‘Finding Nemo’ এনিমেশনটি হয়ত ছোটবেলায় আমাদের অনেকেরই প্রিয়গুলোর একটি ছিলো, আর এটা যারা দেখেছি, তারা নিমোকে ভুলে যাওয়ার কথা নয়। আজ কিন্তু নিমোর কথা বলছি না, বলছি ‘নিমোদের’, মানে ক্লাউনফিশদের কথা। আসলে Amphiprioninae উপগোত্রের মাছগুলোই ক্লাউনফিশ নামে পরিচিত, এদের শ্রেণি হলো Actinopterygii।
লালচে-কমলা ধরণের দেহে কিছু কালো পাড়ওয়ালা সাদা ডোরা নিয়ে দেখতে এরা খুব আকর্ষণীয়। অবশ্য সব ক্লাউনফিশের রং একরকম না, প্রজাতিভেদে কিংবা কখনো বয়স বা অবস্থানভেদেও রংয়ে পার্থক্য হয়। রং হয়ে থাকে হলদে, কমলা, লালচে বা কালচে। প্রজাতিভেদে সবচেয়ে বড়গুলো ১৭ সেমি. পর্যন্ত হতে পারে লম্বায়, আর ছোটগুলো হয়ত ৭-৮ সে.মি ছুঁতে পারে।
ক্লাউনফিশের অনেকগুলো প্রজাতির কথা জানা গেছে, প্রায় তিরিশটির মত। এর মধ্যে একটাই শুধু Premnas গণের মধ্যে, যার নাম হলো মেরুন ক্লাউনফিশ। অন্যগুলো Amphiprion গণের অন্তর্ভুক্ত।
ক্লাউনফিশের আরেকটা নাম আছে, অ্যানিমনফিশ। সি-অ্যানিমনদের সাথে এদের সম্পর্কটা মিথোজীবী। সি-অ্যানিমোনের মাঝে এরা নিরাপদ আশ্রয় পায়, খাদ্যপ্রাপ্তিতেও পরস্পরকে সাহায্য করে।
অনেকগুলো কর্ষিকাওয়া সি-অ্যানিমোনকে দেখে কোন জলজ ফুলের মত মনে হতে পারে, আসলে কিন্তু এরা একধরণের প্রাণী, উদ্ভিদ না! এদের কর্ষিকাগুলোতে নিডোসাইট আছে, যা অন্য প্রাণীদের বিষাক্ত দংশন করলেও ক্লাউনফিশ কিন্তু এতে ক্ষতিগ্রস্থ হয় না, বরং দিব্যি এখানেই বসতি গড়ে এমনকি অনেক সময়ই এখানেই ডিম পাড়ে।
আরো দেখুন: পৃথিবীর সবচেয়ে প্রাণঘাতী প্রাণী…
কীভাবে ক্লাউনফিশ সি-অ্যানিমোনে সার্ভাইভ করতে পারে এটা নিয়ে বেশ কিছু মত আছে। কেউ কেউ মনে করেন ক্লাউনফিশের মিউকাস কোটিং হয়ত প্রোটিনের পরিবর্তে সুগারে তৈরি, যার ফলে সি-অ্যানিমন এটাকে খাদ্য হিসেবে শনাক্ত করতে পারে না।
তবে অন্য প্রাণী শিকারের বেলায় ক্লাউনফিশের কিন্তু একটা চমৎকার পদ্ধতি আছে। নিজের চেয়েও বড় মাছকে এরা আকর্ষণ করে সি-অ্যানিমোনে নিয়ে আসে। এরপর বড় মাছটিকে সি-অ্যানিমোন দংশন করে খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে, আর খাদ্যের অবশিষ্টাংশ হয় ক্লাউনফিশের খাবার।
তাই বলে সবসময় যে এভাবেই নিমোরা খাদ্য খুঁজে নেয়, তা না, এরা আসলে সর্বভূক। জুপ্লাঙ্কটন এদের অন্যতম শিকার, কখনো সামুদ্রিক শৈবালও এদের খাবার হয়।
ক্লাউনফিশদের দলের মধ্যে আধিপত্যের ক্রম বিশেষভাবে নিয়ন্ত্রিত হয়। দলে একটিমাত্র স্ত্রী ক্লাউনফিশ থাকে, বাকি সব সদস্যরা পুরুষ। একটি দলে বংশবৃদ্ধির জন্য শুধুমাত্র এক জোড়া মাছ অংশ নেয়। আর মজার কথা হলো, সব ক্লাউনফিশেরই জন্ম হয় পুরুষ হিসেবে, কোন কারণে যদি দলের একমাত্র স্ত্রী মাছটি মারা যায়, তখন সবচেয়ে বড় আর প্রভাবশালী একটি পুরুষ স্ত্রী মাছে রূপান্তর হয়। এই ঘটনাকে বলা হয় সিকুয়েনশিয়াল হারমাফ্রোডাইট।
‘Finding Nemo’-র জনপ্রিয়তা অবশ্য ক্লাউনফিশদের অনেকটা হুমকিতেই ফেলে দিয়েছিলো, কেননা বাচ্চাদের মাঝে এটি ক্লাউনফিশ পালনের স্পৃহা ব্যাপকভাবে তৈরি করে। এর ফলে প্রচুর ক্লাউনফিশ বন্দি ও বিক্রি করা শুরু হয় এবং তারা তাদের আবাস হারাতে থাকে এমনকি কোথাও স্বাভাবিক সংখ্যার প্রায় তিন-চতুর্থাংশ কমে আসে।
একুরিয়ামের মাছ হিসেবে ক্লাউনফিশ টিকে থাকতে পারে। লবণান্ত পানির একুরিয়াম বা ট্যাঙ্কের মাছগুলোর জীবদ্দশা ৩ থেকে ৫ বছরের আশেপাশে হয়ে থাকে। তবে অবশ্যই সামুদ্রিক বন্য পরিবেশ এদের আদর্শ নিবাস, যেখানে এরা সচারচর ৬ থেকে ১০ বছর বেঁচে থাকে।
সহায়তা: উইকিপিডিয়া | দি ফ্যাক্ট সাইট | মেন্টাল ফ্লস | ট্রি অফ লাইফ ওয়েব প্রজেক্ট