আসসালামু আলাইকুম। আশা করছি আল্লাহ তায়ালা আপনাদের সবাইকে ভালো ও সুস্থ রেখেছেন।
মানুষ একদিক থেকে অভ্যাসকে নিয়ন্ত্রণ করে, আরেকদিক থেকে অভ্যাস মানুষকে নিয়ন্ত্রণ করে। বেশ অদ্ভুত একটা ডায়নামিক। অনেকদিন ধরে এই লেখাটা শেষ করার চেষ্টা করছি, কিন্তু হচ্ছে না। মাঝে মাঝে একাডেমিক চাপ বা পরীক্ষার ওপর দোষ চাপানো যায়, কিন্তু ঠিক এই মুহুর্তে, যখন পরীক্ষার পর একটু অবকাশে ছিলাম, সময়গুলো বেশ ছন্নছাড়াই চলে যাচ্ছে।
তো যাই হোক, আমরা কথা বলবো আজকে XP-Pen Deco 01 V3 নিয়ে। Deco 01 থেকে পেন আরেকটু বেটার করে তারা ইতোপূর্বে 01 V2 এনেছি। V2 আর V3 কার্যত একই, শুধু পেন প্রেসার লেভেল 8192 থেকে 16384 করা হয়েছে এবং বক্স কনটেন্টে সামান্য পরিবর্তন- যেমন ৮টির বদলে ১০টি নিব দেয়া হয়েছে এবং মাইক্রোইউএসবি ওটিজি ক্যাবল বাদ দিয়ে শুধু টাইপ সি ওটিজি ক্যাবল রাখা হয়েছে।
এটা আমি কিনেছি গত ফেব্রুয়ারি মাসে। তারও আসলে অনেক আগে থেকেই গ্রাফিক্স ট্যাবলেট কেনার ইচ্ছা ছিলো। খুব সুনির্দিষ্ট কোন কারণে অবশ্য না- আবার অন্যভাবে দেখলে অনেকগুলো কারণেই। রিভিউ লিখতে চেয়েছিলাম কেনার পর থেকেই। তবে লেখা তখন শুরু করেও শেষ করতে করতে তিন মাস কাটিয়ে দিলাম। তবে মজার ব্যাপারটা কী, কেনার পরপরই যে মুগ্ধতা ছিলো, তিন মাসেও তা আসলে খুব একটা পরিবর্তন হয়নি। আলহামদুলিল্লাহ, এখন পর্যন্ত এটা নিয়ে আমি খুবই সন্তুষ্ট।
আমার অনেক বন্ধুরা গ্রাফিক্স ট্যাবলেট ব্যবহার করে দেখি মূলত অনলাইনে ক্লাস নেয়ার জন্য। তবে আমি বলা যায় এটাকে সিমপ্লি মাউস-কীবোর্ডের মতই আরেকটা ইনপুট ডিভাইস হিসেবে ব্যবহার করছি। পিডিএফ পড়ার সময় অ্যানোটেট করা, মাঝেমাঝে খাতা-কলমের বদলে সাধারণ লেখালেখি, অনলাইনে ক্লাস নেয়া, ড্রইং সফটওয়্যারে হিজিবিজি দাগানো এবং কখনো সিমপ্লি মাউসের পরিবর্তে ব্যবহার- সবকিছুর জন্যই। আর সত্যি বলতে আমার মনে হয় এটা একদিক থেকে কম্পিউটিং এক্সপ্রেরিয়েন্সে একটা নতুন মাত্রা যোগ করে।
তো যেহেতু আমার খুব সুনির্দিষ্ট কোন প্রয়োজনের জায়গা ছিলো না, আমি খুঁজছিলাম আমার সামর্থ্যের মধ্যে কোন ট্যাবলেটটা নিলে দীর্ঘদিনের জন্য একটা সাস্টেইনেবল ডিল হবে। মিডল ক্লাসের জন্য সাধারণভাবেই যে চিন্তাটা চলে আসে- একদিকে বারবার তো কিনবো না, অন্যদিকে দামটাও যতটা পারা যায় কমের মধ্যে রাখা- এই দুটো মিলিয়ে সবচেয়ে কনভিনিয়েন্ট ডিল খুঁজছিলাম।
বাজারে ২.৫ হাজার টাকার আশেপাশে থেকে গ্রাফিক্স ট্যাবলেটের ডিল শুরু হয়ে থাকে। তবে সেগুলোর একটিভ এরিয়া 4″ এর আশেপাশে হয়ে থাকে- যেটা অবশ্যই 15.6″ ডিসপ্লের অনুপাতে খুবই ছোট- ড্রইং বা লেখালেখি দুটোর জন্যই অপর্যাপ্ত। 6″ একটিভ এরিয়ার কিছু ট্যাবলেট ৩-৪ হাজারের মধ্যে থাকলেও আমার দৃষ্টি ছিলো আরেকটু বড় একটিভ এরিয়ার দিকে।
বাজারে গ্রাফিক্স ট্যাবলেটের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বিশ্বস্ত ও জনপ্রিয় নাম হলো Wacom এবং অনলাইন রিভিউগুলো প্রফেশনালরাও এর প্রশংসা করেন দেখেছি। তবে Wacom এর পণ্যের দাম অনেকটা বেশি হয়ে থাকে। ৬-৭ হাজারে One by Wacom CTL-472 আছে। আমার রুমমেট এটা ব্যবহার করে। এটার পারফর্মেন্স এমনিতে সলিড, লিখতে বেশ শান্তি আছে। তবে একটিভ সার্ফেস এরিয়া 6″, শর্টকাট কী নেই- অর্থাৎ তুলনামূলক বেসিক লেভেলের। আমরা লেখার মধ্যেে কোন কোন জায়গায় CTL-472 এর সাথে তুলনা নিয়ে আসবো।
বাজেটের মধ্যে একটু বেশি চাইলে XP-Pen বা Huion এর মত ব্র্যান্ডগুলো বেশ ভালো কিছু অফার করে থাকে। আরো কিছু ব্র্যান্ড আছে- তুলনামূলক কম জনপ্রিয়। তো আমি XP-Pen এর দিকেই ফোকাস রেখেছিলাম। এবং সবশেষে XP-Pen Deco 01 V3 নিয়েছি। দাম ও কনফিগারেশনের দিক থেকে এটা যে অবস্থানে আছে, সত্যি বলতে আমার কাছে মনে হয়েছে এর থেকে ভালো ডিল পাওয়াটা বেশ কঠিন বাজেটের মধ্যে।
তো XP-Pen Deco 01 V3 এর একটিভ এরিয়া 10″×6.25″। এর স্টাইলাসের মডেল P05B, যা একটি ব্যাটারি ফ্রি স্টাইলাস- এবং এটা হাতে ধরতে বেশ চমৎকার একটা ফিল দেয়। এখানে ১৬,৩৮৪ লেভেল প্রেসার সেন্সিটিভিটি ও 60° পর্যন্ত টিল্ট সাপোর্ট আছে। আছে ৮টি শর্টকাট কী। উইন্ডোজ, ম্যাক, লিনাক্স এবং অ্যান্ড্রয়েড সমর্থন করে। এবং এর বিল্ড কোয়ালিটি, সার্ফেস টেক্সচার এবং বলা যায় ওভারঅল ফিল বেশ ভালো।
XP-Pen Deco 01 V3-এর দাম ৭০০০ টাকার মধ্যে। মজার নাকি দুঃখের বিষয় জানি না, আমি যখন কিনেছি তখন StarTech-এর অনলাইনে তখন ৩০০ টাকা ছাড় চলছিলো, ৬৭০০ টাকা। আমি অফলাইনে যেয়ে কিনেছি এবং ৬৮০০ টাকা পড়েছে। কখনো কখনো আরো বেশি ছাড়ও চলে, যেমন StarTech এর Happy Hour ডিল থাকে অনেক সময়। Ryans-এ ডিভাইসটি ৭০০০ টাকা লিস্টেড প্রাইসে এভেইলেবল আছে এবং অল্প কিছু ডিসকাউন্ট তার থেকে থাকতে পারে।
যদি আপনি আরেকটু ছোট ডিভাইস প্রিফার করেন, সেক্ষেত্রে Deco Mini 7 V2 রয়েছে ৫৭০০ টাকায়, যা সবদিকে একদমই এক, শুধু ডাইমেনশনে ছোট- একটিভ এরিয়া 7″ x 4.37″।
Table of Contents
আনবক্সিং ও এক্সেসরিজ
এখনকার সময়ে কোম্পানিগুলোর কস্ট কাটিংয়ের একটা জায়গা থাকে বক্স কনটেন্ট। যেমন অনেক স্মার্টফোনের সাথে এখন আর চার্জিং অ্যাডাপ্টর দেয়া হয় না- কেস, ইয়ারফোন বাড়তি কিছু থাকে না। কিন্তু একটা ভালো আনবক্সিং এক্সপ্রেরিয়েন্স শুরুতে যে ইমপ্রেশন তৈরি করে, তার প্রভাবটাও কিন্তু থেকে যায়। XP-Pen Deco 01 V3 এক্ষেত্রে খুব সুন্দর একটা ইমপ্রেশন তৈরি করতে পেরেছে।

বাইরের ভাইব্রেন্ট ও কালারফুল কাভার থেকে স্লাইড করলে বুক-স্টাইল মজবুত হার্ডবোর্ডে তৈরি একটা উজ্জল নীল বাক্স পাওয়া যাবে। এইটুকুর মধ্যেই একটা প্রিমিয়াম ব্যাপার আছে। এরপর তারা বাক্সের মধ্যে ড্রইং ট্যাবলেটটির সাথে P05B স্টাইলাস, কানেক্ট করার জন্য ক্যাবল তো দিয়েছেই। সাথে একটা স্টাইলাস স্ট্যান্ড, একটা ওটিজি ক্যাবল এমনকি ড্রইংয়ের একটা টু-ফিঙ্গার গ্লাভসও দিয়ে দিয়েছে। এবং সেই সাথে আছে একটা টেক্সচার্ড স্ক্রিন প্রটেক্টর এবং দশটির মত রিপ্লেসমেন্ট নিব। সব মিলিয়ে খুব কমপ্লিট একটা আনবক্সিং এক্সপ্রেরিয়েন্স। একটু বেশি পেতে তো ভালোই লাগে!
ট্যাবলেটের কথায় যাওয়ার আগে এক্সেসরিজগুলো নিয়ে আলাপ করে নিই। বক্সে থাকা স্টাইলাস স্ট্যান্ডটি মাল্টিফাংশনাল। এর নিচের অংশটি নিব এক্সট্রাক্টর হিসেবে কাজ করে। প্যাকেজের ভেতর কিছু এক্সট্রা নিব আছে, ব্যবহার করতে করতে নিব ক্ষয়ে গেলে নিব পরিবর্তন করে নেয়া যাবে। এটা খোলা যায় এবং নিবগুলোকে এর মধ্যে সাজিয়ে রাখা যায়।

তবে এর যে মূল কাজ, সেটাতে আমার কাছে স্ট্যান্ডটাকে একটু কম কার্যকর মনে হয়েছে। স্টাইলাসকে দাঁড় করানো বা শোয়ানো অবস্থায় রাখা যায়, তবে দুই অবস্থাতেই ততটা দৃঢ়ভাবে থাকে না, অনিচ্ছাকৃত ধাক্কা লাগলে পড়ে যেতে পারে।

প্রটেক্টর ফিল্মটির দুটো কাজ- প্রটেকশন দেয়া এবং সেইসাথে একটা টেক্সচার যুক্ত করা। মূল সার্ফেস ও প্রটেক্টর ফিল্মের টেক্সচার কিছুটা ভিন্ন। প্রটেক্টর ছাড়া ব্যবহার করলেও স্টাইলাস পেনের ঘষায় মূল সার্ফেসে খুব একটা স্ক্র্যাচ পড়ে না, তবে অবশ্যই প্রটেক্টর ব্যবহার করলে অনেকটা নিশ্চিন্ত বোধ হয়।
ড্রইংয়ের ক্ষেত্রে বিশেষ করে হাত ঘেমে থাকার কারণে বিঘ্ন ঘটতে পারে। টু-ফিঙ্গার গ্লাভস এই জায়গাতে সাহায্য করে, স্মুথভাবে ট্যাবলেট ব্যবহার করতে সাহায্য করে। পার্সোনালি আমি অবশ্য এটা ততটা ব্যবহার করি না।

এডাপ্টরের সাথে ওটিজি ক্যাবল ব্যবহার করে অ্যান্ড্রয়েডে বা কম্পিউটারের টাইপ সি পোর্টে ট্যাবটি কানেক্ট করা যায়। এখানে প্রাসঙ্গিকভাবে, এটা wireless না, তার দিয়ে কানেক্ট করতে হয়, যেটা কখনো কখনো একটু অসুবিধা তো বটেই।
লিনাক্স ও উইন্ডোজ এক্সপ্রেরিয়েন্স
লিনাক্স ইউজার হিসেবে প্রথমেই একটা কনসার্ন থাকে যে লিনাক্স সাপোর্ট কতটা ভালো হবে, বা কোন ঝক্কি পোহাতে হবে কিনা। তো না, আলহামদুলিল্লাহ, লিনাক্সে প্লাগ এন্ড প্লে সুন্দরভাবে কাজ করেছে। স্পেসিফিকালি বললে আমি ফিডোরা গ্নোম ব্যবহার করেছি। অন্য ডেস্কটপে তারতম্য থাকতে পারে।
Krita, GIMP, Inkscape, Xournal++, Rnote এরকম গ্রাফিক্স ট্যাবলেটের জন্য বিশেষায়িত সবগুলো সফটওয়্যারে প্রেসার সেন্সিটিভিটি, ইরেজার বাটন, প্রযোজ্য ক্ষেত্রে টিল্ট সাপোর্ট সবকিছু সুন্দরভাবে কাজ করেছে। অন্যান্য সফটওয়্যারে, যেমন ওয়েব ব্রাউজার বা ফাইল ম্যানেজার বা যেকোন সফটওয়্যারে বেসিকালি মাউসের মত ব্যবহার করা যায়।
লিনাক্সে বাই ডিফল্ট Libwacom ড্রাইভার ব্যবহার হয়ে থাকে ট্যাবলেট হ্যান্ডেলিংয়ের জন্য। নামে Wacom থাকলেও এটা বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ট্যাবলেটের সাথে কাজ করে। XP-Pen এর নিজস্ব ড্রাইভারও আছে, তাতে শর্টকাট কী রিম্যাপ, প্রেসার কার্ভ সেটআপ সহ আরো বেশি কাস্টমাইজেশন সুবিধা আছে- কিন্তু ইরেজার বাটন হ্যান্ডেলিংসহ Libwacom ড্রাইভার ব্যবহার করেই বেশি কমফোর্টেবল পারফর্মেন্স পেয়েছি। Libwacom ড্রাইভারের সাথে শর্টকাট কী সহ আরো কাস্টমাইজেশনের জন্য সম্ভবত Xsetwacom একটি কমান্ড লাইন টুল আছে- তবে আমি ব্যবহার করিনি।

Fedora সেটিংসে এর জন্য কিছু অপশন ও পেন বাটন রিম্যাপ করা যায়। ট্যাবলেটে থাকা শর্টকাট কী রিম্যাপের অপশন নেই, পেনের Button 1 সেটিংসকে ফলো করলেও Button 2 সেটিংসকে ফলো করে না। উল্লেখ্য শর্টকাট কী ও বাটনগুলো ফাংশনাল, যেমন শর্টকাট কী-গুলো Brush, Eraser টুল সিলেক্ট, আনডু, জুম ইন, জুম আউট প্রভৃতির জন্য সেট করা আছে- Button 2 ডাবল ক্লিক ও সাপোর্টেড অ্যাপে ইরেজার হিসেবে এবং সবকিছু ঠিকভাবেই কাজ করে। তবে সেটিংস থেকে এগুলো রিম্যাপের অপশন নেই- সম্ভবত Xsetwacom নামে একটি কমান্ড লাইন টুল দিয়ে রিম্যাপ করা যায়, ট্রাই করিনি।
প্রেসার সেন্সিটিভিটি, টিল্ট সাপোর্ট, ইরেজার বাটন, শর্টকাট কী সবকিছু লিনাক্স ও উইন্ডোজে সুন্দরভাবে কাজ করলেও পার্থক্য হবে ড্রাইভার ও সফটওয়্যার এক্সপ্রেরিয়েন্সে। উইন্ডোজে গ্রাফিক্স ট্যাবলেট হ্যান্ডেলের জন্য আছে Windows Ink ড্রাইভার। উইন্ডোজ কিছুটা স্মার্টলি ইনপুটগুলো হ্যান্ডেল করার চেষ্টা করে। উইন্ডোজে একটা ফিচার বিশেষভাবে আকর্ষণীয়, সমর্থিত সফটওয়্যারে কোন টেক্সট বক্সে কার্সর রেখে গ্রাফিক্স ট্যাবলেটে কিছু লিখলে তা টেক্সটে কনভার্ট করে নিতে পারে- বিশেষ করে মাইক্রোসফটের সফটওয়্যারগুলোতে- ফলে কীবোর্ডে সুইচ করার প্রয়োজন কম হয়। আবার বিভিন্ন ক্ষেত্রে ট্যাপ এন্ড ড্র্যাগ করে স্ক্রলিং করা যায়। তবে এই বিহেভিয়রগুলো বেশ ইনকনসিস্টেন্ট। যেমন কোন সফটওয়্যারে অ্যান্ড্রয়েডের মত ড্র্যাগ করে স্ক্রল, ট্যাপ এন্ড হোল্ড করে সিলেক্ট করা যায়- কোন সফটওয়্যারে কখন স্ক্রল হয় কখন সিলেক্ট হয় এখনো বুঝে উঠতে পারিনি।
ব্যবহারেরর এক্সপ্রেরিয়েন্স
XP-Pen Deco 01 V3-এর কোন ডিসপ্লে নেই। অর্থাৎ আপনার হাতে ধরা স্টাইলাস থাকবে ট্যাবলেটে এবং দৃষ্টি রাখতে হবে আপনার কম্পিউটারের ডিসপ্লের দিকে- এখানে একটা হাত ও চোখের সমন্বয়ের প্রয়োজন হয়। এটা চর্চার সাথে মোটামুটি আয়ত্বে চলে আসে। তবে আমার সত্যি বলতে ৩ মাস ব্যবহারের পরও এখনো সোজা লেখার জন্য প্রত্যেকবার কিছুটা এডজাস্ট করে নিতে হয়।
10″ x 6.25″ একটিভ এরিয়া আমার কাছে বেশ 15.6″ ডিসপ্লের জন্য বেশ মানানসই একটা অবস্থানে আছে বলেই মনে হয়েছে। 6″ ট্যাবলেটগুলো থেকে হ্যান্ড মুভমেন্ট একটু বেশি তো অবশ্যই লাগে, তবে লেখালেখি বা ড্রইংয়ের জন্য এই সাইজটা বেশ সুবিধাজনক।
ট্যাবলেটটির সাথে একটা স্ক্রিন প্রটেক্টর ফিল্ম আছে, যেটার টেক্সচার কিছুটা ট্রেসিং পেপারের মত। তো প্রটেক্টর ফিল্মটি ব্যবহার করছেন কিনা এটার ওপর টেক্সচারে কিছুটা ভিন্নতা আসবে। ইন এনি কেস, এটা খাতায় লেখার মত ন্যাচারাল মনে হয়- সেটা বলবো না আমি, তবে বেশ সুন্দর লেখা যায়।

ড্রইংয়ের কথাতে আসলে আমার মত যদি আপনি ড্রইং না পারেন- তবে এটা আপনাকে আর্টিস্ট বানিয়ে দিতে পারবে না। অন্যদিকে যদি আপনি ড্রইং পারেন, সেক্ষেত্রে এটা দিয়ে আঁকার এক্সপ্রেরিয়েন্স ভালোই হবে বলে আশা করি। Krita-তে আমি কিছু হিজিবিজি ধরণের দাগিয়ে দেখেছি।
যেহেতু Wacom One CTL-472 আমার কিছুটা ব্যবহার করা হয়েছে, আমি যদি একটা সংক্ষিপ্ত কম্পারেটিভ আইডিয়া দেয়ার চেষ্টা করি, লেখালেখির জন্য আমার CTL-472 এর সার্ফেস টেক্সচার এবং ড্রইংয়ের জন্য Deco 01 এর সার্ফেস টেক্সচার বেশি উপযুক্ত মনে হয়েছে। তবে 10″ এরিয়া হওয়াতে লেখালেখিতেও আমি Deco 01-এ বেশি স্বচ্ছন্দ্যবোধ করব।
অ্যান্ড্রয়েড সাপোর্ট
Deco 01 V3 অ্যান্ড্রয়েড ১০ ও পরবর্তী ভার্সনগুলো সাপোর্ট করে। অ্যান্ড্রয়েডের সাথে কানেক্ট করার জন্য বক্সে একটি টাইপ সি ওটিজি ক্যাবল দেয়া আছে। একটিভ এরিয়ার কোন অংশটুকু স্ক্রিনে ম্যাপ করা হবে তা XP-Pen এর ওয়েবসাইট থেকে XPPen Tools অ্যাপ ডাউনলোড ও ইন্সটল করে তার মাধ্যমে সেট করে নেয়া যায়।


স্টাইলাস
Deco 01 V3 এর বক্সে দেয়া স্টাইলাসটির মডেল P05B। এটার ওজন বেশ হালকা, তবে সামনের দিকে রাবার গ্রিপ থাকায় হাতে ধরতে বা লেখালেখি করতে বেশ কমফোর্টেবল লাগে। প্রাসঙ্গিকভাবে আরেকটু কম দামে, যেমন ধরা যাক ৫৭০০ টাকা বাজেটের Deco Fun L মডেলটির কথা যদি বলি, সেটিও 10″ একটিভ এরিয়ার সাথে আসলেও স্টাইলাস আছে P01, যেটা এতটা কমফোর্টেবল নয়।

এটা একটা ব্যাটারী ফ্রি স্টাইলাস, যেটা EMR (Electomagnetic Resonance) এর মাধ্যমে কাজ করে। আমার অভিজ্ঞতা ও অনলাইন রিভিউগুলো অনুযায়ী এটার স্ট্যাবিলিটি বেশ ভালো। EMR স্টাইলাসে মেকানিকাল ওবলের একটা কন্সিডারেশন থাকে- অর্থাৎ সোজা লাইন আঁকলেও যান্ত্রিক কারণে কিছুটা ঢেউ খেলানো লাইন তৈরি হয়- এখানে তা একদমই মিনিমাল।

XP-Pen প্রথম ব্র্যান্ড যারা 16,384 প্রেসার লেভেলের স্টাইলাসকে ইন্ট্রোডিউস করেছে। এর মানে আপনি কতটুকু প্রেসার দিচ্ছেন স্টাইলাসে তার ওপর 16,384 টি আলাদা লেভেল এটা ডিটেক্ট করতে পারে। তো বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বর্তমানে 8,192 প্রেসার লেভেল দেখা যায়। Wacom One CTL-472 এর ক্ষেত্রে 2048। এই দিক থেকে 16,384 আকর্ষণীয় শোনায়, তবে 2048 থেকে এটাকে আলাদা করতে পারলেও 8,192 থেকে কার্যত এটা কোন এডভান্টেজ দিবে না, কারণ মানুষ আসলে ততটা সূক্ষ্মভাবে কন্ট্রোল করতে পারে না।
যাইহোক, এই স্টাইলাসটি নিয়ে একটা সমালোচনা অনলাইনে দেখেছি, ইনিশিয়াল একটিভেশন ফোর্স (IAF)। এটা বোঝায় স্টাইলাস ইনপুট রেজিস্টার করতে সর্বনিম্ন কতটুকু প্রেসার দিতে হবে। তো XP-Pen অফিসিয়ালি স্পেসিফাই না করলেও অনলাইনে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী এটা 20 g-30 g এর মধ্যে হয়ে থাকবে- যার মানে হলো খুব আলতো করে লিখতে গেলে এটা ডিটেক্ট না-ও করতে পারে, যেটা সূক্ষ্ম ড্রইং করতে চাইলে অসুবিধে তৈরি করতে পারে। তবে এটা এমন একটা পর্যায়ে, যেটা আমার কোন সমস্যা মোটেই করেনি, বা নন-প্রোফেশনালদের জন্য ধরার মত মনে হয়নি।
প্রসঙ্গত, XP-Pen এর মধ্যে আরেকটু দামি, যেমন ৯৬০০ টাকার Deco L বা হায়ার মডেলগুলোতে তারা X3 সিরিজের স্টাইলাস প্রদান করে, যেগুলোর IAF ৩ গ্রাম। Wacom এর ডিভাইসগুলোতে IAF 1 g-10 g এর মধ্যে হয়ে থাকে।
স্পেসিফিকেশন

সবশেষে, আমার এক্সপ্রেরিয়েন্সের দিক থেকে XP-Pen Deco 01 V3 রেকমেন্ড করা আমার জন্য বেশ সহজ। ড্রইং বা লেখালেখি বা অ্যানোটেশন- যেকোন ধরণের কাজের জন্যই এটা বেশ ভালো।