ত্রৈধ বিন্দুর ধারণাটা আমরা অনেকেই জানি। ত্রৈধ বিন্দুতে কোন পদার্থ একইসাথে বাষ্পীয়, তরল এবং কঠিন অবস্থায় বিরাজ করতে পারে। অর্থাৎ পানির ত্রৈধ বিন্দুতে একইসাথে তরল পানি, বরফ ও বাষ্প পাওয়া যাবে। বিষয়টা মজার, কারণ পানির স্ফুটনাঙ্ক, মানে কিনা যে তাপমাত্রায় পানি বাষ্পে পরিণত হয়, তার তাপমাত্রা হলো 100°C, অন্যদিকে হিমাঙ্ক তথা পানি জমে বরফ হওয়ার তাপমাত্রা হলো 0°C। তবে আরেকটু কথা আছে এখানে, তা হলো এই স্ফুটনাঙ্ক আর হিমাঙ্ক প্রমাণ চাপ, মানে ১ বায়ুমন্ডলীয় (1 atm) চাপ বা 101325 Pa (প্যাসকেল) চাপের জন্য হিসেব করা হয়। চাপ কম বা বেশি হওয়ার সাথে স্ফুটনাঙ্ক আর গলনাঙ্ক পরিবর্তন হয়ে থাকে।
পানির কথাতে আসি, প্রমাণ চাপ থেকে চাপ যত কমতে থাকে পানির স্ফুটনাঙ্ক তার সাথে কমতে থাকে, অন্যদিকে হিমাঙ্ক বাড়তে থাকে। একটা চাপে এসে দেখা যায় স্ফুটনাঙ্ক আর হিমাঙ্কের তাপমাত্রা সমান হয়ে গেছে। চাপ বলতে পুরো সিস্টেমের মোট চাপ থেকে গুরুত্বপূর্ণ হলো পানির আংশিক বাষ্পচাপ, খুব সহজ ভাষায় বললে বদ্ধ পরিবেশে পানির বাষ্প তরল পানিতে যে চাপ প্রয়োগ করে। ত্রৈধ বিন্দুতে পানির আংশিক বাষ্পচাপ মোটামুটি 0.00603659 atm বা 611.657 Pa হলে স্ফুটনাঙ্ক কমে 0.01°C-এ নেমে আসে, হিমাঙ্কও একটুখানি বেড়ে হয় 0.01°C। মানে কিনা এই চাপে এখন 0.01°C তাপমাত্রার ওপরে পানি বাষ্প থাকবে, আর নিচে পানি হবে বরফ। কিন্তু ঠিক ঠিক 0.01°C তাপমাত্রা হলে পানি একইসাথে বাষ্প, তরল ও বরফ হয়ে থাকতে পারবে।
এটা বেশ চমকপ্রদ একটা দৃশ্য, একইসাথে বরফ গলে পানি হবে, পানি ফুটে বাষ্প হবে, বাষ্প থেকে পানি হবে, পানি জমে বরফ হবে। আর প্রযুক্তির যুগে এটা আমরা দেখতেও পারি-
আরেকটু সুন্দরভাবে বুঝতে আমরা ফেজ ডায়াগ্রাম (Phase Diagram) এর সাহায্য নিতে পারি। Phase মানে হলো দশা বা পর্যায়, ফেজ ডায়াগ্রামে বিভিন্ন থার্মোডায়ানামিক (তাপগতিভিত্তিক) শর্তে পদার্থের অবস্থা (কঠিন, তরল, বায়বীয় প্রভৃতি) উপস্থাপন করা হয়।
ওপরের পানির ফেজ ডায়াগ্রামে আনুভূমিক বরাবর তাপমাত্রা ও উল্লম্ব বরাবর চাপের সাপেক্ষে বিভিন্ন অবস্থা দেখা যা্ছে। 611.657 Pa চাপ ও 273.16 K (0.01°C) তাপমাত্রা বরাবর বিন্দুতে কঠিন, তরল ও গ্যাসীয় অবস্থা একীভূত হয়েছে, মানে এটাই ত্রৈধ বিন্দু। এর কম চাপে পানি তরল অবস্থায় পাওয়া সম্ভব না, শুধু কঠিন ও গ্যাসীয় অবস্থা রয়েছে।
চাপ বেশি হতে থাকলে প্রথমদিকে পানির হিমাঙ্ক কিছুটা হ্রাস পায়, কিন্তু একটা পর্যায়ের পর দ্রুত বৃদ্ধি পেতে থাকে। 647 K (373.85°C) ও 22.064 MPa বিন্দুতে আরেকটা ইন্টারেস্টিং ঘটনা ঘটে। এই বিন্দুকে সন্ধি বিন্দু বা ক্রিটিকাল পয়েন্ট বলা হয় এবং এরপর পানি সাধারণ তরলরূপে পাওয়া যায় না, তরল ও গ্যাসীয় দশা একীভূত হয়ে যায়। এ অবস্থায় পানি Supercritical fluid-এ পরিণত হয়, যার মধ্যে তরল ও গ্যাস উভয়ের কিছু কিছু বৈশিষ্ট্য পাওয়া যায়। CO2 এর সুপারক্রিটিকাল ফ্লুইড দশা ভিডিওতে দেখানো হয়েছে-
লেখাটি ভালো লেগে থাকলে পরিচিতদের সাথে শেয়ার করতে পারেন। কোন অনিচ্ছাকৃত তথ্যগত ভুল বা বিভ্রান্তি চোখে পড়লে জানালে আমরা খুশি হব। নিয়নবাতির সাথে যুক্ত হতে পারেন সোশ্যাল মিডিয়ায়- টেলিগ্রাম চ্যানেল, টেলিগ্রাম গ্রুপ, ফেসবুক গ্রুপ।
সহায়তা: Triple point – Wikipedia, Supercritical fluid -Wikipedia, Quora, Byju’s