21 views

Walton Primo N5: উন্নতি দরকার ছিলো…
N সিরিজের বিশেষত্ব থাকে বড় ডিসপ্লে আর ব্যাটারীতে। সিরিজের নতুন ফোন Walton Primo N5-এর বেলাতেও তা ঘটেছে। বেশকিছু দিকে আমার কাছে Primo N5 বেশ ভালোই লেগেছে, তবে সব দিক মিলিয়ে এতে অসন্তুষ্টি প্রকাশের অনেক জায়গা আছে, বিশেষ করে যখন সাথে থাকছে ১২,৪৯৯ টাকার প্রাইসট্যাগ। অবশ্য রিসেন্টলি ওয়ালটনের অন্য কিছু ফোনের প্রাইসিংয়ের কথা চিন্তা করলে এটা তুলনামূলক জাস্টিফায়েড বলা যায়।
এর Scarlet Red কালারটা আমার মারাত্মক লাগলো। আরো তিনটি কালার আছে। ত্রিপল ক্যামেরা মডিউল অনেকটা সিম্পল এবং সুন্দর। ডিজাইনের একটা ব্যাপার অবশ্য ভালো লাগেনাই, ব্র্যান্ডিংয়ের পর ব্যাপক জায়গা নিয়ে “Model: Primo N5 Walton Digi-Tech Industries Ltd. Made in Bangladesh” এত্তগুলো কথা না লিখলেও পারতো।
ডিসপ্লের কথা বললে 6.82″ হিউজ ডিসপ্লে দিয়ে N5 এসেছে। বাজেটের আর সবার মত এটি 1640*720 HD+ রেজ্যুলেশনের একটি IPS-INCELL প্যানেল। থাকছে একটি ভি-শেপ নচ। চিন আর বেজেলের অ্যামাউন্ট ঠিকঠাক, এর ডাইমেনশন 172.8 mm x 78.5 mm x 9.65 mm।
তো, থিকনেস 9.65 mm আমার একটু বেশি মনে হয়েছে। যদিও এখানে আছে 5500 mAh এর একটি পাওয়ার হাউজ, আমরা 6000 mAh ব্যাটারীসহ কিছু ডিভাইস কিন্তু এর চেয়ে কম থিকনেস নিয়ে আসতে দেখেছি। তবে এই থিকনেস যে খুব বেশি, তা না, মানা যায়। কিন্তু ওজনের দিক থেকে 222g আমি অনেকটাই বেশি বলবো, খুব কম ফোনই এত ওজন দেখেছি।
বড় ব্যাটারী দিয়ে বেশিরভাগ ইউজারের জন্য দুদিন ভালোভাবেই পার করে দেয়া যাবে বলে বিশ্বাস করি, তবে চার্জ হতে কিন্তু ৪ ঘন্টার বেশি লাগতে পারে, কারণ এতে কোন ফাস্ট চার্জিং সমর্থন থাকছে না। এছাড়া চার্জিং পোর্টটি মাইক্রো ইউএসবি, টাইপ সি নয়।
ক্যামেরাতে N5 কিন্তু মন্দ দেয়নি। 13MP f/2.0 একটি সনি সেন্সর রয়েছে এর প্রাইমারী ক্যামেরা হিসেবে, সাথে 5MP আল্ট্রাওয়াইড ও 2MP ডেপথ। সেলফি ক্যামেরাতেও তারা 13MP সেন্সর দিয়েছে, যার অ্যাপার্চার f/2.2, যা PDAF সমর্থিত। তো আল্ট্রাওয়াইড সেন্সর আর ভালো সেলফি ক্যামেরা এর একটি আকর্ষণ হতে পারে।
তবে সিরিজের আগের ফোন N4 থেকে কিন্তু তারা স্পেকের দিকে ডাউনগ্রেড করেছে ক্যামেরাতে, কেননা তাতে 16MP f/1.8 প্রাইমারী ক্যামেরার সাথে 8MP আল্ট্রাওয়াইড ক্যামেরা ছিলো। আবার সেলফি ক্যামেরা N5-এর মতই 13MP যুক্ত ছিলো।
হার্ডওয়্যারের প্রশ্ন আসলে এখানে থাকছে Mediatek Helio G25, যা আসলে নতুন মোড়কে Helio P22। দুটো চিপসেট সম্পূর্ণ এক, একই সিপিইউ কোর, একই জিপিইউ কোর, একইরকম স্পেক, জাস্ট নামের সাথে G আর HyperEngine Technology টার্মগুলো যুক্ত করে ব্যাপারটাকে আকর্ষণীয় করে তোলার চেষ্টা করা হয়েছে। পারফর্মেন্স এই ফোনের মূল প্রায়োরিটি না স্পষ্টতই, তারপরও দাম হিসেবে G25 ভালো দেখাচ্ছে না। অন্তত Helio G35 দিলে মানানসই হত বোধ করি। বাট ওকে, G25, G35-এর তফাৎ তেমন বেশি না।
একটি ভ্যারিয়েন্টেই Primo N5 এসেছে, ৪ জিবি র্যাম আর ৬৪ জিবি স্টোরেজ। ত্রিপল কার্ড স্লটে দুটি সিম কার্ড স্লটের সাথে একটি ডেডিকেটেড এসডি কার্ড স্লট থাকছে, যা দিয়ে 256gb পর্যন্ত স্টোরেজ বাড়িয়ে নিতে পারেন। তো এর হার্ডওয়্যার সাধারণ ইউসেজ, রেগুলার মাল্টিটাস্কিংয়ের জন্য যথেষ্ট।
Walton Primo N5-এর একটা সুন্দর ব্যাপার হলো এখানে ওয়ালটন সম্ভবত প্রথমবার লেটেস্ট Android 11 যুক্ত করেছে। বিল্ট-ইন স্ক্রিন রেকর্ডার, স্মার্ট মিডিয়া কনট্রোল, কনভার্সন নোটিফিকেশন সহ লেটেস্ট অ্যান্ড্রয়েড ভার্সনের নতুন ফিচারগুলো তাই থাকছে এখানে।
কিন্তু সেন্সর সেকশনে এসে এখানে যে হালত, তা আমি ১০ হাজারের নিচের ফোনে মানতে পারি, সাড়ে ১২ হাজারের ফোনে একদমই না। থাকছে না কম্পাস সেন্সর, থাকছে না জাইরোস্কোপ সেন্সর। বেশিরভাগ কনজ্যুমার হয়ত ফোন কেনার সময় সেন্সর সেকশনটা গুরুত্ব দেয় না, কিন্তু ফোন কেনার কিছুদিন পর যখন দেখবে এরকম দামি একটা ফোনে কম্পাস ব্যবহার করা যায় না, বা জাইরো সমর্থন নেই, তখন ব্যাপারটা তার কিন্তু ভালো লাগার কথা নয়। এমনকি N4-এও জাইরো উপস্থিত ছিলো, যা তারা N5-এ বাদ দিয়েছে।
১২,৪৯৯ টাকা প্রাইস পয়েন্টে এই ফোনের সেলিং পয়েন্টগুলো হলো সুন্দর ডিজাইন, বড় ডিসপ্লে, বড় ব্যাটারী, ভালো ক্যামেরা সেটআপ, Android 11 এই ব্যাপারগুলো। কিন্তু G25 চিপসেট, মাইক্রোইউএসবি পোর্ট, সেন্সরের ঘাটতি ব্যাপারগুলো একে কম্পিটিশন থেকে কিছুটা পিছিয়ে দেয়। এছাড়া একে আরেকটু লাইটওয়েট রাখা দরকার ছিলো, সাথে ফাস্ট চার্জিং থাকলে বেশ হত।
যাই হোক, ওয়ালটন তাদের ফোনগুলোতে কিন্তু প্রায়ই বিভিন্নরকম ডিসকাউন্ট দেয় এবং আগামীকাল শুরু হতে যাওয়া অনলাইনে প্রি-অর্ডারের ক্ষেত্রে ২০০০ টাকা ডিসকাউন্টে ফোনটি পেতে পারেন। ১০,৪৯৯ টাকার কথা চিন্তা করলে এটা কিন্তু বেশ চমৎকার। তবে এর আসল দাম হিসেবে হয়ত কারো কারো জন্য পছন্দসই হতে পারে, কিন্তু সামগ্রিকভাবে আমি বলবো আরো উন্নতি দরকার ছিলো।