রিয়েলমি বেশ নিয়মিতই নতুন নতুন ডিভাইস লঞ্চ করে থাকে। আজ তারা রিলিজ করলো realme C12। এটা এখন বেশ স্পষ্ট যে, আগের মত গ্রেট ভ্যালু ফর মানি ডিভাইস রিয়েলমি এখন আর আনছে না। বাংলাদেশে অ্যাসেম্বল করা শুরু হওয়ার পর C3 আর 5i-তে যেরকম চমক দেখা গেছিলো, এখনকার ফোনগুলো আর সেরকম নয়।
ওভারপ্রাইসিং, ফোনের স্পেকের মধ্যে সামঞ্জস্যতা না রাখা, নির্ধারিত মূল্যের অধিক দামে বিক্রির অভিযোগ আর আরো কিছু কারণে রিয়েলমি তাদের গ্রহণযোগ্যতা আগের থেকে কিছুটা হলেও হারাচ্ছে। নতুন এই ডিভাইস, অর্থাৎ, realme C12 নিয়েও সামাজিক মাধ্যমে প্রচুর সমালোচনা ও ট্রল দেখা যাচ্ছে।
তবে আমার নিজের মত যদি দিই, আমার এই ডিভাইসটি খুব খারাপ মনে হয়নি, যদিও কয়েকটি জায়গায় অভিযোগ আছে। অবশ্যই এটা C3-র মত নয়, তবে C3-র ম্যানুফ্যাকচার এখন যদ্দুর জানি বন্ধ, আর এটা স্বাভাবিক যে, C3 একটা স্পেশাল ডিভাইস ছিলো, সব ডিভাইস ওরকম আশা করি না।
C17 বা 7i এর মত এখানে কিন্তু স্পেকে অসামঞ্জস্যতা নেই। C17 ও 7i-এ যেরকম চিপসেটের ক্যাপাবিলিটির ওপরে ডিসপ্লে রিফ্রেশ রেট, ক্যামেরা (7i-এ), অতিরিক্ত র্যাম দিয়ে দাম বৃদ্ধি করা হয়েছিলো, C12-এ কিন্তু তেমনটা করা হয়নি। মোটামুটি ব্যালেন্সড আর দাম ওকে বলব আমি।
এর আগে C2 এর দামে খানিকটা আপডেট করে রিয়েলমি রিলিজ করেছিলো C11, এবার C3 এর দামে খানিকটা ডাউনগ্রেড করে আসলো realme C12। কিছুই করার নেই। C সিরিজের নাম্বারিংয়ের হিসেব আমার ঠিক বুঝে আসে না, তবে এটুকু হিসেব করলাম 1 আর 1-এ 2, 1 আর 2-এ 3।…
আলোচনা শুরুর আগে জানিয়ে রাখি, বরাবরের মতই আমরা কনফিগারেশন নিয়ে কথা বলছি। এটি কোন হ্যান্ডস অন রিভিউ নয়। তাই আমার কথার সাথে বাস্তব অভিজ্ঞতার হয়ত কিছুটা অমিল থাকতে পারে। তবে এটাও সত্য যে, স্পেক সব কথা না বললেও কিছু কথা তো বলেই, নয় কি?
ডিজাইন দিয়ে শুরু করি। দুটো কালারে এসেছে realme C12, কোরাল রেড ও মেরিন ব্লু। কোরাল রেড কালারটা সুন্দর লেগেছে। বিল্ড ম্যাটেরিয়াল হিসেবে এজ এক্সপেক্টেড, থাকছে প্লাস্টিকের ব্যবহার।
ডিসপ্লে সেকশনে থাকছে 6.5″ HD+ IPS প্যানেল, যেমনটা ছিলো C11, C3, C17, 5i, 6i এবং 7i-এ। শুধু রিয়েলমি না, মোটামুটি সব ব্র্যান্ডই এটাকে জাতীয় ডিসপ্লে সাইজ বানিয়ে নিয়েছে, যেটা একটা বোরিং পর্যায়ে চলে যাচ্ছে। এবার অবশ্য আর 90Hz দেয়নি রিয়েলমি, 60Hz… এখানে থাকছে V-শেপ নচ।
ডিসপ্লেতে তারা Corning Gorilla Glass যুক্ত করেছে, এটা ভার্সন 3-ই হয়ে থাকবে। তবে যে ভার্সনই হোক, এই দামের মধ্যে ডিসপ্লেতে গরিলা গ্লাস ব্যবহার করা হয়েছে, অবশ্যই প্রশংসনীয়।
রেয়ারে তিনটি ক্যামেরা দেওয়া হয়েছে। প্রাইমারীটি 13MP। C3-তে যেখানে f/1.8 অ্যাপার্চারের ক্যামেরা ছিলো, এবার f/2.2। এই ক্যামেরাতে লো লাইটে ফটোগ্রাফি কেমন হবে, তা নিয়ে একটা সন্দেহের জায়গা থাকছে। Super Nightscape মোড ব্যবহার করে কিছুটা বেটার রেজাল্ট পাওয়া যেতে পারে। সেলফির জন্য তারা দিয়েছে একটি 5MP f/2.4 ক্যামেরা।
এখানে 3GB র্যাম, আর সাথে 32GB ইন্টার্নাল স্টোরেজ থাকছে। র্যাম মেনে নেয়া যায়, তবে স্টোরেজ 64GB আমার মতে এই দামে অনেকটা আবশ্যক ছিলো। যাই হোক, ত্রিপল কার্ড স্লট আছে, অর্থাৎ, দুটি সিমের সাথে প্রয়োজনে স্টোরেজ বাড়িয়ে নিতে একটি এসডি কার্ড ব্যবহার করা যাবে।
চিপসেট সেকশনে এখানে আর চিরাচরিত রিয়েলমির মত অসাধারণ কিছু আমরা দেখছি না। দেয়া হয়েছে Helio G35। নামের মধ্যে G দেখে বিভ্রান্ত হবেন না, আসলে এটা Helio P35-এর একটি ইনহেন্সড ভার্সন। সবকিছু একইরকম, ভেতরে ইন্সট্রাকশন সেট ও টুকটাক ইনহেন্সমেন্ট থাকছে। C3-তে থাকা G70-র মত কিছু না।
যাইহোক, যদি আমরা C3-র কথা ভুলে যাই, তাহলে এই দামে Helio G35 আমার মতে ভালোই আছে। এতে আছে অক্টাকোর প্রসেসর, যার সবগুলো কোর ARM Cortex A53 এবং চারটির ক্লকস্পিড 2.3 GHz আর বাকি চারটি 1.8GHz। আর এর GPU PowerVR GE8320@680MHz। এর ট্রানজিস্টর সাইজ 12nm।
অনেকের মনে একটা প্রশ্ন আসতে পারে, G70 তে ২টি কোর ছিলো 2.0GHz আর বাকি ৬টি 1.7GHz। তাহলে G70 থেকে এটা ভালো কীভাবে হয়? আসলে এটা শুধু প্রসেসরের ক্লকস্পিডের ব্যাপার নয়। G70 এর 2.0GHz কোরগুলো Cortex A75, যা হাই পারফর্মেন্স কোর এবং অন্য কোরগুলো A55, যা A53 থেকে বেটার পারফর্মার ও পাওয়ার সেভার। একইভাবে সেখানে GPU-ও অনেক উন্নত।
এছাড়াও চিপসেটের আনুসঙ্গিক অনেক বিষয় রয়েছে, যা নিয়ে আমরা একটা বিশেষ লেখা, যা আশা করছি ৫০০০+ শব্দের হবে, খুব শীঘ্রই প্রকাশ করব ইন শা আল্লাহ। নিয়নবাতিকে বুকমার্ক করে রাখতে পারেন, এছাড়া আমাদের নতুন পোস্ট ইমেইলে পেতে সাবস্ক্রাইব করে নিতে পারেন।
ফোনের আলোচনায় ফিরে আসি। realme C12-এর প্রধান আকর্ষণ খুব সম্ভবত এর হিউজ ব্যাটারী, যেটা 6000mAh। তবে বড় ব্যাটারী দিলেও কোন ফাস্ট চার্জিং দেয়নি রিয়েলমি। 10W চার্জার দিয়ে প্রায় সাড়ে তিন ঘন্টা লাগতে পারে এর চার্জ শূন্য থেকে পূর্ণ করতে। আর চার্জিংয়ের জন্য থাকছে মাইক্রোইউএসবি টাইপ বি।
এখানে লাইট সেন্সর, একসেলারেশন সেন্সর, প্রক্সিমিটি সেন্সর আর ম্যাগনেটিক ইন্ডাকশন সেন্সর দেয়া হয়েছে, ভালো ব্যাপার। জাইরো সেন্সর নেই, তবে একসেলারেশন আর ম্যাগনেটিক সেন্সরের তথ্য ব্যবহার করে সফটওয়্যার বেজড ভার্চুয়াল জাইরো সেন্সর থাকতেও পারে, C17-এ ছিলো। ফিঙ্গারপ্রিন্ট সেন্সরও থাকছে, রেয়ার মাউন্টেড।
সবশেষে, realme C12, C3-র মত অতটা আকর্ষণীয় ডিল না হলেও আমার কাছে ভালোই লেগেছে। ভালো লেগেছে তারা গ্লাস প্রটেকশন, সেন্সর এরকম টুকটাক দিকগুলোতে খেয়াল রেখেছে। তবে সেইসাথে ক্যামেরা আর স্টোরেজ নিয়ে তারা অভিযোগের জায়গা রেখে দিয়েছে। এছাড়া ব্যাটারী হিসেবে অন্তত 18W চার্জিং থাকলে মানানসই হত, তবে দামের দিকে তাকিয়ে সেটা সম্ভবত মানা যায়।
C3 এখন আর তেমন পাওয়া যায় না, তো ওটা যদি আমরা বিবেচনা না করি, তাহলে মার্কেটে কিন্তু এর তেমন কোন প্রতিপক্ষ নেই, বলতে গেলে ফাঁকা মাঠ। Tecno Spark 6 Air বা Redmi 9C থেকে অবশ্যই, অন্তত কাগজে-কলমে এটা বেটার ডিল।
তবে এখানে আমার মতে 64GB স্টোরেজ দেয়া হলে এই দামের সাথে বেশি মানানসই হত। আর যারা কিনতে চান, তারা আরেকটি বিষয় মাথায় রাখবেন, বড় ব্যাটারীর সাথে ফোনটার থিকনেস অনেক বেশি, 9.8mm, আর ওজনও 209g। তো, হালকা-পাতলা কমফোর্টেবল কোন ফোন অবশ্যই realme C12 নয়। এটা এক হাতে ব্যবহারের জন্য খুব একটা উপযুক্ত না।
নিয়নবাতি স্কোর
নিয়নবাতি স্কেল একটি স্মার্টফোন কতটা ভ্যালু ফর মানি তা যাচাইয়ের জন্য বিশেষায়িত। ৫০ পাওয়া অর্থ হলো ঠিক আছে, ৬০ পেলে একটি ভালো ডিল এবং ৭০ পেলে গ্রেট ভ্যালু। অবশ্যই এটি কোন পারফেক্ট স্কেল না, তবে আমরা চেষ্টা করছি এখানে ভালো একটি ধারণা যেন পাওয়া যায়।
- ডিজাইন: ৪/৮
- বিল্ড: ৬/১০
- ডিসপ্লে: ৬/১২
- ক্যামেরা: ৬/১৫
- ব্যাটারী ও চার্জিং: ৭/১০
- চিপসেট ও র্যাম: ১৬.৫/২৮
- স্টোরেজ: ৩/৭
- অন্যান্য: ৭/১০
মোট স্কোর: ৫৫.৫/১০০
কী-ওয়ার্ড: রিয়েলমি সি১২, রিয়েলমি C12, রিয়েল মি সি ১২
অনেক সুন্দর রিভিউ 🙂