২১ সেপ্টেম্বর ২০২৩ আপডেট: CASIO fx-991CW-এর মাধ্যমে Casio fx-991EX-কে রিপ্লেস করা হয়েছে। অর্থাৎ fx-991EX মডেলটি নতুনভাবে অফিসিয়ালি মার্কেটে আসছে না দীর্ঘ সময় ধরে, বর্তমানে অধিক চাহিদার কারণে সেকেন্ড হ্যান্ড পণ্যগুলোও বেশ উচ্চমূল্যে ব্যবহার হচ্ছে। fx-991CW-এর এক্সপ্রেরিয়েন্স EX সিরিজ থেকে খুবই ডিফারেন্ট, আমাদের পক্ষ থেকে বিস্তারিত রিভিউ পেয়ে যাবেন এখানে।
৩ ডিসেম্বর ২০২২ আপডেট: বর্তমানে কালো বা নীল উভয় কালারে মার্কেটে অফিসিয়াল ওয়ারেন্টিসহ অরিজিনাল Casio fx-991EX এর এভেইলেবিলিটি খুবই সীমিত।
৩০ সেপ্টেম্বর ২০২২ আপডেট: এই লেখাটি ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে লেখা হয়েছিলো। মার্কেটে বর্তমানে এটির বিভিন্ন ক্লোন চলে আসার কারণে অরিজিনালটিকে পৃথক করার জন্য Casio fx-991EX-কে অন্য কালারে আনা হয়েছে- রিসেন্টলি মার্কেটে আসা ক্যালকুলেটরগুলোর এক্সটেরিয়র কালার নীল এবং মডেল নাম fx-991EX-BU। বর্তমানে ক্যালকুলেটরটির অফিসিয়াল মার্কেট প্রাইস ২৩০০ টাকা।
আসসালাসু আলাইকুম। শুরুতে জানিয়ে রাখি, এই লেখাটা শুধুই আমার অভিজ্ঞতা থেকে, ক্যাসিও বা কেউ এটা স্পন্সর করেনি, আমি শুধু আমার অভিজ্ঞতা শেয়ার করছি। তো, সাধারণত সপ্তম বা অষ্টম শ্রেণি থেকে আমরা সাইন্টিফিক ক্যালকুলেটর ব্যবহার শুরু করি। আমাদের দেশে মূলত ক্যাসিও শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্যালকুলেটরের জগতে একচ্ছত্র রাজত্ব করছে, তাদের তিনটি সিরিজ, MS, ES ও EX সিরিজ খুবই জনপ্রিয়।
এই তিনটি সিরিজই নন প্রোগ্রামেবল সাইন্টিফিক ক্যালকুলেটরের এবং প্রতিটি সিরিজে বেশকিছু মডেলের ক্যালকুলেটর আছে, যেমন, 82, 100, 570, 991 প্রভৃতি, যাদের মধ্যে ফাংশনের কমবেশি আছে। এই লেখায় আমি দুটো ব্যাপার আলোচনা করছি, প্রথমটা হলো কেন আসল ক্যালকুলেটর কেনা উচিৎ, এবং দ্বিতীয়টা হলো কেন আমি fx-991EX বিশেষভাবে সাজেস্ট করছি।
বাজারে গেলে অবশ্য ক্যালকুলেটরগুলোর মধ্যে নানাবিধ প্রকারভেদ দেখা যায়। বিভিন্ন রকম নকল, নকলের মধ্যেও শ্রেণিবিভাগ আছে, একেকটার একেকরকম দাম। দেখা যায়, আসল ক্যালকুলেটরগুলোর থেকে কখনো অর্ধেক বা কখনো এক-তৃতীয়াংশ দামেই নকলটা পাওয়া যাচ্ছে, ফাংশনেও আসল-নকল বোঝার উপায় নেই (এমনকি হয়ত দোকানে আসল বলেই চালানো হচ্ছে), তো সেক্ষেত্রে আমরা অনেকেই নকলটা কিনে নিই, আমিও শুরুতে একাধিক নকল ক্যালকুলেটর কিনেছি।
কিন্তু যখন ক্যাসিও-র অরিজিনাল ক্যালকুলেটর ব্যবহার করে দেখলাম, নকলগুলোর থেকে এটার এডভান্টেজ খুব সহজেই বোঝা যায়, আসলে হাতে নিয়েই পার্থক্যটা ফিল করা যায়, বাটনগুলো অনেক কমফোর্টেবল। তবে, এর থেকে বড় এডভান্টেজ দেখা যায় জটিল কোন অঙ্ক করার সময়, কেননা এক্ষেত্রে নকলটি দশ গুণেরও বেশি সময় নিতে পারে।
আমার কাছে এখন দুটো ক্যালকুলেটর আছে, একটি হলো অরিজিনাল fx-991EX, অন্যটি নকল fx-991ES PLUS। ঠিক লেভেল প্লেইং ফিল্ড হলো না, দুটো একই মডেলের হলে ভালো হত, কিছু করার নেই। যা আছে, তা দিয়েই একটা কুইক কম্পারিজন করলাম। ∫05√x এর মান বের করতে দিলাম দুটোতেই, আসলটিও সময় নিয়েছে কিছুটা, ৬ সেকেন্ড। কিন্তু নকলটির লেগেছে পুরো ৬১ সেকেন্ড! এমনকি মানেও দশমিকের ৩ ঘর পর থেকে ভিন্নতা আছে।
আরেকটা ব্যাপার হলো, নকল ক্যালকুলেটরগুলোর স্থায়ীত্ব নিয়ে নিশ্চিত কিন্তু থাকা যায় না, কেননা কোনটি হয়ত ৪ মাসেই খতম, কোনটি ৪ বছরও চলতে পারে। আসল হলে অন্তত ৪-৫ বছর, সম্ভবত আরো বেশি চলার বিষয়ে মোটামুটি নিশ্চিত থাকা যায়, আর অফিসিয়াল পণ্যের ক্ষেত্রে ৩ বছরের ওয়ারেন্টি পাওয়া যায়। তাছাড়া হয়ত এসময়ের মধ্য ব্যাটারীও পরিবর্তন করতে হবে না। কেননা, আসল ক্যালকুলেটরে যেসব মডেলে সোলার প্যানেল থাকে, সেগুলো সত্যিই কাজ করে, অন্যদিকে নকলগুলোতে সোলার প্যানেল শুধু আসলটির অনুরূপ ডিজাইন করার জন্য দেয়া হয়, কোন সংযোগ থাকে না।
আবার নকলটিতে সবসময় ভেতরে ঠিক জিনিস থাকে না। দুরকমই দেখেছি, বাইরে লেখা 100MS, কিন্তু সফটওয়্যার হয়ত 991MS-এর, অর্থাৎ ম্যাট্রিক্স, ভেক্টর মোডগুলো উপস্থিত, যেটা 100MS-এ থাকার কথা নয়, আবার বাইরে থেকে 991EX এর মত চেহারা, কিন্তু ভেতরে ES সিরিজের সফটওয়্যার, ডিসপ্লে।
সর্বোপরি, এখানে মানের পার্থক্যটা খুব স্পষ্টভাবেই আছে। আর খরচ কিন্তু টেকনিকালি কম হচ্ছে, কেননা একটি আসল ক্যালকুলেটর যতদিন টিকে, ততদিনে ৩-৪টির বেশি নকল ক্যালকুলেটর নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই, আমার পক্ষ থেকে নকল ক্যালকুলেটর পরিহার করার অবশ্যই পরামর্শ থাকবে।
এখন পরের প্রসঙ্গে আসি। EX সিরিজে 82EX ও 991EX আছে। 82EX এ অনেক ফাংশন নেই, কমপ্লেক্স, ভেক্টর, ম্যাট্রিক্স, বেজ-n, ইনইকুয়ালিটি প্রভৃতি অঙ্ক এতে করা যায় না। তাই 82EX শুধু বেসিক কাজের জন্যই। একই কথা 82, 100, 350 MS/ES/ES Plus এর বেলাতেও প্রযোজ্য। 570MS/ES Plus এ যদিও সব ফাংশন আছে, সোলার অপশনটি নেই, যেটি 991MS/ES Plus-এ আছে। তো আমরা মূলত 991 MS, ES Plus ও EX বিবেচনা করছি। আর বিস্তারিত না, সংক্ষেপে 991EX CLASSWIZ এর কিছু সুবিধা তুলে ধরব।
MS সিরিজ থেকে ES সিরিজের পার্থক্যটা খুবই পরিষ্কার, প্রথমেই যে পার্থক্য চোখে পড়ে, তা হলো ডিসপ্লে, ES সিরিজে একাধিক লাইন লেখা যায়, ফলে সমীকরণগুলো তুলতে অনেক সুবিধা পাওয়া যায়। ES থেকে EX-র পার্থক্যের কথা যদি বলি, এখানেও ডিসপ্লের পার্থক্য ভালোভাবেই দৃশ্যমান। EX-এ লেখা অনেক স্পষ্ট দেখায় (ওপরে একটি ছবি আছে)।
এছাড়া এখানে আইকন হিসেবে মেনুগুলো দেয়া হয়েছে, যা কাজের বেলায় হয়ত বড় কোন এডভান্টেজ দেয় না, তবে দেখতে সুন্দর আরকি। 991ES Plus-এ ৮টি মোড থাকলেও, 991EX-এ আছে ১২টি। নতুন মোডগুলোর মধ্যে Statistics ও Distribution নিয়ে আমার জানা নেই, Spreadsheet জিনিসটা সুন্দর, তবে একাদশ-দ্বাদশের অঙ্কে মনে হয় এর দরকার নেই, তবে Inequality মোডটা সুন্দর, সরাসরি অসমতার সমাধান বের করে দেয়।
কমপ্লেক্স মোডে 991ES Plus শুধু i3 পর্যন্ত হিসেব করতে পারতো, i4 করতে দিলেই খেল খতম। তো, EX-এ i-এর যেকোন পূর্ণ সংখ্যক পাওয়ার হিসেব করা যায়, যদিও ভগ্নাংশ, যেমন √i এর মান এতে বের করা যায় না। ম্যাট্রিক্স বা ভেক্টর মোডে ৪টি ম্যাট্রিক্স/ভেক্টর, 4*4 পর্যন্ত ম্যাট্রিক্স, ইকুয়েশন মোডে ৪টি পর্যন্ত অজানা রাশি/x এর পাওয়ার নিয়ে কাজ করা যায়, এবং এই সবগুলো ES Plus-এ ৩ পর্যন্ত সমর্থিত ছিলো। মানে বিভিন্ন জায়গায় একটু বেশি আছে এখানে আরকি।
টেবিল মোডে একই সাথে দুটি ইকুয়েশন নিয়ে কাজ করা যায়, ES Plus এ একটি নিয়েই করা যেত। আর সবচেয়ে মজার ব্যাপার, যদিও এটি নন প্রোগ্রামেবল ক্যালকুলেটর, আপনার কাছে যদি একটি স্মার্টফোন থাকে, ক্যালকুলেটরের QR ফাংশনটি ব্যবহার করে QR Code স্ক্যান করে আপনি গ্রাফও দেখতে পারেন। পরীক্ষার হলে এটা কাজে দিবে না যদিও, সেখানে তো আর স্মার্টফোন থাকবে না, তারপরও বেশ দারুণ একটি ফিচার।
অবশ্য ক্যালকুলেটর থেকে QR স্ক্যান করা বেশ প্যারাদায়ক। ফোকাস হতে চায় না, উজ্জ্বল দিবালোকেও বেশ কিছুক্ষণের চেষ্টায় স্ক্যান করতে পেরেছি, ওপরে দেখতে পারছেন sin(x) এর গ্রাফ। কথা আরো বাড়ানো যেত, কিন্তু আজকাল আবার এডমিশনের সময় চলে, তাই লেখা বড় করছি না, আরো কী কী সুবিধা এখানে দেখতে পারেন।
ওহ, একটা গুরুত্বপূর্ণ কথা বাদ চলে গেছিলো। বোর্ড পরীক্ষা, অর্থাৎ, জেএসসি, এসএসসি বা এইচএসসিতে fx-991EX নিয়ে কিন্তু কোন সমস্যা নেই, একইভাবে এডমিশন টেস্ট, যেখানে সায়েন্টিফিক ক্যালকুলেটরের বৈধতা আছে, সেখানে সচারচর EX-ও গ্রহণযোগ্য, কোন সমস্যা নেই। যাইহোক, দুয়েকটি প্রতিষ্ঠানে হয়ত ব্যতিক্রম হতেও পারে, তাই তাদের নোটিশ দেখে নেয়া ভালো।
লোকাল মার্কেটে অফিসিয়াল ওয়ারেন্টি ছাড়া ১৩০০-১৪০০ টাকায় এটা বিক্রি হয়, তবে আমারটি আরেকটু কম লেগেছিলো, ১২৫০ টাকা। বাংলাদেশে ক্যাসিওর ৪টি মাত্র অফিসিয়াল শোরুম দেখছি, ৩টি ঢাকা ও ১টি চট্টগ্রামে, লোকেশন দেখতে এখানে। তবে অফিসিয়াল ওয়ারেন্টিসহ অনলাইন শপ রকমারিতে পাওয়া যাচ্ছে, দাম ১৭০০ টাকা, তবে এখন অফারে ১৫৮০ টাকা। রকমারির একটা বিশ্বস্ততা আছে, লোকাল মার্কেট থেকে এটা নিরাপদ অপশন হতে পারে।
আসল নকল যাচাই নিয়ে কিছু বলি। নকল ক্যালকুলেটর যাচাইয়ে অন বাটন চেপে রেখে লেখা বা অফ হওয়ার সময় ক্যাসিও লোগো প্রদর্শন এরকম প্রচলিত পদ্ধতিগুলো এখন অনেক নকল ক্যালকুলেটরেও দেখা যায়। তাই এভাবে নকল যাচাই করা আসলে এখন সম্ভব না। তবে EX-র ক্ষেত্রে আসল চেনা তুলনামূলক সহজ। যেহেতু এখানে অনেক জটিল ফাংশন, এখন পর্যন্ত এর পুরোপুরি ক্লোন আমি দেখিনি, মানে নকলগুলোতে বাইরে থেকে EX-র মত, ভেতরে ES বা MS-র সফটওয়্যার। ডিসপ্লে দেখে বা মেনুতে গেলেই বোঝা যায়।
তবে হয়ত আমার দেখার বাইরে আরো ভালো ক্লোন এতদিনে বাজারে আসতে পারে, যেখানে ডিসপ্লে বা মেনু আসলের মত। সেক্ষেত্রে ডিসপ্লের ওপরে ডান কোণায় ছোট্ট একটা সোলার ইন্ডিকেটর (সূর্যের মত) আছে, আলো পড়লে ওটা দেখায়, সোলার প্যানেল আঙুল বা কিছু দিয়ে ঢেকে রাখলে দেখায় না। তো, এটা নকল যাচাইয়ের একটা উপায় হতে পারে। এরপর আমার মেথড ট্রাই করতে পারেন, ∫05√x এর মান বের করুন, যদি ৬-৭ সেকেন্ডে বের হয়, তাহলে আসল EX, ES Plus-এ আরেকটু বেশি, হয়ত ৮-৯ সেকেন্ড লাগতে পারে। এর বেশি লাগলে সম্ভবত সেটি নকল।
সবশেষে, আমাদের ফেসবুক গ্রুপে যারা এখনো নেই, অবশ্যই যোগ দিতে ভুলবেন না। একইসাথে আমন্ত্রণ আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেল আর ফেসবুক পেজে। শেষ করছি এখানে, আসসালামু আলাইকুম।
প্রতিকূল সময়েও অনেক সুন্দর একটি পোষ্ট উপহার দেয়ায় অসংখ্য ধন্যবাদ।