শীতের প্রকোপটা শুরুতে এবার একটু কমই ছিলো, ভালোই ভালোই শীতটা কেটে যাচ্ছে ভেবে যখন পুলকিত হচ্ছিলাম, তখনই আবার এত শীত পড়ছে যে ছোটন কাকুর কথা মনে করিয়ে দিচ্ছে। ঠিক এই মুহুর্তে, আমি যখন লিখছি, তখন বগুড়ায় তাপমাত্রা দেখছি ১৫°C, আর এই তাপমাত্রায় কয়েক স্তরের সোয়েটার-হুডি-গ্লাভস-মোজা-মাফলার এমনকি নাক রক্ষার জন্য ডাবল মাস্ক পড়েও তীব্র শীঈইত বোধ করছি।

সে যাই হোক, শীত হলো আসলে তাপের অনুপস্থিতি। শীতের একটা সীমা আছে, যার চেয়ে বেশি শীত হওয়া সম্ভব না। অর্থাৎ, কোথাও যদি তাপ একদমই না থাকে, সেখানে যে তাপমাত্রা হবে, তা হলো পরম শূন্য তাপমাত্রা, যা কেলভিন স্কেলে ০, সেলসিয়াস স্কেলে -২৭৩ ডিগ্রি। আমাদের মহাবিশ্বে অবশ্যি এরকম পরম শূন্য তাপমাত্রার স্থান এখনো পাওয়া যায়নি, তবে সর্বনিম্ন যে তাপমাত্রার স্থান এখন পর্যন্ত পাওয়া গেছে, তার তাপমাত্রা এর থেকে মাত্র ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি।

বুমেরাং নীহারিকা, পৃথিবী থেকে যার দূরত্ব ৫০০০ আলোকবর্ষ, এখানেই রেকর্ড হয়েছে এই তাপমাত্রা, -২৭২°C। নীহারিকা মহাকাশে ছড়িয়ে থাকা মেঘের মত, যেখানে ধূলিকণা, হাইড্রোজেন গ্যাস ও প্লাজমা বিরাজ করে। হাবল টেলিস্কোপের চোখে এর অসাধারণ ছবি আমরা পেয়েছি, যা সত্যি অনিন্দ্যসুন্দর।

১৯৯৮ সালে হাবল টেলিস্কোপে তোলা বুমেরাং নীহারিকা, কপিরাইট: European Space Agency, NASA

বুমেরাং নীহারিকা দেখতে যতটা না বুমেরাংয়ের মত, তার চেয়ে বেশি টাই বন্ধনীর (tie bow) মত। তবে ১৯৯৮ সালে হাবল টেলিস্কোপের ছবি তোলার আগে, ১৯৮০ সালে যখন অস্ট্রেলিয়ার একটি স্থলভিত্তিক টেলিস্কোপে কেইথ টেইলর ও মার্ক স্ক্যারট যখন এর আবিষ্কার করেন, তখন তারা এত পরিষ্কার ছবি দেখতে পাননি, এর লোবদুটোর মাঝে খানিকটা অপ্রতিসাম্যতা দৃশ্যমান হওয়ায় তারা একে বুমেরাংয়ের মত বাঁকা ধরে নেন।

অবশ্য এর তাপমাত্রার পরিমাপ করা হয় ১৯৯৫ সালে, চিলিতে অবস্থিত ১৫ মিটার সুইডিশ ESO সাবমিলিমিটার টেলিস্কোপ ব্যবহার করে জ্যোতির্বিদ সাহাই ও নাইম্যান এর তাপমাত্রা প্রকাশ করেন, যা একে আমাদের জানা সর্বনিম্ন তাপমাত্রার স্থান হিসেবে শনাক্ত করে। এমনকি এটা বিগ ব্যাঙের সময়ের কসমিক মাইক্রোওয়েভ ব্যাকগ্রাউন্ডের তাপমাত্রা, ~2.725K, এর থেকেও কম।

সম্ভবত এখানকার কেন্দ্রীয় মৃতপ্রায় নক্ষত্র থেকে ঘন্টায় ৫ লাখ কিলোমিটারের তীব্র বেগে ধাবিত অত্যন্ত শীতল গ্যাস থেকে এই নীহারিকার সৃষ্টি হয়েছে। ১৫০০ বছর ধরে নক্ষত্রটি সৌরভরের এক-সহস্রাংশ পরিমাণ হারাচ্ছে, যা অনুরূপ অন্যকিছুর ১০ থেকে ১০০ গুণ বেশি। একারণে নীহারিকাটি অত্যন্ত দ্রুত সম্প্রসারণ হচ্ছে, যা একে বিশ্বের শীতলতম স্থানে পরিণত করেছে।

সোর্স

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *