‘আমার ১ম স্মার্টফোন’ স্লোগান নিয়ে M সিরিজে একটি নতুন লো বাজেট ডিভাইস এনেছে স্যামসাং, Samsung Galaxy M01 Core। এটি স্যামসাংয়ের সবচেয়ে অ্যাফর্ডেবল স্মার্টফোনগুলোর একটি, যা বিশেষভাবে বানানো হয়েছে তাদের জন্য যারা এতদিন ফিচার ফোন ব্যবহার করে এসেছেন এবং এখন একটি স্মার্টফোন ব্যবহার করতে চাইছেন।
দীর্ঘস্থায়িত্ব ও ব্র্যান্ড ভ্যালুর কারণে গ্রাহকদের একটি অংশ স্যামসাং ফোন বেছে নিতে পছন্দ করেন। ফিচারের দিক থেকে কিছুটা কম থাকলেও কোয়ালিটি ও সার্ভিসের দিক দিয়ে স্যামসাং একটা সলিড এক্সপেরিয়েন্স দিয়ে থাকে। তাই অল্প বাজেটের মধ্যে যাদের খুব বেশি ফিচার প্রয়োজন নেই, তবে শান্তিতে দীর্ঘদিন একটি ফোন ব্যবহার করতে চান, তাদের জন্য স্যামসাংয়ের নতুন ডিভাইসটি উপযুক্ত হতে পারে।
বরাবরের মতই স্মার্টফোনটির কনফিগারেশন ও আমার মূল্যায়ন এই লেখায় শেয়ার করতে চলেছি। একটি ডিভাইসের স্পেক থেকে কিছুটা ধারণা নিশ্চয়ই পাওয়া যায়, তবে সম্পূর্ণ ধারণা অবশ্যই নয়। তাই, এই লেখার সাথে বাস্তব অভিজ্ঞতার কিছুটা তফাৎ থাকতে পারে।
Table of Contents
Samsung Galaxy M01 Core
দাম ও অফার
Samsung Galaxy M01 Core-এর দাম শুরু হয়েছে ৮০০০ টাকা (১/১৬) ও ৯০০০ টাকা (২/১৬)। তবে এখানে চমৎকার দুটো অফার থাকছে। থাকছে ইন্সট্যান্ট ১০০০ টাকা ছাড়। এরপর ফিচার ফোনের সাথে এক্সচেঞ্জ অফারে আরো ১০০০ টাকা ছাড়। অর্থাৎ, ৬০০০ টাকাতেই কেনার সুযোগ থাকছে স্যামসাংয়ের নতুন এই ডিভাইসটি।
এক্সচেঞ্জের জন্য যেকোন ব্র্যান্ডের ফিচার ফোন প্রযোজ্য, শর্ত হলো সচল এবং ড্যামেজমুক্ত হতে হবে। চিন্তা করে দেখলাম পুরাতন ফিচার ফোন না পেলে বর্তমানে ৬০০-৭০০ টাকাতেও নতুন ফিচার ফোন পাওয়া যায়, তা এক্সচেঞ্জ করলেও ৩০০-৪০০ টাকা সাশ্রয় হয়। 🤔 ও, আচ্ছা, আরো একটা অফার আছে- রবি, এয়ারটেল বা বাংলালিংক গ্রাহক হলে এর সাথে ১২ জিবি ডাটা বান্ডল ফ্রি, অফারের উপর অফার টাইপের অবস্থা। অফারগুলো কতদিন থাকবে এ বিষয়ে কিছু জানানো হয়নি।
ডিজাইন
ডিভাইসটি একটি মাত্র কালার ভ্যারিয়েন্টে এসেছে, নীল। ডিজাইনের দিক দিয়ে আকর্ষণীয় বলা যায় না একদমই, তবে বেশ সলিড দেখায়। এর ব্যাকপার্টে একটা টেক্সচার দেওয়া হয়েছে যেটা একটা ভালো গ্রিপ দিতে পারে। এখানে কোন ফিঙ্গারপ্রিন্ট সেন্সর থাকছে না।
ডিসপ্লে
ডিসপ্লে সেকশনে থাকছে 5.3″ PLS TFT প্যানেল। PLS প্যানেল স্যামসাংয়ের তৈরি একটি বিশেষ ধরণের IPS প্যানেল এবং সাধারণত এর কালার রিপ্রেজেন্টেশন সমমানের IPS ডিসপ্লে থেকে কিছুটা বেটার। 5.3″ এখনকার হিসেবে কিছুটা ছোট ডিসপ্লে, আর এটি নচ ডিসপ্লে নয়, বেশ খানিকটা চিন ও বেজেল থাকছে। এর রেজ্যুলেশন HD+ (1480*720)।
ক্যামেরা
ক্যামেরা সেকশনেও বেশ সাদামাটা স্পেক অফার করা হয়েছে। উভয়দিকে থাকছে একটি করে ক্যামেরা, যার রেয়ার ক্যামেরা 8 MP AF (f/2.2) ও সামনের ক্যামেরা 5MP (f/2.4)। রেয়ার ক্যামেরাতে অটোফোকাস ফিচার ও ফ্ল্যাশ থাকছে, তবে সামনের ক্যামেরাতে এর কোনটিই থাকছে না।
চিপসেট, স্টোরেজ ও সফটওয়্যার
এই ফোনের সবচেয়ে বড় ডাউনসাইড সম্ভবত এর চিপসেট। এখানে ২০১৭ সালের MediaTek-এর MT6739 চিপসেট দেওয়া হয়েছে, যার প্রসেসর কোয়াড কোর এবং কোরগুলো ARM Cortex-A53@1.5GHz Max এবং GPU হলো PowerVR GE8100@570nm। ট্রানজিস্টর সাইজ 28nm।
এই চিপসেট থেকে পারফর্মেন্স কেমন হতে পারে, তা অনুমান করতে পারছেন নিশ্চয়ই। তাই এই ডিভাইসকে বেশি প্রেসার দেওয়ার চিন্তাও না করাই ভালো। ফোনটি ১/১৬ ও ২/৩২ র্যাম-রম ভ্যারিয়েন্টে এসেছে, ডেডিকেটেড স্লটের মাধ্যমে ৫১২ জিবি পর্যন্ত এক্সপেন্ড করার সুযোগ আছে। র্যাম থাকছে DDR3 সিরিজের, এর চিপসেট LPDDR4 সমর্থিত নয়, যেটা আরেকটি ডাউনসাইড।
যেহেতু কনফিগারেশন খুব ভালো নয়, তাই সফটওয়্যারের কথা চলে আসে। One UI 2.1 এর সাথে এখানে থাকছে Android 10 Go। খুব সম্ভব প্রথমবারের মত One UI এর সাথে গো এডিশন ব্যবহার হলো এই ডিভাইসে। তাই কিছুটা পারফর্মেন্স বেটার পাওয়া সম্ভব। এখানে হেভি অ্যাপস ইন্সটল না করারই পরামর্শ থাকবে।
সেন্সর ও অন্যান্য
এখানে 4G থাকছে, তবে OTG সুবিধা উল্লেখ নেই। সেন্সর থাকছে একসেলেরোমিটার ও প্রক্সিমিটি। লাইট সেন্সর থাকছে না, অর্থাৎ অটো ব্রাইটনেস ফিচার পাওয়া যাবে না। ব্যাটারী থাকছে 3000 mAh এবং ফোনটি বেশ স্লিম ও হালকা। 8.6mm থিকনেস ও 150g ওজন নিয়ে ফোনটি বেশ কমফোর্টেবল।
মূল্যায়ন
এতগুলো অফারের পরও যদি এরকম দামের দেশীয় বা চাইনীজ কিছু ব্র্যান্ডের ফোনগুলোর সাথে তুলনা করি, কনফিগারেশনে আসলে M01 Core বেশ পিছিয়ে থাকে। তাহলে এই ফোনটা কারা নিবেন এবং কেন নিবেন? আমার মতে এই ফোনটি তাদের জন্য ভালো যারা-
- ফিচার ফোন এখন বেমানান দেখায় তাই একটি স্মার্টফোন কিনতে চাইছেন, কথা বলা, মেসেজিং এধরণের বেসিক কাজগুলোই মূলত করবেন।
- বয়স্ক মানুষ, যাদের ওরকম ফিচার প্রয়োজন নেই, দীর্ঘদিন ব্যবহারের জন্য একটি ফোন চাইছেন।
- অল্প বাজেটে কমফোর্টেবল, স্লিম ও হালকা ধরণের ডিভাইস চাইছেন।
- ছোটখাট ডিভাইস পছন্দ করেন, বড় ডিসপ্লে পছন্দ নয়।
- Samsung ব্র্যান্ড বেশি প্রিফার করেন
যদি এর কোনটি আপনার জন্য প্রযোজ্য না হয়, তাহলে M01 Core না নেওয়ারই সাজেশন থাকবে। সেক্ষেত্রে ৬৩০০ টাকায় Symphony i98, ৬৮০০ টাকায় Walton GH9, ৭০০০ টাকায় Vision 1 বা i99 দেখতে পারেন। বেটার চিপসেট, সুন্দর ডিজাইন, ফিঙ্গারপ্রিন্ট সেন্সর ও ২ জিবি র্যাম থাকছে প্রতিটিতেই।
নিয়নবাতি স্কোর
একটি ডিভাইসের কনফিগারেশন এর দাম অনুযায়ী কতটা ভালো তা যাচাইয়ের জন্য নিয়নবাতি স্কেল বিশেষভাবে তৈরি। এখানে ৬০ স্কোর করার অর্থ হলো ডিভাইসটি দাম অনুযায়ী বেশ ভালো এবং ৭০ স্কোর হলে খুবই ইমপ্রেসিভ। অফারসহ স্মার্টফোনটির ২/৩২ ভ্যারিয়েন্টের দাম ৭৫০০ টাকা বিবেচনা করে আমরা হিসেব করেছি।
অবশ্যই আমাদের স্কেলের কিছু সীমাবদ্ধতা আছে। যেমন, ব্র্যান্ড ভ্যালু, সফটওয়্যার পারফর্মেন্স, দীর্ঘস্থায়িত্ব এই বিষয়গুলো মূলত বিবেচনা করা হয় না। অর্থাৎ এখানে আমরা কনফিগারেশন যাচাই করি, অভিজ্ঞতা নয়।
- ডিজাইন: ৩/৮
- বিল্ড: ৬/১০
- ডিসপ্লে: ৪.৫/১২
- ক্যামেরা: ৫/১৫
- ব্যাটারী ও চার্জিং: ৪/১০
- চিপসেট: ৭/২০
- মেমোরি-স্টোরেজ: ১০/১৫
- সেন্সর ও অন্যান্য: ৫/১০
মোট স্কোর: ৪৪.৫/১০০
সাধারণভাবে নিয়নবাতি স্কেলে ৫০ এর কম পাওয়া অর্থ হলো ডিভাইসটি আপ টু মার্ক নয়। আর এটা স্বাভাবিক যে, একটি লো বাজেট স্যামসাং স্মার্টফোনের কনফিগারেশন একই দামের অন্য ব্র্যান্ডগুলোর ডিভাইস থেকে পিছিয়ে থাকে আর Samsung Galaxy M01 Core কিনতে চাইলে এটা জেনেই কিনতে হবে।