‘পৃথিবীকে গড়তে হলে সবার আগে নিজকে গড়’- ছোটবেলা থেকেই ফুলকুঁড়ি আসরের এই স্লোগানটা অন্তরে গেঁথে আছে। আমাদের ওপর জালিম শাসক ছিলো। আমরা স্বাধীনভাবে কথা বলতে বা কাজ করতে পারিনি। আলহামদুলিল্লাহ, আজ আল্লাহ আমাদের ওপর রহম করে জালিম শাসক থেকে মুক্ত করেছেন। আমরা প্রার্থনা করি আমাদের জন্য তিনি কল্যাণের ফায়সালা করুন।
কিন্তু তার পরপরই আমরা দেখেছি আমাদের নিজেদেরকে কতটা গড়ার বাকি আছে। যেরকম লুটতরাজ, ভাঙচুর, সংঘর্ষ দেখেছি, এটা কোনভাবে কাম্য না। অন্য ধর্মাবলম্বীদের উপাসনালয় এমনকি বাসা-বাড়ি, দোকানপাটে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ করা হচ্ছে। এটা কেমন কথা?
আমি ক্লিয়ার করতে চাই, এর পুরোটা রাজনৈতিক না। হ্যা, পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করাতে অংশে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য থাকতে পারে। কিন্তু লুটতরাজ, চুরি-ডাকাতি তো রাজনীতি না। এটার সিম্পল উত্তর হলো, কিছু মানুষ সুযোগ পেয়ে নিজেদের ঘৃণ্য স্বভাব দেখাচ্ছে।
আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়, মূর্তি-ভাস্কর্য, ফলক ভাঙা পর্যন্ত ঠিক আছে। জালিমদের শেষ চিহ্ন না রাখাই ভালো। কিন্তু রাষ্ট্রীয় সম্পদের ধ্বংস মানা যায় না। এরপরও গণভবনসহ কিছু জায়গায় মানুষের ক্ষোভটুকু বুঝতে পারি। কিন্তু অন্যের বাড়িঘরে আগুন, দোকানে লুটপাত, হত্যা-নৃশংসতা, সংখ্যালঘুদের ওপর অত্যাচার- এটা সভ্য সমাজে মানা যায় না।
আরেকটা কথা আছে, যারা আমার ভাইবোনদের এতদিন অত্যাচার করেছে, তাদের বিচার কি আমরা করব না? আমি আইনের প্রতি অনেক বেশি শ্রদ্ধাশীল না। আমি বিশ্বাস করি যেখানে আইন শুধু নিরাপরাধ মানুষের ওপর জুলুমের অস্ত্র, সেখানে আইনকে পায়ের তলায় পিষে ফেলতে হয়। এজন্য এই কয়দিন ছাত্রলীগ বা পুলিশের যারা ‘অন-ফিল্ডে’ হত্যার স্বীকার হয়েছে, তাদের মৃত্যু, দুর্ভাগ্যজনকভাবে, আমাকে খুশি করেছে। সহজ কথা, আপনার কিংবা আপনার ভাইয়ের ওপর যদি কেউ অস্ত্র চালাতে আসে, তখন আপনাকে প্রতিরোধ করতে হবে।
কিন্তু এখন যদি আওয়ামী লীগ সমর্থকদের বাসা-বাড়িতে আক্রমণ হয়, থানায় অগ্নিসংযোগ হয়, গণপিটুনিতে হত্যা করা হয়- আমি কোনভাবেই তা গ্রহণযোগ্য মনে করি না। কেননা এভাবে ন্যায় ও শান্তি প্রতিষ্ঠা সম্ভব না, এর প্রভাবে শুধু প্রতিহিংসার চর্চার নতুন ধারা শুরু হবে। এবং এর মাঝে, নিপীড়িত হতে হবে অনেক নিরাপরাধ মানুষকে।
আমাদের দেশে ন্যায়বিচার ও সুশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করা উচিৎ এই মুহুর্ত থেকে। আর এর শুরুটা হবে নিজের থেকে। নিজেকে সংশোধন করে। অনৈতিক সবকিছু বাদ দিয়ে। শুধু আবেগের বশবর্তী না হয়ে নিয়ন্ত্রণ যেখানে করতে হবে, সেখানে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করে। অন্যদের প্রতি সহানুভূতিশীল ও সহমর্মী হতে হয়ে। অন্যায়কে বাঁধা দিতে শিখে। কথায়, লেখায়, কাজে ভালো কিছুর পক্ষে ও মন্দের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে। এবং সমাজের মধ্যেও উত্তমকে সবকিছু ছড়িয়ে দিয়ে।
আল্লাহ আমাদের ওপর রহম করুন, কল্যাণকর ফায়সালা দিন। পৃথিবীর সর্বত্র মাজলুমদের জুলুম থেকে মুক্তি দিন এবং জালিমদের তাদের সমূচিত পাওনা বুঝিয়ে দিন।