ডাকডাকগো সার্চ ইঞ্জিনের সাথে ১৬ দিন: আসলেই অসাধারণ!

ওয়েব সার্চ ইঞ্জিন হিসেবে গুগল এখন এতটা জনপ্রিয় হয়ে গেছে যে “সার্চ কর” না বলে আমরা বলি “গুগল কর”। আমি নিজেও আর সবার মতই গুগলের সাথে অভ্যস্থ। কিছুদিন আগে ৪৮ ঘন্টার জন্য পিপীলিকা ব্যবহারের চ্যালেঞ্জ নিয়েছিলাম, আর একচুয়ালি আমি তাতে ভয়ঙ্করভাবে ব্যর্থ হয়েছিলাম। কেন দেখে নিতে পারেন এখানে

তো, এরপর ৪৮ ঘন্টার ডাকডাকগো চ্যালেঞ্জ নিলাম। আসলে প্রথমবার না, এর আগেও বেশ কিছুদিন ডাকডাকগো রেগুলার ব্যবহারের অভিজ্ঞতা ছিলো। তো যাই হোক, ডাকডাকগো চমৎকার সার্চ ইঞ্জিন এবং ৪৮ ঘন্টা নয়, গত প্রায় ১৬ দিন ধরে সার্চ ইঞ্জিন হিসেবে ব্যবহার করছি ডাকডাকগো।

অবশ্য এর মধ্যে গুগল সার্চ একদমই করিনি এমন নয়, ভুলক্রমে কিংবা ডাকডাকগো রেজাল্টের সাথে তুলনার জন্য বা বিশেষ কোন কারণে কয়েকবার গুগল ব্যবহার করেছি। তবে প্রায় সবসময়ই ব্যবহার করছিলাম ডাকডাকগো। যে ডিভাইসগুলো সচারচর ব্যবহার করে থাকি, প্রতিটিতেই ওয়েব ব্রাউজারে ডিফল্ট সার্চ ইঞ্জিনরূপে ডাকডাকগো সেট করে নিয়েছিলাম।

ডাকডাকগো, হাঁস হাঁস যাও, নামটা অদ্ভুত তাই না? নামটা এসেছে একটা খেলা Duck, duck, goose থেকে। তবে duckduckgo.com এতটা লিখতে যদি কষ্ট মনে হয়, একটা সহজ সমাধান আছে, duck.com ডোমেইন থেকেও ডাকডাকগো ভিজিট করা যায়।

ডাকডাকগো একটি প্রাইভেসি ফোকাসড সার্চ ইঞ্জিন। আপনার নিশ্চয়ই খানিকটা হলেও ধারণা আছে গুগল আমাদের কতটা ট্র্যাক করে থাকে। সম্ভবত খেয়াল করে থাকবেন, হয়ত আপনি কোন অনলাইন শপে কিছু প্রোডাক্ট দেখলেন, এরপর থেকে বিভিন্ন সাইটে গুগল সেধরণের প্রডাক্টের বিজ্ঞাপনই দেখাচ্ছে। তো, গুগল আপনাকে কতটা নজরদারিতে রেখেছে, এটা তার একটি উদাহরণ।

এবং ডাকডাকগো এখানে ব্যতিক্রম। অর্থাৎ, তারা আপনাকে ট্র্যাক করে না। অবশ্যই অল্প কিছু তথ্য তাদের সংগ্রহ করতে হয় রিলিভেন্ট সার্চ রেজাল্ট দেখানোর জন্য, তবে তা সম্পূর্ণ অ্যানোনিমাসলি সংরক্ষিত থাকে এবং এর মধ্যে কোন ব্যক্তিগত তথ্য অন্তর্ভুক্ত নয়। তাদের প্রাইভেসি পলিসি থেকে আরো পরিষ্কারভাবে জানতে পারবেন।

ট্র্যাক না করার ফলে এখানে আপনার সার্চ ইতিহাস অনুযায়ী রেজাল্টে পরিবর্তন আসে না। আয়ের জন্য তারাও বিজ্ঞাপন প্রদর্শন করে, তবে তা গুগলের মত আপনার ইতিহাস অনুযায়ী না, বরং কীওয়ার্ড রিলিভেন্ট। যেমন, মোবাইল সার্চ দিলে হয়ত কোন স্মার্টফোনের বিজ্ঞাপন আসবে এরকম।

বিজ্ঞাপনগুলো বিরক্তিকর মনে হয়নি, তবে চমৎকার ব্যাপার হলো, আপনি যদি বিজ্ঞাপন পছন্দ না করেন, ডাকডাকগো সুযোগ দেয় বিজ্ঞাপন সম্পূর্ণ বন্ধ রাখার। এই জিনিসটা আসলেই অসাধারণ লেগেছে। বাই দা ওয়ে, আমাদের নিয়নবাতি ব্লগ এগিয়ে নিতে আমাদেরও বিজ্ঞাপন প্রয়োজন, আমাদের সাথে বিজ্ঞাপন প্রচারের বিস্তারিত রয়েছে এখানে

তারা যে শুধু বিজ্ঞাপনই বন্ধ রাখার সুযোগ দেয়, এমন কিন্তু নয়। ডাকডাকগো প্রচুর কাস্টমাইজেবিলিটির সুযোগ দেয়। যেমন ধরা যাক ইন্টারফেস। তাদের ইন্টারফেস বেশ ক্লিন। তাদের এক্সটেনশনের কিছু প্রচারণা রয়েছে, কিন্তু চাইলেই আপনি সেটিংস থেকে তা বন্ধ রাখতে পারেন। অথবা এক্সটেনশনটি ইন্সটল করে নিতে পারেন, তাহলে আর দেখাবে না। গুগলসহ বিভিন্ন ট্র্যাকারদের থেকে সুরক্ষা, নিরাপত্তা ও প্রাইভেসি নিয়ে কিছু সুবিধা প্রদান করে এই এক্সটেনশন।

এক্সটেনশনটি ইন্সটল করে নিলে কিংবা সেটিংস থেকে Install DuckDuckGo ইন্সট্রাকশন বন্ধ করে নিলে আরো ক্লিন দেখায়। নিচের দিকে স্ক্রল করলে তাদের কিছু সুবিধা ও প্রাইভেসি সংক্রান্ত কিছু তথ্য প্রদর্শন করে। এটাও অফ রাখা যায়।

তারা আপনাকে থিম পরিবর্তনেরও অপশন দেয়। ৭টি থিম রয়েছে। আর এই সাতটির মধ্যেই শেষ না, Appearance সেটিংস থেকে নিজের মত কালার, ফন্ট, ফন্ট সাইজ প্রভৃতি নির্বাচন করে নেওয়া যায়। সহজ কথা, তারা আপনার হাতে প্রচুর নিয়ন্ত্রণ দেয়, যা গুগল বা অন্য সার্চ ইঞ্জিনগুলো দেয় না।

লিনাক্স ব্যবহারকারীদের নিশ্চয়ই টার্মিনাল থিমটি বিশেষভাবে আকর্ষণ করছে? আমি এখন ডিপিন লিনাক্সে আছি, আর  ডিপিন টার্মিনালের সাথে এই থিমের কালার কম্বিনেশন বলা যায় পারফেক্টলি ম্যাচ করে।

এখানেও গুগলের মত বিভিন্ন স্পেশাল ফিচার আছে। যেমন, Calculator, Color Picker, USD to BDT এধরণের সার্চ করে সরাসরি ডাকডাকগো থেকেই ব্যবহার করতে পারবেন। !bang সার্চ একটি বিশেষ ফিচার আছে, যেমন, !w Linux লিখলে সরাসরি উইকিপিডিয়াতে Linux সার্চ হবে, বিস্তারিত এখানে

আবার বিভিন্ন সার্চে বিশেষ ধরণের রেজাল্ট দেখায়। যেমন How to make a cup of tea সার্চ করতেই আলাদা ট্যাবে রেটিংসহ বিভিন্ন চায়ের রেসিপি চলে আসলো।

গুগলের মতই বিভিন্ন সার্চে উইকিপিডিয়া বা অন্য সোর্স থেকে সাইডবারে তথ্য প্রদর্শিত হয়। তবে গুগলে Translate ‘something’ to Bangla এভাবে সার্চ দিলেই গুগল ট্রান্সলেটে সরাসরি চলে আসতো, সেটা এখানে হয় না।

সত্যি বলতে ডাকডাকগো ব্যবহার করে গুগল থেকে বেশি ভালো লাগছিলো। সার্চ রেজাল্ট যথেষ্ট রিলিভেন্ট। তবে একটা জায়গায় এসে দুঃখ পাইসি, neonbati লিখে সার্চ দিলে বলে, Including results for neonati। এল্লা কোন কথা? যাই হোক, Search only for “neonbati”? দিলে দ্বিতীয় অবস্থানে আমাদের সাইট দেখায়।

বাংলা সার্চও বেশ ভালোভাবে রেজাল্ট প্রদর্শন করতে পারে। নিয়নবাতি সার্চ দিলে প্রথমে আমাদের ফেসবুক পেজের দুটো লিঙ্ক, তৃতীয় অবস্থানে আমাদের সাইট, দেখে খুশি হয়ে গেলাম। গুগলে কিছুটা নিচের দিকে দেখায়। সার্চ ইঞ্জিনে এখনো খুব সুবিধাজনক অবস্থানে আসিনি 😕

ও হ্যাঁ, এখান থেকে আবহাওয়ার আর পূর্বাভাসও দেখা যায়। মানচিত্র হিসেবে ইন্টিগ্রেটেড আছে Apple Maps, যেখানে ফিচার খুবই বেসিক। তাই ডিরেকশনের জন্য আপনার সেটিংস অনুযায়ী Bing Maps, Google Maps, HERE Maps বা Open Strict Maps ব্যবহার করে, অবশ্য এগুলো ইন্টিগ্রেটেড নয়, আলাদা উইন্ডোতে ওপেন হয়।

সার্চের বেলায় সাধারণভাবে ৫টি ক্যাটাগরী রয়েছে, All, Images, Videos, News ও Maps। এখানে একটি Safe Search ফিল্টার রয়েছে, যা অশ্লীল কন্টেন্ট প্রদর্শন না করার জন্য চমৎকার একটি ফিচার।

তাদের ইমেজ সার্চও ভালোমানের। সাইজ, টাইপ, লেআউট, কালার অনুযায়ী ফিল্টার করা যায়। তবে গুগল সার্চে লাইসেন্স অনুযায়ী ফিল্টার করার একটি অপশন ছিলো সেটি এখানে নেই।

ডাকডাকগো গুগলের মত বড় কোন প্রতিষ্ঠান নয়। গুগল কেবল একটি সার্চ ইঞ্জিনই নয়, তাদের সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সার্ভিস রয়েছে, যেমন, ম্যাপস, ট্রান্সলেট, ইউটিউব প্রভৃতি, যা ডাকডাকগোর ক্ষেত্রে নয়। গুগলের মত ট্র্যাকিংও ডাকডাকগো করে না। এরপরও তাদের সার্চ ইঞ্জিনটি চমকপ্রদ। আর গুগল থেকে ডাকডাকগো ব্যবহার করা অনেক বেশি আনন্দদায়ক লেগেছে। এই পোস্টের পরও নিয়মিত সার্চ ইঞ্জিন হিসেবে ডাকডাকগো ব্যবহার অব্যহত রাখারই চিন্তা করছি। এবং আমার মনে হয়, ডাকডাকগো ট্রাই করে দেখলে আপনিও হতাশ হবেন না। সো, “Duck it!”

10 Comments

  1. বরাবরের মতই চমকপ্রদ। আপনার লেখার বিশেষত্ব হলো লেখা পড়তে পড়তে একঘুয়ে লাগেনা।

    • বাহ, নিয়নবাতিতে অর্নব মাহমুদ ভাইয়ের কমেন্ট পয়লাবার পেলাম! জাজাকাল্লহু খইরন।

  2. duck এ এখন neonbati লিখে সার্চ দিলেই এক নাম্বারেই আপনাদের সাইট আসে 😉

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *