আসসালামু আলাইকুম। আমি যখন প্রথমদিকে, অর্থাৎ অষ্টম বা নবম শ্রেণিতে রসায়ন আর পদার্থবিজ্ঞানের ব্যাপারগুলোর সাথে প্রাথমিকভাবে পরিচিত হই, তখন আমার জন্য একটু কনফিউজিং ছিলো, এদের মধ্যে মৌলিক পার্থক্যটা আসলে কোথায়। আর আমার বিশ্বাস এটা আরো অনেকের বেলাতেই হয়েছে। এটা নিয়ে একটা সহজ ধারণা দেয়ার চেষ্টা করি।

বিজ্ঞান হলো পর্যবেক্ষণ ও পরীক্ষণের ভিত্তিতে জ্ঞানার্জনের নিয়মতান্ত্রিক প্রক্রিয়া। জগতের বিস্তৃত বিষয়ের আলোচনাকে সুশৃঙ্খল ও বিষয়ভিত্তিক রাখার জন্য বিজ্ঞান বিভিন্ন শাখা এবং গবেষণার অগ্রগতির সাথে আরো উপশাখায় বিন্যস্ত হতে থাকে। তবে এই বিন্যাস দুটো শাখার মধ্যে সম্পূর্ণ সূক্ষ্মভাবে পৃথক করে দাগ কেটে দেয়, এমন না। একই বিষয় একাধিক শাখায় আলোচ্য হতে পারে, এবং শাখাগুলোর পরস্পর নির্ভরশীলতা রয়েছে।

বিজ্ঞানকে আমরা প্রধানত তিনটি ভাগে ভাগ করি, যেমন প্রাকৃতিক বিজ্ঞান, সামাজিক বিজ্ঞান ও সাধারণ বিজ্ঞান। উইকিপিডিয়াতে এ নিয়ে আরো জানা যাবে। প্রাকৃতিক বিজ্ঞান কাজ করে প্রাকৃতিক বিভিন্ন ঘটনা নিয়ে।

পদার্থবিজ্ঞান আর রসায়ন প্রাকৃতিক বিজ্ঞানের অন্তর্ভুক্ত এবং উভয়টি পদার্থ সংক্রান্ত আলোচনা করে। কিন্তু পদার্থের মধ্যেই বিষয়বস্তুতে ভিন্নতা আছে পদার্থবিজ্ঞান আর রসায়নে। পদার্থবিজ্ঞানের সংজ্ঞা এভাবে দেয়া যায়, বিজ্ঞানের যে শাখায় পদার্থ ও শক্তি এবং এদের অন্তঃক্রিয়া নিয়ে আলোচনা করা হয়, সেটা পদার্থবিজ্ঞান। আর রসায়ন হলো বিজ্ঞানের যে শাখায় আমরা পদার্থের গঠন, ধর্ম এবং পদার্থের পরিবর্তন নিয়ে আলোচনা করি।

আমরা যদি আলোচ্য বিষয়গুলো দেখি, পদার্থবিজ্ঞানের অন্তর্ভুক্ত হলো পদার্থের আচরণ, গতি, বল, শক্তি এবং বল ও শক্তির সাথে পদার্থের অন্তঃক্রিয়া। পদার্থের আচরণের মধ্যে আছে আয়তন, বল প্রয়োগে বাঁধাদানের ক্ষমতা, আকর্ষণ (মহাকর্ষ), স্থিতিস্থাপকতা, সান্দ্রতা, প্লবতা প্রভৃতি। আবার রসায়নের মধ্যে পদার্থের উপাদান, কাঠামো, ধর্ম (ধাতব ধর্ম, অম্লত্ব, পারমাণবিক ব্যাসার্ধ, তড়িৎ ঋণাত্মকতা প্রভৃতি), পারস্পরিক ক্রিয়া বিক্রিয়া নিয়ে আলোচনা করা হয়।

একটা উদাহরণ দিই, একটা বাস চলছে। পদার্থবিজ্ঞানের দৃষ্টিতে আমি হয়ত দেখবো বাসটার ভর, গতি, প্রযুক্ত বল, বাঁধাদানকারী বলের প্রভাব, শক্তির পরিবর্তন তথা তাপ শক্তি থেকে যান্ত্রিক শক্তির উৎপাদন, ইঞ্জিনের কর্মদক্ষতা প্রভৃতি। আবার রসায়নের বেলায় দেখা হবে বাসটা কী দিয়ে তৈরি, উপাদানে অণু-পরমাণুগুলোর কাঠামো, দহন বিক্রিয়াতে তাপশক্তি উৎপাদন প্রভৃতি।

উদ্দেশ্যের দিক থেকেও পদার্থবিজ্ঞান আর রসায়নের মিল আর পার্থক্য দেখা যায়। মানুষ স্বভাবকৌতুহলী, প্রকৃতির ঘটনাগুলো মানুষকে কৌতুহলী করে। প্রকৃতির রহস্যগুলোর অনুসন্ধান আর নিয়মগুলো জানা পদার্থবিজ্ঞানের অন্যতম উদ্দেশ্য। রসায়নে অন্যদিকে মৌলগুলোর ধর্ম ও বৈশিষ্ট্যগুলো উদঘাটনের চেষ্টা করা হয়। এই অর্জিত জ্ঞানগুলো যে শুধু আমাদের কৌতুহলের নিবারণ করে, তা কিন্তু নয়, বরং এই জ্ঞানগুলোর প্রয়োগে প্রযুক্তির বিকাশ রসায়ন আর পদার্থবিজ্ঞানের সাধারণ একটি উদ্দেশ্য।

অর্থাৎ, পার্থবিজ্ঞান আর রসায়ন দুটোতেই পদার্থের আলোচনা হলেও আলোচনা ও উদ্দেশ্যের মধ্যে লক্ষ্যণীয় পার্থক্য আছে। তবে আবারও, এই পার্থক্যকরণ পদার্থবিজ্ঞান আর রসায়নকে সম্পূর্ণরূপে পৃথক করে দেয় না, এবং তার প্রয়োজনও নেই। অনেক বিষয়- যেমন পদার্থের গঠন, মলিকিউলার কোয়ান্টাম ফিজিক্স, তাপগতিবিদ্যাসহ অনেক আলোচনা পদার্থবিজ্ঞান ও রসায়নে সাধারণভাবে দেখা যায়।

7 Comments

  1. অসাধারণ। তবে আরও বেশি শব্দ ব্যবহার করে বিস্তারিত লেখার অভ্যাস করা দরকার।

  2. আপনি বললেন যে পদার্থবিজ্ঞানে পদার্থের বাহ্যিক বিষয় নিয়ে আর রসায়নে ভিতরগত বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়।কিন্তু দেখা যাচ্ছে যে,চিরায়ত পদার্থবিদ্যার একটি শাখা “বিদ্যুৎ”-এ এবং আধুনিক পদার্থবিজ্ঞানেও পদার্থের ভিতরগত বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয় বরং বলা যায় আধুনিক পদার্থবিজ্ঞান বিষয়টা-ই এই অভ্যন্তরীন বিষয় নিয়ে।এক্ষেত্রে কিভাবে বিষয়গুলো ব্যখ্যা করবেন???

    • ভালো একটি পয়েন্ট আসলে। বিদ্যুতের বিষয়টি, পদার্থবিজ্ঞান বস্তু ও শক্তির আচরণ নিয়ে কাজ করে- যেখানে অণু, পরমাণু, সাব-এটমিক পার্টিকেল অন্তর্ভুক্ত। বিদ্যুৎকে চার্জিত কনার আচরণ সংক্রান্ত আলোচনা হিসেবে পদার্থবিজ্ঞানের অন্তর্ভুক্ত।

      লেখাটা মূলত প্রথমবারের মত পদার্থবিজ্ঞান আর রসায়নের সাথে আলাদাভাবে পরিচিত হওয়াদের উপযোগী করে লেখা। যেহেতু একাডেমিক আলোচনা না, সহজ কথায় সার্ফেস লেভেলে চিন্তার একটা উপায় হিসেবে ছিলো বাহ্যিক আর অভ্যন্তরীণের কথাটা। মেনে নিচ্ছি যে, কথাটা কিছুটা মিসলিডিং- বাহ্যিক গুণ শব্দটা ব্যাখ্যাসাপেক্ষ, তবে লেখাতে পরিষ্কার ছিলো না।

      কিছু সংযোজন ও পরিমার্জন আনা হয়েছে, আশা করি কনফিউশনের সম্ভাবনা কম এখন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *