টেকনোর অধিকাংশ ফোনের-ই দাম আমার কাছে কিছুটা বেশি মনে হয়। আসলে এখন পর্যন্ত টেকনোর একটি ফোনের দামই আমার কাছে ঠিকঠাক মনে হয়েছে, Tecno Spark 6। Spark 6 সিরিজে এবার আরেকটি ফোন আনলো তারা, Tecno Spark 6 Go। তো, এখন দেখার বিষয় হলো এই ফোনটি কি ঠিকঠাক আছে কিনা।

Tecno Spark 6 Go এর কনফিগারেশন যদি আমরা দেখি, এখানে থাকছে 6.52″ এর একটি HD+ নচ ডিসপ্লে, থাকছে একটি 1.8GHz কোয়াড কোর চিপসেট, 2GB র‍্যামের সাথে 32GB ইন্টারনাল স্টোরেজ, (13MP+AI Lens)+8MP ক্যামেরা, 5000mAh এর একটি হিউজ ব্যাটারী। এন্ট্রি লেভেল হিসেবে কনফিগারেশন খুব খারাপ না, তাই না?

তবে এর দাম রাখা হয়েছে ৮৭০০ টাকা। আর এই দামের মধ্যে মার্কেটে বেশ কিছু ফোন আছে, যার কনফিগারেশন আসলে এর থেকে অনেকটা ভালো। আমার মনে হয়েছে বর্তমান মার্কেটের প্রেক্ষিতে ৭৫০০ বা সর্বোচ্চ ৮০০০ টাকা এই ফোনের জন্য একটি সুন্দর দাম হতে পারতো। আর টেকনো কিন্তু দেশেই অ্যাসেম্বল হয়।

টেকনোর ফোনগুলোর ডিজাইন একটা সময়ে বেশ ভালো লাগতো। কিন্তু যদিও দাম হিসেবে খারাপও বলা যায় না, Tecno Spark 6 Go ততটা আকর্ষণীয় মনে হয়নি। তাছাড়া তারা একই ধরণের ডিজাইন ল্যাঙ্গুয়েজ অব্যহত রেখেই চলেছে, যেটা আর ভালো লাগছে না। দুটি কালারে ফোনটি আনা হয়েছে, আইস জাডেইট ও অ্যাকুয়া ব্লু।

বরাবরই টেকনো হিউজ ডিসপ্লে দিয়ে থাকে তাদের ফোনগুলোতে। Spark 6 বা Spark 6 Air থেকে একটু ছোট হলেও এবারও 6.52″-এর বড় একটি ডিসপ্লে থাকছে, চিন ও বেজেল ওকে ধরণের। ডিসপ্লে রেজ্যুলেশন HD+ (720*1600) এবং PPI 269, যা এই দামে ঠিকঠাক আছে।

ক্যামেরা সেকশনে দুটি ক্যামেরা থাকছে রেয়ারে, যার একটি হলো 13MP, অন্যটি AI Lens। অবশ্যই এখানে AI সমর্থন আছে, ১৮ রকম সিন ডিটেক্ট করে অপটিমাইজ করতে পারে, তবে এজন্য ডেডিকেটেড AI লেন্সের কী প্রয়োজন তা জানতে চাইবেন না প্লিজ। আর এখানে কোন ডেপথ সেন্সর নেই, তাই বোকেহ ইফেক্ট সফটওয়্যার বেজড। প্রাইমারী ক্যামেরা অ্যাপার্চার f/1.8। সেলফি ক্যামেরাটি 8MP।

এখানে 2GB র‍্যামের সাথে 32GB স্টোরেজ দেয়া হয়েছে। আরো স্টোরেজ প্রয়োজন হলে ডেডিকেটেড SD কার্ড স্লটের মাধ্যমে 256GB পর্যন্ত এক্সপেন্ড করে নেওয়ার সুযোগ থাকছে।

এখানে চিপসেট হিসেবে দেয়া হয়েছে Helio A20। এটি একটি কোয়াড কোর চিপসেট, যার প্রসেসরের কোর চারটি 1.8GHz ক্লকস্পিডের ARM Cortex A53। সাথে GPU থাকছে PowerVR GE8300@550MHz। এর ট্রানজিস্টর সাইজ 12nm। সব মিলিয়ে এটি পাওয়ার সেভিংয়ের দিক থেকে ভালো, তবে পারফর্মেন্সের দিক থেকে নয়।

ডে টু ডে ইউসেজের জন্য এটা ঠিক আছে, তবে এই সময়ে এসে আমরা কিন্তু এই বাজেটে আরেকটু ভালো চিপসেট আশা করি। যদি Helio A25 থাকতো, তাহলে সেটা বেশ মানানসই হত। এই ফোনের অন্যতম ডিলব্রেকিং পয়েন্ট হতে পারে এর চিপসেট।

কিন্তু এই ফোনটির ব্যাটারী কিন্তু বেশ হিউজ, 5000 mAh। থিকনেসও অবশ্য একটু বেশি, 9.1mm, তবে ব্যাটারি হিসেবে খুব বেশিও না। এর পাওয়ার সেভিং চিপসেট, HD+ ডিসপ্লে মিলিয়ে ভালো একটা ব্যাকআপ আশা করতে পারেন। একবার পূর্ণ চার্জ করলে দুদিন সাধারণ ব্যবহারে চলে যাওয়ার কথা।

ভালো কথা, এই ফোনে ফিঙ্গারপ্রিন্ট সেন্সর আছে, অবশ্যই রেয়ার মাউন্টেড। স্পিকার দেয়া হয়েছে ব্যাকসাইডে, যেটা ভালো লাগেনি, তবে অন্তত Spark 6 এর মত ইয়ারপিস দিয়ে কাজ চালাচ্ছে না, এটা ভালো ব্যাপার। বেসিক সেন্সরগুলোই থাকছে, এই দামে যেমনটা থাকে, G সেন্সর, লাইট সেন্সর ও প্রক্সিমিটি সেন্সর। OTG ও VoLTE সমর্থনও আছে।

এখানে থাকছে HiOS 6.2, টেকনোর নিজস্ব একটি UI, যা Android 10 (Go) এডিশনের ওপর ভিত্তি করে তৈরি। এখানে ব্যক্তিগত প্রিফারেন্সের ব্যাপার থাকতে পারে, তবে এরকম এন্ট্রি লেভেল ফোনে গো এডিশন বেজড কাস্টম ইউআইয়ের পরিবর্তে আমি স্টক ইউআই প্রিফার করি।

টেকনোর এখন পর্যন্ত Spark 6 বাদে কোন ফোনই আসলে আমার ভালো লাগেনি। এই ফোনটার প্রশংসা করা যেত যদি এর দাম ৭৫০০ টাকার মধ্যে হত, আর ৮০০০ হলে মোটামুটি ঠিক আছে বলা যেত। কিন্তু ৮৭০০ টাকা আমার মতে এর জন্য কিছুটা বেশি। আর ব্যাক সাইডে স্পিকার, গো এডিশন এই দামে ঠিক মানায় না, আর এর চিপসেটও বেশ দুর্বল।

একই কোম্পানি ট্র্যানশন হোল্ডিংসের আরেকটি ব্র্যান্ড আইটেলের পক্ষ থেকে ৮০০০ টাকায় Itel Vision 1 Plus এর 2/32 এডিশনে প্রায় একইধরণের স্পেক রয়েছে, 6.5″ ডিসপ্লে ও 5000 mAh ব্যাটারীর সাথে ম্যাট ফিনিশ ও অক্টাকোর Unisoc SC9863A চিপসেট থাকছে। খারাপ দিক বলতে Android 9 ব্যবহার করা হয়েছে, আর এর চিপসেট একটু বেশি ব্যাটারী কনজ্যুম করে তাই সমান ব্যাটারীতেও ব্যাকআপ হয়ত কিছুটা কম হবে।

দেশীয় কোম্পানি সিম্ফনির Symphony Z16 ডিভাইসটি ৮৩০০ টাকায় আরেকটি চমৎকার ডিভাইস, যেখানে ম্যাট ফিনিশ মিনিমাল ডিজাইন, 6.52″ ডিসপ্লে, 2/32, Helio A25 চিপসেট, আল্ট্রাওয়াইড লেন্সসহ ত্রিপল ক্যামেরা, Android 10 মিলিয়ে আমার বেশ ভালো মনে হয়। আবার ৯০০০ টাকায় Z28-ও আছে, যা মূলত Z16-এরই 3/32 এডিশন, তবে এখানে গ্লসি ফিনিশ। অবশ্য এই ডিভাইসদুটোর ব্যাটারী 4000 mAh, তবে পাওয়ার সেভিং চিপসেট নিয়ে দেড় থেকে দুদিন চালিয়ে দিতে যথেষ্ট।

যদি শাওমি-রিয়েলমির দিকে টান থাকে, তাহলে ৯০০০ টাকায় realme C11 আছে, যদিও সেখানে ফিঙ্গারপ্রিন্ট সেন্সর নেই, তবে চিপসেট থাকছে Helio G35, যেটা এই দামে চমৎকার, আর realme UI থাকছে Android 10 বেজড। যদিও আমার এই ডিভাইসটিও খুব বেশি পছন্দ হয়নি, তবে Spark 6 Go থেকে বেটার বলব আর ব্র্যান্ড আসলে অনেকের কাছে গুরুত্বপূর্ণ।

এখানে আমি একটা কথা বলে রাখি, যদি আপনি ফোন কিনতে চান এবং Tecno পছন্দ করেন, বা Spark 6 Go আপনার ভালো লেগে যায় কোন কারণে, সেক্ষেত্রে নিজের পছন্দকে গুরুত্ব দিন। কেননা আমি আমার দৃষ্টিকোণ থেকে বলেছি, আর আপনি কিন্তু ফোন আমার জন্য কিনবেন না (অবশ্য গিফট দিলে আমি কিছু মনে করব না), নিজের জন্য কিনবেন!

[নিয়নবাতি ব্লগের কার্যক্রম সুন্দরভাবে পরিচালনার জন্য আমাদের বিজ্ঞাপন প্রয়োজন। বর্তমানে আমাদের একটি অফার চলছে। নিয়নবাতি ব্লগে যিনি প্রথম বিজ্ঞাপন দিবেন, তার জন্য সুযোগ থাকছে মাত্র ৫০০ টাকায় এক মাস ব্লগের ৩টি স্থানে ও স্পন্সরড পোস্টরূপে বিজ্ঞাপন প্রদর্শনের। আরো তথ্য রয়েছে এখানে।]

নিয়নবাতি স্কোর

আমাদের নিয়মিত পাঠকেরা এতদিনে নিয়নবাতি স্কেলের সাথে পরিচিত হয়ে থাকবেন। এটি কোন স্মার্টফোন কতটা ভ্যালু ফর মানি তা যাচাইয়ের জন্য বিশেষায়িত। ৫০ পাওয়া অর্থ হলো ঠিক আছে বা এভারেজ, ৬০ পেলে একটি ভালো ডিল এবং ৭০ পেলে গ্রেট ভ্যালু। অবশ্যই এটি কোন পারফেক্ট স্কেল না, তবে আমরা চেষ্টা করছি এখানে ভালো একটি ধারণা যেন পাওয়া যায়।

  • ডিজাইন: ৪.৫/৮
  • বিল্ড: ৫/১০
  • ডিসপ্লে: ৭/১২
  • ক্যামেরা: ৭/১৫
  • ব্যাটারী ও চার্জিং: ৬/১০
  • চিপসেট ও র‍্যাম: ১০.৫/২৮
  • স্টোরেজ: ৪/৭
  • অন্যান্য: ৫/১০

মোট স্কোর: ৪৯/১০০

অর্থাৎ নিয়নবাতি স্কেল অনুযায়ী এটির দাম একটু বেশি, ওকে হয়ত বলা যায়, তবে ভালো ডিল বা এরকম কিছু একদমই না।

কী-ওয়ার্ড: টেকনো স্পার্ক, টেকনো স্পার্ক ৬ গো, টেকনো স্মার্টফোন, টেকনো মোবাইল দাম, টেকনো নতুন মোবাইল

One comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *