হয়, এটা M দ্বারা প্রকাশিত। মনে রাখতে হবে, অবশ্যই সে দাগ নিতে হবে যে দাগ ভার্নিয়ার স্কেল অতিক্রম করবে, খুব কাছাকছি হলেও যদি অতিক্রম না করে, তবে তা নেয়া যাবে না। আসলে অতিক্রমের পর আর কতটুকু যায় সেটা পরিমাপ করাই ভার্নিয়ার স্কেলের কাজ। যদি শূন্য দাগের সাথে কোন দাগ মিলে যায় তাহলে যে দাগ মিলবে সেটাই বস্তুটার মাপ, যেহেতু অতিক্রম করে কোন দূরত্ব যায়নি।

ভার্নিয়ার স্কেলের যে দাগটি মূল স্কেলের কোন দাগের সাথে হুবহু মিলে যায়, তা হলো ভার্নিয়ার সমপাতন (V দ্বারা প্রকাশিত)। হুবহু না মিললে সবচেয়ে কাছাকাছিটি নিতে হবে। প্রশ্ন করতে পারো দুটো দাগ মিলে গেলে কী হবে? ধরা যাক ভার্নিয়ার স্কেলের ভাগসংখ্যা ২০, মানে ২০ ঘর প্রধান স্কেলের ১৯ ঘরের সমান। তাহলে যদি কোন দাগ মিলে যায়, ভার্নিয়ার স্কেলের ২০ এবং প্রধান স্কেলে ১৯ দাগ পর আরেকটি দাগ মিলার কথা। মানে যদি শূন্য দাগ মিলে তাহলে ২০ তম দাগও মিলবে, কিন্তু অন্য কোনভাবে দুটো দাগ মিলে যাওয়া সম্ভব না।

ছবিতে ভার্নিয়ার সমপাতন ৩

এখন ভার্নিয়ার স্কেলে পরিমাপের সায়েন্স জানা যাক। ছবিতে লাল রংয়ের বস্তুটি প্রধান স্কেলে 9 mm অতিক্রম করেছে। এরপর আরেকটু অগ্রসর হয়ে ভার্নিয়ার স্কেলে কালো তীহ্নিত স্থানে পৌঁছেছে। এখন ভার্নিয়ার স্কেলের হলুদ তীর চিহ্নিত ৬ নং দাগ প্রধান স্কেল বরাবর হলুদ তীর চিহ্নিত দাগের সাথে মিলে যায়। এরপর থেকে হলুদ দাগ, সবুজ দাগ এভাবে বলছি শুধু। এখন চিন্তা কর ভার্নিয়ার স্কেলের লাল দাগ থেকে প্রধান স্কেলের লাল দাগের দূরত্ব কত? অবশ্যই 0.1 mm, যেহেতু এখানে ভার্নিয়ার স্কেলের ১০ ঘর প্রধান স্কেলের ৯ ঘরের সমান, মানে প্রতি ঘর প্রধান স্কেলের ঘরগুলো থেকে 0.1 mm কম। একইভাবে প্রধান স্কেলের সবুজ দাগ থেকে ভার্নিয়ার স্কেলের সবুজ দাগ 0.1+0.1 mm বা 0.2 mm এগিয়ে। এরপর বেগুনি দাগ 0.3 mm এগিয়ে, নীল দাগ 0.4 mm, কমলা দাগ 0.5 mm এবং সবশেষে কালো দাগ 0.6 mm এগিয়ে। অর্থাৎ, প্রধান স্কেল বরাবর 9 mm এর পর আরো 0.6 mm অতিক্রম করেছে বস্তুটি। তাহলে এটার দৈর্ঘ্য (9+0.6) mm বা 9.6 mm। ভালো কথা, এটা আমি অন্যরকম পাঠশালা থেকে শিখেছিলাম, ভিডিওটা দেখে নিতে পারো।

এটা হিসেবের একটা সূত্র আছে, তা হলো: দৈর্ঘ্য = M + V x VC
যেখানে M = প্রধান স্কেল পাঠ, V = ভার্নিয়ার সমপাতন, VC = ভার্নিয়ার ধ্রুবক
ছবির হিসেবের বেলায় VC = 1 mm / 10 = 0.1 mm, M = 9 mm, V = 6
তাহলে, দৈর্ঘ্য = 9 mm + 6 x 0.1 mm = 9.6 mm

যান্ত্রিক ত্রুটির হিসেব তোমাদের সিলেবাসে নেই, পরীক্ষায় আসবে এজন্য না, এমনি শিখে রাখতে পারো। ধরা যাক স্লাইড ক্যালিপার্সে দুই চোয়াল একসাথে লাগানো, তাহলে ভার্নিয়ার স্কেলের শূন্য দাগ প্রধান স্কেলের শূন্য দাগের সাথে মিলে যাওয়ার কথা। কিন্তু দেখা গেলো ভার্নিয়ার স্কেলের দাগটি কিছুটা সামনে আছে, অর্থাৎ, কোন একটা মাপ পাওয়া যাচ্ছে। এই মাপটা হলো ধনাত্মক ত্রুটি। তাহলে এই ক্যালিপার্সে কোনকিছুর দৈর্ঘ্য মাপলে এখন যে মাপটি পাওয়া গেলো, সে পরিমাণ দৈর্ঘ্য বেশি আসবে। তাহলে এই দৈর্ঘ্যটুকু বিয়োগ করে দিতে হবে। আবার যদি ভার্নিয়ার স্কেলের দাগটি কিছুটা পেছনে থাকতো তাহলে আমরা মাপ কম পেতাম। তখন এই মাপটাকে ঋণাত্মক ত্রুটি বলা হত, প্রকৃত মাপ পেতে যা যোগ করতে হয়। অর্থাৎ, ধনাত্মক ত্রুটি যোগ ও ঋণাত্মক ত্রুটি বিয়োগ করতে হয়।
ত্রুটি থাকলে সূত্র হবে: দৈর্ঘ্য = M + V x VC – (±e)

স্ক্রু গেজ

ভার্নিয়ার ক্যালিপার্সের মতই স্ক্রু গেজ মিটার স্কেল থেকে সূক্ষ্মতর পরিমাপের আরেকটি যন্ত্র, যেখান সূক্ষ্মভাবে পরিমাপের জন্য স্ক্রু দারা নিয়ন্ত্রিত একটি বৃত্তাকার স্কেলের সহায়তা নেয়া হয়। সাধারণত ভার্নিয়ার ক্যালিপার্স থেকে স্ক্রু গেজে আরেকটু বেশি সূক্ষ্ম পরিমাপ নেয়া যায়, যেমন mm এর শতাংশ পর্যন্ত। এখানে যেহেতু একটা স্কেল বৃত্তাকার, তাই প্রধান স্কেলকে আমরা রৈখিক স্কেল বা linear scale বলি, আর বৃত্তাকারটি বৃত্তাকার স্কেল বা Circular scale।

স্ক্রু গেজে পরিমাপ করতে হলে পিচ ও ন্যূনাঙ্কের ধারণা দরকার। স্ক্রু গেজ একটা সূক্ষ্ম যন্ত্র। শুরুতে বৃত্তাকার স্কেল প্রধান স্কেলের শূন্য দাগ বরাবর থাকে। বৃত্তাকার স্কেলকে ঘোরানো হলে রৈখিক স্কেল বরাবর এর সরণ ঘটে। বৃত্তাকার স্কেলটি ‘এক বার’ ঘোরালে রৈখিক স্কেল বরাবর এর যে সরণ ঘটে, তাকে পিচ বলে। ১ বার অর্থ ৩৬০ ডিগ্রি ঘোরানো। অন্যদিকে বৃত্তাকার স্কেলটি ‘এক ভাগ’ ঘোরালে রৈখিক স্কেল বরাবর এর যে সরণ ঘটে, তাকে ন্যূনাঙ্ক বা লঘিষ্ঠ গণন বলে।

ধরা যাক, একটা স্ক্রু গেজে বৃত্তাকার স্কেলে ৫০ ভাগ করা আছে। ১ বার স্ক্রু গেজটি ঘুরিয়ে আনলে প্রধান স্কেল বরাবর এর সরণ হয় 1 mm, অর্থাৎ এর পিচ 1 mm। তাহলে ১ ভাগ ঘোরালে সরণ 1 mm / 50 বা 0.02 mm। এখানে একটা জিনিস দেখ, ন্যূনাঙ্ক = পিচ / বৃত্তাকার স্কেলের ভাগসংখ্যা। এখন বৃত্তাকার স্কেল ঘুরিয়ে সঠিকভাবে দুই চোয়াল (ছবিতে A, B) স্পর্শ করে দেখা গেলো রৈখিক স্কেল বরাবর 5 mm পাঠ পাওয়া যাচ্ছে এবং রৈখিক স্কেলের দাগ বরাবর বৃত্তাকার স্কেলের পাঠ 4। তাহলে বৃত্তাকার স্কেল ৫ বার পূর্ণচক্র সম্পন্ন করে আরো ৪ ভাগ ঘুরেছে, ৫ বারের জন্য 5 mm তো পেয়েছি, ৪ ভাগ ঘোরা মানে রৈখিক স্কেল বরাবর 4 x 0.02 mm অতিক্রম করা (পিচের সংজ্ঞা থেকে)। তাহলে এখানে আমাদের মাপ হলো 5 mm + 4 x 0.02 mm = 5.08 mm।

এখানেও সূত্রটা অনেকটা স্লাইড ক্যালিপার্সের মতই, দৈর্ঘ্য = L + C x LC
যেখানে L = রৈখিক স্কেল পাঠ, C = বৃত্তাকার স্কেল পাঠ, LC = ন্যূনাঙ্ক
ত্রুটি থাকলেও আগের মতই তা বিয়োগ হবে, দৈর্ঘ্য = L + C x LC – (±e)

পরিমাপে ত্রুটি ও নির্ভুলতা

ধরা যাক স্কেল দিয়ে একটা টেবিলের দৈর্ঘ্য মাপছো। কত রকমের ত্রুটি হতে পারে চিন্তা কর তো! স্কেলটাতেই কোন ত্রুটি থাকতে পারে, মাপ নেয়ার সময় দেখার ভুল হতে পারে, স্কেল একাধিকবার স্থাপন করতে হলে এদিক-ওদিক হতে পারে এবং অনেকরকম ত্রুটি এখানে হওয়া সম্ভব। নবম-দশম শ্রেণিতে ত্রুটির ধরণগুলো আলোচিত হয়নি, চূড়ান্ত ত্রুটি আর আপেক্ষিক ত্রুটি নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। পরিমাপকৃত মান ও প্রকৃত মানের পার্থক্যই চূড়ান্ত ত্রুটি, চূড়ান্ত ত্রুটি ও পরিমাপকৃত মানের অনুপাত হলো আপেক্ষিক ত্রুটি

ছবিতে প্রথম স্কেলে cm ও দ্বিতীয় স্কেলে mm পর্যন্ত দাগ কাটা আছে। প্রথম স্কেলে cm-এর ভগ্নাংশ সঠিকভাবে পরিমাপ করা সম্ভব না। cm-এ মাপ পেতে যে দাগের সবচেয়ে কাছাকাছি মনে হচ্ছে, সেটিকে আমরা যদি পরিমাপ ধরে নিই, তাহলে কিছুটা ত্রুটি থেকে যায়। যেমন ছবিতে লাল চিহ্নিত জায়গার মধ্যে মাপ আসলে সবচেয়ে কাছাকাছি মান হিসেবে 2 cm নেয়া যায়। যা মূলত 1.5 cm থেকে 2.5 cm পর্যন্ত হতে পারে, অর্থাৎ 2 cm মাপ পেলে বলা যায় তা 2±0.5 mm। তাহলে cm দাগ কাটা স্কেলে চূড়ান্ত ত্রুটি 0.5 cm। একইভাবে mm দাগ কাটা স্কেলে চূড়ান্ত ত্রুটি 0.5 mm। চূড়ান্ত ত্রুটির হিসেবের সময় আমরা সম্ভাব্য সর্বাধিকটি বিবেচনা করা হয়।

ছবিতে দৈর্ঘ্য 1.1 ± 0.5 mm

১০ সেন্টিমিটার দৈর্ঘ্যের একটা বস্তু পরিমাপে ±0.5 cm ত্রুটি যতটা গুরুত্ব রাখে, ১ কিলোমিটার বস্তুর পরিমাপে এটুকু ত্রুটি ততটা প্রভাব ফেলে না। কাজেই পরিমাপ কতটা নির্ভুল বোঝার জন্য আরেকটি নিয়ামক রয়েছে, আপেক্ষিক ত্রুটি। আপেক্ষিক ত্রুটি শতকরাতে প্রকাশ করা বোঝার জন্য সুবিধাজনক।
cm দাগ কাটা স্কেলে চূড়ান্ত ত্রুটি 0.5 cm,
পরিমাপ করা মান 7 cm হলে, আপেক্ষিক ত্রুটি = 0.5 / 7 = 0.71 = 7.1%
পরিমাপ করা মান 7 m হলে, আপেক্ষিক ত্রুটি = = 0.5 / 700 = .071%

এখন একটা অঙ্ক করার চেষ্টা করি। mm দাগ কাটা একটি রুলারে একটি টেবিলের দৈর্ঘ্য, প্রস্থ ও উচ্চতা যথাক্রমে 5 cm, 7 cm ও 8 cm পাওয়া গেলো। আয়তন পরিমাপে আপেক্ষিক ত্রুটি কত?

সমাধানের জন্য প্রথমে মনে রাখতে হবে মাপগুলো cm-এ হলেও mm দাগ কাটা স্কেলে মাপ নেয়া হয়েছে। অর্থাৎ দৈর্ঘ্য পরিমাপে চূড়ান্ত ত্রুটি ±0.5 mm বা ±0.05 cm। তবে আমার কাছে আয়তন নির্ণয়ে আপেক্ষিক ত্রুটি বের করতে বলা হয়েছে, এটা আমি কীভাবে করব?
প্রথমে আমার পরিমাপকৃত আয়তন বের করা যাক, 5 cm x 7 cm x 8 cm = 280 cm3
এখন দৈর্ঘ্য পরিমাপে চূড়ান্ত ত্রুটি বিবেচনায় সম্ভাব্য সর্বনিম্ন দৈর্ঘ্য, প্রস্থ ও উচ্চতা যথাক্রমে 4.95 cm, 6.95 cm ও 7.95 cm। তাহলে সম্ভাব্য সর্বোচ্চ আয়তন = 4.95 cm x 6.95 cm x 7.95 cm = 273.5 cm3। এটা নিলে চূড়ান্ত ত্রুটি = 6.5 cm3
আবার, সম্ভাব্য সর্বোচ্চ দৈর্ঘ্য, প্রস্থ ও উচ্চতা যথাক্রমে 5.05 cm, 7.05 cm ও 8.05 cm। তাহলে সম্ভাব্য সর্বোচ্চ আয়তন = 5.05 cm x 7.05 cm x 8.05 cm = 286.6 cm3। এটা নিলে চূড়ান্ত ত্রুটি = 6.6 cm3
বলেছিলাম চূড়ান্ত ত্রুটির হিসেবে আমরা সম্ভাব্য সর্বাধিকটি বিবেচনা করি। তাহলে এখানে চূড়ান্ত ত্রুটি = 6.6 cm3 নিতে হবে।
এখন আপেক্ষিক ত্রুটি = 6.6 / 280 = 0.02357 = 2.357%

এর সাথে আমাদের অধ্যায়ের আলোচনা শেষ হলো। এখন আমরা অনুশীলনীর প্রশ্নগুলো দেখি।

সাধারণ প্রশ্ন

বইয়ে দেয়া সাধারণ প্রশ্নগুলোর কয়েকটি আমার কাছে খুব সাধারণ লাগেনি। আর অসাধারণেরা কখনো সাধারণের মাঝেই লুকিয়ে থাকে, তাই না?

পদার্থবিজ্ঞান কেন পড়ব তা তো আমরা আগেই আলোচনা করে এসেছি। তাছাড়া তুমি তোমার মত করে চিন্তা করতে পারো, কেন পদার্থবিজ্ঞান পড়া প্রয়োজন। পদার্থবিজ্ঞানের ক্রমবিকাশ থেকে পরের প্রশ্নটার উত্তরও নিশ্চয়ই চিন্তা করতে পারছো? আধুনিক পদার্থবিজ্ঞানের সূচনা করা বিস্ময়কর আবিষ্কারগুলো যে এসময়েই হয়েছিলো! তৃতীয়, চতুর্থ আর পঞ্চম প্রশ্নের উত্তর এখানে আলাদাভাবে আলোচনার আশা করছি প্রয়োজন নেই।

ষষ্ঠ প্রশ্নটা সুন্দর, চিন্তার একটা খোরাক আছে। তুমি নিজের মত চিন্তা করে দেখতো, তোমার কী মনে হয়! আমাকে জিজ্ঞেস করা হলে আমার উত্তর হবে মনে হয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা। কারণ পর্যবেক্ষণ বা চোখের দেখা সবসময় আমাদের সত্যটা বলে না। আবার পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়া নিছক যুক্তিতর্কেও প্রায়সই সমাধান থাকে না। তবে এটা আমার ভাবনা, তোমার ভাবনা এমনটাই হতে সেরকম কথা নেই!

সপ্তম প্রশ্নটার বেলায় যদি আমি ভুল না হয়ে থাকি, এটার উত্তর মোল। কেননা অন্য মোল আসলে পরিমাণ প্রকাশের একক, যদিও এটা একটা একক, কিন্তু এখানে ঠিক অন্য কিছুকে আদর্শ ধরে তুলনা করতে হয় না, সরাসরি সংখ্যায় এর পরিমাপ হয়। মোল মানে অ্যাভোগেড্রোর ধ্রুব 6.02214076 x 1023 সংখ্যক। অন্য সংজ্ঞাগুলোতে আর কোন ঘটনায় ধ্রুবকের প্রেক্ষিতে সংজ্ঞা দেয়া হয়েছিলো, এখানে যে ধ্রুবকের প্রেক্ষিতে দেয়া হয়েছে, তা মোলের নিজেরই পরিমাণ হিসেবে ব্যবহৃত!

অষ্টম প্রশ্নের ক্ষেত্রে, না- আমার এবং আমার চারপাশের সবকিছুর হঠাৎই অর্ধেক হয়ে গেলে তা বোঝা সম্ভব হত না। আমাদের পরিমাপগুলো কিন্তু সবসময়ই তুলনামূলক- সবকিছুর আকার অর্ধেক হওয়ার অর্থ আমাদের পরিমাপের এককগুলোও অর্ধেক হয়ে যাবে। যদি শুধু আমার আকার অর্ধেক হয়ে যায়, বা শুধু পারিপার্শ্বিকের, বা কিছু কিছু জিনিসের- তবে তা অবশ্যই বোঝা যাবে। কিন্তু সবকিছুর আকার একসাথে একই অনুপাতে বদলে গেলে আমরা কিছুই বুঝবো না।

নবম প্রশ্নের ক্ষেত্রে কী মনে হচ্ছে, তোমার পারা উচিৎ কি? অনলাইনে সার্চ করে তো অবশ্যই বের করতে পারবে, কিন্তু অঙ্কের হিসেব-নিকেশ করে? যদি মনে হয় না, তাহলে এই প্রশ্নের উত্তর বেশ সহজ, আমি পারবো না। এটা নিজের থেকে না পারাতে দোষের কিছু নেই অবশ্যি। তবে ইরাতোস্থিনিসের কথা মনে আছে, যিনি প্রথম পৃথিবীর ব্যাসার্ধ ঠিকঠাক মেপেছিলেন? মজার ব্যাপার হলো এটা বুঝতে তোমাদের খুব জটিল কোন ধারণা জানতে হবে না, তোমরা ইতোমধ্যেই জানো এমন কিছু বিষয়কে প্রয়োগ করেই পৃথিবীর ব্যাসার্ধ মাপা সম্ভব!

মিশরের স্যেনেট (Swenet) শহরে একটা গভীর গর্তের কথা ইরাতোস্থিনিস শুনেছিলেন, যেখানে ২০-২২ জুনের মধ্যবর্তী তারিখ ঠিক দুপুরে সূর্যরশ্মি ঠিক সে বরাবর কিরণ দিতো, এমনকি তা এতটা সোজাসুজি আসতো যে গর্তের তলদেশের পানি তাতে আলোকিত হত, কিন্তু গর্তের পাশগুলো সেভাবে হত না। ইরাতোস্থিনিস স্যেনেট থেকে ৫০০০ স্টেডিয়া দূরে আলেক্সান্দ্রিয়ায় একটা পোল বা খুঁটি স্থাপন করলেন।

ছবি ক্রেডিট: খান একাডেমি

সূর্য কিন্তু পৃথিবীর তুলনায় অনেক বড়, পৃথিবীতে তাই সূর্যরশ্মিগুলো সমান্তরালে আসে। কিন্তু পৃথিবীটা যেহেতু গোলাকার, তাই সব জায়গায় আলোটা সমান কোণ তৈরি করে না, কোথাও তীর্যক হয়ে আসে, কোথাও খাড়া, কোথাওবা আলো পৌঁছে না। আলেক্সান্দ্রিয়ায় দেখা গেলো দুপুরের নির্দিষ্ট সময়ে সূর্যরশ্মি খুঁটির সাথে যে কোণ তৈরি করেছে তা 7.2°। এখন এই যে খুঁটির সাথে কোণ ছবিতে দেখো পৃথিবীর কেন্দ্রে আলেক্সান্দ্রিয়া আর স্যেনেটের মধ্যে কোণের সাথে এটা একান্তর কোণ। অর্থাৎ পৃথিবীর কেন্দ্রে 7.2° কোণের জন্য পরিধি বরাবর দূরত্ব 5000 স্টেডিয়া। বৃত্তের কেন্দ্রে 360° কোণ তৈরি হয়, তা তো জানোই। তাহলে 7.2° কোণের জন্য পরিধি বরাবর দূরত্ব 5000 স্টেডিয়া থেকে ঐকিক নিয়মে পেয়ে যাবে 360° কোণের জন্য 250000 stadia, মানে এটাই পৃথিবীর পরিধি! ব্যাসার্ধ r হলে দাঁড়াচ্ছে, 2π x r = 250000 stadia, তাহলে r = 39788.736 stadia, যেটা প্রায় 6246.83 km (প্রকৃত ব্যাস প্রায় 6371 km)। দেখেছো, শুধু একটা ছায়া থেকে সাধারণ কিছু বুদ্ধি ও জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে কত একুরেটলি পৃথিবীর ব্যাসার্ধ মেপে ফেলা যায়! তাহলে চিন্তা কর আমাদের জ্ঞানগুলো ঠিক জায়গায় কাজে লাগাতে পারলে কত অসাধারণ কাজ আমাদের দ্বারা সম্ভব!

গাণিতিক প্রশ্ন

প্রথমটা তো বলে দেয়ার প্রয়োজন একদমই নেই, দ্বিতীয় প্রশ্নে π দিয়ে প্রকাশ করাটা মজার কিনা জানি না, তবে সেকেন্ড থেকে বছরে আসাটা মজার। মিনিটে 60 সেকেন্ড, ঘন্টায় 60 মিনিটে 60 x 60 সেকেন্ড, দিনে 24 ঘন্টায় 24 x 60 x 60 সেকেন্ড, বছরে 365 দিনে 365 x 24 x 60 x 60 সেকেন্ড বা 31536000 সেকেন্ড। π দিয়ে সংখ্যাটা ভাগ করলে হয় 10038220.57, অর্থাৎ বছরে 10038220.57π সেকেন্ড, বা প্রায় 10π মেগা সেকেন্ড।

আলোকবর্ষ নামে বর্ষ থাকলেও এটা আসলে দূরত্বের একক, আলো এক বছরে যে দূরত্ব অতিক্রম করে। সেকেন্ডের নতুন সংজ্ঞায় আলোর বেগ ঠিক ঠিক 299,792,458 m s-1। সূক্ষ্মতর মান দরকার না হলে ব্যবহারিক ক্ষেত্রে আমরা সাধারণত 3 x 108 m s-1 নিয়ে কাজ করি। বেগ মানে প্রতি সেকেন্ডে অতিক্রান্ত দূরত্ব (বেগের সংজ্ঞা অনুযায়ী সরণ, তবে আলো সরলপথে চলে বলে দূরত্ব বললে সমস্যা নেই। সরণ ও দূরত্বের পার্থক্য পরের অধ্যায়ের আলোচ্য বিষয়)। তাহলে এক বছরে অতিক্রান্ত দূরত্ব 31536000 s x 3 x 108 m s-1 = 9.4608 x 1010 m। এককের গুণের দিকটিও এখানে লক্ষণীয়, s আর m s-1 গুণ হয়ে আমরা একক পেয়েছি m।

চতুুর্থ প্রশ্নে ভার্নিয়ার সমপাতন দেখা যাচ্ছে 1, ভার্নিয়ার ধ্রুবক = 0.1 mm, প্রধান স্কেল পাঠ 11mm। তাহলে দৈর্ঘ্য 11.1 mm। পঞ্চম প্রশ্নে M, L ও T যথাক্রমে ভর, দৈর্ঘ্য ও সময়ের মাত্রা। তাহলে শক্তির SI একক হবে kg m2 s-2

বহুনির্বাচনী প্রশ্ন

এই প্রশ্নগুলোর উত্তর বলে দেয়ার প্রয়োজন আছে কি? নাহ! এটুকু বিশ্বাস আছে যে এগুলো তুমি অবশ্যই পারবে!

সৃজনশীল প্রশ্ন

ক আর খ আলোচনা করে আসা হয়েছে। গ প্রশ্নে ভার্নিয়ার ধ্রুবক দেয়া আছে, এখান থেকে ভার্নিয়ার স্কেলের কত ভাগ প্রধান স্কেলের কত ভাগের সমান তা বের করতে বলা হয়েছে। এখানে প্রধান স্কেলের ক্ষুদ্রতম এক ভাগের মান উল্লেখ নেই, সাধারণভাবে আমরা ধরে নিতে পারি এটা 1 mm।

ভার্নিয়ার ধ্রুবক, মানে ভার্নিয়ার স্কেলের ১ দাগ প্রধান স্কেলের এক দাগ থেকে 0.005 cm বা 0.05 mm বা 1/20 mm ছোট। অর্থাৎ, ভার্নিয়ার স্কেলের এক ভাগ দৈর্ঘ্য প্রধান স্কেলের ক্ষুদ্রতম 19/20 ভাগের সমান। তাহলে ভার্নিয়ার স্কেলের ২০ দাগ প্রধান স্কেলের ১৯ দাগের সমান।

এটা অন্যভাবেও করা যায়,
প্রধান স্কেলের ক্ষুদ্রতম এক ভাগের দৈর্ঘ্য / ভার্নিয়ার স্কেলের ভাগসংখ্যা = ভার্নিয়ার ধ্রুবক
বা, ভার্নিয়ার স্কেলের ভাগসংখ্যা = প্রধান স্কেলের ক্ষুদ্রতম এক ভাগের দৈর্ঘ্য / ভার্নিয়ার ধ্রুবক
বা, ভার্নিয়ার স্কেলের ভাগসংখ্যা = 1 mm / 0.05 mm = 20
তাহলে, ভার্নিয়ার স্কেলের ২০ দাগ প্রধান স্কেলের ১৯ দাগের সমান।

[এখানে দেখো ভাগসংখ্যা 20 পরিমাপযোগ্য। এটা রাশি বটে, কিন্তু এর কোন একক নেই। সরাসরি কোন কিছুর সংখ্যা বললে একক দরকার হয় না, যদিও এক হিসেবে একক আছে, এখানে 1 সংখ্যককে একক ধরে নেয়া হয়েছে। এমনিভাবে পদার্থের পরিমাণের একটা SI একক আছে, সেখানে 1 সংখ্যক না ধরে অ্যাভোগেড্রোর ধ্রুব সংখ্যককে একক ধরা হয়, যেমনটা সাধারণ প্রশ্নের 7 নং-এর উত্তরে বলেছি। আর এখানে আরো একটা জিনিস মনে রাখা ভালো যে সমজাতীয় রাশির অনুপাতের একক হয় না, যদি রাশিগুলো একই এককে থাকে।]

ঘ এর উত্তরে আসলে রাশেদ তার স্কেল দিয়ে 11.73 cm পরিমাপ করেছে, মানে কিনা 117.3 mm। সাধারণ স্কেলে mm এর ভগ্নাংশ পরিমান সম্ভব না, মানে এখানে রাশেদ পরিমাপ করতে কিছুটা অনুমানের সাহায্য নিয়েছে। ভার্নিয়ার ক্যালিপার্সে মাপার সময় সে mm এর ২০ ভাগের ১ ভাগ বা 0.05 mm পর্যন্ত মাপতে পারবে।
তাহলে তার প্রথম দৈর্ঘ্য পরিমাপ সঠিক পরিমাপের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ ছিলো কি? উত্তরটা এভাবে দেয়া যায় তার অনুমান ঠিকঠাক হলে সঙ্গতিপূর্ণ হত, অন্যথায় সঙ্গতিপূর্ণ ছিলো না।

খ-প্রশ্নে ওজন হলো কোন বস্তুকে পৃথিবী তার দিকে যে বলে আকর্ষণ করে। ওজন একটা বল, আর বল একটা লদ্ধ রাশি। বল মূলত ভর ও ত্বরণের গুণফল থেকে আসে, ওজনের ক্ষেত্রে যেটা বস্তুর ভর ও অভিকর্ষজ ত্বরণের গুণফল। অন্যদিকে ভর একটা মৌলিক রাশি, যা অন্য কোন রাশির ওপর নির্ভরশীল নয়।

গ-এর অনুরূপ একটা অঙ্ক আমরা ইতোমধ্যে করেছি, এটা অবশ্যই আমি করছি না। কিন্তু তোমাকে কিন্তু করতেই হবে, কেননা পদার্থবিজ্ঞানে পরীক্ষায় পারা-না পারাটা চর্চার ওপর অনেক বেশি নির্ভর করে। শুধু দেখা যাওয়া বা এক নিয়মের একটা অঙ্ক করে যাওয়া একদমই যথেষ্ট নয়, তোমাকে চর্চা করতে হবে বেশি বেশি।

ঘ প্রশ্নে আমরা সাধারণ রুলার বা স্কেল দিয়ে 30 cm পর্যন্ত মাপ নিতে পারি, উদ্দীপকের স্কেল cm পর্যন্ত মাপ নিতে পারে। একটা বইয়ের ক্ষেত্রফলের বেলায় এটা ব্যবহার করা যায়, যেখানে চূড়ান্ত ত্রুটি কিছুটা থাকলেও তা ঠিক আছে। তবে ঘরের দৈর্ঘ্য-প্রস্থ অনেক বেশি। বারবার স্কেল এখানে স্থাপন-পুনঃস্থাপন করতে হবে পুরো ঘরের মাপ নিতে। প্রতিবার মাপ নেয়া-স্থাপন করার ত্রুটিগুলো একত্রে মিলে চূড়ান্ত ত্রুটি বেশ বড় আকার ধারণ করতে পারে। একইসাথে এটা যথেষ্ট অসুবিধাজনক ও সময়সাপেক্ষ। তাই ঘরের ক্ষেত্রফল মাপার জন্য রুলার ঠিক নেই, মাপ ফিতা বা এধরণের কোন উপযুক্ত যন্ত্র প্রয়োজন।

চেষ্টা করেছি যেন যাদের জন্য লেখা, তাদের কাছে বিষয়গুলো সহজবোধ্য করে তুলে ধরতে পারি। তোমাদের মন্তব্য ও পরামর্শগুলো কমেন্ট বক্সে পাওয়ার অপেক্ষায় রইলাম। আর বন্ধুদের সাথে শেয়ার করলে খুশি হব।

নিয়নবাতি টেলিগ্রাম চ্যানেল
নিয়নবাতি টেলিগ্রাম গ্রুপ
নিয়নবাতি ফেসবুক গ্রুপ

সোর্স ও সহায়তা

  • পদার্থবিজ্ঞান, নবম-দশম শ্রেণি
  • উইকিপিডিয়া
  • রোর বাংলা
  • অন্যরকম পাঠশালা
  • খান একাডেমি
Series Navigationনবম-দশম শ্রেণি – পদার্থবিজ্ঞান – দ্বিতীয় অধ্যায়: গতি (তাত্ত্বিক অংশ) >>

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *