কী বলবো জানি না। প্রকাশের ভাষারা কখনো কখনো হার মানে। সবকিছু তো আমরা সবাই দেখেছি। অবাক হয়ে ভেবেছি, কীভাবে সম্ভব। কীভাবে একই আলো-বাতাসে বেড়ে ওঠা কারো পেতে দেয়া বুকে নির্বিকার একের পর এক বুলেট বিদ্ধ করা যায়। কীভাবে একদিকে নির্মম বুলেট চালিয়ে আরেকদিকে নির্লজ্জের মত মিষ্টি কথার পসরা সাজানো যায়। ঠিক কতটা কাপুরুষ হলে নিরস্ত্র শিক্ষার্থীদের নায্য দাবিকে দমাতে ছাত্রলীগ, পুলিশ, র‌্যাব, আর্মিকে পূর্ণ শক্তি নিয়ে নামাতে হয়।

সত্যি বলতে কী, নির্লজ্জ মানুষের পক্ষে সম্ভব না এমন কিছু নেই। আবূ মাসঊদ উকবাহ বিন আমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত: রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ মানুষ পূর্ববর্তী নবীগণের বাণী থেকে যা পেয়েছে তার মধ্যে আছে, “তোমার লজ্জা-শরম না থাকলে যা ইচ্ছা তাই করতে পারো”। (সুনানে ইবনে মাজাহ: ৪১৮৩, তাহকীক আলবানী: সহীহ।)

মাঝে মাঝে মনে হয় হয়ত আর নতুন করে অবাক হওয়ার মত কিছুই দেখার বাকি নেই। তবু আবারো অবাক হই। অবাক হই, একজন মানুষ হয়ে যখন বুঝিনা আরেকজন মানুষ কোন স্বার্থে পাখির মত মানুষ মারতে পারে। সবাইকে জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে দিয়ে ছাইয়ের ওপর রাজত্ব করার জন্য?

সময় চলতে থাকে, শুধু জীবন কখনো থমকে দাঁড়ায়। হয়ত সময়ের সাথে আবারো আমাদের জীবন তার স্বাভাবিক গতি ফিরে পাবে, যেন কিছুই হয়নি। তবে যেই পরিবারগুলো তাদের প্রিয়জনকে হারিয়েছে, তাদের জন্য কি সবকিছু স্বাভাবিক হওয়া সত্যিই সম্ভব? যেই ক্লাসরুম তাদের একজনকে হারিয়েছে, সেই ক্লাসরুম কি কখনো আগের মত হবে? আহতদের কতজন পুরোপুরি স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারবে?

আমরা বিশ্বাস করি, একজন নিশ্চয়ই এই সবকিছু দেখেছেন, সবকিছুর খবর রেখেছেন। আর যখন সময় আসবে, তাঁর পাকড়াও বড়ই কঠিন। তিনি তো শুধু এক নির্দিষ্ট দিন পর্যন্ত অবকাশ দেন মাত্র। জালিমদের সব রক্তের বদলা নিশ্চয়ই দিতে হবে। তাদের ওপর আল্লাহর অভিশম্পাত।

“তুমি কখনও মনে করনা যে, যালিমরা যা করে সে বিষয়ে আল্লাহ উদাসীন। তবে তিনি সেদিন পর্যন্ত তাদেরকে অবকাশ দেন যেদিন তাদের চক্ষু হবে স্থির।” (সূরা ইবরাহীম, ১৪:৪২)

শহীদদের মৃত্যু নেই। ঘাতকদের মৃত্যু হয় প্রতিদিন, প্রতিমুহুর্তে। আমাদের ভাই ও বোনেরা যাদের জুলুমের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর জন্য জীবন দিয়ে মূল্য দিতে হয়েছে, আল্লাহ তাদের মৃত্যুকে শাহাদাত হিসেবে কবুল করুন। আহতদের সুস্থতা দান করুন ও তাদের উত্তম বিনিময় দিন। আমাদেরকে আল্লাহ সবসময় ন্যায় ও ইনসাফের পথে রাখুন এবং সাহস দিন, যেন দৃঢ়তার সাথে অন্যায়কে অন্যায় বলতে পারি, যদিও সে অন্যায় আইনের নামে হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *