কুয়োকাকে বলা হয় পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী প্রাণী, কিন্তু আসলেই কি?

চারপেয়ে ছোট্ট লোমশ দেহের প্রাণী কুয়োকা (Quokka), মুখে সবসময়ই অদ্ভুত হাসি খেলা করে। দেখলেই মনটাও হেসে উঠে। কুয়োকাকে বলা হয় পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী প্রাণী। আকারে একটা পোষা বেড়ালের থেকে বড় নয়।
ইউরোপীয় বিভিন্ন অভিযাত্রীরা অস্ট্রেলিয়ায় এটাকে দেখে ইঁদুর না বিলাই একেকজন একেকটা বলেছেন। ষোড়শ শতকে Samuel Volckertzoon একে বলেছেন ‘বন বেড়াল’, তারপর Willem de Vlamingh বলেছেন ‘দানব ইঁদুর’, এমনকি যেখানে দেখেছিলেন, সে দ্বীপটাকেও নাম দিয়েছিলেন Rottnest Island, মানে ইঁদুরের বাসা।
তবে এই প্রাণীটা আসলে ইঁদুর, বিলাই কোনটাই না। কুয়াকো ক্যাঙ্গারু গোত্রীয়। আর হ্যাঁ, ক্যাঙ্গারুর মত এদেরও কিন্তু থলে থাকে।
কুয়োকা কেন সবসময় হাসিমুখে থাকে তা এখনো জানা যায়নি। কেউ কেউ বলেন, প্রাকৃতিকভাবেই তাদের মুখে হাসি থাকে। তবে তাদের মুখমন্ডল ও চোয়ালের গঠনের সাথে হাসিমুখের সম্পর্ক নেই।
তাদেরকে সবচেয়ে সুখী প্রাণী বলা হয় বটে, তবে, মুখে হাসি লেগে থাকাটাই কিন্তু সুখী হওয়ার একমাত্র শর্ত না! তাদের জীবনটাও আর সব প্রাণীর মতই কঠিন। দিনশেষে, তারা একটা বন্যপ্রাণী। সঙ্গী নির্বাচন বিষয়ে লড়াই কিংবা ঝুঁকি বোধ করলে কুয়োকা আক্রমণাত্মক হয়ে উঠতে পারে। আকার ও প্রভাব অনুযায়ী পুরুষ কুয়াকাদের বিন্যাস হতে পারে।
জীবনের সাথে যুদ্ধক্ষেত্রের তুলনাটা সম্ভবত ভুল নয়। আর শুধু মুখে হাসি থাকলেই সে যুদ্ধ কিন্তু থেমে যায় না! পাখির ঝাঁক, বিড়াল, কুকুর, শেয়াল, ডিঙ্গো, সাপের মত প্রাণীরা কুয়োকার জন্য বিপদজনক। শিকারীর আক্রমণে এরা প্রথমে দৌড়ে পালাতে চেষ্টা করে। ছোট্ট আকার একে লাফিয়ে খুব দ্রুত চলতে সাহায্য করে। যদি তারা কোনঠাসা হয়ে যায়, তবে লড়াই শেষ পথ খোলা থাকে। দাঁতের কামড়, নখের আঁচড় কিংবা পায়ের লাথি এখানে তাদের অস্ত্র।
কুয়োকা কলোনি গড়ে তোলে, তবে তারা পুরোপুরি সামাজিক প্রাণী নয়। একসাথে খেলাধুলা বা এরকম কর্মকান্ডে তারা অংশ নেয় না। একটি কুয়োকা সাধারণত ১০-১৫ বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারে। জীবদ্দশায় মা কুয়োকা ১৫-১৭টি সন্তানের জন্ম দিতে পারে। সন্তান প্রতিপালনের দায়িত্ব শুধু মা কুয়োকার উপরেই থাকে। ১০-১২ মাস বয়সে তারা স্বাধীন হয়ে যায়।
মা কুয়োকাদের আত্মরক্ষার একটি দুঃখজনক পদ্ধতি আছে। শিকারীর হাত থেকে বাঁচতে সে পরিস্থিতি বোধে সন্তানকে থলে থেকে বের করে দেয়। এসময় শিশু কুয়োকার শব্দে শিকারী আকৃষ্ট হয়, ফলে মা কুয়োকা পালিয়ে যাওয়ার অবকাশ পায়। তারপরে শিশু কুয়োকার পরিণতি নিশ্চয়ই অনুমান করতে পারছেন।
কুয়োকা হাসিখুশি এবং মানুষের সাথে বেশ বন্ধুবৎসল। তবে জীবনের কঠিন যুদ্ধ থেকে কিন্তু কুয়োকা ছাড় পায় না। অবশ্য জীবনটাতো এরকমই, কিছু হাসি-আনন্দ আর কিছু দুঃখ-কান্না!

2 Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *