আসসালামু আলাইকুম। সোলাসের সাথে প্রথমে পরিচিত হওয়া যাক। সোলাস অর্থ নিঃসঙ্গ বা একাকী লোগোটা সম্ভবত কোন পালতোলা জাহাজের প্রতিনিধিত্ব করে। আসলে এটা স্বাধীনভাবে ডেভেলোপকৃত একটি রোলিং রিলিজ লিনাক্স ডিস্ট্রো। স্বাধীনভাবে মানে হলো এটা অন্য কোন লিনাক্স ডিস্ট্রো যেমন ডেবিয়ান, উবুন্টু, আর্চ বা ফিডোরা কোনটির ওপর ভিত্তি করে তৈরি হয়নি। সাধারণত এধরণের একটা ভিত্তি বা বেজ থাকলে ভরসা রাখাটা সহজ হয়, অন্যদিকে স্বাধীনভাবে ডেভেলোপ হওয়ার ব্যাপারটা বেশ ইন্টেরেস্টিং হওয়ার সাথে কতটা well built, এটা নিয়ে একটা প্রশ্ন তোলার সুযোগ করে দেয়।
Copyright © Solus Project.
সোলাসের ক্ষেত্রে এক্সপ্রেরিয়েন্স বেশ সলিড ছিলো, তারা যথেষ্ট ভালোভাবে ওএসটি ডেভেলোপ করেছে। এটা তৈরি করা হয়েছে সাধারণ হোম ইউজারদের উপযোগী করে। বেশ কিছু ইন্টেরেস্টিং ব্যাপার এখানে আছে। আমার চালানো ডিস্ট্রোগুলোর মধ্যে অন্যতম সবচেয়ে ফাস্ট এবং স্ন্যাপি এক্সপ্রেরিয়েন্স পেয়েছি সোলাসে। স্টার্ট আপ ও শাট ডাউন খুব দ্রুত এবং একইসাথে অ্যাপ ওপেনিংসহ বিভিন্ন টাস্কগুলো স্ন্যাপি ফিল দেয়। আমার মনে হয় স্বাধীনভাবে বিল্ড হওয়া সোলাসের এই স্ন্যাপিনেসের অন্যতম কারণ, সম্ভবত একারণে তারা অপ্রয়োজনীয় আইটেমসগুলোর অন্তর্ভুক্তি এড়িয়ে চলে ডিপলি অপটিমাইজ করতে পেরেছে।
নিয়নবাতি ফেসবুক গ্রুপ
নিয়নবাতি টেলিগ্রাম চ্যানেল
চারটি ডেস্কটপ এনভায়রনমেন্ট এডিশনের সাথে সোলাস এসেছে। এর মধ্যে প্রথমেই বলতে হয় তাদের ফ্ল্যাগশিপ ডেস্কটপ বাজ্বি-র কথা। বাজ্বি ডেস্কটপ গ্নোম ডেস্কটপের ওপর ভিত্তি করে তৈরি হয়েছে, তবে গ্নোম থেকে এটার এক্সপ্রেরিয়েন্স মোটাদাগে ভিন্ন। সাধারণ তবে এখানে বিভিন্ন ইউটিলিটিজ, যেমন ফাইল ম্যানেজার, সেটিংস, টার্মিনাল প্রভৃতি গ্নোম থেকে নেয়া হয়েছে। এর সাথে রয়েছে গ্নোম, কেডিই প্লাজমা ও মাতে ভ্যারিয়েন্ট।
সোলাস বাজ্বি আমি অনেক আগে একবার ব্যবহার করেছিলাম। এটার বোল্ড ডার্ক থিমিং খুবই স্ট্রাইকিং এবং এই ইন্টারফেসে মানিয়ে নেয়া খুবই সহজ। কাস্টমাইজেবিলিটির দিক থেকে থিম পরিবর্তন, কিছু অ্যাপলেট এবং অন্যান্য বেসিক কাস্টমাইজেশন অপশনগুলো রয়েছে। গ্নোম এক্সটেনশন এখানে সমর্থিত নয়, তবে বেশকিছু বাজ্বি অ্যাপলেট রয়েছে। তবে বাজ্বি খুব ডিপ লেভেলের কাস্টমাইজেবল না। সবমিলিয়ে সিম্পলের মধ্যে এটা মোটামুটি বেশ ভালোই।
তবে বর্তমানে আমি সোলাস প্লাজমা ব্যবহার করছি, অনেক বেশি কাস্টমাইজেবিলিটি, বাজ্বি বা গ্নোম থেকে কম রিসোর্স ব্যবহারসহ অনেক কারণে কেডিই আমার পছন্দ। বাই দা ওয়ে, মাতে-সহ সোলাসের প্রতিটি এডিশনই কিন্তু আউট অফ দা বক্স বেশ সুন্দর।
লিনাক্স ইন্সটলেশন প্রসেসের মূলনীতিগুলো নিয়ে আমরা আগে লিখেছিলাম, দেখে নিতে পারেন। ওখানে জরিন ওএসের সাহায্যে ইন্সটলেশন দেখানো হয়েছে। সোলাসে পার্টিশনগুলো সরাসরি ইন্সটলারে করা যায় না, লাইভে GParted বা KDE Partition Manager সফটওয়্যার পেয়ে যাবেন, ওখান থেকে করে নিতে হবে। শুধু মাউন্ট পয়েন্ট এবং EFI পার্টিশন ইন্সটলারে সেট করবেন। পার্টিশনগুলো এরকম হবে:
পার্টিশনের নাম | আবশ্যিকতা | Type | File System | Mount Point | Size | Flag |
/ | আবশ্যক | Primary/Logical | ext4 | / | অন্তত 10GB | – |
ESP | শুধু EFI সিস্টেমে আবশ্যক | Primary | fat32 | – | 512 MB | boot, esp |
10GB সোলাসের ন্যূনতম রিকুয়ারমেন্ট, / পার্টিশনেই মূলত সাধারণত সবকিছু রাখা হয়, কাজেই দীর্ঘদিন ব্যবহার করতে হলে অবশ্যই এখানে পর্যাপ্ত জায়গা বরাদ্দ রাখতে পারে। এর বাইরে আপনি swap, /home এই পার্টিশনগুলো করতে পারেন, যদি চান। KDE Partition Manager-এ esp ফ্ল্যাগ নেই, শুধু boot ফ্ল্যাগ দিলেই চলবে। ইন্সটলেশন প্রসেস খুব ফাস্ট ছিলো, মূল ইন্সটলেশন প্রসেসটুকু জাস্ট কয়েক মিনিটের ব্যাপার।
কেডিই প্লাজমা প্রতিনিয়ত আরো উন্নত হচ্ছে, ফিচার, ফাংশনালিটি ও কাস্টমাইজেবিলিটি আরো ডিপ লেভেলে পৌঁছাচ্ছে। কাস্টমাইজ নিয়ে আলাদা একটা টিউটোরিয়াল করব ইন শা আল্লাহ। যাইহোক, আমি Layan থিম, Tela Circle আইকন, Kvantum, Video Wallpaper, কিছু উইজেটসহ কাস্টমাইজ করে নিয়েছি।
আরো দেখুন: কেডিই প্লাজমার ভালো লাগা কিছু ব্যাপার
সফটওয়্যারের ক্ষেত্রে সোলাসে সিস্টেম ইউটিলিটিজগুলোর সাথে ফায়ারফক্স, Thunderbird (ইমেইল ক্লায়েন্ট), লিব্রেঅফিস, Elisa (অডিও প্লেয়ার), SMPlayer এরকম সফটওয়্যারগুলো দেয়া ছিলো। খুব একটা ব্লটেড না, আবার নিত্য প্রয়োজনীয় সফটওয়্যারগুলো দেয়া আছে, স্ট্যান্ডার্ড সিলেকশন।
সোলাসের প্যাকেজ ম্যানেজার eopkg, যেটা PiSi প্যাকেজ ম্যানেজারের ফর্ক। সোলাসের রিপোজিটরীতে প্যাকেজের বেশ ভালো কালেকশন আছে, এবং এটা একটা রোলিং রিলিজ মডেল ফলো করে। তাদের স্ট্যাবল ব্রাঞ্চে তারা সাধারণত সাপ্তাহিক ভিত্তিতে sync করে থাকে, এর আগে আনস্ট্যাবল ব্র্যাঞ্চে প্রথমে আপডেট আসে। এই মডেল সোলাসকে রোলিং হওয়া সত্ত্বেও স্ট্যাবল থাকতে সাহায্য করে।
কমান্ড লাইনে ইন্সটলের ক্ষেত্রে eopkg আমার ভালোই লেগেছে। প্রয়োজনীয় কমান্ডগুলো এখানে আছে (install এর বদলে it, remove এর বদলে rm লিখলেও হয়)। (ছবিতে 137.10 MB/s দেখে ভয় পাবেন না, একদম ছোট ফাইলগুলোতে গতির হিসেব ঠিকঠাক হয় না)।
উবুন্টুতে আমরা deb ফাইল ইন্সটল করতে পারি বা PPA ব্যবহার সুবিধা আছে, আর্চে AUR রয়েছে, ফিডোরাতে আছে RPM Fusion। কিন্তু সোলাসে সেই অর্থে এরকম কোন সুবিধা নেই। রিপোজিটরীর কালেকশন ভালোই, আর রোলিং হওয়াতে আপডেট ভার্সন পাওয়া যায়। এছাড়া Snap সমর্থন আউট অফ দা বক্স আছে, Flatpak-ও ব্যবহার করা যায়।
তবে কখনো কখনো সোর্স থেকে বিল্ড অথবা বিকল্প খুঁজে নেয়াটাই শেষ অপশন হয়। যেমন আমি সচারচর kazam স্ক্রিন রেকর্ডারটি ব্যবহার করি, এটার ডেভেলোপমেন্ট অনেক বছর ধরে বন্ধ হলেও কাজ চলে যায়। যাইহোক, এটা সোলাসের রিপোতে নেই, Snap বা Flatpak-এও না। তাই এখানে SimpleScreenRecorder ব্যবহার করছি, যেটা বেটার-ই লেগেছে, তবে ব্যাপারটা জানালাম আরকি।
সোলাসে কেডিই-সহ সবগুলো এডিশনেই তাদের নিজেদের একটি সফটওয়্যার সেন্টার দেয়া হয়েছে এবং এটার নাম সিম্পলি Software Center। এটা আমাকে কিছুটা সফটওয়্যার সেন্টার ও গ্রাফিকাল প্যাকেজ ম্যানেজারের মিক্সড ফিল দিয়েছে, কাইন্ড অফ মানজারোর Pamac এর মত, যদিও দুটোর অনেক তফাৎ। এখানে সবরকম প্যাকেজ-ই অন্তর্ভুক্ত আছে, শুধু অ্যাপ্লিকেশনগুলো নয়। এটাও অন্য সবকিছুর মত স্ন্যাপি ছিলো, অনেক সফটওয়্যার সেন্টারের মত হেভি ফিল হয় না।
ক্যাটাগরী ও সাবক্যাটাগরীতে প্যাকেজগুলো ভাগ করা আছে, তবে প্যাকেজগুলো বর্ণানুক্রমে সাজানো, জনপ্রিয়তা বা রেটিং বা ফিচার্ড এরকম কিছু নেই। এখানে থার্ড পার্টি কিছু অ্যাপও আছে, যেমন অ্যান্ড্রয়েড স্টুডিও, ক্রোম, গুগল আর্থ, স্কাইপি, সাবলাইম টেক্সট, ভাইবার প্রভৃতি, এই অ্যাপগুলো সোলাসের রিপোর বদলে সরাসরি ভেন্ডর থেকে ইন্সটল হয়। এগুলো প্যাকেজ ম্যানেজারেই যুক্ত করে দেয়াটা অবশ্যই প্রশংসনীয় বলবো।
Snap যুক্ত থাকলেও এই প্যাকেজ ম্যানেজারে সরাসরি Snap অ্যাপ ব্রাউজ বা ইন্সটল করা যায় না, যেটা সম্ভবত পরবর্তীতে যুক্ত করার পরিকল্পনা আছে। কোন অ্যাপ ইন্সটলের সময় ডিপেন্ডেন্সিগুলো অবহিত করে, যেটা ভালো। ইন্সটলেশন প্রগ্রেস শুধু বারের মাধ্যমে প্রকাশ করে এবং সাথে ডাউনলোড স্পিড প্রদর্শন করে, তবে অ্যাপের ডাউনলোড সাইজ বা ইন্সটলেশনের আরো ডিটেইলস দেখা যায় না।
আপডেটের ক্ষেত্রে একটা ব্যাপার দেখলাম, Mandatory আপডেটগুলো অটোমেটিকলি সিলেক্ট হয়, ডিসিলেক্ট করা যায় না, যদিও আপডেট কখন করবেন, এটা আপনার ইচ্ছা। আমার মতে এটা ভালো, কেননা অনেক প্যাকেজ পরস্পর ডিপেন্ডেন্সি থাকতে পারে, আংশিক আপডেট করলে সমস্যা হতেও পারে, মানজারোতে এটার অভিজ্ঞতা হয়েছিলো।
সামারাইজ করলে eopkg প্যাকেজ ম্যানেজার কমান্ড লাইনে ভালোই ছিলো, গ্রাফিকাল সফটওয়্যার সেন্টারটির অনেক ভালো ব্যাপার আছে, তবে আরো বেটার করার মত জায়গা আছে।
তবে সোলাস যেহেতু ইনডিপেন্ডেন্ট, এবং একই সাথে এটা এখনো খুব বেশিদিন হয়নি এটা আসার, তাই এখানে অনলাইনে রিসোর্স তুলনামূলক কম। প্রসঙ্গত, ২০১৫ সালের ২৭ ডিসেম্বরে সোলাসের যাত্রা শুরু (উইকিপিডিয়া)।
অফিসিয়ালি তাদের একটি হেল্প সেন্টার আছে, একটিভ সাপোর্ট ফোরাম আছে, যেখানে অনেক প্রয়োজনীয় রিসোর্স আছে বা প্রয়োজনে আপনি ফোরামে আপনার সমস্যাটি তুলে ধরতে পারবেন। তবে সোলাস যেহেতু ইনডিপেন্ডেন্ট, এবং একই সাথে এটা এখনো খুব বেশিদিন হয়নি এটা আসার, তাই এখানে অন্য ডিস্ট্রোগুলোর তুলনায় অনলাইনে রিসোর্স কিছুটা কম অবশ্যই।
আমি HP Laser Jet P1102 প্রিন্টার ব্যবহার করি। উবুন্টুতে এটা প্রায় প্লাগ এন্ড প্লে, শুধু এড করে নিতে হয়। কিন্তু সোলাসে প্রথমে ডিটেক্ট করছিলো না, পরে hplip প্যাকেজটি ইন্সটল করে এরপর সেটিংস থেকে এড করতে পারলাম, তার সাথে HP Device Manager থেকে ড্রাইভার ইন্সটল করে নিতে হলো। মোটেও জটিল কিছু না, কিন্তু বেশ কিছুটা সময় এজন্য দিতে হয়েছে, যেহেতু প্রসেসটা ফাইন্ড আউট করতে হয়েছে এবং অনলাইনে কিছু আউটলাইন পেলেও সরাসরি সমাধান পাইনি।
একইভাবে একটা ওয়ার্কশপের জন্য Flutter ইন্সটল করতে গিয়েও সোলাস স্পেসিফিক টিউটোরিয়াল পাইনি, যদিও উবুন্টুর টিউটোরিয়াল-ই এখানে ইউজেবল ছিলো। তো এরকম ব্যাপারগুলোতে ইন্ডিপেন্ডেন্টলি ডেভেলোপ হওয়ার একটা লিমিটেশন আছে।
সোলাসের সবচেয়ে চমৎকার বিষয়টি হলো এর পারফর্মেন্স, একই ডিই, একই ধরণের সফটওয়্যারসহ এটা অন্য ডিস্ট্রোগুলো থেকে বেটার এক্সপ্রেরিয়েন্স পেয়েছি। আমার পিসির স্পেক কিন্তু 3rd Gen প্রসেসর, DDR3 র্যাম, HDD ডিস্কসহ এখনকার সময়ে অনেকটা ব্যাকডেটেড হয়ে গেছে। এরপরও সোলাস এবং প্লাজমা মিলে অনেকটা স্মূথলি চালাতে পারছি।
ড্রাইভার সংক্রান্ত সমস্যা ফেস করিনি, অবশ্য ইন্টেলের এধরণের একটি প্রসেসরে করার কথাও নয়, মূলত Broadcom বা NVIDIA-র ক্ষেত্রে অনেক সময় প্রপ্রাইটরী ড্রাইভার প্রয়োজন হয়, এবং সেগুলো ইন্সটল করার জন্য তারা Hardware Drivers একটি সফটওয়্যার যুক্ত করে দিয়েছে।
সব মিলিয়ে শুরুতে যেটা বলছিলাম, এক্সপ্রেরিয়েন্স সলিড ছিলো। সোলাস হোম ইউজারদের টার্গেট করে বানানো আর আমি সম্ভবত তাদের টার্গেটেড ইউজারবেসেই আছি। তো আমি বলবো Solus is worth giving a try!
আপডেট: সোলাসের পরবর্তী অভিজ্ঞতা খুব ভালো হয়নি, যেটা শেয়ার করা প্রয়োজন মনে করছি। ভার্চুয়ালবক্সসহ কিছু অ্যাপ নিয়ে মুশকিলে পড়তে হয়েছে। একদিন প্রিন্টার নিয়ে সমস্যা হচ্ছিলো, কয়েকবার ট্রাই করেও প্রিন্ট হচ্ছিলো না, রিবুট করলাম, লগইন স্ক্রিন পর্যন্ত আসলো, কিন্তু লগইন করলে স্ক্রিন ব্লাঙ্ক হয়ে থেকে থেকে যাচ্ছিলো বেশ কয়েকবার চেষ্টার পরও। তাই আবার পপ ওএসে ফিরে আসতে হয়েছে…