উইন্ডোজ পিসিতে ভার্চুয়ালবক্সে উবুন্টু ইন্সটলেশন

লিনাক্স ইন্সটলেশনের জন্য অন্যতম একটি নিরাপদ রাস্তা হলো ভার্চুয়ালবক্স ব্যবহার। শুধু লিনাক্স না, এতে উইন্ডোজ, বিএসডি এগুলোও ইন্সটল করা যায়। এতে পিসির ডাটা হারানোর বা হার্ডডিস্ক ভুলক্রমে ফরমেট করে ফেলার আশঙ্কা থাকে না। অবশ্য সত্যিকার অর্থে লিনাক্স চালাতে হলে ভার্চুয়ালবক্স আদর্শ নয়, কেননা এখানে আসলে পিসির রিসোর্স দুটো ওএসের মধ্যে শেয়ার হয়। বিশেষ করে পিসির কনফিগারেশন যদি তেমন ভালো না হয়, ভার্চুয়ালবক্সের এক্সপেরিয়েন্স মোটেও ভালো হবে না।

যাইহোক, শুধু যদি কিছুটা টেস্ট নেয়ার জন্য হয়, সেক্ষেত্রে ভার্চুয়ালবক্স একটি ভালো উপায় হতে পারে। আমি এখানে দেখাবো কীভাবে খুবই সহজে ভার্চুয়ালবক্সে লিনাক্স ইন্সটল করা যেতে পারে। এখানে আমি উবুন্টু ব্যবহার করছি, অন্য লিনাক্সের ক্ষেত্রে কিছুটা পার্থক্য থাকতে পারে মূল ইন্সটলেশনের ক্ষেত্রে। তবে সেটা আশা করি খুব একটা সমস্যা হবে না (যদি না আর্চ বা জেন্টু টাইপের কিছু ইন্সটল করতে যান)।

প্রথমে আমাদের যেটা করতে হবে, তা হলো ভার্চুয়ালাইজেশন টেকনোলজি এনাবল করা। এটার প্রসেস ম্যানুফ্যাকচারারভেদে একটু ভিন্ন হয়ে থাকে। যাইহোক, বায়োস সেটআপে এই অপশনটি থাকার কথা। যেমন আমার Gigabyte মাদারবোর্ডযুক্ত Intel প্রসেসরের ডেস্কটপে স্টার্টআপের সময় F2 চেপে BIOS সেটআপে আসা যায় এবং এখানে BIOS Features মেনুতে Intel Virtualization Technology অপশন রয়েছে। এটি এনাবল করে সেভ করে এক্সিট করে নিলাম।

আপনার ল্যাপটপ/ডেস্কটপের বায়োস সেটআপে কীভাবে যেতে হয় না জানলে কিংবা ভার্চুয়ালাইজেশন টেকনোলজি অপশন না পেলে ল্যাপটপের মডেল+Virtualization অথবা ডেস্কটপের মাদারবোর্ড+প্রসেসর+Virtualization (যেমন Gigabyte Intel Virtualization) এভাবে সার্চ করে দেখতে পারেন। আর হয়ত অনেক পুরনো মডেল হলে ভার্চুয়ালাইজেশন টেকনোলজি না-ও থাকতে পারে, সেক্ষেত্রে কিছু করার নেই…

তো ওকে, এবারের কাজ ভার্চুয়ালবক্স ইন্সটল করা। উইন্ডোজ পিসি ব্যবহার করলে এখান থেকে ভার্চুয়ালবক্সের Windows hosts এডিশন ডাউনলোড ও সাধারণ সফটওয়্যারের মত ইন্সটল করে নিন, লিনাক্সে টার্মিনাল কমান্ড/সফটওয়্যার সেন্টার থেকে ইন্সটল করে নিতে পারেন।

এবার আমরা উবুন্টু iso ফাইল ডাউনলোড করে নিচ্ছি, এখান থেকে পছন্দের ভার্সনটি ডাউনলোড করে নিতে পারেন। আমি 21.04 বিটা এডিশন ব্যবহার করছি, যার iso আছে এখানে

এখন আমরা মূল টিউটোরিয়ালে চলে যাই। আমি টিউটোরিয়ালটি ডিপিন পিসি থেকে দেখাচ্ছি, উইন্ডোজেও এটা একইরকম। প্রথমে ভার্চুয়ালবক্স চালু করে New বাটনে ক্লিক করছি।

পরের স্ক্রিনে নাম, টাইপ, ভার্সন ও ভার্চুয়াল মেশিনটি কোথায় তৈরি হবে লোকেশন ঠিক করে দিতে হবে। এখানে উল্লেখ্য ভার্চুয়াল মেশিনের সাইজ আমরা ১৬ জিবি দিচ্ছি, আপনি কমবেশি করতে পারেন (তবে কম না দেয়ারই পরামর্শ থাকবে), এ পরিমাণ জায়গা যেন প্রদত্ত লোকেশনে খালি থাকে।

র‌্যামের একটি অংশ ভার্চুয়াল মেশিনে বরাদ্দ দিতে হবে। আমার র‌্যাম ৪ জিবি। এখানে যদিও 1024 MB রেকমেন্ড করেছে, তবে এটা উবুন্টুর জন্য অনেক কম। কিছুটা বেটার এক্সপেরিয়েন্সের জন্য আমি 2048 MB সেট করলাম। যদি বেশি র‌্যাম থাকে, আরো বেশি দিতে পারেন। ভার্চুয়াল মেশিন এ পরিমাণ র‌্যাম-ই বরাদ্দ পাবে, পুরোটা ইউজ করতে পারবে না। তবে অবশ্যই মনে রাখতে হবে, ভার্চুয়াল মেশিন চলাকালীন হোস্ট মেশিনও কিন্তু চালু থাকবে,  তাই সেটির কথাও মনে রাখতে হবে।

তারপর আমরা একটি ভার্চুয়াল হার্ডডিস্ক তৈরি করব। আমরা ভার্চুয়াল মেশিনে যতকিছু করব, হার্ডডিস্কের এই অংশেই হবে, যেটা একটা সিম্পল ডিলিটযোগ্য ফাইল হিসেবে তৈরি হবে।

পরের ধাপে আমি প্রথমটি অর্থাৎ VDI সিলেক্টেড রাখছি।

স্টোরেজ ডায়ানামিকালি অ্যালোকেটেড রাখলাম, ফলে প্রয়োজন অনুযায়ী সাইজ এটি বাড়িয়ে নিতে পারবে, পরের ধাপে আমরা যে সীমা নির্ধারণ করব, সে পর্যন্ত।

আমি 16 GB সাইজ দিচ্ছি ভার্চুয়াল মেশিনের জন্য।

এবং এখন যখন আমি ক্রিয়েট বাটনে ক্লিক করলাম, আমার ভার্চুয়াল মেশিন তৈরি হয়ে গেছে!

যদি আপনার কম্পিউটারটি যথেষ্ট ভালো কনফিগারেশনের হয় এবং সমর্থন থাকে, তবে 3D Acceleration চালু করে নিতে পারেন। নাহলে এনিমেশনসহ বিভিন্ন ডেস্কটপ ইফেক্ট কাজ করবে না। এজন্য Settings > Display > Screen > Graphics Controller : VSMVGA সিলেক্ট করে 3D Acceleration টিক মার্ক দিয়ে দিন।

এখন আমি Start করছি। ফলে মেশিন চালু হলো এবং সাথে একটি Select Startup Disk একটি পপআপ আসলো। সিলেক্ট অপশন থেকে Add বাটনে ক্লিক করে আমাদের ডাউনলোড করা উবুন্টুর iso ফাইলটি এড করে চুজ করে মেশিনটি চালু করলাম।

পরের ধাপে Ubuntu সিলেক্ট রেখে এন্টার প্রেস করছি।

এখন উবুন্টু বুট আপ হচ্ছে

ইন্সটল না করেও ট্রাই করার সুযোগ আছে, তবে আমরা যেহেতু ইন্সটল করতে চাই, তাই ইন্সটল উবুন্টু সিলেক্ট করছি।

কীবোর্ড লেআউট এখানে ডিফল্ট English (US)-ই রাখছি। বাংলা ইন্সটলের পর সেটিংস থেকে যুক্ত করা যাবে। (Settings>Region & Languages>Input Sources)

পরের ধাপে আমি Normal Installation সিলেক্টেড রাখছি। এতে কিছু এক্সট্রা সফটওয়্যার প্রি-ইন্সটল্ড পাওয়া যায়। যদি আপনি একটি ক্লিনার ইন্সটলেশন চান, তাহলে Minimal Installation সিলেক্ট করুন। ইন্সটলের সময় আপডেটগুলো এবং থার্ড-পার্টি কিছু ড্রাইভার ও অন্য সফটওয়্যার ইন্সটল করতে চাইলে অপশনগুলো চেক করে দিন।

পরের ধাপে ইন্সটলেশন টাইপ জানতে চাইবে। যেহেতু ভার্চুয়ালবক্সে একটা ভার্চুয়াল স্পেসে আমরা কাজ করছি, তাই নিশ্চিন্তে ইরেজ ডিস্ক দিচ্ছি, ওয়ার্নিংয়ে ভয় পাওয়ার কিছু নেই, তবে মূল হার্ডডিস্কে ইন্সটলের সময় এই অপশন দিলে হার্ডডিস্ক কিন্তু ক্লিন হয়ে যাবে!

এখন একটা কনফার্মেশন চাইবে, ডিস্কে যে পরিবর্তনগুলো আসছে সে বিষয়ে।

এবার নিজের পরিচয়, পাসওয়ার্ড আমি এক বর্ণের দিয়েছি, কারণ আমি আইলসা মানুষ, আপনি চাইলে কঠিন কিছু দিতে পারেন।

জায়গা সিলেক্ট করলাম পরের ধাপে।

এখন ইন্সটল শুরু হলো।

আমাদের ইন্সটল শেষ! রিস্টার্ট দিলাম।

এখন ইন্সটলেশন ডিস্কটি রিমুভ করতে বলছে, তো কীভাবে করা যায় ছবিতে দেখিয়েছি।

রিস্টার্টের পর প্রাথমিক কিছু সেটআপ করে নেয়া যাবে Welcome Screen থেকে, অথবা স্কিপ করতে পারেন।   

ওকে, ডান!

তো, স্ক্রিনটা অনেক ছোট, নয় কী? ফুল স্ক্রিনে যেতে Right Ctrl+F চাপুন। এরপর লেফট ডকের নিচে All Applications বাটনে ক্লিক করে Settings অ্যাপে যাচ্ছি।

Display Resolution ঠিক করে নিলাম।

ওকে, আমাদের সেটআপ মোটামুটি শেষ। একটা সয়াপ ফাইল যোগ করে নেয়ার পরামর্শ থাকবে, একদমই সহজ, এখানে দেখুন। ভার্চুয়ালবক্স যথেষ্ট ভালো কনফিগারেশন পিসি না হলে পারফর্মেন্সে কমতি থাকবে বা আরো লিমিটেশন থাকতে পারে, এটা আসলে মেনে নিতে হবে। সবচেয়ে ভালো এক্সপ্রেরিয়েন্সের জন্য মূল হার্ডওয়্যারে ইন্সটল করাটাই আদর্শ।

One comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *