বাঘ দেখেছেন কখনো? সম্ভবত দেখেছেন। চিড়িয়াখানায়, বন্দী খাঁচায়। কিন্তু আরেকটা প্রাণী আছে, মশা, এমন এক প্রাণী, দেখতে এইটুকু, কিন্তু এদের জন্য আমাদের নিজেদের খাঁচায় ঢুকতে হয়, কী অদ্ভুত! অবশ্য, এ আর এমন কী? তার থেকে ক্ষুদ্র ভাইরাসের জন্য আমরা ঘর থেকে বের হতে পারছি না, মশা তো তাও চোখে ভালোভাবেই দেখা যায়।
পৃথিবীর সবচেয়ে প্রাণঘাতী প্রাণী কোনটি জানেন? হ্যাঁ, মশা। বাঘ, সাপ কিংবা হাঙর, কোন প্রাণীই তত মৃত্যুর জন্য দায়ী না, যত মৃত্যুর জন্য দায়ী মশা। ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া, জিকাসহ ভয়ঙ্কর সব রোগ ছড়ায় মশা। প্রায় ২৫ কোটি মানুষ প্রতি বছর মশাবাহিত রোগে আক্রান্ত হয় এবং প্রায় ১০ লক্ষ মারা যায়। এসব মৃত্যুর প্রায় এক-পঞ্চমাংশ ঘটে ম্যালেরিয়ায়। যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে ২০০১ সাল থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত ওয়েস্ট নীল ভাইরাস ছড়ানোর জন্য পাখিকে দায়ী করা হত। তবে ২০১০ সালের একটি গবেষণায় দেখা যায় এজন্য দায়ী ‘পাখি’ ছিলো মশা।
তবে সব মশা কিন্তু আমাদের রক্ত খায় না। কিছু মশা নির্দিষ্ট প্রজাতির রক্ত খায়। যেমন, Culiseta melanura শুধু পাখিদের উপর নির্ভর করে। খুব কমই সম্ভাবনা আছে, আপনি এই মশার কামড় খাবেন। বাস্তবে, ৩০০০ এর অধিক প্রজাতির মধ্যে কয়েকশো প্রজাতির মশা আমাদের রক্ত খায়। তাছাড়া, শুধু স্ত্রী মশারাই রক্ত খায়। ডিম উৎপাদনের জন্য তাদের প্রোটিন প্রয়োজন হয়। অবশ্য স্ত্রী মশারা, যখন ডিম উৎপাদনের প্রয়োজন হয় না, তখন পুরুষ মশার মত ফুলের নেক্টার খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে। তবে রক্তচোষা মশকীরা অনেক লোভী বলতে পারেন। দেহের ওজনের তিনগুণ রক্ত এরা খেতে পারে।
মারতে যেয়ে হয়ত মশাকে নিমিষেই উড়ে যেতে দেখে মনে হয়েছে এরা খুব দ্রুত। কিন্তু না, আসলে মশা তুলনামূলক বেশ ধীর। ঘন্টায় এক থেকে দেড় মাইল বেগে উড়তে পারে, যা অন্য বেশিরভাগ পতঙ্গ থেকে অনেক কম। তবে, আপনি কি জানেন স্তন্যপায়ীদের মধ্যে এমন প্রাণী আছে, যারা এর চেয়ে অনেক অনেক বেশি ধীরগতির? এই প্রাণীকে জানতে চাইলে, স্লথ নিয়ে আমাদের লেখাটি পড়ুন এখানে।
মশার বিখ্যাত গান নিশ্চয়ই মোটামুটি নিয়মিত শোনা হয়? কখনো মশার কামড়ের থেকে এটা অনেক বেশি বিরক্ত করে। কিন্তু এর পেছনের সায়েন্সটা জানলে অবাক হতে হবে। মশা প্রতি সেকেন্ডে ৩০০-৬০০ বার পাখা নাড়াতে পারে। যা এই চমৎকার (!) গান তৈরি করে।
ডিম পেড়ে সেখান থেকে মশার জন্মের জন্য পানি প্রয়োজন। তবে খুব বেশি না। কয়েক ইঞ্চি পানি জমলেই মশা ডিম পাড়তে পারে। মশা সাধারণত পানিতে জন্মে আশেপাশেই বসতি গড়ে এবং খুব দূরে যায় না। তবে সল্ট মার্শাল মশা ভালো জায়গার খোঁজে ১০০ মাইল দূরেও বসবসতি গড়তে পারে। তবে, অন্য মশা সাধারণভাবে ২-৩ মাইলের বেশি দূরে যেতে পারে না। কিছু প্রজাতি, যেমন এশিয়ান টাইগার মশার জন্য এটা মাত্র ১০০ গজ।
পুরনো কৌতুক, মশার জ্বালায় লাইট নিভিয়ে মশারির ঢুকলেন ভদ্রলোক। কোনভাবে এক জোনাকি পোকা মশারিতে ঢুকে পড়লো। ভদ্রলোক বললেন, মশারে মশা, এবার টর্চ জ্বালিয়ে আমারে খুঁজতে আইসো?
কিন্তু আমরা জানি, মশা টর্চ ব্যবহার করে না। তাহলে অন্ধকারে আমাদের খুঁজে পায় কীভাবে? এর উত্তর হলো, কার্বন ডাই-অক্সাইড, যা আমরা নিঃশ্বাসের সাথে নিঃসরণ করি, তা মশা ৭৫ ফুট দূর থেকেই শনাক্ত করতে পারে এবং সে অনুযায়ী আপনাকে খুঁজে বের করতে পারে। পতঙ্গদের মত আলোক ফাঁদ দিয়ে মশা ধরতে পারবেন না। কারণ, মশাকে আকর্ষণ করে কার্বন ডাই-অক্সাইড, আলো নয়।
DEET, Picaridin, Oil of Lemon Eucalyptus ও IR3535 এই চারটি রাসায়নিক মশা প্রতিরোধে কার্যকর। প্রশ্ন হলো, কোনভাবে সব মশা নিশ্চিহ্ন করা গেলে কী হবে? একদল বিজ্ঞানীর মতে এটা খুব খারাপ হবে না। অন্য একদল মনে করেন, বাস্তুতন্ত্রে বেশ প্রভাব পড়তে পারে। কারণ, মাকড়সা, স্যালাম্যান্ডার, ব্যাং, মাছ, অন্য কিছু পতঙ্গসহ কিছু প্রাণীর খাদ্য মশা।
“নিশ্চয় আল্লাহতো মশা অথবা তার চেয়েও ক্ষুদ্র কোন বস্তুর উদাহরণ দিতে লজ্জাবোধ করেন না; অতএব যারা ঈমানদার তারা জানে যে, এ সত্য তাদের প্রতিপালকের নিকট থেকে এসেছে, কিন্তু যারা অবিশ্বাসী তারা বলে যে, আল্লাহ কী উদ্দেশ্যে এ উদাহরণ পেশ করেছেন? (আসল ব্যাপার হল) তিনি এর দ্বারা অনেককেই বিভ্রান্ত করেন, আবার অনেককেই সৎপথে পরিচালিত করেন। বস্তুতঃ তিনি ফাসিকদের ছাড়া আর কাউকেও বিভ্রান্ত করেন না।”
সূরা আল বাকারা – আয়াত ২৬
সোর্স ও সহায়তা
অনেক ভালো লাগলো। 🙂