দেশের বাজারে ইনফিনিক্সের একটি নতুন স্মার্টফোন চলে এসেছে, Infinix Note 7, দারুণ কিছু স্পেক নিয়ে এই ফোনটি সত্যিই বেশ ইন্টেরেস্টিং মনে হচ্ছে এবং চলুন দেখি এর দামে এই ফোনটি কতটা ভালো। শুরু করার আগে আমি বলে রাখছি এটি একটি স্পেকসেন্ট্রিক ডিসকাশন, কোন হ্যান্ডস অন রিভিউ নয়, কাজেই রিয়েল লাইফ এক্সপেরিয়েন্স এর স্পেকের সাথে কতটা সামঞ্জস্যপূর্ণ, তা আমি বলতে পারছি না।

শুরুতে দামের কথা বলে নিই। Infinix Note 7 এর একটিমাত্র ভ্যারিয়েন্ট অর্থাৎ 4/128 অফিসিয়ালি এসেছে বাংলাদেশের মার্কেটে। এর দাম ধরা হয়েছে ১৬০০০ টাকা, মানে তার থেকে ১০ টাকা কম আরকি। এটাকে সম্ভবত লোয়ার মিডরেঞ্জ ডিভাইস বলা যেতে পারে। এই দামের আশেপাশে Redmi 9 আর Realme 6i অবশ্যই আছে, আর Note 7 এর স্পেক এদের সাথে বেশ কম্পিটিটিভ এবং কিছু ইন্টেরেস্টিং দিকও রয়েছে।

Infinix Note 7 এর ডিজাইন সত্যিই ইমপ্রেসিভ। Forest Green, Bolivia Blue, Aether Black তিনটি কালারই অসাধারণ। যদিও আমি ফোনের ক্ষেত্রে কালো রঙের ভক্ত নই, তবে এর এথার ব্লাক কালারটা একদমই অন্যধরণের এবং পার্সোনালি আমার বেশি ভালো লেগেছে। ক্যামেরা বাম্পটা আলাদাভাবে যদিও ভালো লাগেনি তবে সবমিলিয়ে এটার ডিজাইনকে এক কথায় ‘দুৃর্দান্ত’ বলেই প্রকাশ করতে হচ্ছে।

ডিজাইনের মতই আরেকটি আকর্ষণীয় দিক হলো এর Infinity-O তথা পাঞ্চহোল ডিসপ্লে, এই বাজেটে এখন পর্যন্ত পাঞ্চহোল খুব বেশি দেখা যায়না। এর ডিসপ্লেটি হিউজ, 6.95″ এর একটি IPS প্যানেল। তবে এর রেজ্যুলেশন HD+, যেটা এই দামে, এত বড় ডিসপ্লের ক্ষেত্রে FHD+ আশা থাকে। তো ভালোভাবে দেখলে শার্পনেসের ঘাটতি চোখে পড়তেই পারে, তবে যারা লোয়ার মিডরেঞ্জ বাজেটে পাঞ্চহোল ডিসপ্লে চাইছেন, তাদের জন্য সম্ভবত এটা কোন ডিলব্রেকার হবে না। আর এখানে গরিলা গ্লাসের প্রটেকশন থাকছে।

এর আরেকটি আকর্ষণীয় দিক হলো Helio G70 চিপসেট। আমি জানি Redmi 9 আর Realme 6i এই দামে Helio G80 অফার করছে যা এর থেকে অনেক উন্নত। তবে অন্য ব্র্যান্ডগুলোর দিকে দেখলে এই দামে এসেও তারা P22, P35 এর উপরে যেতে চায় না, ইভেন Infinix Note 6-এও ছিলো Helio P35। কাজেই আমার দৃষ্টিতে তাদের Helio G70 দেওয়াটা প্রশংসনীয়।

12nm ট্রানজিস্টর সাইজের এই চিপসেটে রয়েছে ২টি Cortex-A75@2.0 GHz ও ৬টি Cortex-A55@1.7 GHz। অন্যদিকে GPU সেকশনে রয়েছে Mali G52 EEMC2। গীকবেঞ্চ স্কোরও যুক্ত করে দিলাম, বেশ ভালো স্কোর। এটি অবশ্য 6/128 ভার্সনের রেজাল্ট, বাংলাদেশে যেটি এভেইলেবল নয়।

ফোনটির তিনটি ভ্যারিয়েন্ট আছে, 4/64, 4/128 ও 6/128। বাংলাদেশে এসেছে দ্বিতীয়টি অর্থাৎ, 4GB র‌্যাম আর 128 জিবি ইনবিল্ট স্টোরেজ আর এক্সপেনশন সুবিধা রয়েছে 2TB পর্যন্ত! আমি অনিশ্চিত বাজারে এই সাইজের এসডি কার্ড পাওয়া যায় কিনা, আর এটা কারণও প্রাক্টিকালি প্রয়োজন হওয়ারও কথা না, কিন্তু জাস্ট ইমাজিন, 2TB স্টোরেজওয়ালা স্মার্টফোন নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছি!…

এর রেয়ারে ৪ ক্যামেরার রূপ ধরে থাকছে সিঙ্গেল ক্যামেরা সেটআপ। মানে এখানে ৪টি ক্যামেরা আছে সত্য, কিন্তু প্রাইমারী 48MP বাদে বাকিগুলোর ক্যামেরা সংখ্যা বাড়ানো বাদে খুব বেশি কাজ নেই। কেননা অন্য ক্যামেরাগুলো হলো 2MP (Depth), 2MP (Macro), AI Lens। অবশ্য এটা সত্য কাস্টমারদের একটা অংশ ক্যামেরার সংখ্যা দেখে, কাজ নিয়ে চিন্তা করে না, কিন্তু অন্তত AI Lens এর পরিবর্তে যদি 8MP আল্ট্রাওয়াইড লেন্স দেওয়া হত, তাহলে কোয়াড ক্যামেরা বলার কিছুটা যৌক্তিকতা পাওয়া যেত।

তবে প্রাইমারী 48MP ক্যামেরা থাকাটা কিন্তু বেশ ভালো বিষয়। এটি অটোফোকাস সমর্থন করে এবং অ্যাপের্চার f/1.8, আর এই ক্যামেরাতে 8000*6000 রেজ্যুলেশনের ছবি তোলা যায়! ভিডিওতে কোন স্ট্যাবিলাইজেশন আছে কিনা জানা নেই। অন্যদিকে সেলফি ক্যামেরা থাকছে ফিক্সড ফোকাস 16 MP, অ্যাপের্চার f/2.4। তো, এধরণের ক্যামেরা সেটআপকে কোয়াড ক্যামেরা বলতে আমার আপত্তি থাকলেও মেইন ক্যামেরা ও সেলফি ক্যামেরা কিন্তু ভালোই আছে।

ব্যাটারী সেকশনে এখানে থাকছে 5000 mAh ব্যাটারী। এখন এটা স্ট্যান্ডার্ড হয়ে গেছে, তাই কোন বিশেষণে বিশেষায়ণের প্রয়োজন দেখছি না। একে চার্জ আপ করার জন্য থাকছে একটি মাইক্রোইউএসি টাইপ বি পোর্ট, অর্থাৎ, টাইপ সি এখানে থাকছে না। তবে এটা 18W ফাস্ট চার্জ সমর্থন করে, তাই চার্জার উল্টে লাগানো যায় না এটা তেমন কোন সমস্যা বলে মনে করি না। অবশ্য এটা ঠিক যে, টাইপ সি বর্তমান সময়ের স্ট্যান্ডার্ড হয়ে উঠছে, আর সব ডিভাইসের জন্য একই চার্জার এরকম একটা কনসেপ্ট গড়ে উঠছে। তাই টাইপ সি এর একটা এডভান্টেজ আছে।

এখানে দেওয়া হয়েছে Android 10 ভিত্তিক XOS 6.0। XOS নিয়ে আমার পার্সোনাল কোন অভিজ্ঞতা নেই, যদি কোন ইউজার থেকে থাকেন, কমেন্ট সেকশনে অবশ্যই অপিনিয়ন শেয়ার করতে পারেন। এই ফোনের থিকনেস 8.75″, তবে ওজনে কিছুটা ভারী, 206g। আর সেন্সর সেকশনে এই ফোনটিতে দরকারী সেন্সরগুলো দেওয়া হয়েছে, জাইরোস্কোপ, কম্পাস থাকছে যেটা চমৎকার ব্যাপার। Redmi 9-এ কিন্তু জাইরোস্কোপ সেন্সর মিসিং ছিলো।

আর একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বলতে প্রায় ভুলেই গেছিলাম, এর ফিঙ্গারপ্রিন্ট সেন্সরটি সাইড মাউন্টেড। আইপিএস ডিসপ্লের সাথে তো সাধারণভাবে আন্ডার-ডিসপ্লে ফিঙ্গারপ্রিন্ট হয় না। আরে রেয়ার মাউন্টেড এর তুলনায় আমি সাইড মাউন্টেড ফিঙ্গারপ্রিন্ট সেন্সর প্রিফার করি।

তো, সব মিলিয়ে এখন সামারাইজেশনে আসি। ফোনটির কমপ্লেইন করার মত জায়গা রয়েছে আমার মতে দুইটি। প্রথমটি হলো এর HD+ রেজ্যুলেশন আর দ্বিতীয়টি কার্যকর কোন আল্ট্রাওয়াইড বা টেলিফটো লেন্স না থেকেই কোয়াড ক্যামেরা সেটআপ। এর বাইরে এটা এই দামে বেশ চমৎকার মনে হয়েছে, বিশেষ করে পাঞ্চহোলপ্রেমীরা একে চিন্তায় রাখতে পারেন।

সফটওয়্যার এক্সপেরিয়েন্সের বিষয়টি আমার যেহেতু জানা নেই, এটা ছাড়া অন্য বিষয়গুলোতে Redmi 9 এর সাথে যদি কম্পেয়ার করি, দুটো ফোনেরই কিছু এডভান্টেজ ও ডিজএডভান্টেজ আছে। যেমন, বড় ডিসপ্লে, পাঞ্চহোল, বাড়তি স্টোরেজ, মেইন ক্যামেরা, সেলফি ক্যামেরা, ফাস্ট চার্জিং, ডিজাইন, থিকনেস, জাইরো সেন্সর Infinix Note 7 এর এডভান্টেজ। আবার FHD+ রেজ্যুলেশন, বেটার চিপসেট, আল্ট্রাওয়াইড, কার্যকর ম্যাক্রো লেন্স, টাইপ সি, দাম এবং সাথে ব্র্যান্ড হিসেবে গ্রহণযোগ্যতার দিক থেকে Redmi 9 এগিয়ে।

Realme 6i এর সাথে কম্পারিজনটা আরো ইন্টেরেস্টিং। কারণ এখানে দুটো ডিভাইসেরই রেজ্যুলেশনই HD+, জাইরো সেন্সর অফার করছে দুটোই, দুটোতেই 18W ফাস্ট চার্জিং সমর্থিত, দুটোতেই প্রাইমারী ক্যামেরা 48MP, সেলফি ক্যামেরা 16MP, ইনবিল্ট স্টোরেজ দুটোতেই 128GB। তবে ডিজাইন, বড় ডিসপ্লে, পাঞ্চহোল, থিকনেস আর দামে এগিয়ে থাকছে Infinix Note 7। অন্যদিকে চিপসেট, টাইপ সি পোর্ট, আল্ট্রাওয়াইড লেন্স আর ব্র্যান্ড হিসেবে গ্রহণযোগ্যতা হতে পারে Realme 6i বেছে নেওয়ার কারণ। তবে রিয়েলমির অফিসিয়াল ডিভাইসগুলো সঠিক দামে না পাওয়া এবং এভেইলেবল না থাকা রিয়েলমি ব্র্যান্ডের গ্রহণযোগ্যতা আমার মনে হয় এখন কিছুটা কমিয়ে দিচ্ছে।

তো বুঝতে পারছেন, Redmi 9, Realme 6i এর সাথে Infinix Note 7 যথেষ্ট কম্পিটিটিভ, আর আপনি ফোনটি কিনবেন কিনা সেটি অবশ্যই নির্ভর করছে আপনার রিকুয়ারমেন্ট, পছন্দ আর বাজেটের সাথে ফোনটি সামঞ্জস্যপূর্ণ হচ্ছে কিনা, তার উপর।

তথ্য ও ছবি সোর্স

সবশেষে বলি, মানসম্মত কনটেন্ট তৈরির জন্য প্রচুুর সময় দিতে হয়, আর এটা খুব সহজও নয়। আমরা সবসময়ই চেষ্টা করছি আমাদের আর্টিকেলগুলো পড়ে যেন কেউ হতাশ না হয়, আর ইন শা আল্লাহ ভবিষ্যতেও আমরা চেষ্টা করে যাব। এজন্য আমাদের সাপোর্ট প্রয়োজন। আর আপনার খুব সাধারণ কিছু কাজও আমাদের জন্য অসাধারণ হতে পারে। যেমন, একটি কমেন্ট। সত্যি বলছি, আমাদের কাছে প্রতিটি কমেন্ট খুব বেশি মূল্যবান।

তাই পোস্টটি পড়ে আপনার অনুভূতি (সেটি পজিটিভ হতে পারে, কিংবা নেগেটিভ) এবং মতামত প্রকাশ করুন কমেন্ট বক্সে। এটা খুবই সহজ, পোস্টের নিচেই রয়েছে কমেন্ট বক্স, সেখানে আপনার কমেন্টটি লিখুন, নাম আর ইমেইল লিখুন, ওয়েবসাইট থাকলে সেটিও লিখতে পারেন এবং পোস্ট করুন। ভালো না লাগলে প্রয়োজন নেই, তবে ভালো লাগলে লেখাটি শেয়ার করুন। আর আমাদের লেখাগুলো পছন্দ হলে ইমেইল সাবস্ক্রিপশন করে নিতে পারেন, সাবস্ক্রিপশন ফর্ম পেতে নিচে স্ক্রল করুন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *