পপ ওএস ২১.০৪: নতুন কিছুর শুরু (কসমিক)

পপ ওএস (Pop!_OS) নিয়ে ভালো লাগা বা না লাগা এর আগে যা কিছু ছিলো, ২১.০৪ ভার্সনে এসে অনেক কিছুই বদলে গেছে। পপ ওএসে এতদিন ভ্যানিলা বা স্টক গ্নোম ডেস্কটপের যে ইনহেন্সড একটা এক্সপেরিয়েন্স পাওয়া যেত, তা পার্সোনালি আমার বেশ ভালো লাগতো। তবে ২১.০৪-এ এসে তারা ইন্টিড্রিউস করেছে কসমিক ডেস্কটপ, যেটা ঠিক নতুন কোন ডিই না, গ্নোম ডেস্কটপের আরো কাস্টমাইজড এক্সপেরিয়েন্স।

ট্রেডিশনাল ডেস্কটপ এক্সপেরিয়েন্সের সাথে গ্নোম এক্সপেরিয়েন্স কিছুটা মিক্সআপ হয়ে গেছে পপ ওএসে। শুরুতে একটু নতুন করে অভ্যস্থ হতে হয়, নতুন একটা ওয়ার্কফ্লোতে মানিয়ে নিতে হয়। প্রাথমিকভাবে কসমিক নিয়ে আমার যেটা মনে হয়েছে, তারা তাদের ডেস্কটপকে আরো বেশি প্রোডাক্টিভ করতে চেয়েছে। পপ ওএস আগে থেকেই কীবোর্ডফ্রেন্ডলি। কসমিকে তারা এটাকে আরো রিফাইন্ড করেছে। তবে বিশেষভাবে মাউস এবং ট্র্যাকপ্যাড ফ্রেন্ডলি করার ব্যাপারটা এই ভার্সনের একটা গুরুত্বপূর্ণ দিক।

পপ ওএস ২১.০৪-কে নিয়ে কথা বলতে হলে একটা কথা মনে রাখতে হবে, এখানে তারা একটি বড় রকম পরিবর্তন নিয়ে এসেছে, যার সবে শুরু হলো। কাজেই সময়ের সাথে কসমিককে আমরা আরো রিফাইনড দেখতে পাবো বলে আশা করছি।

পপ ওএসের ওয়েলকাম স্ক্রিনে কয়েকটি কাস্টমাইজেশন ও নির্দেশনার মধ্য দিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়, যেটা একটা প্রাথমিক পরিচিতি করে দেয়। তবে এখানে ডার্ক মোড বা লাইট মোড, ডক অটো/ইন্টেলিজেন্ট হাইডসহ আরো দুয়েকটি বিষয় যুক্ত করে দেয়া যেত মনে হয়েছে, অবশ্য সেটিংস থেকে যেকোন সময় করতে পারবেন।

এবার আমাদের ডেস্কটপের দিকে নজর দেয়া যাক। আগের ভার্সনগুলোতে Pop!_OS-এ ভ্যানিলা গ্নোমের মত শুধু একটি Activities বাটন ছিলো, এবার তারা Workspace ও Applications-কে পৃথক করে দিয়েছে। অর্থাৎ, Applications এখন সরাসরি প্যানেল থেকে একসেস করা যাবে, Activities থেকে যেতে হবে না, মানে একটা ক্লিক কম লাগবে। নিচের ডকটিও নতুন, যেটা ড্যাশ টু ডকের মডিফাইড ভার্সন।

ভ্যানিলা গ্নোমে ডক একসেস করতে হলে Activities-এ যেতে হয়, এখানে সামনে নিয়ে আসাটা আরেকটা মাউস-ফ্রেন্ডলি পদক্ষেপ। যদি ভালো না লাগে আপনি ডিজেবল করে রাখতে পারেন, এছাড়া অটো/ইন্টেলিজেন্ট হাইডের অপশনও আছে। আর হ্যা, এটাকে ডিসপ্লের ডান কিংবা বামদিকেও প্লেস করতে পারেন। চাইলে স্ক্রিনের প্রান্ত পর্যন্ত এক্সটেন্ড করতে পারেন, ওটাই ডিফল্ট।

ওপরে প্যানেলের সাথে ডক মিলে বিশাল জায়গা খায়, কাজেই ইনটেলিজেন্ট হাইড ব্যবহার করাটাই শ্রেয় মনে হয়েছে। এখানে একটা শো ডেস্কটপ বাটন এড করা গেলে খারাপ হত না (অবশ্য মাল্টি ওয়ার্কস্পেসে অভ্যস্থ হলে দরকার হয় না)। এছাড়া যদি ভ্যানিলা গ্নোমের মত শুধুমাত্র Applications বা Workspace-এ গেলে ডক শো করবে এমন একটা অপশন থাকতো, তাহলে অনেকের পছন্দ হতে পারতো।

অপশন অবশ্য আছে, তা হলো কসমিক সংশ্লিষ্ট এক্সটেনশনগুলো ডিজেবল করে দেয়া। কিন্তু সমস্যা হলো ব্যাপারটা ঠিক ঠিকঠাক কাজ করে না, যেমনটা ছবিতে দেখতে পাচ্ছেন। এটা অবশ্যই ফিক্স করা উচিৎ, কেননা আগের ওয়ার্কফ্লোর সাথে কেউ কেউ হয়ত সেরকমটাই প্রিফার করতে পারেন, আরো ভালো হয় যদি এক্সটেনশনের পরিবর্ত সেটিংস থেকেই কসমিক ডিজেবল বা এনাবল করার অপশন থাকে।

ডকে একটিভ অ্যাপে এখানে ক্লিক টু মিনিমাইজ এনাবল করা নেই, সিঙ্গেল উইন্ডো থাকলে ফোকাস, একাধিক উইন্ডোজ  এমনকি সেটিংসেও এনাবল করার সুযোগ নেই। ভ্যানিলা গ্নোমের ক্ষেত্রে ব্যাপারটা ভিন্ন, যেহেতু ডক Activites অংশে থাকে। তবে ভিজিবল ডকে অনেকেই হয়ত ক্লিক মিনিমাইজ ফিচারটা চাইবেন, তাই অন্তত সেটিংসে অপশন দিলে ভালো হত। অবশ্য এখনও ইজিলি এনাবল করা যায়, এখানে দেখে নিন। বাই দা ওয়ে, কিছুক্ষণ ব্যবহারের পর দেখলাম ব্যাপারটা খুব একটা দরকার হচ্ছে না।

মিনিমাইজের কথা যখন বলছি, পপ ওএস কিন্তু এখন মিনিমাইজ বাটন উইন্ডোতে বাই ডিফল্ট এড করে দিয়েছে, যেটা আগের ভার্সনগুলোতে থাকতো না। যারা মাল্টি ওয়ার্কস্পেসে অভ্যস্থ না, তাদের জন্য সুবিধাজনক এবং কসমিকের ডক স্টাইলের সাথে সম্ভবত এটা মানানসই। সেটিংস থেকে  মিনিমাইজ, ম্যাক্সিমাইজ বাটন শো করবে কিনা কনফিগারযোগ্য।

 

সেটিংসে ডেস্কটপ সেটিংস সেকশন হিসেবে Appearance সেকশনকে নতুন করে সাজানো হয়েছে। এখন শুধু ব্যাকগ্রাউন্ড আর ডার্ক/লাইট মোডের পাশাপাশি আরো বিভিন্ন সেটিংস দেয়া হয়েছে, বেশ ভালো।

ওয়ার্কফ্লো নিয়ে একটু বলি, যেমনটা বলছিলাম, মাউস, টাচপ্যাড বা কীবোর্ড তিনটির জন্যই এটা বিশেষায়িত। বিভিন্ন টাচপ্যাড জেশচার এবার যুক্ত হয়েছে, তবে যেহেতু আমি ডেস্কটপিয়ান, তাই এক্সপ্রেরিয়েন্স করতে পারিনি। মাউসের ক্ষেত্রে ডকের সংযোজন বিশেষভাবে সহায়ক এবং ওয়ার্কস্পেস আর অ্যাপ্লিকেশন পৃথক করাটাও একটুখানি টাইমসেভার। তবে এরপর তাদের লঞ্চার নিয়ে না বললেই না।

পপ ওএসের এই লঞ্চারে অ্যাপ্লিকেশন ব্রাউজের একটা খুঁজে বের করা নয়, আপনি একটিভ উইন্ডোগুলো দেখতে পারবেন এবং কীবোর্ড বা মাউসের সাথে সুইচ করতে পারবেন, সিস্টেমে ডিপলি ইন্টিগ্রেটেড সার্চ রেজাল্ট দেখায়, ক্যালকুলেটর, ওয়েব সার্চ, ফাইল ন্যাভিগেশন কিংবা টার্মিনাল কমান্ড দিতেও ব্যবহার করতে পারবেন। আমার স্মরণমতে আগে অ্যাপ্লিকেশন লঞ্চারটি এতটাও এডভান্সড ছিলো না এবং শুধু কীবোর্ডে ব্যবহার করা যেত। এখন এটাকে তারা আরো দারুণ একটা মাত্রায় নিয়েছে।

বাই ডিফল্ট Super+A, Super+D, Super+/ দিয়ে যথাক্রমে অ্যাপ্লিকেশনস, ওয়ার্কস্পেসেস ও লঞ্চার এক্সেসযোগ্য। শুধু Super শর্টকাটের জন্য এই তিনটির কোন একটি সেট করে নেয়া যায় (ডিফল্ট লঞ্চার)। উল্লেখ্য সুপার মানে উইন্ডোজ কী। পপ ওএসের কীবোর্ড কন্ট্রোল সিম্পলি এমন একটা লেভেলে, যেটা ব্যবহার না করলে বোঝা কঠিন। অ্যাপ ওপেন, ক্লোজ, ম্যাক্সিমাইজ, মুভ, রিসাইজ, ওয়ার্কস্পেস সুইচ, টাইলিংসহ সিস্টেম ন্যাভিগেশনের জন্য আপনি মাউসের কথা সিম্পলি ভুলে যেতে পারেন।

অটোমেটিক টাইলিংয়ের কথা কি আমি বলেছি? পপ ওএস, একটা পূর্ণাঙ্গ ডেস্কটপ এনভায়রনমেন্টের পাশাপাশি একইসাথে একটা ফুল-ফ্লেজড টাইলিং উইন্ডো ম্যানেজারের মতও কাজ করতে পারে। এবার এখানে উইন্ডোগুলোকে ট্যাবে সাজানো, ফ্লোটিং উইন্ডোসহ আরো ফিচার যুক্ত হয়েছে দেখলাম। সবসময় সবার জন্য এটা দরকারি নয়, কাজেই আপনি এটা ইজিলি চালু বা বন্ধ করতে পারেন ওভারভিউ থেকে বা Super+Y প্রেস করে। আমি পার্সোনালি এটা ওভাবে ব্যবহার করি না, তবে অবশ্যই এটা ইমপ্রেসিভ।

পপ ওএসে পপ শপ নামক সফটওয়্যার ম্যানেজার আছে, ওটার হোমপেজটা খুব সুন্দর হলেও বাদবাকি দিকে এটা কনভিনিয়েন্ট লাগেনি মোটেও। পপ ওএসের মধ্যে ভালো না লাগা কিছুর কথা বললে পপ শপের কথা বিশেষভাবে মাথায় আসে।

আরো কিছু পুরনো ব্যাপার, যেগুলো নতুন ভার্সনেও পেয়েছি। আমার ডেস্কটপে পপ ওএস বুটআপ হওয়ার সময় স্ক্রিনে তাদের বুটস্ক্রিন লোগো বা কোনকিছু প্রদর্শিত হয় না, এটা আমার হার্ডওয়্যার স্পেসিফিক ভেবেছিলাম, তবে কিছু রিভিউ ভিডিওতেও এমনটাই দেখলাম। পপ ওএসের ডিফল্ট ফন্ট বেশ সুন্দর, তবে বাংলা ঠিকভাবে দেখায় না, যুক্তবর্ণগুলো ভেঙে যায়। এটা Gnome Tweak Tool ব্যবহার করে বদলে নিতে পারেন। আমি ছবির মত সেট করে নিয়েছি,

নতুন একটি সূচনা হিসেবে কসমিক আমার কাছে প্রমিসিং লেগেছে। রিফাইনমেন্টের অনেক জায়গা এখানে অবশ্যই আছে, সামনের ভার্সনগুলোতে আরো উন্নত, আরো রিফাইন্ড হিসেবে কসমিক এবং পপ ওএসকে দেখবো বলে আশা করছি। তবে আরেকটি বিষয় আছে, পপ ওএস উবুন্টু বেজড এবং উবুন্টুর পরবর্তী ২১.১০ রিলিজ গ্নোম ৪০-এ সুইচ করবে যেটা পপ ওএস (এবং উবুন্টু) ২১.০৪-এ থাকা ৩.৩৮.৫ থেকে একটা বড় রকমের চেঞ্জ নিয়ে এসেছে। কাজেই গ্নোম ৪০ এর পরিবর্তনের সাথে কসমিক কেমন হয়, তা নিয়ে পরবর্তী এডিশনটিতে আমার কাছে বেশ ইন্টেরেস্টিং মনে হচ্ছে।

ইন্টারফেস আর ওয়ার্কফ্লো নিয়েই আমি ফোকাস করছিলাম, একইসাথে পপ ওএস পারফর্মেন্স, ড্রাইভার সাপোর্ট, গেমিং ফ্রেন্ডলিনেস প্রভৃতি নিয়ে প্রশংসিত। মাল্টিটাস্কিং যারা বেশি করেন, অনেক অ্যাপ উইন্ডো একসাথে ম্যানেজ করতে হয়, পপ ওএস এখানে বিশেষভাবে আদর্শ। ডেভেলোপমেন্ট ও প্রোডাক্টিভ কাজের ক্ষেত্রে পপ ওএস দারুণ চয়েস হতে পারে লিনাক্স ডিস্ট্রোগুলোর মধ্যে। যদি প্রথাগত ডেস্কটপ ছেড়ে একটু নতুন ধরণের এক্সপ্রেরিয়েন্স চান, পপ ওএস একটা দারুণ চয়েস।

যারা খুবই বেসিক ইউজার, তাদের জন্য আমি অবশ্য পপ ওএস এই মুহুর্তে সাজেস্ট করছি না, কেননা কসমিকের আরেকটু সময় প্রয়োজন বোধ হয়েছে আর সবার জন্য এই ওয়ার্কফ্লো উপযুক্ত না-ও মনে হতে পারে। এছাড়া পপ ওএসের গ্নোম ডেস্কটপ এর কসমিক এক্সটেনশনগুলোর সাথে আরো কিছুটা বেশি রিসোর্স নিচ্ছে বোধ হয়েছে। আমার i3-3220, ৪ জিবি র‌্যামের পিসিতে এটা ব্যবহারযোগ্য, তবে ল্যাগের দেখা পাওয়া যায় টুকটাক। বাই দা ওয়ে, আমার মত কম র‌্যামের পিসি হলে সয়াপ ফাইল যোগ করে নিতে ভুলবেন না!

অফিসিয়াল ওয়েবসাইট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *