কোভিড-১৯ প্রকোপে মোটামুটি সবজায়গাতেই কমবেশি ছন্দপতন আমরা দেখেছি। তবে ওয়ালটনের ওপরে প্রভাবটা মনে হয় একটু বেশিই ছিলো। এনাউন্সমেন্টের পুরো ৬ মাস পরে গত জুলাই মাসে তারা Walton Primo S7 Pro রিলিজ করে। তবে সেটি অফলাইন মার্কেটে নয়, কিছু অফারসহ ইভ্যালিতে। যতই অফার থাক, অনলাইন শপিংয়ের তুলনায় অফলাইনে কেনাকাটা করতেই এখনো অধিকাংশ মানুষ স্বচ্ছন্দ্যবোধ করেন, বিশেষ করে ইভ্যালি নিয়ে ডেলিভারি বিলম্বের বিষয়টি নিয়ে অভিযোগ আছে।
তারপর আরো মাসদুয়েক চলে গেছে। ফোনটি ইভ্যালি এক্সক্লুসিভ ছিলো এবং শোনা যাচ্ছিলো অফলাইন মার্কেটে এটি আসবে না, তবে সম্ভবত আশানুরূপ সেল না হওয়ায় এখন অফলাইনে রিলিজ হয়েছে Walton Primo S7 Pro। দাম নির্ধারিত হয়েছে মিঃ ম্যাঙ্গো কম ২০০০০ টাকা। তো, এই দামে ডিভাইসটি কেমন হলো এবং অ্যানাউন্সমেন্টের ৮ মাস পরেও ফোনটি কতটা আকর্ষণ ধরে রেখেছে সেটি নিয়ে এখন ডিসকাস করতে চাই।
২০১৯ সালজুড়ে ওয়ালটন এন্ট্রি লেভেলে H8 Turbo, H8 Pro সহ চমৎকার কিছু ফোন এবং সবশেষ RX7 Mini-র মত দুর্দান্ত ডিভাইস এনে পুরো বিস্ফোরণ লাগিয়ে দিয়েছিলো বাজারে। কম্পিটিশনের জন্য আশেপাশে কোন ব্র্যান্ডই ছিলো না। এতটা এগ্রেসিভ ছিলো যে, জানুয়ারী মাসে প্রথম এটাকে এনাউন্স করার সময় ভাবছিলাম না ১৫ হাজার দাম দিয়ে বসে। তা না হলেও ১৭ বা ১৮ হাজারের ওপরে যাবে না এমনটাই আমার আশা ছিলো। কিন্তু রিলিজের পর দাম দেখে বেশ শকাহত হতে হয়েছে। ইভ্যালিতে এর দাম ধরা হয়েছিলো ২০,৫০০ টাকা (সাথে বিশেষ শর্তে ১০০% ক্যাশব্যাক অফার)। অফলাইন মার্কেটে রিলিজ হলে দাম কমবে মনে করেছিলাম। কিন্তু না, মাত্র ৫০০ টাকা কমেছে।
প্রথমে ফোনটি সম্পর্কে সংক্ষেপে বলে নিই। ফোনটি প্লাস্টিক বিল্ড, ব্যাকপার্ট PPME ম্যাটেরিয়েলে তৈরি, যেটা প্লাস্টিক হলেও দেখতে গ্লাসের মত এবং আলোর রিফ্লেকশনে রংয়ের খেলা চলে। পাওয়া যাচ্ছে ব্লু ও ব্লাক কালার ভ্যারিয়েন্টে। বিশেষ করে ব্ল্যাক ভ্যারিয়েন্টের গোল্ড কালারের বর্ডারগুলো একে অন্যরকম সৌন্দর্য্য দিয়েছে। প্রায় যে কারো ডিজাইন পছন্দ হবে বলেই আমার বিশ্বাস। সামনের দিকে দেখলেও ফোনটি বেশ চমৎকার। ডিসপ্লে সেকশনে দেওয়া হয়েছে 6.3″ FHD+ IPS প্যানেল। আর এর বেজেল ও চিন এরিয়া একদমই ন্যারো। তাই দেখতে খুব সুন্দর দেখায়।
কোন দেশীয় ব্র্যান্ডের ফোন হিসেবে প্রথম 48MP ক্যামেরা ব্যবহার করা হয়েছে এখানে, তবে এটা নিয়ে মহাকাব্য করার কিছু নেই, যেহেতু দামটাও সেরকম। সাথে থাকছে একটি 8MP এর আল্ট্রাওয়াইড, অপরটি 2MP এর ডেপথ সেন্সর। এর ক্যামেরাতে সফটওয়্যার এলগরিদমের সাহায্যে 108MP আলট্রা পিক্সেল মোডে ছবি তোলা যাবে। নচে থাকছে 16MP এর একটি সেলফি ক্যামেরা।
দেওয়া হয়েছে 6GB র্যাম আর 128GB ইন্টারনাল স্টোরেজ। এক্সপেন্ড করা যাবে 256GB পর্যন্ত। চিপসেট সেকশনে MediaTek Helio P70 চিপসেট। দুই বছর আগের হলেও এই চিপসেটটি আমার মতে এখনও খারাপ না। Helio G70, G80, G85 এগুলো থেকে ওভারঅল স্লাইটলি পিছিয়ে থাকতে পারে। তবে G90t থেকে ভালোভাবেই পিছিয়ে আছে।
P70-তে আছে চারটি হাই পারফর্মেন্স Cortex-A73 ও চারটি ব্যাটারী সেভিং Cortex-A53 চিপ। ক্লকস্পিড সর্বোচ্চ 2.1 GHz। সাথে GPU হিসেবে Mali-G72 MP3@900MHz। ডেইলি টাস্ক থেকে মোটামুটি হেভি টাস্কগুলো সামলানোর জন্য এই চিপসেটটি ক্যাপাবল। তবে G80 বা এর চেয়ে উন্নত কোনটি থাকলে সময়ের সাথে মানানসই হত বলে আমি মনে করি।
এর ব্যাটারী রয়েছে 3950 mAh। ফোনটি 18W ফাস্ট চার্জিং সমর্থন করে এবং আরো রয়েছে ওয়ারলেস চার্জিং সুবিধা, যা 10W সমর্থিত। দেওয়া হয়েছে USB Type C পোর্ট। ফাস্ট চার্জিংয়ের ব্যাপারটি ভালো, ওয়ারলেস চার্জিং এই দামে দিয়েছে, এগুলো বেশ ভালো বিষয়। তবে 3950 mAh এখন বরং একটু কমই বলা চলে। 5000 mAh, 6000 mAh এখন কিন্তু সাধারণ বিষয় হয়ে উঠছে।
সফটওয়্যার সেকশনে ফোনটিতে ব্যাকডেটেড হয়ে যাওয়ার বিষয়টি তীব্রভাবে চোখে পড়ে, কেননা এখন যখন Android 11 আসি আসি করছে, তখন তারা দিয়েছে Android 9.0 Pie। এই সময়ে এসে নতুন একটি ডিভাইসে অবশ্যই অন্তত Android 10 কাঙ্ক্ষিত থাকে। এটা আমার মতে ফোনটি না কেনার সবচেয়ে বড় কারণ হতে পারে। ওয়ালটন ছোটখাট ফিক্স বাদে আপডেট সচারচর দেয় না। তবে এই ফোনটি যেহেতু মার্কেটে আসতে খুব বড় একটা সময় দেরি হয়েছে, এখানে Android 10-এ আপগ্রেড করা খুব প্রয়োজন ছিলো, যেটা তারা করেনি।
এখন সামারাইজ করলে ফোনটির কিছু দিক অবশ্যই আকর্ষণীয়। যেমন- ডিজাইন, ওয়ারলেস চার্জিং এই বিষয়গুলো। তবে ৮ মাস স্মার্টফোন ইন্ডাস্ট্রির জন্য বড় একটা সময়। জানুয়ারী মাসে Helio P70, 48MP ক্যামেরা, 18W চার্জিং যতটা আকর্ষণীয় ছিলো এখন কিন্তু সেটা নেই। 3950 mAh তখন বড় ব্যাটারীর মধ্যে গণ্য হলেও এখন এটাকে কম মনে হয়। আবার Android 9.0 এই সময়ে এসে…
বিশেষ করে ২১ হাজারে কিন্তু Samsung Galaxy M21 এর 6/128 ভার্সন এবং 4/64 ভার্সন ১৯ হাজার টাকায় পাওয়া যাচ্ছে। সেটির ডিজাইন এরকম আকর্ষণীয় নয়, ওয়ারলেস চার্জিং সমর্থন নেই, তবে আছে Super Amoled ডিসপ্লে, 6000 mAh এর হিউজ ব্যাটারী, Exynos 9611 চিপসেট, Android 10, One UI 2.0 আর সবচেয়ে বড় কথা স্যামসাংয়ের ব্র্যান্ড ভ্যালু!
তো M21 রেখে Walton Primo S7 Pro নেওয়ার জন্য যুক্তি খুঁজে পাওয়া কঠিন। সব মিলিয়ে ফোনটি ২০ হাজারে আমার খুব ভালো অপশন মনে হয়নি। তবে, ওয়ালটন যদি এখানে Android 10 আপডেট দেয়, এবং সাথে দাম ১৮০০০ এ নিয়ে আসে, সেক্ষেত্রে এটি ভালো ডিল হতে পারে। ইতিহাস বলছে Android 10 আপডেট আশা করার ঠিক হবে না, তবে দাম সামনে কিছুটা কমে যেতেও পারে, দেখা যাক!