শুধু লিনাক্স ব্যবহার করে কি বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং পড়াশোনা পার করা করা সম্ভব? (২০২৫ সংস্করণ)

আসসালামু আলাইকুম। অনলাইনে অনেক লেখা বা ভিডিও আপনাকে হয়ত বলবে লিনাক্সে সব করা সম্ভব বা উইন্ডোজ সফটওয়্যার লাগলে WINE আছে এবং ইত্যাদি। আমিও অতীতে বলে থাকতে পারি। তবে অনলাইনের কথা ছেড়ে যদি বাস্তবে আসি, ওয়েল, চিত্রটা ঠিক সেরকম না।

তো যদি শুরুতেই সাধারণভাবে শিরোনামের প্রশ্নের উত্তর দিয়ে দিতে চাই, তবে আমার উত্তর হবে- না, সম্ভব না। হ্যা, সব ইঞ্জিনিয়ারিং প্রোগ্রাম এবং সব ভার্সিটির জন্য হয়ত সমানভাবে এটা সত্য না-ও হতে পারে। তবে আমার অভিজ্ঞতায়, লিনাক্স ব্যবহার করে পুরো বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং পার করতে পারার খুব বেশি সম্ভাবনা দেখতে পাচ্ছি না। আমার অভিজ্ঞতা বলতে আমি বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং চতুর্থ বর্ষে আছি, এই পর্যন্ত অভিজ্ঞতা।

এখানে প্রধানতম কনসার্ন হলো সফটওয়্যার সাপোর্ট। বর্তমান সময়ে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়াশোনাতে বিভিন্ন সফটওয়্যারের ব্যবহার প্রয়োজন হয়। বিভিন্ন সিমুলেশন সফটওয়্যার, প্রোগ্রামিং সফটওয়্যার প্রভৃতি আছে তার মধ্যে। আর ডকুমেন্ট এডিটিং বা এরকম বেসিক সফটওয়্যারগুলো তো আছেই।

প্রথমে বেসিক প্রয়োজনগুলোর কথা বললে এখানে সমস্যার কিছু নেই। ওয়েব ব্রাউজার, পিডিএফ রিডার, ডকুমেন্ট এডিটর, মিডিয়া প্লেয়ার, ইমেজ এডিটর, ভিডিও এডিটরের মত সফটওয়্যার লিনাক্সে অনেক আছে। জুম, মিট, মাইক্রোসফট টিমসের মত সফটওয়্যারগুলোও আছে। তাই অ্যাসাইনমেন্টের পিডিএফ তৈরি করা, ভিডিও প্রেজেন্টেশন দেয়া, অনলাইন ক্লাস করা এই জায়গাগুলোতে কোন সমস্যা হওয়ার কথা না।

কিন্তু মুশকিল মূলত তখন হয় যখন স্পেসিফিক কোন সফটওয়্যারের দরকার পড়ে। যেমন আমাদের বিভিন্ন ল্যাব কোর্সে PSpice, PSIM, Proteus, MATLAB, Simulink (Matlab-এর অংশ), AutoCAD, PSAF, Anaconda, Emu8086, MIDE-51 প্রভৃতি সফটওয়্যারের দরকার পড়েছে। এবং এই ক্ষেত্রগুলোতে প্রায় সময়ই উইন্ডোজের দ্বারস্থ হওয়াই একমাত্র উপায় হয়ে যায়।

বাস্তব চিত্র

কিছু সফটওয়্যার লিনাক্সে সরাসরি পেয়ে যাবেন। যেমন MATLAB ও Simulink, Anaconda। এর বাইরে Code::Blocks, VS Code, PyCharm প্রভৃতি IDE-র লিনাক্স সমর্থন রয়েছে।

না পেলে কিছু সফটওয়্যারের জন্য দ্বিতীয় উপায় হতে পারে ওয়েব ভার্সন। যেমন- AutoCAD, MATLAB। কিন্তু সমস্যাও আছে সেইসাথে। এটা ন্যাটিভ অ্যাপের মত ফাস্ট ও রেসপোন্সিভ হয় না এবং অবশ্যই তার সাথে একটিভ ইন্টারনেট কানেকশন নির্ভরতা থাকে।

তৃতীয় উপায় হলো বিকল্প সফটওয়্যার খোঁজা। যেমন AutoCAD এর কোর্সের কিছু অ্যাসাইনমেন্ট BriskCAD দিয়ে করেছিলাম। তেমন কোন সমস্যা হয়নি। তবে সবকিছু বিকল্প দিয়ে চালানো যায় না। অনেক সময় পার্টিকুলার সফটওয়্যারই প্রয়োজন হবে, যেখানে নির্দিষ্ট সফটওয়্যার অনুযায়ীই প্রশ্ন ও টাস্ক দেয়া হবে।

চতুর্থ উপায়, কিছু সফটওয়্যার WINE (লিনাক্সের জন্য উইন্ডোজ কম্প্যাটিবিলিটি লেয়ার) দিয়ে ব্যবহার করা যায়। যেমন Proteus, Emu8086। কিন্তু এটা সব সফটওয়্যারে কাজ করে না, এবং অনেক সময়ই এক্সট্রা কিছু ধাপ থাকে ইন্সটল ও রান করার জন্য। যেমন Proteus ঠিকমত রান করার জন্য সেটিংস থেকে গ্রাফিক্স ইঞ্জিন OpenGL সেট করে নিতে হয়েছিলো। খুব সিম্পল একটা ওয়ার্কঅ্যারাউন্ড, কিন্তু আপনি যদি না জানেন, তাহলে এটা মাথায় আসতে যাবে কেন? এবং সবসময় WINE দিয়ে রান করার গল্পটা এত সিম্পলও হয় না।

কিন্তু সত্যি কথা হলো এই সবভাবে লিনাক্সের মধ্যে থাকার চেষ্টা করলেও তাতে শেষ রক্ষা সব সময় হয় না। যেমন PSpice বা PSIM স্মরণমতে চেষ্টার পরও WINE দিয়ে লিনাক্সে চলেনি। কাজেই আমাদের উইন্ডোজের প্রয়োজন থেকেই যাচ্ছে।

পঞ্চম উপায়, লিনাক্সের মধ্যে ভার্চুয়ালাইজেশন সফটওয়্যারে উইন্ডোজ ব্যবহার করা। এক্ষেত্রে লিনাক্স চালু করার পর ভার্চুয়াল মেশিন সফটওয়্যার থেকে একটা সফটওয়্যারের মত উইন্ডোজ ব্যবহার করা যাবে। এতে এসেনশিয়ালি উইন্ডোজ ব্যবহার করা-ই হয় এবং পারফর্মেন্সে সিগনিফিকেন্ট ডাউনসাইড থাকে।

ষষ্ঠ উপায়, ডুয়াল বুট ব্যবহার করে লিনাক্সের পাশাপাশি উইন্ডোজ ইন্সটল করা। পার্সোনালি আমি ডুয়াল বুট ব্যবহার করি। প্রায় সবসময়ে লিনাক্স ইউজ করা হয়, শুধু কিছু সফটওয়্যারের জন্য উইন্ডোজ। ডুয়াল বুট করাটা অনেকে প্রিফার করে না, দুয়েকসময় উইন্ডোজ আপডেট বুট মেনু খেয়ে দিতে পারে (সমাধানযোগ্য) বা টাইম নিয়ে একটু সমস্যা হতে পারে। আর কম্পিউটার রিস্টার্ট করে আরেকটি অপারেটিং সিস্টেমে সুইচ করাটা সবসময় কনভিনিয়েন্ট না। এছাড়া ডিস্ক স্পেস বিভাজনের একটি বিষয় রয়েছে।

সপ্তম উপায়, আরেকটা হার্ডডিস্ক বা এসএসডি কেনা- সেটাতে উইন্ডোজ ইন্সটল করা। দরকারের সময় সেই ডিভাইস থেকে বুট করা। ডুয়াল বুটের মতই, তবে দুইটা আলাদা স্টোরেজে থাকায় ঝামেলা কম।

অষ্টম উপায়, লিনাক্সে গিভ আপ করে কমপ্লিটলি উইন্ডোজে সুইচ করা। একচুয়ালি এটা একটা গুড অপশন, অনেকের জন্য। কিন্তু আমরা যখন লিনাক্স চালানোর কথা বলছি, তখন অবশ্যই এটা সমাধান না। প্রসঙ্গত, উইন্ডোজের মধ্যে আবার লিনাক্স ইউজের একটা পদ্ধতি আছে, WSL বা উইন্ডোজ সাবসিস্টেম অন লিনাক্স, তবে এটা এখানে আলোচ্য না।

আমি যা করি

আমার ল্যাপটপে প্রথম দিকে ডুয়াল বুট ছিলো। তবে মাঝখানে পুরো হার্ডডিস্কে লিনাক্স ইন্সটল করে ভার্চুয়াল মেশিনে উইন্ডোজ ব্যবহার করেছিলাম কিছুদিন। পাশাপাশি WINE ব্যবহার করতাম কিছু সফটওয়্যারের জন্য। এক্সপ্রেরিয়েন্স খুব ভালো ছিলো বলা যায় না। তাই আবারো ডুয়াল বুটে ফিরে এসেছি। এখন অবশ্য WINE সেটআপ করিনি আর, উইন্ডোজ সফটওয়্যার দরকার হলে উইন্ডোজই সবচেয়ে কনভিনিয়েন্ট মনে হয়। SSD মোটামুটি 50-50 ভাগ করা।

উইন্ডোজ আলাদাভাবে দরকার না হলে সাধারণভাবে লিনাক্স ব্যবহার করা হয়। যেমন আপাতত ভার্সিটির ক্লাস বন্ধ, এর মধ্যে গত মাসখানেকে আমার ল্যাপটপে উইন্ডোজে কখনো বুট করেছি বলে মনে পড়ে না।

2 Comments

  1. আসসালামু আলাইকুম, WSL বিষয় টা নিয়ে বিস্তারিত লিখলে উপকৃত হতাম।

    • ওয়া আলাইকুমুস সালাম। WSL মানে Windows Subsystem for Linux। উইন্ডোজের মধ্যে উবুন্টুসহ বেশ কিছু লিনাক্স এনভায়রনমেন্ট রান করা যায় এটা দিয়ে। উইন্ডোজের মধ্যে লিনাক্সের কমান্ড লাইন ও গ্রাফিকাল সফটওয়্যার চালানো যায়। লেখার বিষয়টা বিবেচনায় থাকলো, তবে এখন পর্যন্ত আমার পার্সোনাল এক্সপ্রেরিয়েন্স নেই মূলত।
      এখানে দেখতে পারেন: https://learn.microsoft.com/en-us/windows/wsl/about

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *