ডিজাইন করা নিয়ে বিস্তারিত ধারণা ও গাইডলাইন

আসসালামু আলাইকুম। বেসিক ডিজাইন করতে পারাটা একটা দরকারি স্কিল। আমি সেই অর্থে কোন ডিজাইনার না- কিন্তু ডিজাইনার না হলেও আমাদের অনেকসময়ই টুকটাক ডিজাইন করার প্রয়োজন হয়ে থাকে। এই লেখাটা সে জায়গা থেকেই, যেন প্রয়োজনে ডিজাইন নিজে থেকে করতে পারেন। এছাড়া কীভাবে এই স্কিল আরেকটু ডেভেলোপ করা যায়, সেজন্য কিছু নির্দেশনা দেয়ারও চেষ্টা করব ইন শা আল্লাহ।

Raster গ্রাফিক্স ও Vector গ্রাফিক্স

প্রথমে আমি সহজভাবে Raster (বা Bitmap) গ্রাফিক্স ও Vector গ্রাফিক্সের পার্থক্য উপস্থাপন করতে চাই, কেননা এই ধারণাটুকু থাকলে কিছু ব্যাপার বুঝতে সুবিধা হবে।

রাস্টার গ্রাফিক্স পিক্সেলের সমন্বয়ে তৈরি হয়। পিক্সেল সহজভাবে বললে এক রঙের বর্গাকার ব্লক। যখন একটি ছবি যথেষ্ট জুম করা হবে, তখন এই পিক্সেলগুলো আলাদাভাবে দৃশ্যমান হবে। ভেক্টর গ্রাফিক্স বিভিন্ন জ্যামিতিক আকৃতি- যেমন পয়েন্ট, লাইন, কার্ভ কিংবা বহুভুজের সাহায্যে ডিফাইন করা হয়।

রাস্টার গ্রাফিক্সে একটি বৃত্তকে যদি জুম করা হয়, তাহলে দেখা যাবে অনেকগুলো পিক্সেল তথা বর্গাকার ব্লক মিলে বৃত্তটি তৈরি হয়েছে। অন্যদিকে ভেক্টর গ্রাফিক্সে একটি বৃত্তকে যতই জুম করা হোক, তা স্মুথ কার্ভ হিসেবে দেখা যাবে। নিচের ছবিদুটোতে এই পার্থক্যটি দেখানো হয়েছে।

ক্যামেরাতে মেগাপিক্সেল শব্দের সাথে আমরা পরিচিত। অর্থাৎ ক্যামেরাতে তোলা ছবি রাস্টার গ্রাফিক্স। এজন্য ফটো এডিটিংয়ের ক্ষেত্রে আমরা রাস্টার গ্রাফিক্স নিয়ে কাজ করি।

কিন্তু লোগো বা পোস্টার বা সোশ্যাল মিডিয়া পোস্ট প্রভৃতি ডিজাইনের ক্ষেত্রে ভেক্টর গ্রাফিক্স সুবিধাজনক। ভেক্টর গ্রাফিক্সের একটি গুরুত্বপূর্ণ সুবিধা হলো এখানে ইচ্ছামত জুম করা যায়, এডিটিংয়ে ফ্লেক্সিবিলিটি বেশি এবং প্রিন্টিংয়ে ভেক্টর গ্রাফিক্স সুবিধাজনক। ভেক্টর গ্রাফিক্স থেকে সহজেই রাস্টার গ্রাফিক্স হিসেবে এক্সপোর্ট করা যায়।

সফটওয়্যার

ইফিশিয়েন্টভাবে মানসম্মত ডিজাইন করার জন্য একটি ভালো সফটওয়্যারের গুরুত্ব অনস্বীকার্য। গ্রাফিক্স ডিজাইন সফটওয়্যার অনেক রয়েছে যাদের প্রত্যেকে একই দিকে ফোকাস করে না। কাজ অনুযায়ী প্রোপার সফটওয়্যার ব্যবহার করা এজন্য গুরুত্বপূর্ণ।

তবে ডিজাইন সফটওয়্যার করে দিবে না, সফটওয়্যার ব্যবহার করছেন যিনি তিনিই করবেন। তাই মানসম্মত ও কাজের জন্য যথাযথ যেকোন সফটওয়্যার ব্যবহার করা যেতে পারে। আসলে আপনি একটি সফটওয়্যার ইউজ করে ডিজাইন করতে পারলে সমজাতীয় অন্য সফটওয়্যারগুলোও পরবর্তীতে সহজেই ধরতে পারবেন।

ফটো ম্যানিপুলেশনের জন্য Photoshop, GIMP, Affinity Photo-সহ আরো অনেক ফ্রি ও পেইড অপশন আছে। এরপর ডিজিটাল ড্রইংয়ের বেলায় Photoshop, Krita, Paint Tool Sai প্রভৃতি সফটওয়্যার আছে। এই সফটওয়্যারগুলো মূলত Rastar গ্রাফিক্সে কাজ করে। এদের কয়েকটি ডিজাইনের জন্যও যথেষ্ট ভালো, তবে আমি সাজেস্ট করবো ভেক্টর গ্রাফিক্স ভিত্তিক সফটওয়্যার ব্যবহার করা।

ভেক্টর গ্রাফিক্সের জন্য Adobe Illustrator, Inkscape, Affinity Designer, Corel Vector, Boxy SVG প্রভৃতি আছে। পোস্টার বা লোগো ডিজাইনে এগুলো অধিকতর এপ্রোপিয়েট।

এরপর টেমপ্লেট ও অ্যাসেট বেজড কিছু সফটওয়্যার আছে। সবচেয়ে জনপ্রিয় উদাহরণ হবে Canva। এখানে খুবই চমৎকার কাজ করা যায়, এবং টেমপ্লেট ও অ্যাসেটসের সমন্বয়ে নতুন একজন খুব সহজেই অসাধারণ কিছু তৈরি করতে পারে। তবে পুরোপুরি নিজের মত ডিজাইন করতে চাইলে এধরণের প্লাটফর্মগুলো বেস্ট অপশন না।

Figma ইউআই ডিজাইনের জন্য- এরকম কিছু সফটওয়্যার একদম স্পেসিফিক কাজের জন্য বিশেষায়িত।

ভেক্টর গ্রাফিক্স সফটওয়্যার

দুটো সফটওয়্যার নিয়ে আমি কথা বলবো। ইলাস্ট্রেটর- কারণ এটা সবচেয়ে জনপ্রিয় (ও ইন্ডাস্ট্রি স্ট্যান্ডার্ড) এবং ইঙ্কস্কেপ- কারণ আমি এটা ইউজ করি (এবং এটা ফ্রি এবং অসাধারণ)।

যখন আপনি প্রোফেশনাল লেভেলে ডিজাইন করবেন, তখন বেশ কিছু দিক বিবেচনায় রাখার প্রয়োজন হয়। প্রোফেশনাল লেভেলের জন্য এডোবি ইলাস্ট্রেটর সাধারণত ডিফল্ট চয়েস। বেশ কিছু কারণে- ইন্ডাস্ট্রি কম্প্যাটিবিলিটি, থার্ড পার্টি ইন্টিগ্রেশনস, প্রোফেশনাল সাপোর্ট এবং খুবই গুরুত্বপূর্ণ- এডোবি ক্রিয়েটিভ ক্লাউড ইকোসিস্টেম।

এডোবি ইলাস্ট্রেটরের প্রাইসিং মডেল সাবস্ক্রিপশন বেজড, এবং প্রাইসিংও বেশ হাই। যদিও বাস্তবতা হলো আমাদের দেশে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে পাইরেটেড কপি ব্যবহার হয়। ইলাস্ট্রেটরের সাম্প্রতিক ভার্সনগুলো ব্যবহার করতে কিছুটা ভালো কনফিগারেশনের কম্পিউটার প্রয়োজন।

তবে যদি সফটওয়্যার বা ইকোসিস্টেম স্পেসিফিক বিশেষ কোন রিকুয়ারমেন্ট না থাকে, তবে যেকোন ভালো মানের ভেক্টর গ্রাফিক্স সফটওয়্যার ব্যবহার করা যেতে পারে। আমি পার্সোনালি ব্যবহার করি ইঙ্কস্কেপ। এটা সম্পূর্ণ ফ্রি- কোন সাবস্ক্রিপশন নেই, বিজ্ঞাপন নেই, ট্রায়াল বা প্রিমিয়াম প্ল্যান নেই- সিমপ্লি ফ্রি। ইঙ্কস্কেপ লিনাক্সে সমর্থিত, যেখানে ইলাস্ট্রেটর লিনাক্সে সমর্থিত নয়। এবং ইঙ্কস্কেপ তুলনামূলক লোয়ার কনফিগারেশন হার্ডওয়্যারে রান করতে সক্ষম।

ফ্রি মানে ফিচার বা ফাংশনালিটিতে কমতি থাকবে এই কথা ভাবলেও ভুল হবে, ইঙ্কস্কেপ খুবই উচ্চমানের সফটওয়্যার। এডোবি ইলাস্ট্রেটরের সাথে এটার ক্রস-কম্প্যাটিবিলিটি মোটামুটি, ইলাস্ট্রেটরে করা ফাইল ইঙ্কস্কেপে এবং ইঙ্কস্কেপে করা ফাইল ইলাস্ট্রেটরে ওপেন ও এডিট করা সম্ভব তবে সবকিছু ঠিকঠাক থাকবে না।

ডিজাইন স্টার্টিং গাইডলাইন

যখন কোন কিছু নিয়ে একদমই ধারণা থাকে না, তখন অনেক সময় খুব সহজ কিছু করাও দুঃসাধ্য মনে হয়। এডভান্সড বা কমপ্লিকেটেড কিছু ডিজাইন করতে চাইলে তা কঠিন হতে পারে। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে শুধু সিম্পল শেইপ, টেক্সট ও কালারের যথাযথ প্রয়োগে একটা চমৎকার ডিজাইন করা যায়।

প্রথমে আপনাকে ইন্টারফেস, টুলসসহ এরকম বিষয়গুলো একটু আয়ত্ত্ব করতে হবে। এটা ব্যবহার করতে করতেও আয়ত্ত্ব করা সম্ভব, সাথে প্রয়োজনে অনলাইনে সার্চ করে দেখে নিতে পারেন। অথবা এজন্য কোন বেসিক টিউটোরিয়াল সিরিজ ফলো করতে পারেন। এজন্য কিছু রিসোর্স টিউটোরিয়াল সাবসেকশনে থাকছে।

এরপর প্রাক্টিসের মাধ্যমে আপনি ডিজাইনে আরো বেটার হয়ে উঠতে পারেন। প্রাক্টিসের জন্য আপনার স্কিল অনুযায়ী অনলাইন (বা অফলাইন) থেকে বিভিন্ন ডিজাইন খুঁজে নিয়ে রিক্রিয়েট করার চেষ্টা করতে পারেন। এছাড়া ইউটিউবসহ বিভিন্ন প্লাটফর্মে বিভিন্ন টিউটোরিয়াল ফলো করে প্রাক্টিস করতে পারেন। দুটো বিষয়- প্রথমত, বেটার স্কিলড হওয়ার জন্য নিজে ডিজাইন করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ, শুধু টিউটোরিয়াল দেখা যথেষ্ট না। দ্বিতীয়ত, প্রাক্টিসের জন্য অন্যের ডিজাইন রিক্রিয়েট করা যেতে পারে, কিন্তু অনুমতি না থাকলে অনলাইনে শেয়ার করা বা কোন প্রিন্ট আইটেম প্রভৃতিতে ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকা উচিৎ।

টিউটোরিয়ালস

Inkscape

খুব সংক্ষেপে ৫ মিনিটের মধ্যে ইঙ্কস্কেপের একটা ওভারভিউয়ের জন্য শুরু করতে পারেন এখান থেকে: Inkscape Explained in 5 Minutes

Inkscape শেখার জন্য অফিসিয়াল টিউটোরিয়ালস এবং কিছু ইউজার রেকমেন্ডেশনস রয়েছে এখানে Inkscape Tutorials

যদি ভিডিও টিউটোরিয়াল ফলো করতে প্রিফার করেন, তাহলে এখানকার প্রথম ২৩টা ভিডিও দেখতে পারেন: TJ Free – Inkscape Tutorials, সাথে এই প্লেলিস্টে সর্বমোট ৮৭ টি ইঙ্কস্কেপ টিউটোরিয়াল আছে।

আরো বিভিন্ন ইঙ্কস্কেপ টিউটোরিয়ালের জন্য Logos By Nick চ্যানেলটি খুব চমৎকার।

আমি বলবো না একদম ধারাবাহিকভাবে কোন একটি সিরিজ সম্পূর্ণ অনুসরণ করতে হবে। আপনার সুবিধামত একাধিক মাধ্যম আপনি সমন্বয় করতে পারেন। প্রসঙ্গত, পুরনো টিউটোরিয়ালগুলোর সাথে লেটেস্ট ভার্সনের কিছু তফাৎ থাকবে।

যেমন আমার শেখা অনেকাংশে সেল্ফ-এক্সপ্লোরেশনের মাধ্যমে। Logos By Nick চ্যানেলের বিভিন্ন ভিডিও তার সাথে অনেক কিছু শিখিয়েছে (ধারাবাহিকভাবে কোন প্লেলিস্ট ফলো করিনি)। এছাড়া প্রয়োজন হলে ওয়েব সার্চ করে দেখে নিই।

Illustrator

Illustrator-এর বেসিক শেখার জন্য এই প্লেলিস্টটি দেখা যেতে পারে: GFXMentor – Adobe Illustrator Complete Course in Urdu / Hindi। এখানে ইন্ডিভিজুয়ালি টুলগুলোর ইউসেজসহ একদম বেসিক থেকে ডিটেইলস আছে।

এরপর বিভিন্ন ইলাস্ট্রেশন ও অন্যান্য ইঙ্কস্কেপ টিউটোরিয়ালের জন্য এই প্লেলিস্ট ফলো করতে পারেন: Nobu Design – Adobe Illustrator Tutorials। এগুলোতে কোন ভয়েসওভার নেই, মিউজিক এভোয়েড করতে মিউট রাখা যেতে পারে।

ভেক্টর ডিজাইনের বেলায় মূলনীতিগুলো একই। ইলাস্ট্রেটরের নলেজ অনেকাংশে আপনি ইঙ্কস্কেপে প্রয়োগ করতে পারবেন এবং ভাইস-ভার্সা। একটি ভেক্টর ডিজাইন সফটওয়্যারে ডিজাইন করতে শিখলে পরবর্তীতে অন্য সফটওয়্যার ব্যবহার করতে সবকিছু নতুন করে শিখতে হবে না।

ডিজাইন গাইডলাইন

মানসম্মত ডিজাইন করতে হলে ক্ষেত্রে ব্র্যান্ডিং, লেআউট, ডিজাইন সাইকোলজির বিষয়গুলোতে দখল থাকা খুবই প্রয়োজন। Satori Graphics চ্যানেলটিতে এরকম বিভিন্ন বিষয়ে উঁচুমানের কনটেন্ট রয়েছে।

GFXMentor চ্যানেলটির সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়ার জন্য জাবির আহমেদ জাহিন ও অপর দুটি চ্যানেলের জন্য মোহাম্মদ সাদমান সাকিব ভাইয়ের প্রতি কৃতজ্ঞতা।

ডিজাইন – অ্যাপ্রোচ

কোন কোন ডিজাইন বেশ কমপ্লেক্স ধরণের হয়- যে ধরণের ডিজাইনের ক্ষেত্রে আসলেই স্কিল ও ধৈর্য্যের প্রয়োজন। তবে অনেকসময়ই খুব সিম্পল শেপ বা কার্ভের সমন্বয়ে বেশ সুন্দর ডিজাইন তৈরি করা যায়। সুন্দর একটা ডিজাইন সবসময় অনেক স্কিলের ব্যাপার না, বরং প্রায় সময়ই শুধু সুন্দর একটা আইডিয়া প্রয়োজন এজন্য। আবার অনেক ডিজাইন আছে, দেখতে কমপ্লিকেটেড মনে হয়, অথচ একটু চিন্তা করলে দেখা যায় এমন কঠিন কিছুই সেখানে নেই।

আমি বেশ অলস স্বভাবের প্রাণী হওয়াতে সাধারণত ব্লগ পোস্টের থাম্বনেইল আলাদাভাবে ডিজাইন করি না, কোন রয়ালিটি ফ্রি ছবি, বা সিম্পল ব্যাকগ্রাউন্ডের ওপরে টেক্সট এভাবে কাজ চালিয়ে দিই। কিন্তু ডিজাইনের পোস্ট যেহেতু, এই পোস্টের থাম্বনেইলে ব্যাপারটা আসা দরকার। তাই সত্যি বলতে কিছুটা সময় নিয়েই আমি এই পর্যন্ত পৌঁছেছি।

শুরুতেই যেমনটা বলেছি, আমি ডিজাইনার না। এই ডিজাইন রিক্রিয়েট করাটা খুব অল্প সময়ের ব্যাপার। কিন্তু ব্লাঙ্ক ক্যানভাস থেকে বিভিন্ন আইডিয়া ট্রাই করে প্রথমবার ডিজাইন পর্যন্ত পৌঁছানোর ব্যাপারটা সময়সাপেক্ষ। আমি প্রায়ই ডিজাইন করার আগে অনলাইনে কিছু ডিজাইন দেখে নিই- হুবহু কপি করার জন্য না, কিছুটা অনুপ্রেরণা পাওয়ার জন্য। চর্চা করতে করতে নিজে থেকেও ডিজাইন আইডিয়া পাওয়া সহজ হয়ে আসে।

এখন এই ডিজাইনের দিকে একটু ভালোভাবে খেয়াল করা যাক। আমি সিম্পল রাখতে চেষ্টা করেছি। ব্যাকগ্রাউন্ডে লাইট একটা কালার। চারটা রাউন্ডেড কর্ণারযুক্ত স্কয়ার, তার মধ্যে চারটা আইকন। আইকনগুলো ইঙ্কস্কেপের বিভিন্ন টুলের আইকন। স্কয়ারগুলোতে ড্রপ শ্যাডো ব্যবহার করা হয়েছে। টেক্সটের অংশটুকুর ব্যাকগ্রাউন্ডে একটি আংশিক দৃশ্যমান বৃত্ত আছে। সাথে ওপর ও নিচের দিকে হোয়াইট স্ট্রাইপের মত আছে, যা ক্রমশ ব্যাকগ্রাউন্ডের সাথে মিশে গেছে। খুব বেশি কিছু, বা কঠিন কিছু কিন্তু একদমই না।

এখন একচুয়ালি এরকম ডিজাইন কীভাবে করা যায়, সেটাও আমরা দেখবো। তবে আরেকটু পরে।

ফন্ট ও কালার

নিচের ছবিতে বামদিকের ছবিটা Opinion ᴉ= Fact ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া। আমার কাছে ফ্যাসিনেটিং লেগেছে সত্যি বলতে। ফ্ল্যাট কালার ব্যাকগ্রাউন্ড, সাথে শুধু টেক্সট, তাও কোন স্টাইলিশ ফন্ট না। তবে সত্যি বলতে কী, শুধু এই কালার আর টেক্সট ফরমেটিংয়ে যথাযথ কাজই একটা সিম্পল ডিজাইনকে আকর্ষণীয় করে তুলতে পারে।

বাস্তব এক্সাম্পল দিই, নিচের ডিজাইন- যেটা আমি করলাম আরকি। শুধু ফন্ট আর কালারের জন্য কী ডিজাইন কী হয়ে যেতে পারে তার একটা উদাহরণ দিলাম। যদিও লেখা পড়া সম্ভব, এটার দিকে শুধু তাকিয়ে থাকাও চোখের জন্য খুবই অস্বস্তিকর।

তো কালার আর ফন্ট ডিজাইনে কতটা গুরুত্বপূর্ণ এটার একটা ধারণা পাওয়ার জন্য বোধহয় এই একটা উদাহরণই যথেষ্ট। এখন যথাযথ ফন্ট আর কালার সিলেক্ট করবেন কীভাবে? এর জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ টুল হলো আপনার চোখ। অর্থাৎ চোখের দেখায় ভালো লাগার মত এবং কাঙ্ক্ষিত মেসেজ পৌঁছানোর জন্য যথাযথ কালার ও ফন্ট সিলেকশন প্রয়োজন।

কিন্তু এই কাজটা ততটাও সহজ না। আমি আগে প্রচুর স্ট্রাগল করতাম এখানে, এবং এখনো কিছুমাত্রায় করি। তবে এখন কিছু সিম্পল ট্রিকস ফলো করে আমার জন্য ব্যাপারটা একটু সহজ করে নিয়েছি।

ফন্ট

ফন্টের বেশকিছু টাইপ আছে, উল্লেখযোগ্য হলো- Serif, Sans (বা Sans-Serif), Slab (বা Slab-Serif), Script, Handwritten, Decorative, Monospace প্রভৃতি। প্রাসঙ্গিকভাবে এই আর্টিকেলটি দেখতে পারেন: Serif, Sans, Script & Slab: 4 Font Types Explained

স্টাইলিশ ফন্ট ব্যবহারের ক্ষেত্রে প্রয়োগ সঠিকভাবে করা প্রয়োজন। যদি ফন্ট আউট অফ প্লেস মনে হয়, এবং ফন্ট ম্যাচিং করা মুশকিল লাগে, তাহলে Serif ও Sans-Serif ধরণের স্ট্যান্ডার্ড কোন ফন্ট ব্যবহার করা যেতে পারে। এটা সেফ প্লে আরকি।

ইংরেজি ভাষার ক্ষেত্রে আমার Poppins (Sans) ও URW Gothic (Sans) ফন্টদুটো সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করা হয়। Comfortaa (Sans) Backslash (Serif, শুধু পার্সোনাল ইউজের জন্য ফ্রি), FreeSerif (Serif) ফন্টগুলো আমি বেশি ব্যবহার করে থাকি। বাংলা ডিজাইন রিসেন্টলি কম প্রয়োজন হয়েছে, Noto Sans Bengali ফন্ট দিয়েই সাধারণত চালিয়ে নিই। তবে এই পোস্টের থাম্বনেইলে Potro Sans Bangla ব্যবহার করেছি।

যাদের ফন্ট সেন্স ভালো কিংবা যারা আরো এক্সপ্লোর করতে চান, তাদের জন্য কিন্তু এই কথাগুলো না। যারা আরো এক্সপ্লোর করতে চান, Satori Graphics-এর বিভিন্ন ফ্রি ফন্ট নিয়ে একটি সমৃদ্ধ প্লেলিস্ট আছে।

Google Fonts-এ বিভিন্ন ভাষার ফন্টের সংগ্রহ রয়েছে, যার প্রতিটি ওপেন সোর্স এবং পার্সোনাল ও কমার্শিয়াল ইউসেজের জন্য ফ্রি। ইংরেজি ফন্টের জন্য FontSpace আমার প্রিয় একটি জায়গা- তবে এখানকার অনেক ফন্ট শুধু পার্সোনাল ইউজের জন্য ফ্রি। কমার্শিয়াল ইউসেজ লাইসেন্সসহ ফন্টের হিউজ একটি সংগ্রহশালা Font Squirell

বাংলা ফন্ট নিয়ে রিসেন্ট সময়ে অনেকেই কাজ করছেন। ফ্রি ডাউনলোড ও ক্রয়ের জন্য চমৎকার সব ফন্ট পাওয়া যাবে জন্য OmicronLab, একুশে, Codepotro Fonts, FontBD, ফন্টলিপিলিপিঘর ওয়েবসাইটগুলোতে।

কালার

কালার পিকারের ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরণের কালার স্পেস অনেক ধরণের রয়েছে। HSV (বা HSB) কালার পিকারে কালারকে Hue, Saturation, Value (বা Brightness) এই তিনটি প্রোপার্টির সাহায্যে চিহ্নিত করা হয়। HSL এর ক্ষেত্রে Value এর পরিবর্তে ব্যবহার হয় Lightness। এছাড়া RGB বা CMYK কালার পিকার রয়েছে। এবং এর বাইরে HCL, LCh, Okhsl, Okhsv, HSLuv এবং আরো। এবং কালার পিকার বিভিন্ন শেইপের হতে পারে।

আমি HSL কালার পিকার ব্যবহারে অভ্যস্থ। নিচে ইঙ্কস্কেপের HSL কালার পিকারের স্ক্রিনশট যুক্ত করলাম Hue হলো মূল কালার। Saturation বলা যায় কতটা কালারফুল হবে, স্যাচুরেশন কম হলে গ্রে-এর দিকে যাবে। সবশেষে Lightness হলো কতটা ডার্ক বা লাইট হবে।

HSV সম্ভবত অধিকতর জনপ্রিয়। এখানে Saturation ও Value কিছুটা আলাদাভাবে কাজ করে। ভ্যালু ব্লাক থেকে হোয়াইট অথবা স্যাচুরেশনের সীমা পর্যন্ত যাবে, যেখানে HSL-এ তা সর্বোচ্চ স্যাচুরেটেড কালার হয়ে হোয়াইটের দিকে যায়। একই কালারের জন্য কালার পিকার দুটোর স্ক্রিনশট কম্পেয়ার করলে এই পার্থক্য বুঝতে সুবিধা হবে।

এরকম লাইন স্টাইল ছাড়াও অন্যান্যভাবে এটি উপস্থাপন করা যেতে পারে। নিচের স্ক্রিনশটে HSV ও HSL কালার পিকারের বিকল্প ভ্যারিয়েন্ট দেখানো হয়েছে। HSV কালার পিকারের বাইরের লাইনটি Hue, বর্গাকার সেকশনে বাম থেকে ডানে Saturation এবং নিচ থেকে ওপরে ভ্যালু Value নির্দেশ করে। HSL কালার পিকারটিতে আউটার সার্কেল HUE, পরিধি থেকে কেন্দ্রের দিকে স্যাচুরেশন এবং বাইরের লাইনটি লাইটনেস নির্দেশক।

ছবি সোর্স: Björn Ottosson

ডিজাইনের ক্ষেত্রে কনট্রাস্ট মেইনটেইন করা গুরুত্বপূর্ণ। যথেষ্ট কনট্রাস্ট না থাকলে ছবি মলিন দেখাবে। কনট্রাস্ট ঠিকঠাক আছে কিনা এটা বোঝার সহজ উপায় হলো Grayscale মোডে দেখা, Inkscape-এর ক্ষেত্রে View মেনুতে Gray Mode (শর্টকাট alt + 5) অপশন রয়েছে।

বামদিকের ছবিতে কনট্রাস্ট চমৎকারভাবে মেইনটেন হয়েছে, তবে ডানদিকের ছবিতে হয়নি…

স্যাচুরেশনের ক্ষেত্রে, স্যাচুরেটেড কালারে চোখ সহজে যায়। তাই যেখানে ফোকাস থাকবে, সেখানে তুলনামূলক বেশি স্যাচুরেটেড কালার ব্যবহার করা যেতে পারে।

যথাযথ কালার কম্বিনেশনের জন্য কালার থিওরির বেসিক কিছু কনসেপ্ট থাকা দরকার। বিভিন্ন কালার বিভিন্ন বিষয়ের সাথে বেশি উপযুক্ত। এই দুটো ভিডিও আমি চেক করতে বলবো-

Color Theory – A Beginners Guide – Brad’s Art School
Color Theory for Noobs | Beginner Guide – Flow Studi

Canva-এর কালার নিয়ে খুবই ইউজফুল কিছু টুলস ও রিসোর্স আছে: Colors – Canva

ডিজাইনে অনেক রকম কালার ব্যবহার থেকে লিমিটেড কালার প্যালেট ব্যবহার করা অনেক সময়ই বেটার রেজাল্ট দেয়। আমি সাধারণত Hue একটি অথবা দুটি ব্যবহার করি, সাথে প্রয়োজন অনুযায়ী লাইটনেস বা স্যাচুরেশনের তারতম্য করি। Inkscape-এর কালার প্যালেট এজন্য কিছুটা হেল্পফুল।

অনলাইনে কালার প্যালেট জেনারেট বা এক্সপ্লোরের জন্য বিভিন্ন সাইট রয়েছে, যেমন- Coolors, Color palettes – Canva এবং আরো অনেক। কালার প্যালেট মেইনটেন করে কাজ করা সুবিধাজনক হতে পারে।

কালার নিয়ে এত কথা ওভারহোয়েলমিং হয়ে যাচ্ছে? এগুলো কিন্তু কোন হার্ডকোডেড রুল না। সব কথার মূল কথা একটাই- ডিজাইনের উদ্দেশ্য যেন যথাযথভাবে পূরণ হয় এবং যেন তা দেখতে ভালো লাগে। আর তা নিশ্চিত করার জন্য সবচেয়ে বড় টুল হলো আপনার দুটো চোখ। এবং বাকি সবকিছু শুধু কিছু রেফারেন্সের জন্য।

ফ্রি রিসোর্স যেখানে পাবেন

Pixabay-তে বিনামূল্যে কমার্শিয়াল ইউসেজ অনুমোদিত ইমেজ, ভেক্টর, ইলাস্ট্রেশন, GIFs প্রভৃতি পাওয়া যায়। PexelsUnsplash থেকে বিনামূল্যে স্টক ইমেজ পাওয়া যাবে। Reshot থেকে ভেক্টর আইকনস ও ইলাস্ট্রেশন ডাউনলোড পারবেন। Remix Icon থেকে পেয়ে যাবেন বিভিন্ন আইকনস। এবং এই ওয়েবসাইটগুলোর রিসোর্স পার্সোনাল বা কমার্শিয়াল ইউসেজের অনুমতি থাকার পাশাপাশি কোন অ্যাট্রিবিউশনেরও প্রয়োজন নেই। [কৃতজ্ঞতা: সাদমান সাকিব ভাই]

Inkscape – প্রাথমিক সেটআপ, ইন্টারফেস ও ডিজাইনিং

কথা অনেক হয়ে গেলো। এখন ডিজাইনের একটা প্রাক্টিকাল এক্সাম্পল দেখা যাক, এই পোস্টের থাম্বনেইলের মত একটি ডিজাইন কীভাবে করা যেতে পারে। কিন্তু তার আগে ডিজাইন টুলের সাথে পরিচয় প্রয়োজন, যেখানে আমি ব্যবহার করছি Inkscape।

ইঙ্কস্কেপ প্রথমবার চালু করার সময় কয়েকটি কুইক সেটআপ প্রদর্শিত হবে। গ্রাফিক্স অ্যাপে ডার্ক থিম ব্যবহার করাটাই বোধহয় কনভেনশন, তবে আমি লাইট থিমের সাথে সিম্বলিক আইকনে স্বচ্ছন্দ্য বোধ করি।

Inkscape প্রথম ওপেন করার পর ইন্টারফেস কিছুটা এরকম দেখাবে। ছবিতে সেকশনগুলোর নাম মার্ক করে দেয়া হলো।

কোন সেকশন প্রয়োজন না থাকলে View > Show/Hide থেকে আনচেক করে নিতে পারেন। যদি আইকন সাইজ ডিসপ্লে অনুযায়ী ছোট মনে হয়, সেক্ষেত্রে Edit মেনু > Preferences > Interface > Toolbars থেকে এডজাস্ট করে নিতে হবে।

ইন্টারফেসের আরেকটি অংশ হলো প্যানেল। ওপেন থাকা প্যানেলগুলো কমান্ড বারের পাশে থাকবে। বিভিন্ন প্যানেলে মেনু ও কমান্ড বারে পাওয়া যাবে, এবং প্যানেল বারের ড্রপডাউন থেকে সকল এভেইলেবল প্যানেল একসেস করা যাবে। ফ্রিকুয়েন্ট ব্যবহার করা প্যানেলগুলোর জন্য কীবোর্ড শর্টকাট ব্যবহার করা ইফিশিয়েন্ট, বিশেষ করে Fill and Stroke – Ctrl + Shift + F, Align and Distribute – Ctrl + Shift + A, Export – Ctrl + Shift + E।

ডিজাইন করার একটা ব্যাপার হলো এখানে কোন সঠিক বা ভুল নিয়ম নেই, যতক্ষণ পর্যন্ত কাঙ্ক্ষিত ফলাফল পাওয়া যাচ্ছে। আমি যেভাবে করছি, অনেক কিছু বিকল্প উপায়ে করা যেতে পারে।

যদিও একটা পেজ দেখা যাচ্ছে, ইঙ্কস্কেপ, ইলাস্ট্রেটরসহ ভেক্টর গ্রাফিক্স সফটওয়্যারগুলোতে ক্যানভাস প্রাক্টিকালি ইনফাইনাইট। পেজ এরিয়ার মধ্যে থাকার বাধ্যবাধকতা নেই। পেজ থাকাটা ডিস্ট্রাক্টিং মনে হলে হাইড রাখতে চাইলে এটা ফলো করুন।

তো এখন মূল ডিজাইনে আশা যাক। আমরা ‘ডিজাইন – অ্যাপ্রোচ’ সেকশনে দেখানো থাম্বনেইলটি রিক্রিয়েট করব। শুরু করব আইকনগুলো থেকে। ডিজাইনের যেকোন অংশ বা সম্পূর্ণ ডিজাইন পরবর্তীতে স্কেলিং করা যাবে, তাই আইকন সাইজ ছোট-বড় নিয়ে সমস্যা নেই। তবে সবগুলো আইকন কনসিস্টেন্ট রাখা প্রয়োজন।

ওপরের ছবির ইন্সট্রাকশন অনুযায়ী রেকটাঙ্গল আইকনটি তৈরি করুন। এরপর একইভাবে সার্কেল তৈরি করুন। এক্ষেত্রে রেডিয়াস হবে রেকটাঙ্গলের হাইট ও ওয়াইডথের অর্ধেক।

পরবর্তী আইকনটি তৈরির জন্য রেকটাঙ্গল ও সার্কেল সমন্বয় করা প্রয়োজন। এজন্য আগের শেইপদুটো সিলেক্ট করে ডুপ্লিকেট (Ctrl+D) বা কপি-পেস্ট করতে পারেন।

সিলেক্টর টুল সিলেক্টেড অবস্থায় কোন অবজেক্টে ক্লিক করলে সিলেক্ট হবে, ক্লিক এন্ড ড্রাগ করে এরিয়ার সকল অবজেক্ট সিলেক্ট করা যাবে, Shift প্রেস করে সিলেক্ট করলে সিলেকশনে যুক্ত হবে অথবা এক্সক্লুড হবে, Alt প্রেস করে ক্লিক এন্ড ড্র্যাগ করলে যে অবজেক্টগুলো স্পর্শ করা হবে সেগুলো সিলেক্ট হবে। যদি একাধিক অবজেক্ট একটির ওপরে আরেকটি থাকে সিলেক্ট করলে ওপরেরটি সিলেক্ট হবে, এরপর Alt চেপে ক্লিক করে বা মাউস হুইল স্ক্রল করে নিচের অবজেক্টগুলো সিলেক্ট করা যাবে। কনফিউজিং লাগছে? ট্রাই করুন, তাহলে বোঝা সহজ হবে।

এক্সপোর্টকৃত ফাইলটি png, jpg, webp ফরমেটগুলোতে হলে তা রাস্টার গ্রাফিক্সে পরিণত হবে, এবং সোশ্যাল মিডিয়াসহ সর্বত্র সহজেই ব্যবহার করা যাবে। পিডিএফ বা Plain SVG-এর ক্ষেত্রে ভেক্টর হিসেবে থাকবে, তবে কিছু তারতম্য হতে পারে। পরবর্তীতে এডিটের জন্য মেইন ফাইলটি সেভ রাখা উচিৎ (File > Save বা Ctrl + s)

শেষ কথা

কৃতজ্ঞতা শেষ পর্যন্ত আসার জন্য। সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি প্রস্তুত করা সময় ও ধৈর্য্যসাপেক্ষ একটি কাজ ছিলো। আশা করছি ডিজাইন শেখার জন্য এটি উপকারী হবে। আপনাদের মন্তব্য ও পরামর্শ কামনা করছি। সেই সাথে পরিচিতজনদের সাথে কিংবা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করার জন্য অনুরোধ থাকবে। নিয়নবাতি টেলিগ্রাম গ্রুপে যুক্ত হতে পারেন আমাদের সাথে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *